গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষাঃ পর্ব ০৯ | বাবা ছেলে ও গাধার গল্প | অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া (Influence)
ভূমিকাঃ
গল্পে গল্পে যখন আমরা কোনো কিছু শিখি তখন সেটা আমাদের মনে অনেকদিনের জন্য গেঁথে যায়। তাই গল্পে গল্পে কোন কিছু শিখার আনন্দ অন্যরকম। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি
-তে আমি কয়েকটি সিরিজ লিখছি। তার মধ্যে গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষা
সিরিজটি অন্যতম যেখানে একটি গল্প এবং এই গল্প থেকে আমাদের বাস্তব জীবনের শিক্ষামূলক কিছু দিক শেয়ার করে থাকি। গল্পগুলো মূলত ঈশপের গল্প বা অন্য কোন ছোট আকারের গল্প। আশা করি গল্পগুলো ও এর অন্তনিহিত শিক্ষা আপনার ভাল লাগবে।
Thumbnail Background Source: Image by Clker-Free-Vector-Images from Pixabay
পর্ব ০৯: বাবা ছেলে ও গাধার গল্প
প্রথমে গল্পটিঃ
আজকের গল্পটি একটি একটি ঈশপের গল্প। একবার এক লোক এবং তার ছেলে গাধা নিয়ে কোন একটা স্থানে যাচ্ছিল। যাওয়ার সময় বাবা এবং ছেলে দুজনেই গাধার পিঠে চড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে লোকজন দেখে বলল, এই লোকগুলো কত নিষ্ঠুর। দুজন মিলে একটা গাধার উপর উঠেছে আর গাধাটাকে কষ্ট দিচ্ছে। এই কথা শুনে বাবা নিচে নেমে গেলেন এবং ছেলেকে গাধার উপর নিয়ে আস্তে আস্তে সামনের দিকে আগাতে থাকলেন। কিন্তু কিছুদুর যাওয়ার পর এই বিষয়টা দেখে কিছু লোক মন্তব্য করতে থাকলো যে, ছেলেটা কত বেয়াদব। বাবাকে নিচে রেখে সে নিজে গাধার উপর চড়ে সামনের দিকে যাচ্ছে।
এবার বাবা চিন্তা করলেন যে, ছেলেকে নামিয়ে দেই এবং নিজে গাধার উপর উঠে যাই। তাই বাবা নিজে উঠে গাধার পিঠে চললেন ও ছেলেকে নিচে নামিয়ে দিলেন এবং তারা সামনের দিকে আগাতে থাকলেন। একটু পরে গিয়ে কিছু লোকের সাথে সাক্ষাৎ হলে দেখতে পেলেন ওই লোকগুলো মন্তব্য করছে, বাবা কত নিষ্ঠুর। ছোট একটা ছেলেকে হাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর সে নিজে উপরে উঠে বসে আছে। এবার এত কথা শোনার পরে বাবা নিজেও নেমে গেলেন এবং দুজনেই হাঁটতে শুরু করলেন আর সাথে গাধাকে হাটিয়ে সামনের দিকে নিয়ে এগিয়ে চললেন।
কিছুদূর যাওয়ার পরে দেখা গেল লোকজন এটা দেখে খুব হাসাহাসি করলো ও বলল এই লোক গুলো কত বোকা। একটা গাধা থাকার পরও তারা হেঁটে হেঁটে রওনা দিচ্ছে। অবশেষে সবার কথা শুনে ওই লোক রেগে গেলেন এবং দুজনেই গাধার উপর চরে আবার প্রথমবারের মতো চলতে শুরু করলেন।
গল্পের শিক্ষাঃ
এই গল্পের শিক্ষা গল্প থেকে সহজেই আপনারা বুঝে নিতে পারছেন। সেটা হচ্ছে আমাদের আশেপাশের লোকজনের কানকথা বা কথায় পাত্তা না দেওয়া। আপনার আশেপাশের সমাজে, পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, ব্যবসায়ীক জীবনে কিংবা সমাজে অনেক লোক রয়েছেন যারা আপনাকে নানা রকম বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে যাবে এবং আপনাকে আপনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বলবে। কিন্তু এইসব ব্যাপারে আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের বিশ্বস্ত লোকদের মতামত নিতে হবে। সাধারণ লোকজনের কথার মতামত নিয়ে চলা উচিত নয়।
সমাজের যেকোনো লোকই যেকোনো কিছু দেখলে মন্তব্য করবে এটাই হচ্ছে আমাদের স্বভাব। বহির্বিশ্বে বা উন্নত বিশ্বে এই অবস্থাটা খুব বেশি একটা দেখা না গেলেও আমাদের দেশে এটা অনেক দেখা যায় অর্থাৎ মানুষ আরেকজনকে দেখে কিছু না কিছু মন্তব্য করতে হবে অথবা তাকে কিছু না কিছু পরামর্শ দেওয়াই লাগবে। তাই পরামর্শ নেওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের সাধারণ মানুষ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিজের সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করা কখনই ঠিক নয়।
