গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষাঃ পর্ব ১৬|| বাসর রাতে বিড়াল মারার কাহিনী || Courage and Controlling [10% for @shy-fox]
ভূমিকাঃ
গল্পে গল্পে যখন আমরা কোনো কিছু শিখি তখন সেটা আমাদের মনে অনেকদিনের জন্য গেঁথে যায়। তাই গল্পে গল্পে কোন কিছু শিখার আনন্দ অন্যরকম। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি
-তে আমি কয়েকটি সিরিজ লিখছি। তার মধ্যে গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষা
সিরিজটি অন্যতম যেখানে একটি গল্প এবং এই গল্প থেকে আমাদের বাস্তব জীবনের শিক্ষামূলক কিছু দিক শেয়ার করে থাকি। গল্পগুলো মূলত ঈশপের গল্প বা অন্য কোন ছোট আকারের গল্প। আশা করি গল্পগুলো ও এর অন্তনিহিত শিক্ষা আপনার ভাল লাগবে।
Thumbnail Background Source: Image by Clker-Free-Vector-Images from Pixabay
পর্ব ১৬: বাসর রাতে বিড়াল মারার কাহিনীঃ বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা, কথাবার্তা এবং সাহস এর গুরুত্ব
প্রথমে গল্পটিঃ
বাসর রাতে বিড়াল মারার কথা আমরা অনেকেই শুনেছি। এ নিয়ে অনেক ধরনের গল্প প্রচলিত রয়েছে। তার মধ্যে একটা আজকে শেয়ার করা যাক।
একদেশে এক রাজা ছিলেন এবং তার দুই কন্যা ছিল। রাজার ছিল বিশাল রাজত্ব এবং কোন পুত্র সন্তান ছিল না। তাই তিনি ইচ্ছা পোষণ করলেন এরকম কাউকে তিনি নিজের মেয়ের জামাই বানাবেন যারা কিনা তাদের পরিবারকে ছেড়ে রাজার বাড়িতে চলে আসবে এবং রাজার বাড়িতে রাজার মেয়েদের সাথে বসবাস করবে। এবং আরো কিছু কঠিন শর্ত তিনি দিয়ে দিলেন যেমনঃ ওই ছেলেকে রাজার মেয়ের কথামতো সব সময় ওঠা বসা করতে হবে এবং একেবারে অনুগত হয়ে চলাফেরা করতে হবে। এবং আরো একটি শর্ত এরকম জুড়ে দিলেন যে, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে রাজার মেয়ে তার জামাই এর (যার সাথে বিয়ে হবে) তার মাথায় কিছু একটা দিয়ে ২০ বার আঘাত করবে।
এরকম অবমাননাকর এবং অপমানজনক শর্তের কারণে কেউই রাজার মেয়েদেরকে বিয়ে করতে রাজী হয়নি। রাজার অঞ্চলে দুই ভাই ছিল এবং তাদের কিছুই ছিল না। তারা ছিল একেবারে নিঃস্ব এবং তাদের কোনো আত্মীয়-স্বজন ও পরিবার পরিজনও ছিল না। তাই তারা দুজন অনেক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিল, রাজার শর্ত মেনে নিয়ে রাজার মেয়েদেরকে বিয়ে করে তারা রাজপরিবারে অবস্থান করবে এতে তাদের যতই অপমান আর অপদস্ত হতে হোক না কেন, তাদের কোন আপত্তি নেই কারণ তারা এমনিতেই নিঃস্ব।
তারা দুইজন রাজ দরবারে গিয়ে রাজার মেয়েদেরকে ইচ্ছার কথা জানালেন এবং সব শর্ত মেনে নিতে রাজি হলেন। রাজা ওই দুই ছেলের সাথে তার দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তাদেরকে দুই অঞ্চলে দুইটি বড় বাসভবন করে সেখানে পাঠিয়ে দিলেন।
বড় ভাইটি একটু রাগী স্বভাবের ছিল এবং বাসর রাতে খাবার টেবিলের আশেপাশে রাজার বড় মেয়ের বিড়ালটি ঘুরঘুর করছিল এবং এটাতে সে খুব বিরক্ত হয়ে হাতের কাছে থাকা লাঠি দিয়ে বিড়ালকে এক আঘাত করলেন। সাথে সাথেই বিড়ালটি মারা গেল। বিড়ালটি রাজার মেয়ের খুবই পছন্দের এবং আদরের বিড়াল ছিল। ফলে রাজার মেয়ে খুবই কষ্ট পেল। রাজার মেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল এবং মনে মনে সে খুব ভয় পেল। আর এই ভয়ের কারণে পরবর্তীতে সে আর কখনো তার স্বামীর সাথে উচ্চ বাক্যে কথা বলার সাহস করেনি।
Source: Image by OpenClipart-Vectors from Pixabay
অন্যদিকে ছোট ভাই প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে রাজার মেয়ের ২০ আঘাতের কারণে মাথার চুল আস্তে আস্তে কমতে শুরু করল। অনেকদিন পরে তারা যখন একটা অনুষ্ঠানে মিলিত হল তখন বড় ভাই ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করলো, তোমার মাথার চুল চলে যাচ্ছে কেন? ছোট ভাই বলল, ওই যে শর্ত মোতাবেক প্রতিদিন সকালে উঠে আমার বউ আমার মাথায় ২০ টি আঘাত করে এজন্য। বড় ভাইয়ের মাথার চুল অক্ষত দেখে ছোট ভাই জিজ্ঞেস করলো, তোমার তো দেখি চুল ঠিকই আছে। সে তখন কাহিনী বর্ণনা করলো যে, বাসররাতে তিনি বিড়াল মেরেছিলেন।
এবার ছোট ভাই বাড়িতে গিয়ে বিড়াল মারার কথা চিন্তা করলেন। যখনই ছোট ভাই তার লাঠি দিয়ে আঘাত করে রাজার মেয়ের আদরের বিড়ালটিকে মেরে ফেললেন তখন রাজার মেয়ে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন এবং বললেন, কালকে থেকে তোমাকে (২০) বিশটা নয় বরং পঞ্চাশটা আঘাত করা হবে প্রতিদিন সকালে। কি বুঝলেন!
