প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গঃ পর্ব ৪২ || কোচিং বানিজ্য ও এর স্বরুপ | Coaching Business [10% @shy-fox]
ভূমিকাঃ
মাঝে মাঝে আমাদের চারপাশের জীবন, প্রকৃতি, পরিবেশ, সৌন্দর্য্য ও নানাবিধ বিষয় নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হয় যেসব লিখার বিষয়বস্তুকে কোন নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে ফেলা যায় না। এরকম বিষয়বস্তুগুলোকে নিয়ে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি
-তে আমি একটি সিরিজ লিখছি যার নাম দিয়েছি প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ
যেখানে কোন বিষয় বা প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাক্তিগত মতামত ও পর্যালোচনা করে থাকি। এই লিখার বিষয়গুলো হচ্ছে ব্যাক্তিগত শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির সমন্বয়। পড়ে দেখুন, আশা করি ভাল লাগবে।
পর্ব ৪২ : বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নিয়ে কোচিং ও হোস্টেল বানিজ্য
জীবন প্রতিযোগিতাময় এ কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমাদের জীবনের সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ন সময় মনে হয় এইচএসসি পাশ করার পর বিশেষ করে যারা বাংলাদেশে থাকেন। আপনারা জানেন এইচএসসি পরীক্ষার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতির সময়টা সবার জন্যই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের অবস্থান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিশ্চিত করতে চান। আর এ কারণে সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলে এক প্রতিযোগিতা যা ভর্তিযুদ্ধ নামে পরিচিত।
গত মাসের ২০ তারিখে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন কোচিং এ ভর্তি হওয়ার একটা হিড়িক পড়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত এইচএসসির বই থেকেই প্রশ্ন করে থাকে তারপরও ছাত্রছাত্রীরা এ সময়টাতে কোচিং করে প্রস্তুতি নিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আর কোচিং সেন্টারগুলো বিভিন্নভাবে বলে থাকে তারা শর্টকাট টেকনিক শিখাবে এবং মডেল পরীক্ষা নিবে যাতে করে গাইডলাইন দেয়া যায় আর এ কারণে ইঞ্জিনিয়ারিং মেডিকেল ভার্সিটির জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং অব্যাহত থাকে।
এই কারণগুলোতে কোচিং সেন্টারগুলো এবং তার আশেপাশের বিভিন্ন হোস্টেলগুলো ব্যবসা করে থাকে প্রচুর। যেহেতু এই সময়টা প্রস্তুতির তাই সকল শিক্ষার্থী কোচিং করতে চায় এবং তাদের আবাসনের জন্য সমস্যা তৈরি হয়। এ কারনে এই সময়টাতে হোস্টেলগুলো এক ধরনের ব্যবসা জুড়ে দেয়। কিছুদিন আগে আমার ভাগ্নি কে ঢাকার একটি কোচিং এ ভর্তি করাতে নিয়ে গিয়েছিলাম এবং সেখানকার বিভিন্ন ফি ও হোস্টেলের অবস্থাগুলো দেখে আমি অনেক অবাক হয়েছি। আজকে আপনাদের মাঝে সেখান থেকে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করব তাহলে আপনারা বুঝতে পারবেন এটি কেমন অবস্থায় চলে গিয়েছে এখন।
মাত্র তিন মাসের কোচিংয়ের জন্য এক একটি কোচিং সেন্টার 16 থেকে 20 হাজার টাকা কোচিং ফি নিয়ে থাকে। আমার ভাগ্নিকে মেডিকেল এবং ভার্সিটির জন্য ভর্তি করিয়েছি যেখানে ডিসকাউন্ট সহ 21500 টাকা লেগেছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন এই সময়টাতে কতটা ব্যবসা কোচিং সেন্টারগুলো করে নিচ্ছে। এত বিশাল পরিমাণ ফি হওয়ার পরেও ছাত্র-ছাত্রীর অভাব নেই কারণ এ বছর এসএসসি পরীক্ষা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে ফলে সবারই রেজাল্ট ভাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সবাই কোচিং করে নিজেদেরকে ভর্তি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে নিতে চায়।