আমাদেরকে এ জাতীয় ক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, যখনই কেউ আমাকে কোন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য মন্তব্য করছে, আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছে কিংবা কোনো পরামর্শ দিচ্ছে তিনি আমার কতটা ভালো চান সেই বিষয়টা আগে ভাবতে হবে। আমরা যাদের কথায় আমাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি তাদের আসলে আমাদের জীবনের ওপর কোনো প্রভাব নেই। অর্থাৎ এই লোক গুলো আমাদের জীবনে কোন প্রভাব ফেলে না। তারা কেবল দূর থেকে পাঁচটা মন্তব্য করে আর সেই মন্তব্য করে তারা কিন্তু আমাদের জীবন থেকে সরে যায়। অর্থাৎ আমাদের জীবনের মূল অংশে তাদের কোনো অংশগ্রহণ বা ভূমিকা নেই তারপরও তারা আমাদের পেছনে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেছেন।
যেমনটি আপনারা গল্পতে দেখতে পেলেন। তারা রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলছে আশেপাশের মানুষজন এর এই বিষয় নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার বা মন্তব্য করার প্রয়োজন ছিল না। তারপরও তারা মন্তব্য করেছে এবং সে মন্তব্য মোতাবেক পথিকগণ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, এই লোকগুলোর বা আশেপাশের লোকগুলোর কথামতো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাটা কি ঠিক ছিল না কি ঠিক ছিল না। আমার মতে এটা কখনোই ঠিক ছিল না যদিও আশেপাশের লোকজনের অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু তারা সে অভিজ্ঞতার আলোকে ভালো পরামর্শ দেয় নি বরং বাবা এবং ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন রকম হাসি তামাশা করেছে।
আর যেহেতু রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে একটা সময় আমরা গন্তব্যে পৌঁছে যাবো আর এই লোকগুলো কখনোই আমাদের সাথে আর থাকবে না বা যাদের সাথে হয়ত আমাদের কখনো দেখা হবে না তাই এই লোকগুলোর কথায় আমাদের গন্তব্য আমরা ভুলে যেতে পারিনা।
আমাদের জীবনে চলার পথেও ঠিক একই রকম ঘটনা ঘটে। আমাদের গন্তব্যে পৌঁছার ক্ষেত্রে কিছু বাধা বা প্রতিবন্ধকতা থাকে যাদের কাজই হচ্ছে শুধুমাত্র বাধা দিয়ে দেওয়া। তাই এইসব মন্তব্য বা আলোচনা থেকে আমাদের জীবনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে অনেক বেশি সুচিন্তিত হতে হবে। অন্যথায় আমরা আমাদের জীবনের কর্তব্য থেকে ছিটকে পরব। আমরা যদি কোনো মতামত নিতে চাই তাহলে আমাদের আশেপাশে যারা বিশ্বস্ত মানুষ রয়েছে তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতার আলোকে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য গ্রহণ করতে পারে কিন্তু এরকম সাধারণ মানুষ যাদের ভূমিকা আমাদের কাছে শূন্য তাদের কাছ থেকে আমরা মন্তব্য বা পরামর্শ নিয়ে আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে পারি না। ধন্যবাদ
শেষকথাঃ
আশা করি গল্পের মাধ্যমে আপনি নতুন জিনিস শিখতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আমার লিখা অন্য গল্পগুলোর লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম। ভাল লাগলে সেগুলোও পড়ে আসতে পারেন। আমার লেখাটি এ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই সিরিজে আমার লিখা পূর্বের গল্পগুলোর তালিকাঃ
পর্ব | প্রকাশের তারিখ | গল্পের বিষয়বস্তু |
---|---|---|
০১ | ১৯/০৭/২০২১ | ব্যাঙ ও ক্যারিয়ারে মানিয়ে নেয়ার গল্প |
০২ | ২৬/০৭/২০২১ | টিয়া পাখির কৌশল |
০৩ | ২৭/০৭/২০২১ | গর্তের ব্যাঙ ও সফলতার দুই চাবিকাঠি |
০৪ | ০২/০৮/২০২১ | কৃষকের ছেলের ছাগলছানা ও অনুশীলনে অভ্যাস পরিবর্তন |
০৫ | ০৯/০৮/২০২১ | দৈত্য কর্ত্রিক তিন ইচ্ছা পূরণ ও অন্যের সম্পদে ঈর্ষা |
০৬ | ১৩/০৮/২০২১ | হরিণের শিং ও পা এর গল্পে রূপকে নয় কাজকে মূল্যায়নের শিক্ষা |
০৭ | ২১/০৮/২০২১ | প্রফেসর ক্লাশে জার নিয়ে প্রবেশ ও প্রায়রিটির গুরুত্ব |
০৮ | ২২/০৮/২০২১ | শিংহ, বাঘ ও শিয়াল এর গল্পে বাঘের চালাকীর সাজা |
আমি কেঃ
ভোট দিন, মতামত থাকতে মন্তব্য করুন, পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং আমাকে ফলো করুন @engrsayful
অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ
Youtube | ThreeSpeak | DTube |
!invest_vote