গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষাঃ পর্ব ০৫ | দৈত্য ও ইচ্ছার গল্প || অন্যের সাফল্যে ঈর্ষা (Jealousy)
ভূমিকাঃ
গল্পে গল্পে যখন আমরা কোনো কিছু শিখি তখন সেটা আমাদের মনে অনেকদিনের জন্য গেঁথে যায়। তাই গল্পে গল্পে কোন কিছু শিখার আনন্দ অন্যরকম। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি
-তে আমি কয়েকটি সিরিজ লিখছি। তার মধ্যে গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষা
সিরিজটি অন্যতম যেখানে একটি গল্প এবং এই গল্প থেকে আমাদের বাস্তব জীবনের শিক্ষামূলক কিছু দিক শেয়ার করে থাকি। গল্পগুলো মূলত ঈশপের গল্প বা অন্য কোন ছোট আকারের গল্প। আশা করি গল্পগুলো ও এর অন্তনিহিত শিক্ষা আপনার ভাল লাগবে।
Thumbnail Background Source: Image by Clker-Free-Vector-Images from Pixabay
পর্ব ০৫: দৈত্য ও তিন ইচ্ছার গল্প
প্রথমে গল্পটিঃ
আজকের গল্পটি অনেকেরই জানা। একবার এক দৈত্য এসে এক ব্যক্তিকে তিনটি ইচ্ছা পূরণ করার কথা বলেছিল। তবে শর্ত দিয়েছিল যে, সে যে বিষয়টি চাইবে তার দ্বিগুন পরিমান দেয়া হবে তার প্রতিবেশীকে। সে একটি সুন্দর বাড়ি চাইল কিন্তু সাথে সাথে তার প্রতিবেশী কে দুইটি বাড়ি বানিয়ে দেয়া হলো। পরবর্তীতে সে নিজের জন্য একটি দামি গাড়ি চাইল এবং সাথে সাথে প্রতিবেশীকেও দুইটি গাড়ি দেয়া হলো। এতে সে অসন্তুষ্ট ছিল। তাই সে বুদ্ধি করে বলল যেন তার একটি চোখ কানা করে দেয়া হয়। ফলশ্রুতিতে ওই প্রতিবেশীর দুই চোখ অন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। গল্পটা এখানেই শেষ। কিন্তু এই গল্প থেকে আমরা বেশ কিছু বিষয় খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করে শিখতে পারি।
গল্পের শিক্ষাঃ
প্রথমতঃ আমরা অনেক সময় প্রতিবেশীর প্রতি বা আমাদের বন্ধু, সহকর্মীদের প্রতি ঈর্ষান্বিত থাকি। আমরা নিজেরা যা চাই বা যতটা চাই তার চেয়ে কম অন্যের জন্য চাই। অন্যের উপকার করতে চাই কিন্তু সেটা যেন আমাকে ছাড়িয়ে না যায় এই চেষ্টা আমাদের অনেকের থাকে। আমরা চাই আমাদের প্রতিবেশী ছেলেটিরও আমার ছেলের মত মেধাবী এবং শিক্ষিত হোক কিন্তু তা যেন আমাদের ঘরের ছেলেটির চেয়ে কম হয়। আমরা চাই আমাদের প্রতিবেশী অনেক ধনী হোক টাকা পয়সার মালিক হোক কিন্তু সেটা যেন আমাদের চেয়ে কম হয়। এই হচ্ছে আমাদের মোটামুটি সাধারণ মন মানসিকতা।
আমরা কোন কাজের ক্ষেত্রে কাউকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করি কিন্তু সেই চেষ্টার দুইটি পথ হতে পারে। একটি হচ্ছে আমি নিজেকে তার সমপর্যায়ে নিয়ে যাওয়া আর অপরটি হচ্ছে তাঁকে পিছন থেকে টেনে ধরা। অর্থাৎ আমরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়ে যাই। আর এই মন মানসিকতার জন্যই সমাজে নানা রকম বিপত্তি দেখা যায় কারণ সমাজে যত সকল ফিতনা, খুন, রাহাজানি, বিশৃঙ্খলা দেখা যায় তার সবকিছুর মূলেই হচ্ছে সম্পদ। আমরা যদি এই ধরনের মন মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারি তবেই সমাজে শান্তি আনয়ন করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
