প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গঃ পর্ব ২৮ || কতটুকু সম্পদ একজন মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারে || Satisfaction

in আমার বাংলা ব্লগ4 years ago (edited)

ভূমিকাঃ

মাঝে মাঝে আমাদের চারপাশের জীবন, প্রকৃতি, পরিবেশ, সৌন্দর্য্য ও নানাবিধ বিষয় নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হয় যেসব লিখার বিষয়বস্তুকে কোন নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে ফেলা যায় না। এরকম বিষয়বস্তুগুলোকে নিয়ে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি-তে আমি একটি সিরিজ লিখছি যার নাম দিয়েছি প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ যেখানে কোন বিষয় বা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাক্তিগত মতামত ও পর্যালোচনা করে থাকি। এই লিখার বিষয়গুলো হচ্ছে ব্যাক্তিগত শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির সমন্বয়। পড়ে দেখুন, আশা করি ভাল লাগবে।

Thumbnails.jpg

Line Break Steem.png

পর্ব ২৮: সম্পদ অর্জনে আত্বতৃপ্তি ও পেরেশানী

Line Break Steem.png
পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য সম্পদের প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু অতিরিক্ত সম্পদ এর পেছনে অতিরিক্ত ছোটাছুটি করা আমাদের জন্য কোনোভাবেই ভালো ফলাফল বয়ে আনে না। একটা মানুষ অথবা তার পরিবারকে যদি ঠিকমতো ভরণপোষণ করাতে চায় তাহলে তার জন্য অঢেল সম্পদের প্রয়োজন হয় না। খুব সামান্য পরিসরে এবং অল্পতে তুষ্ট হয়ে জীবন যাপন করার মাঝেও অনেক সুখ নিহিত থাকে যদি আমরা পেরেশানি মুক্ত জীবন যাপন করতে পারি।

আমরা আমাদের সমাজে প্রায়শই দেখি মানুষ অর্থ উপার্জনের জন্য একেবারে দিশেহারা হয়ে যায়। এটা একেবারে ভুল একটা পদক্ষেপ। জীবনে যতটুকু সম্পদ প্রয়োজন ততটুকুই অর্জনের জন্য চেষ্টা করাটাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ। আমরা যদি প্রতিদিন অনেক বেশি সম্পদ উপার্জন করি তাহলে সেই সম্পদ আমরা এবং আমাদের পরিবার আসলে ভোগ করতে পারবো না। তবে যতটুকু ভোগ করার মত রয়েছে ততটুকু অর্জনের জন্য চেষ্টা করার মাঝে দোষের কিছু নেই। কিন্তু অতিরিক্ত হাহাকার করে নিজের জীবনকে একেবারে বিলিয়ে দেওয়া এবং নিজের জন্য সময় না রাখা এটা হচ্ছে অনেক বড় একটা বোকামী।

cash-1169650_1920.jpg
Source: Image by kalhh from Pixabay


আমরা যাদের জন্য পরিশ্রম করছি অর্থাৎ আমাদের পরিবার এবং আশেপাশের কাছের মানুষগুলো, তাদের প্রয়োজনের একটা সীমা আছে। অসীম সম্পদ কিংবা অঢেল সম্পদের মাঝে যে সুখ আমরা বিবেচনা করি তা আসলে প্রকৃত সুখ নয়। প্রকৃত সুখ আমরা তখনই পাবো যখন আমাদের নিজেদেরকে দেয়ার মতো এবং পরিবারকে দেয়ার মত সময় থাকবে। এবং আমরা সামাজিক হতে পারব। দিনশেষে আমার হাতে যত সম্পদ্ই থাকুক যদি আমি মন থেকে সুখী হতে না পারি তাহলে কখনই সেই সম্পদ আমার জন্য সুখ বয়ে আনবে না।

আমরা মেশিনের মত কাজ করার জন্য কিংবা অফিস সময়ের পরে আরও তিন ঘন্টা অফিসে কাটানোর জন্য এই পৃথিবীতে আসেনি। কাজ করাটা আমাদের জন্য অবশ্যই জরুরি কিন্তু অতিরিক্ত কাজ আমাদের জন্য কখনোই শুভকর নয়। যতটুকু কাজের জন্য আমরা বিধিবদ্ধ ততটুকু কাজ আমরা অবশ্যই করবো কিন্তু কাজের পিছনে একেবারে ছুটতে ছুটতে পেরেশান হয়ে যাওয়া এটাই হচ্ছে সমস্যা। আমরা যদি আমাদের পরিবারকে সময় দিতে না পারে এবং নিজের জন্য একান্ত কিছু সময় ব্যয় করতে না পারি এবং সামাজিকভাবে বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হতে না পারি তাহলে আমাদের যাবতীয় পরিশ্রম একেবারে বৃথা যাবে কারণ খুব শীঘ্রই যখন আমরা বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকব তখন বুঝতে পারব যাদের জন্য আমরা এতকিছু করেছিলাম সেই সব কিছু আসলে ভুল ছিল।

