প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গঃ পর্ব ৪৩ || সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে || Bad company [10% @shy-fox]
ভূমিকাঃ
মাঝে মাঝে আমাদের চারপাশের জীবন, প্রকৃতি, পরিবেশ, সৌন্দর্য্য ও নানাবিধ বিষয় নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হয় যেসব লিখার বিষয়বস্তুকে কোন নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে ফেলা যায় না। এরকম বিষয়বস্তুগুলোকে নিয়ে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি
-তে আমি একটি সিরিজ লিখছি যার নাম দিয়েছি প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ
যেখানে কোন বিষয় বা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাক্তিগত মতামত ও পর্যালোচনা করে থাকি। এই লিখার বিষয়গুলো হচ্ছে ব্যাক্তিগত শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির সমন্বয়। পড়ে দেখুন, আশা করি ভাল লাগবে।
পর্ব ০৬ : প্রসঙ্গের বিষয়
এই প্রবাদ বাক্যটি আমরা অনেকেই অনেকবার পড়েছি এবং শুনেছি। আজকে এই বিষয় নিয়ে কিছু কথা আপনাদের মাঝে শেয়ার করব।
কোন একটা লোহার টুকরা কে যদি আমরা পানিতে ফেলে দিই তাহলে দেখতে পারবো সেটি পানিতে ডুবে যাবে। এটি হচ্ছে লোহার ক্ষেত্রে একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আমরা যদি এই লোহাকে অন্য একটি বস্তু যেমন পাতলা কাঠের টুকরা বা কর্কশিটের সাথে বেঁধে দেই তাহলে সেটি আর ডুবতে পারবে না। কারণ দুটি বস্তু মিলে সম্মিলিত ঘনত্ব কমে যাবে যা বেশি তরল অপসারিত করার কারনে তারা ভেসে থাকবে। আর এ কারণেই বলা হয়ে থাকে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে।
মূলত লোহার ঘনত্ব অনেক বেশি আর এ কারণে লোহার জন্য ডুবে যাওয়াটা হচ্ছে স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু এই লোহার ঘনত্ব অনেক কমে যায় যখন তার সাথে অন্য কম ঘনত্বের কোন বস্তু সংযুক্ত হয়। অর্থাৎ এখানে ডুবে যাওয়া মানে ভালো গুনাগুন এবং সৎ অবস্থা কে বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু সেই ভালো গুনাগুন অক্ষুন্ন বা অব্যাহত নাও থাকতে পারে যদি কিনা তার সঙ্গটা খারাপ হয়ে যায় অর্থাৎ এমন কারো সাথে মিশে যায় যার ঘনত্ব কম এবং গুনাগুন ভালো নয়।
এই কথাটি আমাদের সমাজে প্রায়শই বলতে শোনা যায় এবং এটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হচ্ছে খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করা। আমরা আমাদের চারপাশে যে যুবসমাজ দেখি তাদের ধ্বংসের পেছনে সবচেয়ে বেশি দায়ী হচ্ছে মূলত খারাপ সঙ্গ। খারাপ সঙ্গের কারণে একটি ছেলে আস্তে আস্তে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং জীবনের প্রতি তার অনীহা চলে আসে। কোন একজন যুবকবা ছাত্রের এরকম পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা হচ্ছে তার সঙ্গ। আর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে পরিবারে এবং সর্বোপরি সমাজে।
আমরা বলে থাকি যুবক সময় হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময় কারণ এই সময়ে যেমন বীজ বপন করা হয় ঠিক তেমনি ফল বাকি জীবনে পাওয়া যায়। কিন্তু যদি এই সময়টাকে নষ্ট করে দেয়া হয় তাহলে পরবর্তী যে ফল আসে সেটি কখনোই ভালো হয় না। তাই যুবক সময়ে বন্ধুত্বের প্রভাবটা অনেক বেশি কঠিন এবং জরুরি। যেসব যুবকেরা অন্তত ১৮ বছর বয়সে পদার্পণ করেনী তাদের উচিত নিজেদের ভালো-মন্দ এবং খারাপ সঙ্গ গুলোকে আইডেন্টিফাই করা। তাহলে তারা সেগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারবে অন্যথায় তাদের জন্য খারাপ সঙ্গের মাধ্যমে খারাপ হয়ে যাওয়াটা একেবারেই স্বাভাবিক একটি ব্যপার।
source: Image by Gerd Altmann from Pixabay