যেসব দেশ উন্নত সেদিকে আমরা যদি খেয়াল করি তাহলে দেখতে পাব সেখানে পাশের জনের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতায় কারোরই কোনো কষ্ট হয় না। কিন্তু যেসব দেশ অতটা উন্নত নয় সেখানে মন মানসিকতা এবং নৈতিকতার পর্যায় অনেক ক্ষেত্রে এই গল্পের মত। কিছু ব্যতিক্রম যে নেই তা নয় কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের যখন মন মানসিকতা এরকম থাকে তখন ব্যাপারটি সমাজের একটা ব্যাধির মতো কাজ করে।
দ্বিতীয়তঃ আমরা যা পাই তাতে সন্তুষ্ট হতে চাই না। আগে ঐ ব্যক্তির কোন ভাল বাড়ি ছিল না, গাড়ি ছিল না, কিন্তু ঐ ব্যক্তি একটি বাড়ি এবং গাড়ির মালিক মুহূর্তেই কোনো পরিশ্রম ছাড়া হয়েও সন্তুষ্ট হতে পারছে না। সে তৃতীয় ইচ্ছায় আরো নতুন কিছু নিজের জন্য চাওয়ার পরিবর্তে বরং এমন কৌশল অবলম্বন করল যাতে করে প্রতিবেশীর ক্ষতি হয় তাতে নিজের সামান্য ক্ষতি হলেও অসুবিধা নেই। অর্থাৎ আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে আমরা যা পাই বা যা আমাদের আছে তাতে সন্তুষ্ট হতে চায়না। আমরা চাই আমাদের যাকিছু থাকুক না কেন অন্যরা যেন আমার চেয়ে বেশি না হয়ে যায়। অর্থাৎ আমাদের যে মনোভাব সেটি হচ্ছে নিজের উন্নতির চেয়ে অন্যের ক্ষতির বিষয়টি বেশি চিন্তা করা।
এজন্য বাংলায় একটি প্রবাদ আছে সেটি হচ্ছে নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা। অর্থাৎ আমরা অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করব তাতে নিজের নাকটা একটু কাটা যাক, অসুবিধা নেই।
শেষকথাঃ
আশা করি গল্পের মাধ্যমে আপনি নতুন জিনিস শিখতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আমার লিখা অন্য গল্পগুলোর লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম। ভাল লাগলে সেগুলোও পড়ে আসতে পারেন। আমার লেখাটি এ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই সিরিজে আমার লিখা পূর্বের গল্পগুলোর তালিকাঃ
পর্ব | প্রকাশের তারিখ | গল্পের বিষয়বস্তু |
---|---|---|
০১ | ১৯/০৭/২০২১ | ব্যাঙ ও ক্যারিয়ারে মানিয়ে নেয়ার গল্প |
০২ | ২৬/০৭/২০২১ | টিয়া পাখির কৌশল |
০৩ | ২৭/০৭/২০২১ | গর্তের ব্যাঙ ও সফলতার দুই চাবিকাঠি |
০৪ | ০২/০৮/২০২১ | কৃষকের ছেলের ছাগলছানা ও অনুশীলনে অভ্যাস পরিবর্তন |
আমি কেঃ
ভোট দিন, মতামত থাকতে মন্তব্য করুন, পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং আমাকে ফলো করুন @engrsayful
অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ
Youtube | ThreeSpeak | DTube |
আপনার গল্পটি পড়লাম। সত্যি শিক্ষনীয় অনেক বিষয় রয়েছে আপনার গল্পে। এরপর সিরিজ শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য ও মন্তব্যের জন্য
ভাই সত্যি বলতে আমরা এই রকম স্বার্থবাদী মনোভাব সব সময় জিয়ে রাখি। নিজের ক্ষতি করে হলেও অন্যের ক্ষতি করতেই হবে, এটা বড়ই দুঃখজনক। গল্পটি ভালো ছিলো, সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য ও সুন্দর মন্তব্যের জন্য।