প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গঃ পর্ব ০৪ || করোনার কারনে পাওয়া কিছু সুবিধা
ভূমিকাঃ
মাঝে মাঝে আমাদের চারপাশের জীবন, প্রকৃতি, পরিবেশ, সৌন্দর্য ও নানাবিধ বিষয় নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হয় যেসব লিখার বিষয়বস্তুকে কোন নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে ফেলা যায় না। এরকম বিষয়বস্তুগুলোকে নিয়ে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি
-তে আমি একটি সিরিজ লিখছি যার নাম দিয়েছি প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ
যেখানে কোন বিষয় বা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাক্তিগত মতামত ও পর্যালোচনা করে থাকি। এই লিখার বিষয়গুলো হচ্ছে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির সমন্বয়। পড়ে দেখুন, আশা করি ভাল লাগবে।
পর্ব ০৪: করোনা পরিস্থিতির মাঝেও কিছু ভাল দিক
প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গটিঃ
করোনা পরিস্থিতি আমাদের জন্য একটি খারাপ সময়। এটা একটা নেগেটিভ বিষয় আমাদের জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে। এই পরিস্থিতিতে দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং শিক্ষকরা ও ছাত্রছাত্রীরা অনেকটা কাজবিহীন অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ পড়াশুনার কাজে অল্প সময় ব্যয় করা আর বাকি সময়টা ফ্রী। এই ফ্রি সময়টাকে আমরা একটা শক্তিতে বা সম্ভাবনাময় সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।
করোনার এই সময়টাতে যারা অবসরে রয়েছি অর্থাৎ অফিস করতে হচ্ছে না বা কোন আগের মত অধিক কাজ তেমন করতে হচ্ছে না তাদের জন্য আমি কয়েকটি পরামর্শ নিয়ে আজকের এই পোস্টটি সাজিয়েছি।
দক্ষতা বৃদ্ধি
এই সময়টাতে যেহেতু আমাদের হাতে তেমন কোন কাজ নেই এবং হাতে সময় আছে তাই আমরা চাইলেই এই সময়টাকে দক্ষতা বৃদ্ধির কাজে লাগাতে পারি। দক্ষতা এমন একটা বিষয় যেটা আমরা যত বেশি বৃদ্ধি করতে পারবো আমাদের কাজ করার ক্ষেত্রে ততই গতি আসবে এবং আমরা খুব ইফিসিয়েন্টলি কাজ করে ফেলতে পারব। অর্থাৎ কোন একটা কাজের ক্ষেত্রে যার দক্ষতা বেশি সে কাজটি অনেক দ্রুত এবং সহজে কম সময়ে করে ফেলতে পারে।
আমরা অনেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাথে জড়িত আছি এবং সেই পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট দক্ষতাগুলো যদি আমরা অর্জন করতে পারি তাহলে সেখানে আমাদের জন্য কাজ করার অনেক সুযোগ তৈরি হবে। উদাহরণস্বরূপ কেউ যদি শিক্ষকতায় থাকে সে এখন চাইলে শিক্ষার সাথে জড়িত যে বিষয়গুলো রয়েছে সেই বিষয়গুলোতে তার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে যেমন ভাষাগত দক্ষতা, উচ্চারণ কিংবা প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার দক্ষতা যেমন এক্সেল, ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট, এনিমেশন, এডিটিং ইত্যাদি।
আবার অনেকেই আছে হয়তোবা অনলাইনে কিছু আয় করতে চাচ্ছে বা পার্টটাইম কোন কাজ করে জীবিকা অর্জন করতে চাচ্ছে। তারাও চাইলে ওয়েব ডেভলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন অথবা অন্য যে কোন কাজ যেটা সে পছন্দ করে বা করতে চায় সেটা খুব সহজেই অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে শিখে নিতে পারছে।
অনেকেই আছে যারা ভাষা শিখতে চাই বা এরাবিক, ইংলিশে তার দক্ষতাটা আরেকটু বাড়িয়ে নিতে চায়। তারাও চাইলে খুব সহজে এখন বিভিন্ন ইউটিউব এর সহযোগিতায় তাদের এসব চাহিদাগুলো পূরণ করে নিতে পারে এই অবসর সময়ে।
যখন আমাদের অফিস থাকে তখন আমরা কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকি এবং আমাদের হাতে পরিবারকে সামলিয়ে আর তেমন সময় থাকে না যা দিয়ে আমরা অনেক বেশি দক্ষতা অর্জন করতে পারব। তাই এখন যেহেতু সময় আছে চাইলে আমরা আমাদের কিছু দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠতে পারি এবং সেই দুর্বলতাগুলোতে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যামে সামর্থতে রুপান্তর করতে পারি। এই অবসরকে কাজে লাগানোর এটাই হচ্ছে উত্তম সময়।
তাই যে যেভাবে পারেন নিজের যে দুর্বলতাগুলো রয়েছে এবং এগুলোকে কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করাটা হবে এখনকার সবচেয়ের সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ যখন আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে তখন অনেক ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে সময় অতিবাহিত করতে হবে। সে সময়ে দক্ষতা বৃদ্ধি বা নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার কোন সময় পাওয়া যাবে না।
