গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষাঃ পর্ব ০১ || মানিয়ে নেয়ার চেয়ে আগেই ঘুরে দাঁড়ানো ভাল
ভূমিকাঃ
গল্পে গল্পে যখন আমরা কোনো কিছু তখন সেটা আমাদের মনে অনেকদিনের জন্য গেঁথে যায়। তাই গল্পে গল্পে কোন কিছু শিখার আনন্দ অন্যরকম। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে আমি একটি সিরিজ লেখা শুরু করছি যেখানে একটি গল্প এবং এই গল্প থেকে আমাদের বাস্তব জীবনের শিক্ষামূলক দিকগুলো শেয়ার করব। গল্পগুলো মূলত ঈশপের গল্প বা অন্য কোন ছোট আকারের গল্প।
প্রথম পর্বঃ ব্যাঙ ও ক্যারিয়ারের গল্প
প্রথমে গল্পটি
একদা একটি ব্যাঙ গরম পানির পাত্রে পড়ে গেল। সেই ব্যাঙটি অনেক অলস ছিল। সে ইচ্ছে করলেই সে পানি থেকে লাফিয়ে বের হয়ে আসতে পারতো। আর সেই পানির পাত্রটিকে কোন ব্যক্তি নিচ দিয়ে আস্তে আস্তে তাপ দিচ্ছিল। ব্যাঙটি অলসভাবে সেখানে বসে রইল আর পানি আস্তে আস্তে গরম হতে থাকলো।
Source: Image by Here and now, unfortunately, ends my journey on Pixabay from Pixabay
আপনারা জেনে থাকবেন, ব্যাঙ-এর মধ্যে একটা বৈশিষ্ট্য আছে যে, তারা যেকোনো তাপমাত্রার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। পানি যতই গরম হচ্ছিল ব্যাঙটি তার শরীরকে ফুলিয়ে দিয়ে বাইরে তাপমাত্রার সাথে নিজের শরীরের তাপমাত্রাকে খাপ খায়িয়ে নিচ্ছিল। এভাবে করে পানি আস্তে আস্তে আরো গরম হতে থাকল এবং ব্যাঙটি তার শরীরটাকে ফুলিয়ে দিয়ে পানির তাপমাত্রা সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে থাকল। তখনো সে অলস ভাবে সেখানে বসে রইল এবং সেখান থেকে লাফিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করল না।
অবশেষে পানির তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে এত বেশি হয়ে গেল যে, সেখানে আর ব্যাঙটির পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই সে এখন সেখান থেকে লাফিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু সে নিজের শরীরকে ফুলাতে ফুলাতে এমন একটা অবস্থায় নিয়ে গিয়েছে যে, এখন তার পক্ষে লাফানোর শক্তি অবশিষ্ট থাকল না। অবশেষে ব্যাঙটি সেখানেই গরম পানিতে মারা গেল।
গল্পের শিক্ষা
আমরাও আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে এবং ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটনার সম্মুখীন হয়ে থাকি যা অনেকটা এই ব্যাঙ-এর গল্পের মত। আমরা আমাদের ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে হয়তোবা কোন একটা ছোটখাটো চাকরিতে জয়েন করি যেটা আমাদের পছন্দের নয় কিন্তু আমরা সেই চাকরি থেকে বের হয়ে অন্য কিছু (যেমন ব্যবসা কিংবা অন্য কোনো ভালো কোম্পানিতে চাকরি) করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকি।
অনেকেই আছে যারা এরকম পরিস্থিতিতে চাকরি পরিবর্তন করে সরকারি চাকরি কিংবা ভালো কোন চাকরির জন্য খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আবার নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এই ব্যাঙটির মতো ভুল করে থাকে অর্থাৎ চাকরিতে অসন্তোষ থাকার পরও সেটা থেকে বের হয়ে আসার পরিবর্তে সেখানে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। তার উপর যতই প্রেসার দেয়া হোক না কেন কিংবা কোম্পানি থেকে অন্যায় ভাবে তার উপর কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া হোক না কেন তারপরও