প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গঃ পর্ব ০৭ || প্রতিযোগিতা নাকি প্রতিদ্বন্দ্বিতা (Competition or rivalry)
ভূমিকাঃ
মাঝে মাঝে আমাদের চারপাশের জীবন, প্রকৃতি, পরিবেশ, সৌন্দর্য ও নানাবিধ বিষয় নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হয় যেসব লিখার বিষয়বস্তুকে কোন নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে ফেলা যায় না। এরকম বিষয়বস্তুগুলোকে নিয়ে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি
-তে আমি একটি সিরিজ লিখছি যার নাম দিয়েছি প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ
যেখানে কোন বিষয় বা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাক্তিগত মতামত ও পর্যালোচনা করে থাকি। এই লিখার বিষয়গুলো হচ্ছে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির সমন্বয়। পড়ে দেখুন, আশা করি ভাল লাগবে।
পর্ব ০৭ : প্রতিযোগিতা নাকি প্রতিদ্বন্দ্বিতা
প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গটিঃ প্রতিযোগিতা নাকি প্রতিদ্বন্দ্বিতা
এই শব্দ দুটি অনেকেই হয়তোবা একই রকম অর্থ করে ব্যবহার করেন কিন্তু এই দুটি শব্দের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে আর সেই পার্থক্যগুলোর জন্য আমরা এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন শব্দ প্রয়োগ করা উচিত। আসুন আজকে এই শব্দ দুটি নিয়ে সম্বন্ধে কিছু কথা বলা যাক।
আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক জীবনে অথবা কর্ম, শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সাথে যারা থাকেন তাদের সাথে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যের জন্য প্রতিযোগিতা করতে হয়। যেমন একটা ক্লাসে ৫০ জন ছাত্র আছে এবং সবাই কিন্তু ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করার জন্য চেষ্টা করছে। এইদিন থেকে সবাই সবার প্রতিযোগী। আবার কোন একটা খেলার মাঠে প্রত্যেকটা খেলোয়াড় চায় প্রতিপক্ষ দল কে যেকোনো ভাবে হারিয়ে খেলায় জয় লাভ করতে। আবার অনেক সময় একই দলের খেলোয়াড় কে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য অন্য খেলোয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কর্মক্ষেত্রে কিংবা পারিবারিক জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এরকম আমাদের সহকর্মী কিংবা সমাজের অন্য ব্যক্তির সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এই প্রতিযোগিতা কখনোই খারাপ নয় কারণ জীবনের দৌড়ে আমাদেরকে অবশ্যই ভালো করার জন্য অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।
Source: Image by Free-Photos from Pixabay
কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে মনোভাব সেটাই হচ্ছে সমস্যা। অর্থাৎ কোন ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য আমরা দুইটা পথ অবলম্বন করতে পারি। একটা হচ্ছে নিজেকে উন্নত করতে করতে অন্যের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া। অথবা ওই ব্যক্তিকে টেনে ধরা। প্রথমটি হচ্ছে প্রতিযোগী মনোভাব আর দ্বিতীয়টি প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রতিদ্বন্দ্বিতা মানে আমার প্রতিযোগিকে কোন ভাবে তার পারফরম্যান্স থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারলে আমি তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবো, এই মনমানসিকতা। অর্থাৎ সহযোগী না হয়ে দ্বন্দ্ব করা। এই মনোভাব হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেটা কিনা সমস্যা। অর্থাৎ কাউকে পেছন থেকে টেনে ধরে তার পারফরম্যান্সের ক্ষতি করানো এবং সেই ফলশ্রুতিতে তাকে ছাড়িয়ে যাওয়া।
খেলাধুলা, কর্মক্ষেত্র শিক্ষাজীবন কিংবা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কখনো কাম্য নয়। উচিত ছিল প্রতিযোগিতা অর্থাৎ নিজেকে অন্যের চেয়ে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা মনোভাব থাকে তখন খেলার মাঠে একজন খেলোয়ার আরেকজন খেলোয়াড়দেরকে আঘাত করতে কুণ্ঠাবোধ করে না অথবা বিভিন্ন রকম চিটিং ও স্লেজিং করে থাকে। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ও চক্রান্ত করে প্রতিযোগী খেলোয়াড় কে অবনমন করানোর জন্য চেষ্টা করে যায়।
