গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষাঃ পর্ব ০৬ || হরিণের পা ও শিং এর গল্প || চেহারা নয় কাজকে মূল্যায়ন
ভূমিকাঃ
গল্পে গল্পে যখন আমরা কোনো কিছু শিখি তখন সেটা আমাদের মনে অনেকদিনের জন্য গেঁথে যায়। তাই গল্পে গল্পে কোন কিছু শিখার আনন্দ অন্যরকম। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি
-তে আমি কয়েকটি সিরিজ লিখছি। তার মধ্যে গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষা
সিরিজটি অন্যতম যেখানে একটি গল্প এবং এই গল্প থেকে আমাদের বাস্তব জীবনের শিক্ষামূলক কিছু দিক শেয়ার করে থাকি। গল্পগুলো মূলত ঈশপের গল্প বা অন্য কোন ছোট আকারের গল্প। আশা করি গল্পগুলো ও এর অন্তনিহিত শিক্ষা আপনার ভাল লাগবে।
Thumbnail Background Source: Image by Clker-Free-Vector-Images from Pixabay
পর্ব ০৬: হরিণের শিং ও পা
প্রথমে গল্পটিঃ
আজকে যে গল্পটি আমি শেয়ার করতে চলেছি সেটি বহুল প্রচলিত একটি গল্প। ঈশপের গল্পগুলোর মধ্যে এটি অনেক জনপ্রিয় একটি গল্প। এক হরিণ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে পানি পান করছিল। সে যখন পানিতে প্রতিফলিত হয়ে তার ছবি দেখতে পাচ্ছিল তখন দেখতে পেল তার শিংগুলো রয়েছে সেগুলো অনেক সুন্দর এবং এই শিংগুলোর জন্য তাকে অনেক সুন্দর দেখায়। কিন্তু তার পা গুলো একেবারে রোগা এবং চিকন। পাগুলো কে দেখতে সুন্দর লাগেনা বরং বিশ্রী দেখায়। তো সে মনে মনে তার শিং নিয়ে খুব গর্ব করল এবং পা থাকার জন্য আফসোস করতে থাকলো।
Source: Image by Lubos Houska from Pixabay
হঠাৎ একদিন সিংহ হরিনীকে তাড়া করল এবং সে প্রানপনে ছুটতে লাগলো। কিন্তু সামনে গিয়ে একটি ঝোপের মধ্যে তার শিং আটকে গেল এবং সে আর চলতে পারল না এবং সিংহের শিকারে পরিণত হল। তখন সে মারা যাওয়ার আগে এটাই ভাবতে থাকলো যে, যেই শিং নিয়ে সে গর্ব করতো সেই শিং এর জন্যই আজকে তাকে প্রাণ দিতে হলো আর যে পা কে সে অবজ্ঞা করত সেই পা তাকে পালাতে সাহায্য করেছিল।
গল্পের শিক্ষাঃ
প্রথমতঃ গল্পটি খুব ছোট কিন্তু এর মধ্যে থেকে বেশ কিছু অন্তর্নিহিত শিক্ষণীয় বিষয় খুঁজে পাওয়া যাবে। আমাদের সমাজে আমরা অনেক সময়ই আমাদের আশেপাশে যারা গরীব রয়েছে বা কম শিক্ষিত রয়েছে তাদেরকে মূল্যায়ন করতে চাইনা। যারা ধনী রয়েছে তাদের পেছনে মানুষ সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করে। কিন্তু ছোটখাটো যেকোনো বিপদে সবার প্রথমে সেই গরীব এবং অশিক্ষিত মানুষেরা এগিয়ে আসে।
ধরুন গ্রামে কোন ডাকাতের হামলা হলো তাহলে সেই ধনী ব্যক্তি তার ঘরের দরজায় বরং তালা আরেকটি বেশি লাগিয়ে বসে থাকবে। আর অন্যদিকে গরিব ব্যক্তিটি জীবনের মায়া ত্যাগ করে তার ঘরে লাঠি বৈঠা যাই থাকুক না কেন তা নিয়ে ডাকাত দলকে প্রতিহত করার জন্য এগিয়ে আসবে। কিংবা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাট যে কাজ আমরা করি সেই কাজে সহযোগিতার জন্য আমরা আমাদের পাশে সবসময় সেই সকল লোকদেরকে পাব যাদের সমাজে স্ট্যাটাস বা মূল্য কম। কিন্তু যাদের আমরা কদর করে থাকি বা দামি মনে করে থাকি তাদের সেই সহযোগিতা করার সুযোগ বা মন মানসিকতা কখনোই থাকে না।
একটা বিষয় আমাদের মনে রাখা জরুরী সেটা হচ্ছে টাকাপয়সা জীবনের বড় কোন উপাদান নয়। টাকা পয়সাই জীবন নয়। বরং টাকা-পয়সা হচ্ছে জীবনের ক্ষুদ্র একটি উপাদান। পারস্পরিক আস্থা, সহযোগিতা, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব, পরিবার, বন্ধুত্ব, বন্ধন এই বিষয়গুলো টাকা-পয়সার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের জীবনধারণের জন্য অনেক বেশি টাকা পয়সার প্রয়োজন নেই কিন্তু সামান্য বা অল্প টাকা দিয়েই আমরা অনেক ভালো জীবন-যাপন করতে পারি যদি সেটা পারস্পরিক সহযোগিতা এবং বন্ধুত্বের সম্পর্কের মাঝে হয়।
তাই যে জিনিস গুলো দেখতে সুন্দর নয় কিংবা বাহ্যিকভাবে আপাতদৃষ্টিতে সুশ্রী মনে হয় না কিন্তু সে জিনিষগুলি আমাদের বিপদে সব সময় কাজে লাগে। এই বিষয়টি আমাদের অবশ্যই মনে রাখা জরুরী।
