গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষাঃ পর্ব ০৪ | কৃষকের ছেলে ও ছাগলছানার গল্প | অনুশীলনে অভ্যাস পরিবর্তন
ভূমিকাঃ
গল্পে গল্পে যখন আমরা কোনো কিছু শিখি তখন সেটা আমাদের মনে অনেকদিনের জন্য গেঁথে যায়। তাই গল্পে গল্পে কোন কিছু শিখার আনন্দ অন্যরকম। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি
-তে আমি কয়েকটি সিরিজ লিখছি। তার মধ্যে গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষা
সিরিজটি অন্যতম যেখানে একটি গল্প এবং এই গল্প থেকে আমাদের বাস্তব জীবনের শিক্ষামূলক কিছু দিক শেয়ার করে থাকি। গল্পগুলো মূলত ঈশপের গল্প বা অন্য কোন ছোট আকারের গল্প। আশা করি গল্পগুলো ও এর অন্তনিহিত শিক্ষা আপনার ভাল লাগবে।
Thumbnail Background Source: Image by Clker-Free-Vector-Images from Pixabay
পর্ব ০৪ঃ কৃষকের ছেলে ও ছাগলছানার গল্প
প্রথমে গল্পটিঃ
গল্পটি শুনেছিলাম স্কুল জীবনে আমাদের এক শিক্ষকের কাছ থেকে। একবার এক স্কুল পড়ুয়া ছেলে তার বাবার সাথে মাঠে কাজে গিয়েছিল। সেখানে সে একটি মৃত সাপকে ব্যাঙ কর্তৃক খেতে দেখেছিল। যদিও স্বাভাবিকভাবে ব্যাঙ সাপ-কে খায়না বরং সাপ ব্যাঙ-কে খায়। এই কথাটি বাড়িতে এসে সে তার বাবাকে বললো এবং তার বাবা বলল অন্যকে এই কথাটি না বলতে কারণ কেউ বিশ্বাস করবে না। কিন্তু সে তার সহপাঠীকে গিয়েই এই গল্প করল আর সবাই অবাক হলো এবং তার সাথে বাজি ধরল যে, এই কথা কখনো সত্যি হতে পারে না। পরবর্তীতে তারা এসে যখন ওই ছেলেটির বাবা কে বলল, তখন তার বাবাও সত্যিটি অস্বীকার করলো কারণ তিনি যদি স্বীকার করতেন তাহলে সবাই তাকেও বোকা বলতো। এই ঘটনায় ছেলেটি খুব কষ্ট পেল এবং সে সিদ্ধান্ত নিল এই বাজিতে হেরে যাওয়ার বদলা যে কোন না কোন ভাবে নেবে।
তাদের বাড়িতে একটি ছাগল ছিল। সে ছাগলছানাদেরকে সকালেই ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে কোলে নিয়ে পুকুরে যেত এবং সাঁতার কেটে এসে তারপর ছাগলছানাদেরকে তাদের মায়ের দুধ খেতে দিত। এভাবে করে প্রায় মাসখানেক সে এরকম ছাগলছানা কে নিয়ে আগে পুকুরে সাঁতার কেটে গোসল করত তারপর এসে দুধ খেতে দিত। এরপর থেকে যখনই ছাগলছানাদের কে ছেড়ে দেয়া হতো তখন তারা সরাসরি মায়ের কাছে দুধ খেতে না গিয়ে বরং পুকুরে গিয়ে আগে সাঁতার কাটতো তারপর এসে গোসল করে দুধ খেতো। এই বিষয়টি একেবারে অবাক করার মত বিষয় কারণ দীর্ঘদিন অনুশীলনের কারণে সম্ভব হয়েছিল। ছাগলের বাচ্চাকে ছেড়ে দিলে আগেই সে তার মায়ের কাছে ছুটে গিয়ে দুধ খাওয়াটাই হল স্বাভাবিক কিন্তু এখানে হয় কিছুটা উল্টো।
এবার সে তার বন্ধুর কাছে গিয়ে বলল যে আমাদের ছাগলছানা আগে গোসল করে তারপর মায়ের কাছে দুধ খেতে যায়। তার সেই বন্ধু বলল এমনটি অসম্ভব। তাই সে এবার আরো বেশি পরিমাণ বাজি ধরল কারন আগের বাজিতে জিতেছিল।
যখন সকালে ওই বন্ধসহ বাড়িতে এসে ছাগলছানা কে ছেড়ে দেয়া হলো তখন ঠিকই ছাগলছানা পুকুরে গিয়ে গোসল করে সাঁতার কেটে এসে তারপর মায়ের কাছে গেল দুধ খেতে। ওই বন্ধুটি লজ্জা পেল এবং হেরে গেল। পরবর্তীতে এই বন্ধু পূর্বের ঘটনাটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছে। কেন এবং কিভাবে ব্যাঙ সাপ খাচ্ছিল আর ছাগলছানার এই কাজটি কিভাবে সম্ভব হয়েছে।
গল্পের শিক্ষাঃ
প্রথমটি হলঃ আমরা বাহ্যিকভাবে কোন কিছু দেখে থাকি এবং সেই দেখাটা সব সময় সত্যি হয় না। আমরা অনেক সময় দেখে থাকি কোন ভবনে আগুন লেগেছে কিংবা বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেছে কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে, আসলে আগুন লাগানো হয়েছে কিংবা দুর্ঘটনা নেপথ্যে অনেক ভিন্ন কিছু লুকিয়ে থাকে। স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম হলে আমরা কোন কিছু মানতে চাই না। আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেই আমরা মনে করি তা সঠিক নয়। কিন্তু ঘটনার নেপথ্যে গিয়ে অথবা আমরা আরো ভালভাবে দেখলে বুঝতে পারব স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম কিছু ঘটনাও আমাদের সামনে সচরাচর ঘটে থাকে যেমনটি ওই ব্যাঙ এবং সাপের ক্ষেত্রে ঘটেছিল। যে কেউ বাহ্যিকভাবে দেখলে বিষয়টি বিশ্বাস করবে না কিন্তু যখন অন্তনিহিত বিষয় বুঝতে পারবে তখন সেও বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে যে আসলে ঘটনাটি সত্য।
