প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গঃ পর্ব ১০ || পরিবার নাকি গ্যাজেট (Family or Gadget) [10% beneficiary to @shy-fox]
ভূমিকাঃ
মাঝে মাঝে আমাদের চারপাশের জীবন, প্রকৃতি, পরিবেশ, সৌন্দর্য ও নানাবিধ বিষয় নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হয় যেসব লিখার বিষয়বস্তুকে কোন নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে ফেলা যায় না। এরকম বিষয়বস্তুগুলোকে নিয়ে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি
-তে আমি একটি সিরিজ লিখছি যার নাম দিয়েছি প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ
যেখানে কোন বিষয় বা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাক্তিগত মতামত ও পর্যালোচনা করে থাকি। এই লিখার বিষয়গুলো হচ্ছে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির সমন্বয়। পড়ে দেখুন, আশা করি ভাল লাগবে।
পর্ব ১০: পরিবার নাকি গ্যাজেট; কোনটি আগে?
প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গটিঃ
প্রযুক্তির এই যুগে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকি। আমরা যে কেবলমাত্র আমাদের কর্মস্থলে ব্যস্ত থাকি তা নয় পাশাপাশি আমরা যখন রাস্তায় বা বাড়িতে থাকি তখনও বিভিন্ন গ্যাজেট নিয়ে পড়ে থাকি। পরিবারকে সময় দেওয়া আমাদের জন্য এই বর্তমান সময়ে অনেক কঠিন একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি সামাজিক ব্যাধির মত অবস্থা হয়ে গিয়েছে। যেহেতু পরিবারের সিনিয়র সদস্যরা পরিবারের জুনিয়র সদস্যদেরকে সময় দিচ্ছে না তাই জুনিয়র সদস্যরাও গেজেটের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় আমরা গেজেট এর প্রতি আসক্তিকে সমাজে একটি ব্যাধি হিসেবে দেখতে পাচ্ছি।
যতই দিন যাচ্ছে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে আমাদের হাতে নিত্য নতুন প্রযুক্তি চলে আসছে। আর এসব প্রযুক্তিগুলি খুব ভালো লাগার মতো। বিশেষ করে ফেসবুক, ইউটিউব, চ্যাটিং, গ্যামিং, মিউজিক, মুভি এই জিনিসগুলো যেকোনো বয়সের মানুষকে খুব আকৃষ্ট করে। কারণ এখানে সকল বয়সের মানুষের জন্যই বিনোদন রয়েছে। এইসব প্ল্যাটফর্ম থেকে বিনোদন নেওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু এসব প্ল্যাটফর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাওয়া বা আসক্ত হয়ে যাওয়াটা হচ্ছে সমস্যা।
সব থেকে অবাক করা বিষয় হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা পর্যন্ত অনেক বেশি পরিমাণে আকৃষ্ট হচ্ছে এসব গ্যাজেটে। এ কারনে তারা তাদের স্বাভাবিক যে কাজ অর্থাৎ পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারেনা। অন্যদিকে যারা পরিবারের সিনিয়র সদস্য রয়েছে তারা এই সব গ্যাজেটে যখন মগ্ন থাকে তখন তারা পরিবারকে যথেষ্ট সময় দিতে পারেনা। আর এতে করে পরিবারের যে বন্ধন গুলো রয়েছে সেগুলো আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং এই গ্যাজেটে আসক্তির কারণে নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হচ্ছে। যেহেতু গ্যাজেট নিয়ে সারাক্ষণ পড়ে থাকে তাই চোখের ক্ষতি হচ্ছে পাশাপাশি অলস সময় কাটানো হচ্ছে বেশি। আগে যখন আউটডোর অ্যাকটিভিটিতে মানুষ যেত তখন বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, হাঁটাহাঁটি এবং অনেক ধরনের কাজ করতো যেটি বাদ দিয়ে এখন মোবাইল ফোন কিংবা ল্যাপটপের সামনে সারাদিন বসে থাকা এটাই হচ্ছে বিভিন্ন রোগ ব্যাধির অন্যতম প্রধান একটি কারণ।