আবার এর ব্যতিক্রমও আমরা দেখতে পাই যে, প্রতিপক্ষ দল বিজয়ী হলে তাকে অভিবাদন জানানো কিংবা খেলাটাকে প্রতিযোগিতা হিসেবে নিয়ে কোন ভূল হলে নিজেই সেটা মেনে নেওয়া ও ছাড় দেওয়া। ফুটবল খেলায় অনেক সময় আমরা দেখি অহেতুক ও অসংগতভাবে ফাউল করা কিংবা রেফারির চোখকে ফাকি দিয়ে কোন অনিয়ম করার চেষ্টা। যদিও এটা খেলার কৌশন তবুও আমি বলব এটা প্রতিযোগিতার মনোভাব নয় বরং প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আবার ক্রিকেট খেলায় অনেক সময় আমরা দেখি আম্পায়ার আউট না দিলেও ব্যাটসম্যান খেলোয়ার সোজা হেঁটে ড্রেসিংরুমে চলে যান। এটা হল প্রতিযোগিতা ও ফেয়ার মনোভাব। অর্থাৎ আমি আউট হয়েছি আর আমি তা জানি। তাই এখানে ভিন্ন মনোভাব দেখানোর চেষ্টা না করাটাই ফেয়ার। ভাল করলে অন্য কোন একদিন জেতা যাবে এটাই হচ্ছে মনোভাব। সবসময় জয়লাভের মনমানসিকতা ভাল নয়। তবে প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে জয়লাভের চেষ্টা ও আশা করা ভাল।
Source: Image by Tumisu from Pixabay
আমরা আমাদের সামনে দুই ধরনের মনোভাবই দেখতে পাই। তবে কখনো প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া উচিত নয়। যখনই আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যাই তখন অন্যের ক্ষতি করার জন্য আমাদের কাছে অনেক মটিভ থাকে। কিন্তু যখন আমরা প্রতিযোগি হই তখন খেলাতেই মনোযোগ করি এবং নিজের পারফরম্যান্সের দিকে গুরুত্বারোপ করে সেই গুরুত্ব মোতাবেক নিজেদেরকে ভালো করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগী খেলোয়াড় বা প্রতিযোগী জয়লাভ করলেও আমরা এতে কখনো হতাশ হই না।
ক্লাশে ৫০ জন ছাত্র সবাই সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাবে এটাই হচ্ছে স্বাভাবিক ও প্রতিযোগিতা কিন্তু কোন ছাত্র যদি মনে করে, যে প্রথম স্থানে রয়েছে তাকে কোন ভাবে অসুস্থ করতে পারলে বা ভুল কিছু শিখিয়ে দিতে পারলে কিংবা তার পড়াশোনার বিঘ্ন ঘটাতে পারলে আমি তার স্থান দখল করতে পারব তাহলে এই মন মানসিকতা হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। যেটা কখনোই কোনো ক্ষেত্রে সমাজের যেকোনো কাজের জন্য কাম্য নয়।
আসুন আমরা সবাই জীবনের নানা ক্ষেত্রে প্রতিযোগী হওয়ার চেষ্টা করি প্রতিদ্বন্দ্বী নয়।
শেষকথাঃ
লিখাটি পড়ে যদি কেউ উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে কমেন্টে জানাবেন। কারো ভাললাগা বা উপকৃত হওয়ার মাঝেই এই লিখার সার্থকতা। প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ সিরিজে আমার লিখা অন্য বিষয়গুলোর লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম। ভাল লাগলে সেগুলোও চোখ বুলিয়ে আসতে পারেন। ধন্যবাদ।
এই সিরিজে আমার লিখা পূর্বের পোস্টগুলোর তালিকাঃ
এই পোস্টের লিখা কোথাও থেকে কপি করা হয়নি। কোন তথ্য বা ছবি অন্য কোন উৎস হতে নিয়ে থাকলে সোর্স দেয়া হয়েছে
আমি কেঃ
ভোট দিন, মতামত থাকতে মন্তব্য করুন, পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং আমাকে ফলো করুন @engrsayful
অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ
Youtube | ThreeSpeak | DTube |
ভাই আপনি গঠনমূলক ব্যাখা দিয়েছেন। আপনি প্রতিযোগিতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুই শব্দের তাৎপর্যপূর্ন আলোচনা করেছেন। আপনার লেখা খুব সুন্দর হয়েছে। অনেক কিছু শিখলাম আপনার লিখার দ্বারা। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনি অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন এটা জেনেই অনেক ভালো লাগছে এবং অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য
ভাই আপনার পোস্ট টা পড়ে মনে হচ্ছে সুন্দর একটি ক্লাস করে আসলাম। যেখানে প্রতিযোগিতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি পরিষ্কার করে উপস্থাপন করা হয়েছে। বস্তুত এর পূর্বে আমি এটা জানতামই না। ধন্যবাদ এরকম শিক্ষনীয় পোস্টের জন্য।
আপনি যেহেতু পূর্বে এ বিষয়টি জানতেন না তাই আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং একটা নতুন বিষয় শিখতে পেরেছেন। এটাই হচ্ছে ব্লগিং এর সার্থকতা এবং খুব ভালো লাগছে এ বিষয়টি জেনে যে আপনি এখান থেকে উপকৃত হয়েছেন।
জ্বী ভাই🙂
খুবই দুর্দান্ত একটি পোস্ট। দারুণ ভাবে ব্যাখা দিয়েছেন দুইটি বিষয়ে। শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
আপনাকেও ধন্যবাদ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য এবং আপনার জন্যও শুভকামনা রইল
!invest_vote