পরিবারকে সময় দেওয়া
আমরা যারা একটু ব্যস্ত থাকি এবং অফিসে অনেক বেশি সময় দেয়া হয় তাদের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারকে সময় দেয়ার জন্য আলাদা করে সময় বের করাটা সম্ভব হয় না। যেমন মার্চেন্ডাইজাররা নাকি সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস যাওয়ার সময় দেখে বাচ্চা ঘুমাচ্ছে এবং যখন অফিস থেকে ফিরে আসে তখনও বাচ্চা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। তাই বাচ্চার সাইজ লম্বালম্বি কখনো দেখাতে পারেনা বরং প্রস্থ আকারে দেখিয়ে থাকে। কিন্তু এখন আমি অনেক আমার বন্ধুকে দেখছি যারা বাসায় বসে অফিস করছে। সুতরাং এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় ও সুযোগ পরিবারের কাছে কিছুটা সময় কাটানোর এবং পরিবারকে যতটা সম্ভব মন খুলে সময় দেওয়ার। যত আমরা পরিবারকে সময় দিব ততই আমাদের পরিবারের বন্ধন গুলো অনেক দৃঢ় হবে আর এভাবে করে পরিবারিক কাঠামোটা গড়ে উঠবে যা সামাজিক কাঠামো এবং দেশীয় কাঠামোকে মজবুত করবে। পরিবার তথা সমাজে শান্তি বিরাজ করবে। তাই এটাই হচ্ছে উপযুক্ত সময় পরিবারকে নিয়ে অনেক অনেক মজা করা এবং সময় কাটানোর।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
যেকোনো কাজের পেছনে সফলতা নির্ভর করে পরিকল্পনার উপর তাই এখন সময়টা হতে পারে পরিকল্পনার। আমরা চাইলে খুব সহজে এখন থেকেই পরিকল্পনা করে ফেলতে পারেন যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কি কি ক্ষেত্রে, কি কি কাজ করা যাবে। অর্থাৎ আমাদের হাতে যে সকল কাজের পেন্ডিং লিস্ট রয়েছে সেটার একটা সুন্দর তালিকা করে পরিকল্পনামাফিক সাজিয়ে ফেলতে পারেন যে, আপনি কি করতে চাই এবং কোনটা কিভাবে, কখন করতে চাচ্ছেন। এটা পরিকল্পনা করার একটা সুবর্ণ সুযোগ কারণ হাতে অফুরন্ত সময় থাকার দরুন সহজেই সট (SWOT) এনালাইসিস করতে পারবেন ও প্লানিং টা পরিপক্ক হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আবার সেই পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যেতে পারবো এবং সেটা হবে অনেক ফল্প্রসু একটি বিষয়।
শারীরিক ব্যায়াম
করোনা পরিস্থিতিতে বাইরে যেতে বারণ কিন্তু আমাদের নিজেদের ফিটনেস লেভেল কে ধরে রাখার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের ইয়োগা অথবা ফিটনেস সংক্রান্ত কাজ ঘরে বসে করে ফেলতে পারি। আমরা যেখানে যে অবস্থায় থাকি না কেন আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই খাবার এবং পরিশ্রমের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। আমরা আমাদের খাবার-দাবার কে নিয়ন্ত্রণ করে যদি ফিট থাকতে পারি এবং কিছুটা সময় ব্যায়াম করে কাটাই তাহলে আমাদের শরীর এবং মন দুটোই ভাল থাকবে। অযথা বাড়তি টেনশন করে কিংবা কোনো কিছুর পিছনে অযথা সময় দিয়ে আমরা ডাক্তারের বিল না বাড়িয়ে চলুন শারীরিক ব্যায়ামের দিকে গুরুত্ব দেই এবং এখন সময় নেট থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যায়াম শিখে নেওয়া এবং সেই ব্যায়ামগুলো প্রতিদিন অনুশীলন করা। যদি আমরা এটা করতে পারি তাহলে আমাদের জন্য শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটা অনেকটাই সহজ হবে সেইটা এই পরিস্থিতিতেও।
হাদিসে এরকম একটি কথা বলা আছে যে, অবসরকে ব্যস্ততা আসার আগেই কাজে লাগানো উচিত।
শেষকথাঃ
লিখাটি পড়ে যদি কেউ উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে কমেন্টে জানাবেন। কারো ভাললাগা বা উপকৃত হওয়ার মাঝেই এই লিখার সার্থকতা। প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ সিরিজে আমার লিখা অন্য বিষয়গুলোর লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম। ভাল লাগলে সেগুলোও চোখ বুলিয়ে আসতে পারেন। ধন্যবাদ।
এই সিরিজে আমার লিখা পূর্বের পোস্টগুলোর তালিকাঃ
পর্ব | প্রসঙ্গ |
---|---|
০১ | সবার সম্মিলিত খুদ্র প্রয়াসে এগিয়ে যাক বাংলাদেশ |
০২ | একজন ফুটবল কিংবদন্তী ও ইতিহাস |
০৩ | পড়ন্ত বিকেলে ছুটি খা দিঘীর পাড়ে |
এই পোস্টের লিখা কোথাও থেকে কপি করা হয়নি। কোন তথ্য বা ছবি অন্য কোন উৎস হতে নিয়ে থাকলে সোর্স দেয়া হয়েছে
আমি কেঃ
ভোট দিন, মতামত থাকতে মন্তব্য করুন, পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং আমাকে ফলো করুন @engrsayful
অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ
Youtube | ThreeSpeak | DTube |
অনেক শিক্ষনীয় এবং তর্থ ভিঠিক ।সচেতনমূলক পোস্ট। ধন্যবাদ