প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গঃ পর্ব ০৯ || অনলাইন পরীক্ষা রস (Online Exam Jokes)[১০% স্বত্বভোগী @shy-fox]
ভূমিকাঃ
মাঝে মাঝে আমাদের চারপাশের জীবন, প্রকৃতি, পরিবেশ, সৌন্দর্য ও নানাবিধ বিষয় নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হয় যেসব লিখার বিষয়বস্তুকে কোন নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে ফেলা যায় না। এরকম বিষয়বস্তুগুলোকে নিয়ে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি
-তে আমি একটি সিরিজ লিখছি যার নাম দিয়েছি প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ
যেখানে কোন বিষয় বা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাক্তিগত মতামত ও পর্যালোচনা করে থাকি। এই লিখার বিষয়গুলো হচ্ছে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির সমন্বয়। পড়ে দেখুন, আশা করি ভাল লাগবে।
পর্ব ০৯ || অনলাইন পরীক্ষা রস:
করোনা পরিস্থিতির কারণে একটা দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল কলেজ গুলো বন্ধ রয়েছে। তবে স্কুল-কলেজে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম চালু রয়েছে। এমতাবস্থায় পরীক্ষা অনেক দিন ধরে বন্ধ থাকাতে বেশকিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেছে। অনলাইন পরীক্ষার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় চ্যালেঞ্জিং। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নেটওয়ার্ক এবং যারা এটা সাথে সংশ্লিষ্ট আছে তাদের কারিগরি দক্ষতা। এ দুইটা বিষয়কে সমন্বয় করতে না পারলে অনলাইন পরীক্ষা ভয়াবহ রূপ নিয়ে আসতে পারে। গত সপ্তাহজুড়ে অনলাইন পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলাম তাই বেশ কিছু নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং অনেকগুলা হাসির ঘটনা ঘটেছে। তো আজকে শুধুমাত্র হাসির কয়েকটা ঘটনা শেয়ার করব।
ঘটনা একঃ
অনলাইনে লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে খাতা জমা দিতে হয়। আর খাতা জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা আপলোডের লিংক তৈরী করে দেয়া হয়। সে লিংকে একটা নির্দিষ্ট ফরমেটের ফাইল আপলোড করা যায়। এরকম অনেককে দেখা গেছে নির্দিষ্ট ফরম্যাটের ফাইল এর পরিবর্তে অন্য কিছু আপলোড করে দিয়েছে। অর্থাৎ পরীক্ষার তাড়াহুড়োতে কোনটা সিলেক্ট করতে হবে সেটাই ভুলে গেছে।
ঘটনা দুইঃ
পরীক্ষার উত্তরপত্র সাবমিট করার ক্ষেত্রে লিংক মোতাবেক সাবমিট করাটা জরুরী। কিন্তু হঠাৎ করেই কিছু ছাত্র বলে ওঠে স্যার আমিতো লিঙ্ক এ আপলোড করতে পারছি না। তো শিক্ষক যখন বলেন তুমি আমাকে মেইল করে দাও। তারপরে তার উত্তর আমি তো স্যার মেইল করতে পারিনা। এর পরে বলে হোয়াটসঅ্যাপ করো তাহলে। এবার তার যথারীতি উত্তর, আমি স্যার এটাও পারিনা। এখন শিক্ষক আর কি বলবেন। বেহুশ প্রায়।
ঘটনা তিনঃ
যারা যথাসময়ে অনলাইন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি অথবা খাতা সাবমিট করতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের পরবর্তী দিনে রিটেক পরীক্ষা অর্থাৎ ভাইবা নেয়া হবে। তো এক ছাত্র ভাইভা তে অংশগ্রহণ করবে। তাকে জুম-এ যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সে যুক্ত হয়ে স্যারদের কোন কথাই শুনতে পাচ্ছেনা। কথা শুনছে না তো শুনছেই না। মাইক্রোফোন চালু করতে হবে সেটিও সে বুঝতে পারছে না। এখন কিভাবে শিক্ষক তাকে মাইক্রোফোন চালু করা শেখাবেন কারণ শিক্ষকের কথা তো সে শুনতেই পারছে না। চ্যাটে কিছুক্ষন চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এবার শিক্ষকের মাথায় হাত। কি হবে, কিভাবে হবে।
ঘটনা চারঃ
