গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষাঃ পর্ব ০৭ || প্রফেসর ও জার এর গল্প || (Priority) জীবনে গুরুত্ব মেনে সময় দেয়া

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

ভূমিকাঃ

গল্পে গল্পে যখন আমরা কোনো কিছু শিখি তখন সেটা আমাদের মনে অনেকদিনের জন্য গেঁথে যায়। তাই গল্পে গল্পে কোন কিছু শিখার আনন্দ অন্যরকম। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি-তে আমি কয়েকটি সিরিজ লিখছি। তার মধ্যে গল্পে গল্পে জীবনের শিক্ষা সিরিজটি অন্যতম যেখানে একটি গল্প এবং এই গল্প থেকে আমাদের বাস্তব জীবনের শিক্ষামূলক কিছু দিক শেয়ার করে থাকি। গল্পগুলো মূলত ঈশপের গল্প বা অন্য কোন ছোট আকারের গল্প। আশা করি গল্পগুলো ও এর অন্তনিহিত শিক্ষা আপনার ভাল লাগবে।

1.jpg

Thumbnail Background Source: Image by Clker-Free-Vector-Images from Pixabay
Line Break Steem.png

পর্ব ০১: প্রফেসর ও জার নিয়ে ক্লাশে আসার গল্প

Line Break Steem.png

প্রথমে গল্পটিঃ

আজকের গল্পটি অনেক জনপ্রিয় একটি গল্প। অনেকেই এই গল্পটি আগে শুনে থাকবেন কিংবা বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকবেন। অথবা এই গল্পের উপর অনেক সময় ভিডিও তৈরি করা হয়েছে সেগুলো দেখে থাকবেন। একবার এক প্রফেসর ক্লাসে একটি জার এবং সাথে কিছু পাথর, নুড়ি পাথর, বালি এবং বিয়ারের বোতল নিয়ে প্রবেশ করলেন। ছাত্ররা এমনটি দেখে খুবই অবাক হলেন। প্রফেসর প্রথমেই জারের ভিতরে পাথরগুলো ফেললেন এবং জারটি ভর্তি করে দিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন এখন কি জারটি পূর্ন? ছাত্ররা উত্তর দিল, হ্যাঁ।

bag-1868758_1920.jpg
Source: Image by Pexels from Pixabay


এবার তিনি জার এর ভিতর নুড়ি পাথরগুলো ছেড়ে দিলেন এবং নুড়ি পাথরগুলো খুব সহজেই পাথরের টুকরা গুলার মাঝখানের খাঁজে জায়গার মধ্যে প্রবেশ করে জায়গা দখল করে নিল। এবার তিনি আবারো জিজ্ঞেস করলেন এখন কি জারটি পূর্ণ? ছাত্র উত্তর দিল, হ্যাঁ।

এবার প্রফেসর জারের ভিতরে বালি গুলোকে ছেড়ে দিলেন এবং সেই বালিগুলো ফাঁকা স্থানগুলোতে খুব সহজে প্রবেশ করে চারদিকে জারটিকে কানায় কানায় পূর্ণ করে দিল। এবারও প্রফেসর জিজ্ঞেস করলেন একই প্রশ্ন। ছাত্ররা এবার অনেকটা সাচ্ছন্দের দের সাথে উত্তর দিল, হ্যাঁ।

এবার প্রফেসর জারের ভিতরে বিয়ারের বোতল থেকে বিয়ার ঢালতে শুরু করলেন এবং কিছুক্ষণ পরে জারটি একেবারে পূর্ণ হয়ে গেল।

এতটুকু হচ্ছে ঘটনা কিন্তু এর থেকে অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে যেটি কিনা প্রফেসর সবাইকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিলেন। গল্পের শিক্ষা অংশে আমি এ বিষয়টি শেয়ার করছি।

