গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষাঃ পর্ব ২০ | মূলের ভুমিকা পালন [10% for @shy-fox]
ভূমিকাঃ
ভূমিকাঃ
গল্পে গল্পে যখন আমরা কোনো কিছু শিখি তখন সেটা আমাদের মনে অনেকদিনের জন্য গেঁথে যায়। তাই গল্পে গল্পে কোন কিছু শিখার আনন্দ অন্যরকম। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি-তে আমি কয়েকটি সিরিজ লিখছি।
তার মধ্যে গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষা
সিরিজটি অন্যতম যেখানে একটি গল্প এবং এই গল্প থেকে আমাদের বাস্তব জীবনের শিক্ষামূলক কিছু দিক শেয়ার করে থাকি। গল্পগুলো মূলত ঈশপের গল্প বা অন্য কোন ছোট আকারের গল্প। আশা করি গল্পগুলো ও এর অন্তনিহিত শিক্ষা আপনার ভাল লাগবে।
Thumbnail Background Source: Image by Clker-Free-Vector-Images from Pixabay
পর্ব ২০: বাগান বিলাশের চারার গল্প || মূলের ভুমিকা পালন করা
প্রথমে গল্পটিঃ
প্রথমে গল্পটিঃ
আজকের গল্পটি সবার জন্যই অনেক বেশি শিক্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ তাই সবাই চেষ্টা করবেন মনোযোগ দিয়ে এই পোস্টটি পড়ার জন্য।
এক অভিজ্ঞ ও প্রবীণ শিক্ষক একবার তার ক্লাসের ছাত্রদেরকে ক্লাসরুম থেকে বাইরে নিয়ে এলেন। সেই রুমের বাইরে একটি বাগান বিলাসের চারা ছিল। সে বাগানবিলাসের জন্য ভবনটি অনেক সুন্দর দেখাচ্ছিল। বাগানবিলাসের চারার রঙিন ফুলে এবং পাতায় পুরো এলাকাটি খুব সুন্দর ও নান্দনিক দেখাচ্ছিলো।
শিক্ষক ছাত্রদের কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা এখানে যে বাগানবিলাসের চারাটি দেখতে পাচ্ছেন সেটি দেখতে খুব সুন্দর। এখন আমাকে বলুন, এই চারাটি এত সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠার পিছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি।
ছাত্ররা প্রথমে এরকম প্রশ্নে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন পরবর্তীতে একেকজন একেকরকম উত্তর দিলেন।
কেউ বললেন যিনি এই গাছটির বপন করেছেন, কেউ বললেন সূর্যের কথা, কেউ বললেন যিনি পরিকল্পনা করেছেন তার কথা, কেউ বললেন যিনি গাছটি নিয়মিত দেখাশোনা করেন তার কথা ইত্যাদি। অনেকে অনেক রকম উত্তর দিলেন।
এবার শিক্ষক বললেন আপনারা ঠিকই বলেছেন তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আপনারা সবাই মিস করে গেছেন। গাছের যে মূল রয়েছে সেটি মাটির নিচে রয়েছে এবং সে মাটির নিচ থেকে রস সংগ্রহ করে গাছের রন্দ্রে রন্দ্রে পাতায় পাতায় ছড়িয়ে দিয়ে গাছটিকে সজীব রাখছে। আপনারা যদি সেই মূলের দিকে একবার তাকান তাহলে দেখতে পারবেন সেই মূলটি আসলে দেখতে খুব সুন্দর নয় যা একেবারে ফ্যাকাশে এবং সাদা কিন্তু সবার অলক্ষ্যে থেকে সে মূলই মূলত গাছের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন এবং খাদ্য জুগিয়ে যাচ্ছে।
গল্পের শিক্ষাঃ
গল্পের শিক্ষাঃ
এই গল্পের শিক্ষাটি এবার শিক্ষক ছাত্রদেরকে ক্লাসে নিয়ে এসে বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে দিলেন। গল্পের শিক্ষাটি এরকম ছিলঃ প্রত্যেক পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে কিছু লোক থাকে যারা এই রকম মূলের ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ তাদের খুব বেশি চাহিদা থাকে না। তারা সৌন্দর্যমন্ডিত হতে চায় না এবং কাউকে দেখাতে চায় না যে, তারা উপকার করছে বা কাজ করছে। পরম নিঃস্বার্থভাবে তারা উপকার করে যায় এবং একটি পরিবারকে, সমাজকে এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
তারা সবসময় লোকচক্ষুর আড়ালে থাকে এবং পেছন থেকে সাপোর্ট দিয়ে যায় যাদেরকে আমরা সাধারনত দেখতে পাই না কিন্তু তাদের অবদানের জন্য একটি পরিবার ও সমাজ এবং রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে থাকে এগিয়ে যায়।
প্রত্যেকটা জায়গায় এইরকম মূলের ভূমিকা পালন করা কিছু লোক যখন থাকবে তখনই গাছ ফুলে ফলে পাতায় সজীব হয়ে থাকবে অন্যথায় মূল যদি দুর্বল হয় তাহলে গাছ খাদ্য পাবে না এবং ফুলে ফলে কখনো রঙিন হতে পারবে না। আর এই মূলের ভূমিকা পালন করাটা হচ্ছে সবথেকে কষ্টের কারণ যে এই ভুমিকা পালন করবে তাকে কষ্ট করে যেতে হবে কিন্তু এর জন্য কোন সুনাম বা মর্যাদা কিংবা মানুষের স্তুতি পাওয়া যাবে না। এ কারণেই যারা লোকচক্ষুর আড়ালে ভূমিকা পালন করে তারাই হচ্ছে প্রকৃত অবদান রাখার মানুষগুলো।
