প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গঃ পর্ব ০৬ || মরে গিয়েও বেঁচে থাকা (Alive After Death)

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

ভূমিকাঃ

মাঝে মাঝে আমাদের চারপাশের জীবন, প্রকৃতি, পরিবেশ, সৌন্দর্য ও নানাবিধ বিষয় নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হয় যেসব লিখার বিষয়বস্তুকে কোন নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে ফেলা যায় না। এরকম বিষয়বস্তুগুলোকে নিয়ে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি-তে আমি একটি সিরিজ লিখছি যার নাম দিয়েছি প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ যেখানে কোন বিষয় বা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাক্তিগত মতামত ও পর্যালোচনা করে থাকি। এই লিখার বিষয়গুলো হচ্ছে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির সমন্বয়। পড়ে দেখুন, আশা করি ভাল লাগবে।

Thumbnails.jpg

Line Break Steem.png

পর্ব ০৬ : মরে গিয়েও বেঁচে থাকা

Line Break Steem.png

প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গটিঃ

আজকে একটি ভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আমরা অনেকেই আমাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য পৃথিবীতে বিভিন্ন রকম কাজ করে থাকি। কিন্তু আমাদের এই অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা কখনোই সম্ভব হয়না সেটা যত চেষ্টাই হোক না কেন। পৃথিবী নিয়ত পরিবর্তনশীল এবং এই পরিবর্তনের সাথে সাথে আমরা পৃথিবীর প্রেক্ষাপট সেটা রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক হোক কিংবা প্রযুক্তিগত সেটা পরিবর্তন হবেই। আর এই পরিবর্তনের মধ্যে একটা সমাজ সভ্যতা গড়ে ওঠে। একটা সভ্যতা যেখানে খুবই আধুনিক হিসেবে বিবেচিত হয় সেটাই আবার সময়ের বিবর্তনে সেকেলে সভ্যতায় পরিণত হবে। এটাই হচ্ছে পৃথিবীর পরিবর্তনের নিয়ম।

man-5640540_1920.jpg
Source: Image by Tumisu from Pixabay


কিন্তু যেসব মহামানবেরা তাদের অস্তিত্ব প্রমাণ করে গিয়েছেন তাদেরকে আমরা কতদিন মনে রাখি। যেমন ধরুন বর্তমান পৃথিবীর অনেক বিষয় আলোচিত হয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট চীনের প্রধানমন্ত্রী কিংবা লিওনেল মেসি দের কে নিয়ে। ঠিক যদি আমরা 50 বছর আগে ফিরে যায় তাদের কেউই এই পৃথিবীতে ছিলেন না এইরকম অবস্থায়। তখনকার পৃথিবীর ইতিহাস এবং প্রেক্ষাপট অন্যান্য ব্যক্তিদের নিয়ে রচিত হয়েছিল যারা আজকে পৃথিবীতে নেই। আমরা যদি ১০০, ২০০ কিংবা ৫০০ বছর পেছনে চলে যায় তখন দেখতে পাবো সেই সময়ও পৃথিবীতে আলোচিত বিভিন্ন ধরনের নেতৃত্ব স্থানীয় লোকজন ছিল যাদের কে কেন্দ্র করে পৃথিবীর ঘটনাপ্রবাহ এবং খবর আবর্তিত হত। আজ তারা কোথায়। কেউ নেই। নেই সেইসব সভ্যতা। পরিবর্তন হয়েছে সব কিছুতে।

আমরা হয়তো ভাবছে এই পৃথিবীতে আমরা এখন অনেক কিছু এবং আমাদেরকে কেন্দ্র করে অনেক ঘটনা প্রবর্তিত হচ্ছে। যেমন কেউ হয়তোবা কোন প্রতিষ্ঠান কর্তা তিনি ভাবছেন তিনি অনেক কিছু আবার কেউ আছেন যিনি কিনা একটি দেশ পরিচালনা করছেন সে হয়তো ভাবছে তিনি অনেক কিছু আবার কেউ আছে সারা বিশ্বের কর্তৃত্বশালী দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং নিজেকে অনেক কিছুই ভেবে চলেছেন। কিন্তু সময়ের আবর্তনে সাথে সাথে একদিন তারাও পৃথিবীতে থাকবেন না। চলে যাবেন। আর সেই যাওয়ার সাথে সাথে তাদের বর্তমান সময়ের কীর্তিগুলো সব মুছে যাবে। কিছু মানুষকে হয়তোবা আমরা ভবিষ্যতে ইতিহাসের জন্য মনে রাখব কিন্তু সে পরিমাণ তো একেবারেই সামান্য কারণ ভবিষ্যত প্রযুক্তি সময়ে এই সব ইতিহাসের খুব বেশি মূল্য থাকবে না।