Line Break Steem.png

গল্পের শিক্ষাঃ

জীবন চলার পথে আমাদেরকে বিভিন্ন রকম মানুষের সাথে চলাফেরা করতে হয়। কখনো আমাদেরকে আমাদের বন্ধুদের সাথে মিশতে হয় আবার কখনো পরিবারের সদস্যদের সাথে আবার কখনো আমাদের সহকর্মীদের সাথে সময় কাটাতে হবে। পাশাপাশি আমাদের কাজ এবং ভার্চুয়াল জগতেও আমাদেরকে সময় দিতে হয়। এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই প্রায়োরিটি অর্থাৎ গুরুত্ব অনুসারে সময় দেওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিকে বেশি সময় দেওয়া জীবনে কখনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারেনা। আর যদি আমরা এই কাজটি করি তাহলে আমাদের কাছে জীবনের যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বা যে মানুষগুলো আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাদেরকে সময় দেওয়ার মত আমার হাতে সময় থাকবেনা।

আমাদের সবার জন্য ২৪ ঘন্টা সময় বরাদ্দ এবং ২৪ ঘন্টা সময়ের মধ্যেই আমাদেরকে সবকিছু ভাগ করে নিতে হবে যে কাকে কতটুকু সময় দিব। যদি আমরা আমাদের ২৪ ঘন্টা সময়ের মধ্যে কোন কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বেশি সময় দিয়ে দেই তাহলে আমাদের জীবনের জন্য যে বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেখানে বেশি সময় দেয়া হবে না।

এই বিষয়টি গল্পের মাধ্যমে সহজেই বোঝা যায় কারণ প্রথমে পাথর, তারপর নুড়িপাথর, তারপর বালি এবং সর্বশেষ পানি বা বিয়ার। যদি এই ধারাবাহিকতা আমরা রক্ষা করতে পারি তাহলে আমরা জারটিকে পূর্ণ করতে পারব।
কারন খেয়াল করুন যদি আমরা প্রথমে বালি ফেলে দিতাম জারের মধ্যে তাহলে অনেকটা জায়গা বালি দখল করে নিত আর এতে সবগুলো পাথর এবং নুড়ি ভিতরে রাখতে পারতাম না। এটাই হচ্ছে সমস্যা অর্থাৎ আমরা যদি কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে আগে নিয়ে আসি তাহলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আমাদের জীবন থেকে বাদ পড়ে যাবে।

আপনি যত ভালো এবং সফল একজন চাকরিজীবী হোন না কেন, আপনার বিপদের দিন কিংবা আপনার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেদিন আপনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন সেইদিন আপনার সহকর্মীবৃন্দ কিংবা আপনার শ্রোতারা যারা আপনার লেকচার বা প্রেজেন্টেশন শুনে মুগ্ধ হয়, তারা থাকবে না পাশে কিংবা অনেকেই আপনার শেষকৃত্য করতেও আসবে না। অর্থাৎ আপনার অনেক ফলোয়ার থাকবে কিন্তু তারা আপনার জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যতটা গুরুত্বপূর্ণ আপনার পরিবার।

তাই আপনাকে প্রথমে আগে পরিবারকে সময় দিতে হবে। পরিবারের জন্য একটা ভালো অংশ নিজের ব্যক্তিগত সময় থেকে বরাদ্দ করে রাখতে হবে এবং এরপরে অন্যান্য বিষয়গুলো যেমন কাজ, পড়াশোনা কিংবা সহকর্মীদেরকে সময় দেওয়া গুরুত্ব দিতে হবে। এভাবে করে এর পরবর্তী ধাপে আমরা আমাদের বন্ধুদের কে রাখতে পারি। অর্থাৎ আমরা যেন বন্ধুদেরকে কিংবা কাজকে পরিবারের আগে গুরুত্ব না দিয়ে ফেলি তাহলে কিন্তু আমাদের পক্ষে ওই ঠিক জারের মত পুরো বিষয়টি আমাদের জীবনের মধ্যে প্রবেশ করানো সম্ভব হবে না।