আমরা যদি একবার চিন্তা করে এমন একটা পৃথিবী যেখানে আমি নেই সেখানে কোন মানুষের কার্যক্রম মোটেও আমার জন্য থেমে থাকবে না। তাই এটা কখনই উচিত নয় যে আমি আমার সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে আমার আশেপাশের মানুষগুলোর জন্য কেবল চেষ্টা করে যাব। তার চেয়ে এটা অনেক ভালো হবে যে, সবাই সবার জায়গা থেকে কিছু না কিছু কাজ করবে এবং দিনশেষে সবাই নিজেদের কে ভালো রাখার জন্য চেষ্টা করতে পারবে।

person-835453_1920.jpg
Source: Image by Gerd Altmann from Pixabay


তাই আসুন আমরা অতিরিক্ত সম্পদের দিকে মনোনিবেশ না করে বরং কম সম্পদের মধ্যে তুষ্টি অর্জন করার মাধ্যমে পরিবারের মাঝেই স্বর্গীয় সুখ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করি। শুধুমাত্র 10 লক্ষ টাকা দান করতে পারা মানেই অনেক বেশি ভালো কাজ করা কিংবা মানুষের উপকার করা ব্যাপারটা তা নয়। আপনার পাশের কোন একটা মানুষের বিপদে আপনি কি এদের যদি পাশে দাঁড়ান এবং কিছু পরামর্শ দেন সেটাও তার জন্য অনেক বড় একটা কিছু হতে পারে। সব কিছুর শেষ কথা হচ্ছে মন মানসিকতা এবং মন থেকে কোন কিছু করা। যদি আমরা কারো জন্য কোন ভাল কিছু করতে চাই তাহলে সব সময় টাকা-পয়সা দরকার হবে ব্যাপারটা তা নয় বরং আমরা আমাদের মেধা সময় শ্রম ইত্যাদি দিয়ে মানুষকে উপকার করতে পারে যদি উপকার করতে চাই।

অঢেল সম্পদের মাঝে যে সুখ সেটা যদি আমরা বেশিরভাগ ধনীদের দিকে তাকাই তাহলে বুঝতে পারবেন কারণ অনেক ধনী রয়েছে যারা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারেন না কারণ ডাক্তার নিষেধ করে দিয়েছেন। এটা কেবলমাত্র এজন্যই হয়েছে কারণ তিনি অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের দিকে খুব বেশি মনোনিবেশ করে ফেলেছেন তাই অসুস্থ হতে হয়েছে। রুটিন লাইফ মেন্টেন করুন, পরিবারকে সময় দিন, অতিরিক্ত সম্পদের মোহ ত্যাগ করুন এবং সময় সুযোগ ও সুবিধা মত সম্পদ দান করুন। এতেই কল্যান নিহিত। ধন্যবাদ।

Line Break Steem.png

প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ সিরিজে পূর্বের পোস্টগুলোর তালিকাঃ