গল্পের শিক্ষাঃ
গল্পটি সত্যিই অনেক মজার একটি গল্প। কিন্তু আসলে এখান থেকে যে শিক্ষা গ্রহণ করার কিছু বিষয় রয়েছে যেমন বিড়াল যেটা মারার সেটা আপনাকে যথাসময়ে মারতে হবে। অর্থাৎ বাসর রাতের বিড়াল বাসর রাতের একমাস পরে গিয়ে মারলে হবে না কিংবা এক বছর পরে গিয়ে মারলে হবে না। সময়ের কাজ আপনাকে সময়ই সম্পন্ন করতে হবে তা না হলে যদি কোন কিছু আপনার ঘাড়ে একবার চেপে যায় তাহলে সেটাকে ঘাট থেকে নামাতে হলে আপনাকে অনেক বেশি কষ্ট করতে হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে সেটা হয়তোবা আপনার জন্য সম্ভব হবে না।
আমি আপনাদেরকে বিড়াল মারতে বলছি না। আমি স্বাভাবিকভাবে জীবনের ক্ষেত্রে বলছি। যদি আপনার কোন কাজ করার হয় সেটা অবশ্যই আপনাকে একটা নির্দিষ্ট সময়েই করতে হবে এবং যখন সময় চলে যাবে তখন সেই কাজ করাটা হয়তোবা বৃথা হয়ে যাবে এবং কোন প্রয়োজন থাকবে না।
এই গল্প থেকে দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় আমরা শিখতে পারে। সেটা হচ্ছেঃ বুদ্ধিমত্তা এবং সাহস অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জীবনে। আমরা আমাদের বুদ্ধিমত্তা এবং সাহস দিয়ে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিকে জয় করতে পারি। প্রথম ভদ্রলোক রাজার মেয়ের বিড়াল মেরে খুব ভালো কাজ করেছেন সেটা আমি বলছি না। তবে ওই ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তা ভালো ছিল এবং কন্ট্রোলিং ক্ষমতা অনেক ভাল ছিল সে কারণে তিনি তার পরিবারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলেন।
Source:Image by Andrew Martin from Pixabay
যদি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা এবং বুদ্ধিমত্তা আমাদের না থাকে তাহলে আমরা শুধুমাত্র পরিবারে নয় বরং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবজ্ঞার স্বীকার হব এবং বঞ্চনার শিকার হব। আর এই কারনেই কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন মানুষকে বঞ্চনার শিকার হতে দেখা যায় কারণ যে মানুষটা কখনো বসকে “না” বলতে পারে না, তাকে বস সব সময় খাটিয়ে মারে। তাই আমাদের যে বিষয়টা শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে সেটা হচ্ছে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সরাসরি না বলার ক্ষমতা কিন্তু আমরা অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে না বলতে পারি না। আর, না, বলতে না পারার কারণে আমাদেরকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নেয়া হয় যেটা কিনা আমাদের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের জন্য ভালো নয়।
শেষকথাঃ
তাই দিন শেষে আমাদের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা, কথাবার্তা এবং সাহস এর মাধ্যমে আমাদের যেকোনো পরিস্থিতিকে জয় করে অবশ্যই খেলার মাঠকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে অন্যথায় মাঠে আমরা খেলাধুলা করবো ঠিকই কিন্তু সেই খেলাটা হবে অন্যের দ্বারা পাতানো ম্যাচের মতো।
আমার লিখা অন্য গল্পগুলোর লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম। ভাল লাগলে সেগুলোও পড়ে আসতে পারেন। আমার লেখাটি এ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই সিরিজে আমার লিখা পূর্বের গল্পগুলোর তালিকাঃ