এ তো গেল কোচিংয়ের ব্যাপার। কোচিং এর আসেপাশে যেসব হোস্টেল গুলো রয়েছে সেগুলো আরেক বড়োসড়ো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদেরকে আত্মপ্রকাশ করে চলেছে। যেহেতু ছাত্রীরা গ্রাম থেকে শহরে এসে কোচিং করে তাই তাদের আবাসন সমস্যাটা অনেক বড় একটি সমস্যা। যদি আবাসন ঠিকঠাক না থাকে তাহলে কোচিং করাই যাবে না। এরকম খুব কম পরিবারই হয়ে থাকে যাদের আত্মীয়-স্বজন বা নিকটাত্মীয় শহরে থাকে যেখানে থেকে তিন-চার মাস কোচিং করা যাবে। তাই গ্রাম এবং বিভিন্ন মফস্বল থেকে আসা ছেলে মেয়েদেরকে অবশ্যই হোস্টেলে থাকতে হয় বিশেষ করে মেয়েদেরকে অবশ্যই। ছেলেরা নিজেরা মিলে আবাসন করে থাকতে পারলেও মেয়েদের জন্য হোস্টেলে অবস্থান করাটাই হচ্ছে নিরাপদ কারণ অভিভাবকরা নিরাপত্তার ব্যাপারটি সবকিছুর আগে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
যেসব নামকরা হোস্টেল ছাত্রী হোস্টেল রয়েছে সেগুলোতে আগে আমি কথা বলেছিলাম ফোনের মাধ্যমে পরে তাদের ফি শুনে আমি রীতিমত অবাক হয়ে গিয়েছিলাম কারণ প্রত্যেক মাসে শুধুমাত্র থাকা-খাওয়ার জন্য ৯,০০০ টাকার মত ফি ধার্য করেছে। এর বাইরে শুধু মাত্র হোস্টেলে ওঠার জন্য ফি দিতে হবে ৮,০০০ টাকা যেটা এককালীন এবং অফেরতযোগ্য। আমি এ বিষয় নিয়ে মালিক পক্ষের সাথে কথা বলেছিলাম। তারা বলেছিল, তাদেরকে এসব হোস্টেলগুলোর জন্য সারা বছর ব্যাপী ভাড়া নিয়ে রাখতে হয় এবং মাত্র তিন-চার মাস সময় শিক্ষার্থীরা থাকে তাই বাকি সময়টা প্রায় ফাঁকা থাকে। এজন্য এই সময়টাতে তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে সেটাকে পুষিয়ে দেন। সেই কথা কতটা সত্য আমি জানিনা তারপরও ৮,০০০ টাকার ব্যাপারটা সত্যিই অনেক বেশি।
আর কেবলমাত্র থাকা-খাওয়ার জন্য যদি ৯,০০০ টাকা হয় তাহলে এই বিশাল পরিমাণ খরচ একটা সাধারন পরিবারের জন্য যোগাড় করাটা সত্যিই অনেক কষ্টকর একটি ব্যাপার। এই পরিস্থিতিতে যে সকল পরিবার মধ্যবিত্ত রয়েছে এবং খুব কষ্ট করে দিনযাপন করতে হয় তাদের জন্য এই রকম উচ্চ ব্যয় নির্বাহ করে নিজেদের ছেলেমেয়েদের কে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা অনেক কষ্টকর ব্যাপার।
এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমরা এই ব্যবস্থার জন্যই অনেক শিক্ষার্থীদের কে হারিয়ে ফেলবো। এইচএসসি পরীক্ষাতে যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হয় প্রায় একইরকম পরীক্ষার পদ্ধতি যদি ভর্তি পরীক্ষা গুলোতে শুরু করা যায় তাহলে এই সব কোচিং ছাড়াই মূলত এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার মতো করে শিক্ষার্থীরা ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারবে। যেহেতু সিলেবাস এইচএসসি এর মূল সিলেবাস তাই এটিকে নীতি নির্ধারকরা বসে একটা সরল এবং সহজীকরণ পদ্ধতি করতে পারলে তা আমাদের সবার জন্য কল্যাণকর হবে কারণ যারা শিখতে চায় এবং পড়াশোনা করতে চায় তাদের উপর এরকম একটি বোঝা চাপিয়ে দেয়াটা সত্যিই কষ্টকর বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সত্যিই এটি অনেক অমানবিক একটি ব্যাপার। এই টাকাটা জোগাড় করতে তাদেরকে অনেক হিমশিম খেতে হবে।
আমাদের যারা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক রয়েছেন তাদের উচিত এই ব্যাপারগুলোতে হস্তক্ষেপ করা এবং একটা এমন পদ্ধতি নিয়ে আসা যাতে এই বানিজ্য না রোধ করা যায়। ধন্যবাদ।
প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ সিরিজে পূর্বের পোস্টগুলোর তালিকাঃ
প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ সিরিজে পূর্বের পোস্টগুলোর তালিকাঃ
আমি কেঃ