পর্ব
আলোচিত প্রসঙ্গটি
০১সবার সম্মিলিত খুদ্র প্রয়াসে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ
০২একজন ফুটবল কিংবদন্তী ও ইতিহাস
০৩পড়ন্ত বিকেলে ছুটি খা দিঘীর পাড়ে
০৪করোনার অসুবিধাকে সুবিধায় রুপান্তর
০৫গ্রামে গ্রামে মোবাইল আসক্তি
০৬মরে গিয়েও বেঁচে থাকা
০৭প্রতিযোগিতা নাকি প্রতিদ্বন্দ্বিতা
০৮প্রতিকার নাকি প্রতিরোধ
০৯অনলাইন পরীক্ষা রস
১০পরিবার নাকি গ্যাজেট
১১শান্ত সমুদ্রে দক্ষ নাবিক তৈরি হয় না
১২বরশি দিয়ে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা
১৩আসল স্বাদ এর রসমলাই
১৪শিক্ষক দিবস ও শিক্ষা নিয়ে কিছু কথা
১৫ব্যাটসম্যান পরিবর্তন হয়ে এখন ব্যাটার
১৬ইন্টারনেট ছাড়া আমাদের জীবন (ইন্টারনেটের কুফল)
১৭শিশুদের নিয়ে কিছু কথা
১৮আসুন আমরা সবাই মিলে স্টিম-কে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাই
১৯দেশপ্রেম মানেই হল সবাই সবার কাজ ঠিকঠাক করা
২০একটি নদীকে ঘিরে অনেকগুলো স্বপ্ন
২১নিজের অনন্য দক্ষতার জায়গায় ফোকাস করুন
২২পরিশ্রম কি বৃথা হয় এবং পন্ডশ্রম নিয়ে কিছু কথা
২৩আপনার কাজ-ই আপনাকে পরিচিত করবে
২৪একজন শিক্ষক কি বাস ড্রাইভারের মত নাকি ট্রেন ড্রাইভারের মত?
২৫চ্যারিটি শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণের অভিজ্ঞতা
২৬এক ছোট বাচ্চার সাথে আমার অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে কিছু ভাবনা
২৭ব্যাক্তিত্বঃ পোষাক ও চলাফেরা সাধারণ কিন্তু কথা ও কাজ অসাধারন

Line Break Steem.png

আমি কেঃ

আমি সাইফুল বাংলাদেশ থেকে। পেশায় শিক্ষক ও সাবেক ব্যাংকার। পড়াশুনা করেছি প্রকৌশলবিদ্যায়। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি ব্লগে শেয়ার করতে ভালবাসি। প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়ানো এবং ক্রিকেট খেলা আমার শখ। আমি বিশ্বাস করি, আমার পোস্ট হতে একজনও যদি উপকৃত হতে পারেন বা নতুন কিছু শিখতে পারেন তাহলেই এই লেখালেখি সার্থক

Line Break Steem.png


Amar Bangla Blog Logo.png

Line Break Steem.png


Heroism.png

| 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

Sort:  
 4 years ago 

জ্বি ভাই খুব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। আপনার পুরো পোস্টটি আমি মনোযোগ দিয়ে পড়ে যা বুঝলাম তা হচ্ছে আমাদের উচিত আমাদের যতটুকু সম্পদ হলে একটা দিন সুন্দরভাবে অতিবাহিত করা যায়, শুধুমাত্র সেই সম্পদ অর্জনের পেছনেই সময় ব্যয় করা। অতিরিক্ত সম্পদ অর্জন করতে গিয়ে পরিবার থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সর্বশেষে, পাড়া-প্রতিবেশীদের বিপদে পাশে থাকতে পারাটাই হলো সব থেকে বড় কথা।❤️🥰

আপনি অনেক সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন, যেকেউ খুব সহজেই বুঝতে পারবে বিষয়টি। ❤️

 4 years ago 

ধন্যবাদ

 4 years ago 

আজকের পোস্ট টা অসাধারণ এবং সময়উপযোগী একটি পোস্ট ছিল। ঠিকই বলেছেন ভাই মানুষের ভরণপোষণের জন্য বেশি সম্পদের প্রয়োজন হয় না। মানুষ বেশি সম্পদ তৈরি করে বিলাসীতার জন্য। এবং এটাও দারুণ বলেছেন সৃষ্টিকর্তা শুধুমাত্র কাজ করার জন্য আমাদের পৃথিবীতে পাঠায়নি। কিন্তু এটা এখন মানুষের স্বভাবে দাঁড়িয়ে গেছে আপনি আমি বলে কী করব।

 4 years ago 

জি, ধন্যবাদ ভাই

 4 years ago 

ভাইয়া আপনার পোস্টটি খুবই মনোযোগ সহকারে পড়েছি। আপনার এই পোস্টটি সময়োপযোগী একটি শিক্ষামূলক পোস্ট। আমাদের সকলের উচিত নিজেদের ভরণপোষণের জন্য যতটুকু অর্থ সম্পদ উপার্জন করা প্রয়োজন ঠিক সে পরিমাণ অর্থ সম্পদ উপার্জনের জন্য সময় ব্যয় করা। আর বেশি অর্থ-সম্পদ অর্জনের জন্য নিজেকে পরিবারের সাথে এবং নিজের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.34
JST 0.034
BTC 111217.61
ETH 4398.44
SBD 0.84