প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গঃ পর্ব ২৫ || ৫০টি কম্বল বিতরন || Blanket Donation [10% @shy-fox]
ভূমিকাঃ
মাঝে মাঝে আমাদের চারপাশের জীবন, প্রকৃতি, পরিবেশ, সৌন্দর্য্য ও নানাবিধ বিষয় নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হয় যেসব লিখার বিষয়বস্তুকে কোন নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে ফেলা যায় না। এরকম বিষয়বস্তুগুলোকে নিয়ে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি
-তে আমি একটি সিরিজ লিখছি যার নাম দিয়েছি প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ
যেখানে কোন বিষয় বা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাক্তিগত মতামত ও পর্যালোচনা করে থাকি। এই লিখার বিষয়গুলো হচ্ছে ব্যাক্তিগত শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির সমন্বয়। পড়ে দেখুন, আশা করি ভাল লাগবে।
পর্ব ২৫ : অসহায়দের মাঝে ৫০টি কম্বল বিতরনের উদ্যোগ
আমরা এই পৃথিবীতে খুব বেশি দিন বেঁচে থাকব না। তাই আমাদের উচিত এই পৃথিবীতে যতদিন আছে ততদিন ভালো কাজের সাথে থেকে নিজেদের সময়টাকে উপভোগ করা এবং মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করা। আমরা যারা সামর্থ্যবান আজি তাদের উচিত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা। সেই ধারণা থেকে আমার কর্মস্থলের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে এবং আমি সেই প্রতিষ্ঠানের একজন মুখপাত্র হিসেবে বিভিন্ন চ্যারিটি কাজকর্ম পরিচালনা করে আসছি। এই ছেলেটি কাজের মধ্যে অন্যতম তিনটি কাজ হচ্ছে বিনামূল্যে রক্তদান, দরিদ্র ও অসহায়দের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, এবং শীতবস্ত্র বিতরণ।
বাংলাদেশের বর্তমানের শীতকাল চলছে এবং এই সময়টাতে উত্তরবঙ্গে এবং দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে প্রচুর শীত অনুভূত হয় কারন একটা নির্দিষ্ট সময় জুড়ে শৈত্যপ্রবাহ থাকে। তাই আমাদের এই সংগঠনের উদ্যোগে এই বছর চারশত কম্বল বিতরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যে সংগঠনের কথা আমি বলছি সেটি আমি যে প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা শেষ করেছি সেই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয় পরিচালিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক কাজকর্মের জন্য অরাজনৈতিক সংগঠন।
গত দুই সপ্তাহ ধরে আমি অনলাইনে বিভিন্ন সময়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সাথে মিটিং করায় ব্যস্ত ছিলাম যাতে করে তাদেরকে শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য ফান্ড বা অনুদান প্রদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন ব্যাচের প্রতিনিধিদের সাথে পরবর্তীতে মিটিং করে প্রত্যেককে তাদের বেঁচে থেকে এই উদ্দেশ্যে অর্থ কালেকশনের জন্য দায়িত্ব বুঝিয়ে দেই। আর সেই মোতাবেক মাত্র 10 দিনের ব্যবধানে আমাদের হাতে বেশ কিছু অর্থ চলে আসে। সেই সুবাদে আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রার প্রথম ধাপের 200 কম্বল বিতরণের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে এবং এই ধারাবাহিকতায় আজকে আমার এলাকার আশেপাশে 50 জনকে পঞ্চাশটি কম্বল বিতরণ করেছি। বাকি 150 টি কম্বল খাগড়াছড়ি জেলায় বিতরণের জন্য পাঠানো হয়েছে।