২য় শিক্ষাটি হলঃআমরা যখন কোন কাজ নিয়মিত একটা দীর্ঘ সময় চর্চা করে থাকে তখন সেটা আমাদের মনের মধ্যে গেঁথে যায়। কোন একটা ভালো অভ্যাস যদি আমরা আমাদের জীবনে স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত করতে চাই আমাদেরকে সেই অভ্যাসটা একটা দীর্ঘ সময় ধরে অনুশীলন করতে হবে। একমাস ছাগলছানাকে নিয়ে যে অনুশীলন করা হয়েছে তার ফলে সে আর কখনোই ভুল করেনি তার রুটিন। আগে পুকুরে গিয়ে গোসল করার পর দুধ খাওয়াটাই হয়ে গেছে তার রুটিন।
তেমনি আমরাও আমাদের কোনো অভ্যাস গড়তে বা বদভ্যাস কে পরিবর্তন করতে চাইলে কোন একটা কাজকে দীর্ঘদিন অনুশীলন করতে পারি। অনেক গবেষণায় এরকম পাওয়া গেছে যে, কোন একটি কাজ যদি আমরা ৪০ দিন ধরে একাধারে করতে পারি তাহলে সেই কাজটি আমাদের জন্য একেবারে সহজ হয়ে যায় এবং এই কাজের বাইরে গিয়ে ব্যাতিক্রম চিন্তা করাটা আমাদের জন্য কঠিন। তাই কোন অভ্যাস গঠনের ক্ষেত্রে একটি কাজ একাধারে করে যাওয়াটা খাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের দিকনির্দেশনা। তাই কোন একটি অভ্যাস বা ভাল পরিবর্তন আমাদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে চাইলে আমাদের উচিত সেই বিষয়টাকে একটা দীর্ঘ সময় ধরে অনুশীলন করতে থাকা এবং অধ্যাবসায়ী হওয়া।
৩য় শিক্ষাটি হলঃ মাঝে মাঝে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য চালাকি করতে হয়। প্রথমে ছেলেটির বাবা যদি বলত যে, ব্যাঙ সাপ খায় তাহলে তার ছেলে বাজীতে জয়ী হত ঠিক-ই কিন্তু এতে তার ছেলের জেদ, ক্রিয়েটিভিটি নস্ট হয়ে যেত। তিনিও সমাজের কাছে অপদস্ত হতেন। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে মাঝে মাঝে চালাকী করতে হয়।
৪র্থ শিক্ষাটি হলঃ লোভ সংবরণ করতে হবে। বন্ধু ছেলেটি প্রথম বাজীতে জিতে ভেবে নিয়েছিল যে এবারও সে জিতে যাবে আর অনেক টাকা পাবে। এই চিন্তা থেকে সে লোভী হয়ে উঠেছিল। লোভ কখনো ভাল বিষয় নয় অন্তত বাজীর ক্ষেত্রে। কথায় আছে লোভে পাপ আর পাপে দুঃখ।
শেষকথাঃ
আশা করি গল্পের মাধ্যমে আপনি নতুন জিনিস শিখতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আমার লিখা অন্য গল্পগুলোর লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিলাম। ভাল লাগলে সেগুলোও পড়ে আসতে পারেন। আমার লেখাটি এ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই সিরিজে আমার লিখা পূর্বের গল্পগুলোর তালিকাঃ
পর্ব | প্রকাশের তারিখ | গল্পের বিষয়বস্তু |
---|---|---|
০১ | ১৯/০৭/২০২১ | ব্যাঙ ও ক্যারিয়ারে মানিয়ে নেয়ার গল্প |
০২ | ২৬/০৭/২০২১ | টিয়া পাখির কৌশল |
০৩ | ২৭/০৭/২০২১ | গর্তের ব্যাঙ ও সফলতার দুই চাবিকাঠি |
আমি কেঃ
ভোট দিন, মতামত থাকতে মন্তব্য করুন, পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং আমাকে ফলো করুন @engrsayful
অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ
Youtube | ThreeSpeak | DTube |
গল্পের মাধ্যমে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়েছেন।ছোট ছোট বিষয়গুলিকে আমাদের সব সময় গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ছোট গল্পের মাধ্যমে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন আপনি।ধন্যবাদ আপনাকে।
জি ঠিক বলেছেন কারণ আমরা যদি সময়ের গুরুত্ব ঠিক ভাবে দিতে পারি তাহলে আমাদের জন্য এগিয়ে যাওয়া অনেক সহজ হবে এবং আমরা সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারব। ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য
ভাই অসাধারন একটি গল্প লিখেছেন। আসলেই আমাদের জীবনে মাঝে মধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে থাকে যা অবাস্তব এবং লোকসমাজে বললে মানুষ আমাদেরকে পাগল ছাড়া কিছু ভাববে না। প্রতিটি ধাপে ধাপে গল্প থেকে শিক্ষা গ্রহণ অসাধারনভাবে বুঝিয়েছেন। ধন্যবাদ ভাই।
তোমাকেও ধন্যবাদ আমার গল্পটি পড়ার জন্য এবং সুন্দর মন্তব্যের জন্য