অনলাইন পরীক্ষাতে লেখালেখি করার সময় জুম প্লাটফর্মে অথবা অনলাইন যে কোন প্লাটফর্মে ছাত্রদেরকে ক্যামেরার সামনে বসতে হয়। এক্ষেত্রে নির্দেশনা ছিল যাতে করে তার চেহারা, খাতা এবং ডানে-বামে কিছুটা অংশ দেখা যায়। প্রশিক্ষকরা দেখে দেখে যাদের অবস্থানগত সমস্যা রয়েছে সেটা ঠিক করে দিচ্ছেন। এবং বলে দিচ্ছেন কার কার সমস্যা আছে সে যেন ক্যামেরাকে ঠিক ঐভাবে সেট করে। তো এক ছাত্র হঠাৎ করে বলে উঠলো, স্যার আমার ক্যামেরার অবস্থান কি ঠিক আছে। আমাকে কি ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছেন। এই প্রশ্ন যখন আসছে যখন সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে এবং পরীক্ষা চলছে। স্যার খুব গম্ভীর ভাবে উত্তর দিলেন এমন প্রশ্ন কখনোই করবেনা। তুমিতো নিজেই দেখতে পাচ্ছ তোমাকে কেমন দেখা যাচ্ছে। পরীক্ষা চলছে যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে তোমাকেই জানানো হবে যে তোমার সমস্যা আছে। কৌতুহলী ছাত্র এবার চুপ।
ঘটনা পাঁচঃ
কিছু অতি কৌতুহলী ছাত্র আবার পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ ঘণ্টা পর রাতের সাড়ে ১১ টার দিকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে স্যার আমার খাতা কি সাবমিট হয়েছিল। যেখানে উত্তরপত্র কেবলমাত্র লিংকে সাবমিট করলেই যথেষ্ট সেখানে আরেক কৌতুহলী ছাত্র অনলাইন লিংকে, হোয়াটসঅ্যাপে, এবং ইমেইলে উত্তরপত্র পাঠানোর পরে বিকেলবেলা ফোন করে জিজ্ঞেস করে স্যার আমারটা কি সাবমিট হয়েছিল। এবার আপনারাই বলুন তাকে কি বলা যায়।
এরকম নানা বিধ ঘটনার মধ্য দিয়ে চলে যাচ্ছে অনলাইন পরীক্ষা। আগামী দুই সপ্তাহ চলবে এবং আগে আগে আরো কি কি দেখতে হবে তাই ভাবছি। মাঝে মাঝে মনে হয় এদের এসব কান্ড কারখানা দেখে কি হাসবো নাকি কান্না করব। আপনারাই বলুন কি করা উচিত।
শেষকথাঃ
লিখাটি পড়ে যদি কেউ উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে কমেন্টে জানাবেন। কারো ভাললাগা বা উপকৃত হওয়ার মাঝেই এই লিখার সার্থকতা। প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ সিরিজে আমার লিখা অন্য বিষয়গুলোর লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম। ভাল লাগলে সেগুলোও চোখ বুলিয়ে আসতে পারেন। ধন্যবাদ।
এই সিরিজে আমার লিখা পূর্বের পোস্টগুলোর তালিকাঃ
এই পোস্টের লিখা কোথাও থেকে কপি করা হয়নি। কোন তথ্য বা ছবি অন্য কোন উৎস হতে নিয়ে থাকলে সোর্স দেয়া হয়েছে
আমি কেঃ
ভোট দিন, মতামত থাকতে মন্তব্য করুন, পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং আমাকে ফলো করুন @engrsayful
অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ
Youtube | ThreeSpeak | DTube |
ভাই আপনার গল্প গুলো সবসময়ই শিক্ষনীয় হয়। তবে আজ আপনার অনলাইন
পরীক্ষার ঘটনাগুলো শুনে খুব হেসেছি। আসলেই আমরা এখনো এসব প্রযুক্তি ব্যবহার জানি না।
এই সমস্যার জন্য খুব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভাই।
😢😢
অনলাইনে পরীক্ষাগুলো না নিয়ে দেশের সব কার্যক্রম চালু হয়ে গেল তখন নেওয়া উচিত ছিল। তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পারত। এত সুন্দর পোস্ট লেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আসলে ওদের বেশকিছু সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অনলাইনে হলে কিছুটা আগানো যায়।
এইযুগে মেইল করতে পারেনা বা Whatsapp করতে পারে এগুলো গল্প দেয়। এদেরকে বলা উচিত তুমি বাড়ি এসে দিয়ে যাও। তাহলে ঠেলা বুঝবে
ভাই আপনার পোস্টগুলি সবসময় শিক্ষনীয় হয়। খুব গোছালো ভাবে দারুন তর্থ দিয়ে তুলে ধরেছেন। অনেক শুভেচ্ছা ভাই।
আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল দাদা