ছোট ছোট কাজ, আড্ডা থেকে আস্তে আস্তে বড় অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ে আমাদের যুব সমাজ আর এগুলো শুরু হয় বন্ধুদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কিংবা আড্ডার মাধ্যমে। তাই আমি মনে করি বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবাইকে খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ যখন ধর্মীয় অনুশাসন গুলো ঠিক ভাবে মেনে চলে তখন সেসব বন্ধুকে নির্বাচন করলে অনেকাংশে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসার এই প্রবণতা রয়েছে সেটি থেকে উঠে আসা সম্ভব হবে। যৌবন বয়সে যেখানে সবকিছুই একটা ভালোলাগা এবং স্বপ্নের মতোই থাকে। এই সময়টাতে আমাদের নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রনটা অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ যা ভবিষ্যতে আমাদেরকে ভালো একটা সময় এনে দিবে যেমনটি আমি পূর্বে বলেছি।
আমরা যদি কেবলমাত্র কোন প্রবাদ বাক্য স্মরণ করি এবং সেটিকে বিভিন্ন সময় বলার চেষ্টা করি তাহলে এটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট নয় বরং আমাদের উচিত কোনো প্রবাদ বাক্যের মর্মার্থ গভীরভাবে উপলব্ধি করা এবং সেই মোতাবেক নিজের জীবনকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা যাতে করে এই প্রবাদ বাক্যগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের জীবনের সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে ভালো একটি সমাধান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আসতে পারি।
ধন্যবাদ।
প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ সিরিজে পূর্বের পোস্টগুলোর তালিকাঃ
প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ সিরিজে পূর্বের পোস্টগুলোর তালিকাঃ
আমি কেঃ
আমি সাইফুল বাংলাদেশ থেকে। পেশায় শিক্ষক ও সাবেক ব্যাংকার। পড়াশুনা করেছি প্রকৌশলবিদ্যায়। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি ব্লগে শেয়ার করতে ভালবাসি। প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়ানো এবং ক্রিকেট খেলা আমার শখ। আমি বিশ্বাস করি, আমার পোস্ট হতে একজনও যদি উপকৃত হতে পারেন বা নতুন কিছু শিখতে পারেন তাহলেই এই লেখালেখি সার্থক
Is it written in Hindi?
খুবই সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন। খারাপ সঙ্গ যে কতটা ভয়ংকর তা আমি আমার নিজের কিছু বন্ধুদের দেখেই উপলব্ধি করতে পারি। বখাটে ছেলের সাথে মিশে প্রথমে সিগারেট এখন আর কোনো কিছু বাদ নেই। অথচ তারা সময় নেশা করাকে খারাপ চোখেই দেখতো।
অবশ্য আমার ফ্রেন্ডদের সাথে মেশা আমি বন্ধ করি নাই। কিন্তু কমিয়ে দিয়েছি৷ ঐ যে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে এই জন্য। আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত সিগারেটে টান দেই নাই। ইনশাল্লাহ কখনো আর এই ভুল হবেও না বাকি সব তো অনেক দূরের কথা।
আপনার পোস্ট পড়তেই ভালো লাগে অনেক কিছু শেখার আছে, আপনার পোস্টের মাধ্যমে। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো ভাই। ভালোবাসা অবিরাম ❤️❤️❤️❤️❤️
ওয়াও ভাইয়া অনেক সুন্দর একটি মূল্যবান বক্তব্য আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার প্রতিটি পোস্টে কোনো না কোনো শিক্ষামূলক বিষয় আমরা পেয়ে থাকি এবং যা আমাদের প্রচুর উপকারে আসে।
আর সত্যিই বলেছেন সঙ্গদোষে আসলে সবকিছু হয়। আমরা যদি কোনো ভালো সঙ্গে ঘুড়ি তাহলে আমরা অটোমেটিক ভালো হয়ে যাব। আর খারাপ সঙ্গের সাথে মিশবে একজন ভালো মানুষ ও খারাপ হয়ে যাবে। এজন্য আমাদের উচিত দেখেশুনে সকলের সাথে মিশে চলা। এতে আমাদের ভবিষ্যৎ অনেক সুন্দর হবে। তবে আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইল আপনার প্রতি।
বাস্তব খাটি কথা, আমার এক পরিচিত বড় ভাই এভাবেই তার জীবনটা শেষ করেছেন। এতো মেধাবী একজন মানুষ নেশা আর খারাপ সঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে এখন কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। দেখা যাক কতটুকু সামলিয়ে জীবনের ধারায় আসতে পারে। আপনার লিখনী বরাবরই ভালো লাগে ♥️
শুভ কামনা সবসময়ই রয়েছে ভাই ❣️