Source: Image by Manfred Antranias Zimmer from Pixabay
দ্বিতীয়তঃ কোন কিছুকে মূল্যায়ন করতে গেলে আমাদেরকে প্রথমেই তার বাহ্যিক রূপ-গঠন দেখে মূল্যায়ন করা ঠিক নয়। বরং আমাদের উচিত কোনো কিছুকে মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে সব সময় তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কে বিচার করা। অর্থাৎ কোন কিছু দেখতে সুন্দর হলেও তার কাজ হয়তোবা সুন্দর নয়। তাই কাজের মাধ্যমে কোন কিছুকে মূল্যায়ন করাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ। যা কাজ ভালো করে তাই হচ্ছে আমাদের জন্য উপকারী যদিও তা দেখতে অসুন্দর। তাই বাহ্যিক রূপ এর প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে চলুন কাজকে গুরুত্ব দেই। ধন্যবাদ।
শেষকথাঃ
আশা করি গল্পের মাধ্যমে আপনি নতুন জিনিস শিখতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আমার লিখা অন্য গল্পগুলোর লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম। ভাল লাগলে সেগুলোও পড়ে আসতে পারেন। আমার লেখাটি এ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই সিরিজে আমার লিখা পূর্বের গল্পগুলোর তালিকাঃ
পর্ব | প্রকাশের তারিখ | গল্পের বিষয়বস্তু |
---|---|---|
০১ | ১৯/০৭/২০২১ | ব্যাঙ ও ক্যারিয়ারে মানিয়ে নেয়ার গল্প |
০২ | ২৬/০৭/২০২১ | টিয়া পাখির কৌশল |
০৩ | ২৭/০৭/২০২১ | গর্তের ব্যাঙ ও সফলতার দুই চাবিকাঠি |
০৪ | ০২/০৮/২০২১ | কৃষকের ছেলের ছাগলছানা ও অনুশীলনে অভ্যাস পরিবর্তন |
০৫ | ০৯/০৮/২০২১ | দৈত্য কর্ত্রিক তিন ইচ্ছা পূরণ ও অন্যের সম্পদে ঈর্ষা |
আমি কেঃ
ভোট দিন, মতামত থাকতে মন্তব্য করুন, পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং আমাকে ফলো করুন @engrsayful
অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ
Youtube | ThreeSpeak | DTube |
আপনার শিক্ষামূলক গল্প গুলো বেশ অসাধারণ হয়ে থাকে। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও আমরা যে জিনিস নিয়ে সবচেয়ে বেশি গর্ব করি সেই জিনিস গুলোর জন্যই আমাদের একসময় পস্তাতে হয়। আর যেগুলো অবহেলা করি সেগুলো একসময় আমাদের ভাগ্যের দ্বার খুলে দেয়। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
আসলে আমরা মানুষ বুঝি কম গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কে গুরুত্ব দিতে চাই না কিন্তু এটা আমাদের জন্য আসলে বুঝা খুব কঠিন যে কখনও কোন বিষয়ে আমাদের কাজে লাগবে। অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা মানুষ আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে কোন কোন দিন লেগে যায়। তাই আমাদের উচিত প্রত্যেক মানুষকে মূল্যায়ন করতে শিখা এবং সেটা ছোট বা বড় যাই হোক না কেন। ধন্যবাদ তোমার সুন্দর মন্তব্যের জন্য
জীবনের কঠিন সত্যতা তুলে ধরেছেন আপনার লেখনীর নিপুন ছোঁয়ায়। শুভেচ্ছা রইল
আপনার জন্যও শুভেচ্ছা রইল দাদা
গল্প গুলো থেকে অনেক কিছু শিখলাম,, ধন্যবাদ আপনাকে
মাঝে মাঝে এই গল্পের শেষটা চালিয়ে যাব এবং আপনি উপকৃত হয়েছেন যেন ভালো লাগলো
You have been upvoted by @sm-shagor A Country Representative, we are voting with the Steemit Community Curator @steemcurator07 account to support the newcomers coming into steemit.
Follow @steemitblog for the latest update. You can also check out this link which provides the name of the existing community according to specialized subject
There are also various contest is going on in steemit, You just have to enter in this link and then you will find all the contest link, I hope you will also get some interest,
For general information about what is happening on Steem follow @steemitblog.
ভাইয়া আপনার গল্পটি আমার কাছে শিক্ষামূলক মনে হয়েছে, অনেক ভাল লেগেছে আপনার গল্পটি পড়ে, শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য