আমি সাইফুল বাংলাদেশ থেকে। পেশায় শিক্ষক ও সাবেক ব্যাংকার। পড়াশুনা করেছি প্রকৌশলবিদ্যায়। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি ব্লগে শেয়ার করতে ভালবাসি। প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়ানো এবং ক্রিকেট খেলা আমার শখ। আমি বিশ্বাস করি, আমার পোস্ট হতে একজনও যদি উপকৃত হতে পারেন বা নতুন কিছু শিখতে পারেন তাহলেই এই লেখালেখি সার্থক
Tweet
https://twitter.com/MDSAYFU28745859/status/1480232421689729029?s=20
কোচিং করাটা অপ্রাসংগিক হলেও অনেক টা সহযোগিতা হয় ভার্সিটি পরীক্ষা আর ডাক্তারি পরীক্ষার ক্ষেত্রে কারণ একটা সঠিক গাইডলাইন পাওয়া যায় নিজেকে টেস্ট করানোর অনেক সুযোগ থাকে।আবার দেখা যায় অনেকেই কোনো কোচিং ছাড়াই অনেক ভালো ভালো জায়গায় চান্স পাচ্ছে।এখন বিষয়টা হচ্ছে ছাত্র ছাত্রী রা যেভাবে বিষয়টাকে গুরুত্ব দেয় আরকি!করো কোচিং এর প্রয়োজন আবার করো নাও থাকতে পারে।কিন্তু সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে এই ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলো ( কোচিং) কাড়ি কাড়ি টাকা লুটে নিচ্ছে।যেটা আপনি আপনর পোস্ট এর মাধ্যমে খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন।🖤
জি, ঠিক বলেছেন আপনি
ভাই সত্যি বলতে আমিও এক সময় ভর্তি কোচিং করেছি। আসলে আমি মনে করি কারো যদি টাকার সমস্যা থাকে তাহলে এই সব কোচিং এ পড়ার কোনো যুক্তিই নাই। এখানে কিছু শীট দিবে আর প্রতিদিন সেগুলো পড়াবে। আর ক্লাশতো গণরোমে পরিণত হয়। প্রতিদিন সবাইকে পড়া ধরাও সম্ভব হয় না। মোট কথা যা পড়া নিজেকেই পড়তে হয়। কোচিং এ যাওয়ার জন্য যে টাইম নষ্ট হয় সেই টাইম পড়ার কাজে লাগালে আরো বেশী লাভবান হওয়া সম্ভব।
তাই আমি মনে করি, কোচিং না করেও অনেক ভাবে কোচিং এর শীট কালেক্ট করা সম্ভব। এই সব কালেক্ট করে বাসায় বসে পড়াটাই শ্রেয়। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। সবার মত এক হবে না এটাই স্বাভাবিক।
ধন্যবাদ ভাই, সময় উপযোগী পোস্ট টি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। ❤️❤️❤️❤️❤️
আমিও আপনার সাথে একমত।।আমি মনে করি শিট না নিয়েও প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব কারন এইচএসসি র বই হচ্ছে সিলেবাদ
জ্বি,ভাই ঠিক বলেছেন। এখন তো শর্ট সিলেবাস। বই ঠিক মতো পড়লে আর কি লাগে। আমার ছোট ভাইও ভর্তি পরিক্ষার্থী দোয়া করবেন। ❤️❤️
জি অবশ্যই
ভাইয়া সত্যি কথা বলতে আমি ছোট থেকেই ঢাকা বড় হয়েছি । প্রতিবছর ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার স্টুডেন্ট হুমরি খেয়ে পরে ভর্তি কোচিং গুলোর উপর । তার ফলশ্রুতিতে প্রচুর অর্থনৈতিক ব্যবসা করে কোচিং প্রতিষ্ঠানগুলো । বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ছাত্রছাত্রী দের থেকে তো দ্বিগুণ টাকা হাতিয়ে নেয় হোস্টেল গুলো । প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ চমৎকার একটি নতুন সিরিজ শুরু করেছেন ভাইয়া । 👌💓
কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে ব্যাঙের ছাতার মতো। আনাচে কানাচে কোথায় নেই এটি। স্কুল এবং কলেজের শিক্ষকগণ শ্রেনি কক্ষে ঠিক মতো পড়াতে চায়না এখানে কিছু অতিরিক্ত আয়ের আশায়। এখন এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যে ক্লাশ ওয়ান থেকে এগুলো শুরু হয়ে গেছে।
যাক আল্লাহ আমাদের বোঝার তৌফিক দিন।
ভালো বিষয় নিয়ে লিখেছেন ভাই।
অনেক ধন্যবাদ।
আগামী দিন কঠিন হতে পারে আমাদের জন্য যদি আমরা এই ব্যাপারটা ঠিক করতে না পারি
আসলে এগুলো আমাদের চিন্তা করা উচিত।
সমাজ আর শিক্ষা বানিজ্যের হাতে বন্দী।
ভাই এ বিষয়ে আর নতুন করে বলার কিছু নাই। আমরা এখন দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। পরিবর্তনের আশা রাখি কিন্তু নিজেরা কোন ভূমিকা রাখিনা।
যাই হোক বিষয়গুলো আপনি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।