যেমন বর্তমানে আমরা অনেকের কথাই স্মরণ করি ইতিহাস থেকে। সেইসব স্মরণ করা থেকে ওই ব্যক্তিদের কোন লাভ হয়না। বরং মানুষ যারা যে সভ্যতায় আছে সেই সভ্যতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য এবং ভালো থাকার জন্য সংগ্রাম করে যায়। পূর্বের ঐতিহাসিকদের কিংবা বিজ্ঞানী খেলোয়াড় রাজনীতিবিদদেরকে মনে রেখে বা তাদের ব্যাপারে আলোচনা করে বর্তমান সময়ে খুব বেশি কোন কিছু লাভ করা যায় না। তাই প্রত্যেকটি প্রত্যেকটি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে এবং ৫০ বছর পরে বর্তমান সময়ের দাপিয়ে বেড়ানো এইসব মানুষ গুলোকে একদিন মানুষ ভুলে যাবে এবং নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে।

giving-1826706_1920.jpg
Source: Image by truthseeker08 from Pixabay


এই সবগুলো কথা বলার পিছনে একটাই উদ্দেশ্য সেটা হচ্ছে আমরা যে কাজ করি না কেন সেই কাজ দিয়ে আমরা পৃথিবীতে টিকে থাকার চেষ্টা করতে পারবোনা। আমাদেরকে মরতে হবে। আর মরণের সাথে সাথে আমার প্রয়োজন শেষ হয়ে যাবে। যেই পৃথিবী আমাকে ছাড়া আজকে চলতে পারে না সেই পৃথিবী আমাকে বাদ দিয়ে অবলীলায় তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। তাই আসুন আমরা পৃথিবীতে টিকে থাকার কিংবা দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকার পরিবর্তে এটাই চেষ্টা করে যে, মানুষের জন্য কোন কল্যাণকর কিছু আমরা এই পৃথিবীতে করে যাই এবং আমাদের মৃত্যুর পর মানুষ আমাদেররেখে রেখে যাওয়া কল্যাণ থেকে যুগের পর যুগ উপকৃত হতে থাকুক এবং তাদের হৃদয়ের চেয়ে তৃপ্তি এবং সান্তনা সেটা আমাদের আত্মায় পৌঁছে যাক। এমন কিছু করে যায় যেটা থেকে মানুষ দীর্ঘমেয়াদে উপভোগ করতে পারবে যেমন মানুষকে শিক্ষিত করে যাওয়া কারণে শিক্ষা একজন থেকে আরেকজন করে করে ভবিষ্যতে চলতেই থাকবে। আর সেই অব্যাহত ধারার মতো দিয়ে আমরা ঠিকই থাকব সেটা মানুষ আমাদেরকে স্মরণ করুক বা না করুক। ধন্যবাদ।

Line Break Steem.png

শেষকথাঃ

লিখাটি পড়ে যদি কেউ উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে কমেন্টে জানাবেন। কারো ভাললাগা বা উপকৃত হওয়ার মাঝেই এই লিখার সার্থকতা। প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ সিরিজে আমার লিখা অন্য বিষয়গুলোর লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম। ভাল লাগলে সেগুলোও চোখ বুলিয়ে আসতে পারেন। ধন্যবাদ।
Line Break Steem.png

এই পোস্টের ১০% আয় @abb-charity তে শেয়ার করা হয়েছে।


এই সিরিজে আমার লিখা পূর্বের পোস্টগুলোর তালিকাঃ

পর্বপ্রসঙ্গ
০১সবার সম্মিলিত খুদ্র প্রয়াসে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ
০২একজন ফুটবল কিংবদন্তী ও ইতিহাস
০৩পড়ন্ত বিকেলে ছুটি খা দিঘীর পাড়ে
০৪করোনার অসুবিধাকে সুবিধায় রুপান্তর
০৫গ্রামে গ্রামে মোবাইল আসক্তি

Line Break Steem.png

এই পোস্টের লিখা কোথাও থেকে কপি করা হয়নি। কোন তথ্য বা ছবি অন্য কোন উৎস হতে নিয়ে থাকলে সোর্স দেয়া হয়েছে

Line Break Steem.png

আমি কেঃ

আমি সাইফুল বাংলাদেশ থেকে। পেশায় শিক্ষক এবং সাবেক ব্যাংকার। পড়াশুনা করেছি প্রকৌশলবিদ্যায়। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি ব্লগে শেয়ার করতে ভালবাসি। স্টিম এ ২০১৯ সাল থেকে নিয়মিত লিখালিখি করে আসছি। আমি টেক্সটাইল, অনলাইন অর্থ উপার্জন, কৃষি, প্রযুক্তি, রান্না, ও জীবন্ঘটিত অন্যান্য আরো কিছু বিষয় নিয়ে লিখি। প্রকৃতির পাশাপাশি যাওয়ার জন্য ঘুরে বেড়ানো এবং ক্রিকেট খেলা আমার শখ। আমি সর্বদা একজন শিক্ষানবিস এবং সবার থেকে শিখতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, আমার জ্ঞান ও লিখা থেকে একজনও যদি উপকৃত হল বা নতুন কিছু শিখতে পারে তবেই আমার ব্লগে লিখালিখি সার্থক

Line Break Steem.png

Intro Steem.gif

ভোট দিন, মতামত থাকতে মন্তব্য করুন, পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং আমাকে ফলো করুন @engrsayful

Line Break Steem.png

অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ

FacebookTwitterInstagram
YoutubeThreeSpeakDTube


Amar Bangla Blog Logo.png


Sort:  
 3 years ago 

আপনি যথার্থ বলেছেন। আমরা তো চিরকাল বেঁচে থাকব না। কিন্তু আমাদের কর্মগুলো চিরকাল বেঁচে থাকবে। হোক সেটা মন্দ বা ভালো।

 3 years ago 

এটা চিন্তা করা উচিত আমাদের। কত যুদ্ধ, হিংসা, দ্বন্দ্ব পৃথিবীতে। এগুলো কিছুই থাকবে না এভাবে চিন্তা করতে পারলে।

 3 years ago 

সব ক্ষেত্রে পজিটিভ মাইন্ডসেট থাকাটা জরুরি।ভালো লিখেছেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 68854.36
ETH 3283.36
USDT 1.00
SBD 2.67