পর্ব | প্রকাশের তারিখ | গল্পের বিষয়বস্তু |
---|---|---|
০১ | ১৯/০৭/২০২১ | ব্যাঙ ও ক্যারিয়ারে মানিয়ে নেয়ার গল্প |
০২ | ২৬/০৭/২০২১ | টিয়া পাখির কৌশল |
০৩ | ২৭/০৭/২০২১ | গর্তের ব্যাঙ ও সফলতার দুই চাবিকাঠি |
০৪ | ০২/০৮/২০২১ | কৃষকের ছেলের ছাগলছানা ও অনুশীলনে অভ্যাস পরিবর্তন |
০৫ | ০৯/০৮/২০২১ | দৈত্য কর্ত্রিক তিন ইচ্ছা পূরণ ও অন্যের সম্পদে ঈর্ষা |
০৬ | ১৩/০৮/২০২১ | হরিণের শিং ও পা এর গল্পে রূপকে নয় কাজকে মূল্যায়নের শিক্ষা |
০৭ | ২১/০৮/২০২১ | প্রফেসর ক্লাশে জার নিয়ে প্রবেশ ও প্রায়রিটির গুরুত্ব |
০৮ | ২২/০৮/২০২১ | শিংহ, বাঘ ও শিয়াল এর গল্পে বাঘের চালাকীর সাজা |
০৯ | ২৩/০৮/২০২১ | বাবা ছেলে ও গাদার গল্প, অন্যের কথায় প্রভাবিত হওয়া |
১০ | ১৭/০৯/২০২১ | বাচ্চা বলছেঃ আমি স্মার্টফোন হতে চাই |
১১ | ২৩/০৯/২০২১ | মনীষী ও শীষ্যঃ ঘি এত দাম তেলের চেয়ে কম |
১২ | ০৮/১০/২০২১ | বিল গেটসের ভাইভাঃ একটা কোর্স করেই শিখে নিব |
১৩ | ২৫/১০/২০২১ | সারস পাখিঃ একসাথে দুই নৌকায় পা দিলে যা হয় |
১৪ | ০১/১১/২০২১ | সিংহ ও শেয়ালের বাচ্চার কানঃ রাজাকে যেকোন ভাবেই খুশি রাখতে হবে |
১৫ | ০৮/১১/২০২১ | লাইলি মজনুর গল্পঃ বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু |
আমি কেঃ
অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ
Youtube | ThreeSpeak | DTube |
হ্যাঁ ভাই আপনি গল্পের মাধ্যমে একটা শিক্ষা দিয়েছেন আমাদের জীবনে সঠিকভাবে চলাচল করতে হলে এবং বিভিন্ন কাজ ভালোভাবে সম্পূর্ণ করতে হলে বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগাতে হবে। তাহলেই সকল কিছু জয় করা সম্ভব।
সময়ের এক ফোর আর অসময়ের দশ ফোর এর সমান। আপনার লেখাটি চমৎকার । আমাদের উচিত সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করা নতুবা বিরম্বনায় পরতে হবে। ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ।
ভাই আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। বরাবর আপনি আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষনীয় পোস্ট নিয়ে হাজির হন
আজও তার ব্যতিক্রম নয় ।বাসর রাতে বিড়াল মারা গল্পটি ইতিপূর্বে অনেক শুনেছি তবে বিস্তারিত কাহিনী জানা ছিল না ।তবে আজকে আপনার পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম আসলে এ গল্পের মাধ্যমে আপনি যে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন সেটি হচ্ছে আমাদের সময়ের কাজ সময়ে করা অর্থাৎ কাজ শেষ করা উচিত ।তা না করে যদি অন্য কোন সময় করা হয় তাহলে সেই কাজে কোন ফল আমরা পাবোনা ।আমাদের সুফল পেতে হলে অবশ্যই সময়ের কাজটি যত দ্রুত সম্ভব সময়ের মধ্যেই সেরে ফেলতে হবে ।যতই কালক্ষেপণ করব আমাদের ব্যর্থতার ততই দীর্ঘতর হবে।
অন্যান্য গল্প গুলোর মত এখানে শিক্ষাকে খুব বেশি একটা গুরুত্ব না দিয়ে বরং গল্পের মজাটা সবার মাঝে শেয়ার করতে চেয়েছিলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার করে কথাগুলো বলার জন্য।
!invest_vote
@umuk denkt du hast ein Vote durch @investinthefutur verdient!
@umuk thinks you have earned a vote of @investinthefutur !