সে সেখানে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। মানিয়ে নিতে নিতে এমন একটা সময় চলে আসে যখন তার পক্ষে আর মানিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না। তখন তার জন্য সেই চাকরিটা ছেড়ে দেওয়াটা আবশ্যক হয়ে পড়ে কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে যেমন ১০ বছর সময়ে সে পারিবারিক জীবনে সন্তানের বাবা হয়ে গিয়েছে এবং বিভিন্ন ঝামেলার মধ্যে পড়ে গিয়েছে। এখন আর তার পক্ষে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বেকার থাকা সম্ভব হবে না। তাই তাকে এই চাকরিতেই থাকতে হবে সেটা যত আপছন্দের হোক না কেন। এর মাধ্যমে তার নিজের ইচ্ছা এবং অনুভূতিগুলো মরে যায়। সত্যিকার অর্থে এই মৃত্যু কেবল তার ইচ্ছার মৃত্যু নয় বরং একটি মানুষের জীবনের মৃত্যু। কারণ আমরা যখন অনুভূতি নিয়ে কাজ করতে না পারি এবং বাঁচতে পারিনা সেটাই হচ্ছে আমাদের জন্য মৃত্যুর মতো।
Source: Image by PublicDomainPictures from Pixabay
যখন আমাদের বয়স কম থাকে ও আমাদের পরিবারের সংখ্যা ছোট থাকে তখন আমাদের উপর চাপ কম থাকে এবং সেই সময়টা হচ্ছে কোন কিছু পছন্দ না হলে পরিবর্তন করার উৎকৃষ্ট সময়। পরবর্তীতে আমরা যখন একটা জায়গায় খুব বেশি সেটেল হয়ে যাব এবং সংসার বড় হয়ে যাবে তখন চাইলেও আমরা যে কোন পরিবর্তন ঘটাতে ব্যর্থ হব। তাই এই ব্যাঙটির মত অলস না থেকে প্রথম থেকেই খুব ভালোভাবে চেষ্টা করে পরিবর্তন আনাটা আমাদের জন্য খুবই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
তাই ক্যারিয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা এই গল্পটাকে মাথায় রেখে আমাদের ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে পারি। আমরা প্রথমেই চেষ্টা করাটা শ্রেয়। ভবিষ্যতে পরিবর্তন করবো এটা ভেবে কোন অন্যায়, অবিচার, বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সাথে খুব বেশি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করাটা বোকামি। বরং এটাই বুদ্ধিমানের কাজ যে প্রথম থেকেই আমরা পরিশ্রম করি এবং কোন একটা খারাপ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করি। কারন দিনশেষে ক্যারিয়ারটা আমার জীবন নয়, জীবনের পরিধি অনেক বড়। ক্যারিয়ার জীবনের একটা উপকরন মাত্র। যা কিছু করি সেটা যদি মন থেকে করতে না পারি তবে মনের মৃত্যু ঘটবে আর এর সাথে অর্থহীন জীবনের মৃত্যু।
শেষকথা
আশা করি গল্পের মাধ্যমে আপনি কিছুটা হলেও নতুন জিনিস শিখতে পেরেছেন এবং আমার লেখাটি এ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই পোস্টের সম্পুর্ন লিখা আমার নিজস্ব ও কোথায় থেকে কপি করা হয়নি। কোথাও হতে কোন তথ্য বা ছবি নিয়ে থাকলে সোর্স দেয়া হয়েছে
আমি কে
ভোট দিন, মতামত থাকতে মন্তব্য করুন, পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং আমাকে ফলো করুন @engrsayful
অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ
Youtube | ThreeSpeak | DTube |
ভাল একটা শিক্ষ্যনীয় গল্পের মাধ্যমে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনা করেছেন।
যদি সুযোগ থাকে, পরিবর্তন করাটাই ভাল।কিন্তু যদি কারও কোন সুযোগ না থাকে, তাহলে মানিয়ে না চলা ছাড়া কোন গত্যন্তরও থাকে না।
জি, ভাই। ঠিক বলেছেন। অনেক সময় মানিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কোন পথ থাকে না