তাই এবার শিক্ষক ছাত্রদেরকে অনুরোধ করলেন যে, আপনারা এখান থেকে শিক্ষা জীবন শেষ করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিংবা বিভিন্ন জায়গায় নিজ নিজ কাজে বেরিয়ে পড়বেন।আপনারা যেখানেই যাবেন, ভালো থাকবেন তবে সব সময় গাছের মূলের সেই ব্যাপারটা মনে রাখবেন এবং অন্তত আপনি আপনার পরিবারের জন্য মূল এর ভূমিকা পালন করুন।
আপনি হয়তোবা এই সমাজের ভূমিকা পালন করতে পারবেন না কিংবা আপনাকে বলছি না যে, আপনি একটি দেশ পরিবর্তন করে ফেলুন। কিন্তু আপনি আপনার পরিবারের জন্য মূল এর ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং এখানে আমরা যারা আছি সবাই যদি আমাদের জায়গা থেকে আমাদের পরিবারের জন্য মূলেরর ভূমিকা পালন করতে পারি তাহলে আমাদের পরিবারগুলো অনেক ভালো থাকবে, ফুলে ফলে সজীব থাকবে।
পরিবারের ভূমিকা পালন করা মানেই কেবলমাত্র আর্থিক যোগান দেওয়া তা নয় বরং পরিবারকে সুশিক্ষা দিয়ে ভালো ভালো কাজের দিকে ধাবিত রাখা এবং পরিবারকে একটি আদর্শ পরিবার হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পরিশ্রম, চেষ্টা ত্যাগ-তিতিক্ষা এগুলো আপনাকে স্বীকার করতে হবে। যখন আপনি আপনার পরিবারের জন্য এইরকম মূলের ভূমিকা পালন করতে পারবেন তখন আপনাকে হয়তোবা কেউ দেখবে না বা মূল্যায়ন করবে না কিন্তু আপনার পরিবার একটি আদর্শ পরিবার হবে এবং সবার কাছে অনেক ভালো পরিবার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন আর এভাবে করেই আমরা এক একজন আমাদের জায়গা থেকে একটি পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার মাধ্যমে এই সমাজটাকে এবং সর্বোপরি দেশটাকে বদলে দিতে পারি।
শেষকথাঃ
শেষকথাঃ
আসুন আমরা অন্তত আমাদের পরিবারের জন্য মূল এর ভূমিকা পালন করে দেখাই। আশা করি গল্পের মাধ্যমে আপনি নতুন জিনিস শিখতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আমার লিখা অন্য গল্পগুলোর লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম। ভাল লাগলে সেগুলোও পড়ে আসতে পারেন। আমার লেখাটি এ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই সিরিজে আমার লিখা পূর্বের গল্পগুলোর তালিকাঃ
আমি কেঃ
আমি সাইফুল বাংলাদেশ থেকে। পেশায় শিক্ষক। পড়াশুনা করেছি প্রকৌশলবিদ্যায়। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি ব্লগে শেয়ার করতে ভালবাসি। আমি বিশ্বাস করি, আমার জ্ঞান ও লেখা থেকে একজনও যদি উপকৃত হতে পারেন বা নতুন কিছু শিখতে পারেন তবেই ব্লগে আমার লেখালেখি সার্থক |
---|
অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ
অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ
Youtube | ThreeSpeak | DTube |
ভাই অসাধারণ একটি শিক্ষনীয় গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন, এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি যখন গল্পটি পড়ছিলাম ঠিক শিক্ষক যখন ছাত্রদেরকে প্রশ্ন করলেন বাগানবিলাসের গাছটি এত সজীব কেন? আসলে আমিও আপনার গল্পটি সম্পূর্ণ না পড়ে উত্তর দিতে পারেনি অন্যান্য ছাত্ররা যেভাবে উত্তর দিলেন ঠিক সেভাবেই চিন্তা করছিলাম। পুরো গল্পটি পড়ে অনেক কিছু শিখতে পারলাম। গল্পটির শিক্ষা নিয়ে বুঝতে পারলাম যে আসলে আমাদের পরিবারকে ভালোভাবে সজীব রাখতে আমাদের পরিবারের অন্তরায় অনেক মানুষ নিজেকে প্রকাশ না করে পরিবারের জন্য নিঃস্বার্থভাবে খেটে যাচ্ছে। আমি তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে স্যালুট জানাই। কারণ এদের জন্যই আজ সমাজ, দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
জি ভাই। কিছু মানুষের অবদান সব সময় পর্দার আড়াল থেকে এবং অনেক বেশি অবদান রেখে যাচ্ছেন আর এ কারণেই সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। ধন্যবাদ
আড়াল থেকে যারা আমাদের সাপোর্ট করে তারাই আমাদের গর্ব। কখনো শিকড় কে ভুলে যাওয়া ঠিক নয়। কারোও অবদানকে কখনো অস্বীকার করা যাবেনা। ধন্যবাদ ভাই একটি শিক্ষামুলক পোস্ট করার জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