এগুলো হচ্ছে সমস্যা যা আমরা সবাই বুঝতে পারি। এই সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের উচিত একটা রুটিন করে নেওয়া অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট সময় করে মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ ব্যবহার করা যাতে করে এই কাজটাকে আমরা খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন কাজ ও পরিবারকে নিয়ে বেশি সময় কাটাতে পারি। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মানুষকে দেখা যায় প্রতি ৫/১০ মিনিট পরপরই মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে চোখ চলে যায়। মোবাইল ফোন আমাদের সঙ্গে আছে, থাকবে কিন্তু এটাকে খুব বেশি সময় দেয়া ও বারবার নোটিফিকেশন চেক করা কিংবা বারবার হাতে নিয়ে চ্যাট করাটাই হচ্ছে সমস্যা। মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন খুব ক্ষতিকর আমাদের জন্য তাই মোবাইল ফোন থেকে আমরা যতটা দূরে থাকতে পারবো ততই আমাদের জন্য কল্যান।
সমাধানঃ
এতক্ষণ বললাম সমস্যার কথা। এখন বলছি কিছু সমাধান। আমাদের উচিত একটা নিয়মিত রুটিন করে মোবাইল ফোন বা আমাদের গ্যাজেটগুলো-কে ব্যবহার করা যাতে করে এই নির্দিষ্ট সময়টা ব্যবহার করে আমরা বাকি সময়টা পরিবারের জন্য এবং প্রকৃতির মাঝে স্বাচ্ছন্দ্যে সময় কাটাতে পারি।
দ্বিতীয়তঃ আমাদের পরিবারের যেসব ছোট বাচ্চা রয়েছে তাদের পিছনে আমাদের অনেক বেশি সময় দেওয়া জরুরী। আর যখন আমরা বাচ্চাদেরকে সময় দিবো তখন তাদের মানসিক বিকাশটা অনেক ভাল হবে। আমরা অনেক সময় গাছ থেকে অনেক ভালো ভালো ফল চাই কিন্তু সেই গাছের পরিচর্যা করতে চাইনা। আমাদের সন্তানদের থেকে বা আমাদের জুনিয়র সদস্য দের থেকে আমরা যদি ভাল কোন ফলাফল আশা করতে চাই তাহলে তাদেরকে ছোটবেলা থেকে আমাদের উচিত অনেক বেশি নার্সিং করা অর্থাৎ তাদের পেছনে অনেক সময় দেওয়া। আমরা অনেক সময় কিছু টিউটর নিয়োগ করে নিশ্চিন্ত হয়ে যাই। টিউটরদের হাতে আমাদের সন্তানদেরকে ছেড়ে দেই। এটা ভালো কিন্তু টিউটরের কাছে দিয়ে একমাত্র ভরসা রাখা বা স্কুলের কাছে দিয়ে একমাত্র ভরসা রাখা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয় কারণ আপনার সন্তানকে অন্য কেউ আপনার মতো করে গড়ে তোলার জন্য সময় এবং শ্রম ব্যয় করবে না তা আপনি যত টাকা ব্যয় করেন না কেন।
তাই আপনার সন্তানের জন্য আপনি যত বেশি সময় দিবেন সেটাই আপনার জন্য রিটার্ন হয়ে ফলপ্রসূ একটা ফলাফল এনে দিবে। আমি এই কথাগুলো আমার অনেক বেশি অভিজ্ঞতা থেকে বলছিনা কারণ আমি খুব বড় কোনো মানুষ নই তবে আমার উপলব্ধিকে থেকে বলছি। আমি মনে করি আমরা যদি আমাদের পরিবারের সদস্যদের অনেক বেশি নার্সিং করি এবং তাদের পেছনে প্রচুর সময় দেই তাহলে তাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ অনেক সুন্দর হবে।
এই করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই বাসায় বসে অফিস করতে হচ্ছে তাদের জন্য এই কাজটা অনেক সহজ কারণ তারা চাইলেই বাসায় পরিবারের সাথে অনেক সময় দিতে পারছেন। এমনকি যারা বাইরে কাজ করেন তারাও চাইলে ঘরে এসে একটা নির্দিষ্ট সময় পরিবারের জন্য ব্যয় করতে পারেন। বাকি সময়টায় রুটিন করে গেজেট সংক্রান্ত কাজ করে নিতে পারেন।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে চেষ্টা করি আমার অনালাইন সংক্রান্ত কাজগুলো খুব ভোরে করে ফেলতে যখন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাদের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে অথবা ঘুমিয়ে থাকে। এবং অন্য সময় যখন পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে তখনই আমি এই কাজগুলো করে থাকি এতে করে পরিবারের সাথে সময় দেওয়ার যে কাজটি সেটিতে আমার বিঘ্ন ঘটে না।