আজকের ছবিতে আপনারা আমাকে দেখতে পাচ্ছেন যেখানে আমি এই কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে কম্বল বিতরণ করছি। মূলত শুরু থেকে ফান্ড সংগ্রহের যাবতীয় ব্যাপারটাতে আমি আর আমার এক বন্ধু নেতৃত্ব দিয়েছি। ফান্ডগুলো অনেক মানুষ অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী মিলে দিয়েছে কিন্তু এই কাজটাতে সংশ্লিষ্ট থাকতে পেরে এবং সময় দিতে পেরে আমার নিজের কাছে খুব ভালো লাগছে কারন আমাদের প্রচেষ্টার কারণে কিছু পরিবার আজকের শীতের মধ্যে কষ্ট পাওয়ার থেকে মুক্ত থাকবে। আমরা হয়তো তাদের শীতের কষ্ট একেবারে লাঘব করতে পারবো না তারপরও অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারব বলে বিশ্বাস করি কারণ এবার আমরা যে কম্বল পছন্দ করেছি সেটি অনেক ভালমানের। এই কাজটি আমরা প্রত্যেক বছর করে থাকি তবে এবার লক্ষ্যমাত্রাকে আমরা অনেকটাই বাড়িয়ে নিয়েছি কারণ গত বছর আমরা আড়াইশো কম্বল বিতরণ করেছি যেখানে এবছর 400 কম্বল বিতরণ করছি। প্রত্যেকটি কম্বলের ওজন হচ্ছে তিন কেজি এবং ডাইমেনশন হচ্ছে 90 ইঞ্চি বনাম 72 ইঞ্চি। তাই বুঝতেই পারছেন এবারের কম্বল অনেক ভালমানের যা যেকোনো একটি পরিবার অথবা ডাবল মানুষের জন্য শীত নিবারণে অনেক ভালো ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
যত বেশি পরিমাণে আমরা মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে পারবো তত বেশি আমাদের মাঝে ভালোলাগা কাজ করবে এবং আপনারা যারা এসব কাজে জড়িত আছেন তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন এই কাজগুলোর মাধ্যমে কত ভালো অনুভূতি আমরা অর্জন করতে পারে এবং বিভিন্ন মানুষ আমাদের জন্য বিভিন্ন সময়ের দোয়া করে থাকে। আর এই দোয়া গুলো মূলত আসে মন থেকে। এই কয়েকদিন থেকে আমি আমার সময় এবং অর্থ এখানে ব্যয় করেছি এবং এই কষ্টগুলো এবং সময় দেয়া গুলো আজকে মানুষের মুখের হাসি দেখে অনেকটাই বিলীন হয়ে গিয়েছে। তাই আমরা যত কষ্টই করে না কেন দিন শেষে এটা আমাদের জন্য একটা ভালোলাগার উপলক্ষ। এই কাজগুলো আমরা নিঃস্বার্থভাবে করে থাকি এবং প্রায় 13 বছর ধরে এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
আসলে এই রকম কাজে যখন আপনি নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবেন তখন মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে আপনার কাছে যে অনুভূতি আসবে সেটা অন্য কোন কাজের মাধ্যমে আপনার আসবেনা। আজকে দোস্ত এই পরিবারগুলো আমাদেরকে যেরকম মন থেকে দোয়া করেছে এবং তাদের হাসিমাখা মুখ দেখে সত্যিই এরকম কাজ করতে অনেক বেশি পরিমাণে ইচ্ছা করে। সবার মাঝে আজকে এ বিষয়টি এজন্য শেয়ার করলাম যাতে করে আপনারা এরকম কার্যক্রমের সাথে নিজেদেরকে সংশ্লিষ্ট করার ব্যাপারে আরো বেশি উদ্যোগী হতে পারেন এবং এরকম কাজ করে নিজেদের সময়টাকে অনেক ভালোভাবে কাজে লাগিয়ে অনেকগুলো অনুভূতি নিয়ে এই পৃথিবীতে অনেক দিন বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে পারেন। ধন্যবাদ
এই সিরিজে পূর্বের পোস্টগুলোর তালিকাঃ
আমি কেঃ
মানুষ মানুষের জন্য। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পাড়াতেই মানব জীবনের সার্থকতা। দোয়া রইল আপনার প্রতি। আপনার সকল ভালো কাজে তিনি যেন সফলতা দান করেন
ধন্যবাদ ভাই আপনাকে
ভাইয়া আপনার এই ব্যাপারটি আমার কাছে খুব সুন্দর লেগেছে। আসলে আমাদের মধ্যে আমরা সবাই যদি সবকিছু এইভাবে করে ভাবতাম তাহলে হয়তো আমাদের দেশের গরীব দুঃখী রা এতো কষ্ট পেত না! আর আরেকটি ব্যাপার আমার কাছে অনেক বেশি ভাল লেগেছে যে আপনি এমন ভাবে ছবিগুলো দিয়েছেন যাতে কারো মুখ দেখা না যায়। বিশেষ করে যারা অনুদান গুলো নিচ্ছে তাদের মুখ যেনো দেখা না যায়। এটা আমার কাছে খুব বেশি ভালো লেগেছে।
ভাই আপনারা খুবই সুন্দর একটি কাজ করেছেন। এই শীতের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেছেন। এটি সত্যিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা কম্বল পেয়েছে তারা অনেক খুশি হয়েছে। মানবতার সেবায় আমাদের প্রত্যেকেরই এগিয়ে আসতে হবে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।