ছবিতে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন বিকেলবেলা আমি আমার মেয়েকে নিয়ে বাইরে হাঁটতে বের হয়েছি এবং আমার দেড় বছরের মেয়ে খুব হাটাহাটি করছিল এবং আশপাশ থেকে অনেকগুলো নুড়ি পাথর সংগ্রহ করে জড়ো করেছে। আসলে অনেক আনন্দের একটু উপলব্ধি ছিল এবং এভাবে করে যখন আমরা সময় কাটাই তখন আমাদের সময়গুলো অনেক ভালো কাটে। আমি এভাবে করে বাইরে বের হতে চেষ্টা করি যাতে করে আমি এবং মেয়ে দুজনেই বাইরে বিকেলটা খুব সুন্দর ভাবে কাটাতে পারি। পাশাপাশি ঘরেও আমি অনেক বেশি সময় দেওয়ার চেষ্টা করি আর এভাবে আমাদের দিনগুলো ভাল কাটছে। আশা করি আপনারাও এভাবে করে চেষ্টা করতে পারেন।
কারণ দিনশেষে গেজেট মোবাইল ফোন, ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুবান্ধব এগুলো মুখ্য বিষয় নয় বরং আমাদের পরিবার আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের যেটি আমি পূর্বের একটি পোস্টে শেয়ার করেছিলাম যা আপনি চাইলে এখান থেকে পড়ে নিতে পারেন। ধন্যবাদ।
https://steemit.com/hive-129948/@engrsayful/or-or-or-or-priority
শেষকথাঃ
লিখাটি পড়ে যদি কেউ উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে কমেন্টে জানাবেন। কারো ভাললাগা বা উপকৃত হওয়ার মাঝেই এই লিখার সার্থকতা। প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ সিরিজে আমার লিখা অন্য বিষয়গুলোর লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম। ভাল লাগলে সেগুলোও চোখ বুলিয়ে আসতে পারেন। ধন্যবাদ।
এই সিরিজে আমার লিখা পূর্বের পোস্টগুলোর তালিকাঃ
এই পোস্টের লিখা কোথাও থেকে কপি করা হয়নি। কোন তথ্য বা ছবি অন্য কোন উৎস হতে নিয়ে থাকলে সোর্স দেয়া হয়েছে
আমি কেঃ
ভোট দিন, মতামত থাকতে মন্তব্য করুন, পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং আমাকে ফলো করুন @engrsayful
অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ
Youtube | ThreeSpeak | DTube |
You have been upvoted by @rex-sumon A Country Representative, we are voting with the Steemit Community Curator @steemcurator07 account to support the newcomers coming into steemit.
সময়োপযোগী সচেতন মূলক একটি দারুন পোস্ট হয়েছে। একটি বাচ্চাকে ছোট থেকে বড় করে তুলতে দরকার সঠিক প্যারেন্টিং। আমি মনে করি এই প্যারেন্টিং এর জন্য কিছু ডকুমেন্টারি তৈরি করে টিভিতে প্রচার করা যেতে পারে। তাহলে সচেতনতা বাড়বে
একদম ঠিক কথা বলেছেন। আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় এখানে প্যারেন্টিং নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সিরিজ লিখে ফেলি। কিন্তু আসলে সময় সুযোগ হয়ে ওঠে না আর আসলে এই বিষয়টা এখন জাতীয় দাবি হয়ে গিয়েছে যে সরকারিভাবে প্রসার করা।
সমসাময়িক সময়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আপনার পোস্টে সবসময়ই শিক্ষনীয় কিছু থাকে। যদি পরিবারের বড় সদস্যরা ছোট সদস্যদের সময় না দেয় তাহলে ছোট সদস্যরা খুব সহজেই এসব গেজেট বেঁছে নেবে। যে শিশু বা কিশোরকে পরিবার ঠিকমতো সময় দেয় সেই শিশু বা কিশোর নাকি সবসময়ই স্বাভাবিক থাকে খুব একটা আকৃষ্ট হয় না এসব গেজেটের প্রতি। আপনার বেবিটা খুব সুন্দর।।।
ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ
ধন্যবাদ ভাই।।
সুন্দর হয়েছে আপনার লিখনী পড়ে সবসময় অনেক কিছু শিখতে পারি। আপনার কন্টেন্ট সব সময় হাই কোয়ালিটি হয়। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
আপ্নাকেও ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।