family-1237701_1920.jpg
Source: Image by serrano1004 from Pixabay


গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কে আগে দিলেই কেবল মাত্র আমরা আমাদের জীবনের সবগুলো বিষয় সম্পর্কিত এবং অন্তর্ভুক্ত করতে পারব। অন্যথায় আমাদের জন্য এই কাজটি অনেক কঠিন একটি কাজ হবে। তাই গুরুত্ব অনুসারে আমাদের জীবনে যারা আছে এবং যে মানুষগুলো আমাদের জীবনের সাথে জড়িত তাদেরকে সময় দেওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা অনেক সময় পরিবারের লোকজনকে সময় দিতে চাই না বরং ভার্চুয়াল জগতে কিংবা বন্ধুদের কে অনেক বেশি সময় দিয়ে থাকে। আবার অনেকে এমন আছে যারা কিনা কর্মক্ষেত্রের লোকজনকে অনেক বেশি সময় দেয় যেমন বসের জন্য অনেক কিছু করে ফেলে কিন্তু নিজের পরিবারের জন্য তেমন কিছু করতে চায়না। এটা আসলে ঠিক নয়। কর্মক্ষেত্র অবশ্যই আমাদের জীবনের অংশ কিন্তু সেটা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যতটা গুরুত্বপূর্ণ আমাদের পরিবার। তাই সবকিছুর আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আসা এটা হচ্ছে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা যেমনটি প্রফেসর দেখালেন ক্লাসে।

সর্বশেষ বিয়ারের বোতল থেকে বিয়ার জারের ভেতরে রেখে প্রফেসর এটা বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, আমাদের জীবনে যত কিছু আছে সব কিছু মেইনটেইন করার পরেও চাইলে আমরা মাঝে মাঝে এরকম আনন্দ মুখর সময় কাটাতে পারি। কোন ভালো সিনেমা দেখা, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া, আড্ডা, একসাথে বিয়ার খাওয়া ইত্যাদিও জন্য আলাদা করে কিছু সময় আমরা দিতেই পারি। অর্থাৎ আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অর্থাৎ প্রথম দিকের বিষয়গুলোকে আমরা আমাদের জীবনে ঠাঁই দেয়ার পরেও চাইলে আমরা কিছু আনন্দদায়ক বিষয় জীবনে খুব সহজেই নিয়ে আসতে পারি যেটা আমাদের স্বাভাবিক গুরুত্ব দেওয়া মানুষগুলোর ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না যেমনটি গল্পে দেখানো হল। তিনটি উপাদান দ্বারা জার পূর্ণ করার পরেও এর মধ্যে পানি অর্থাৎ বিয়ার ঢেলে দেয়া সম্ভব হয়েছিল। ব্যাপারটা ঠিক একই রকম।

rubber-stamp-2022904_1920.png
Source: Image by Gerd Altmann from Pixabay

Line Break Steem.png

শেষকথাঃ

আশা করি গল্পের মাধ্যমে আপনি নতুন জিনিস শিখতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আমি আমার প্রত্যেকটি গল্পে কিছু না কিছু মেসেজ বা শিক্ষানীয় বিষয় শেয়ার করার চেষ্টা করি। এবং কেউ যদিএই গল্পগুলো থেকে জীবনে নতুন কিছু শিখতে পারে এবং জীবনের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এই শিক্ষাগুলো কে কাজে লাগিয়ে উন্নতি করতে পারে তাহলেই এই গল্পগুলোর সার্থকতা। সবাই ভাল থাকবেন এবং কেউ হয়ত পূর্বের এই সিরিজের গল্পগুলো পড়তে আগ্রহী হতে পারেন সেজন্য আমি আমার প্রত্যেক সিরিজের কোন পোস্টে পূর্বের গল্পগুলোর লিংক দিয়ে থাকি এবং সেই লিঙ্ক গুলো দেখে আপনারা পূর্বের কোন গল্প পড়ে আসতে পারেন। ধন্যবাদ।
Line Break Steem.png

এই সিরিজে আমার লিখা পূর্বের গল্পগুলোর তালিকাঃ

পর্বপ্রকাশের তারিখগল্পের বিষয়বস্তু
০১১৯/০৭/২০২১ব্যাঙ ও ক্যারিয়ারে মানিয়ে নেয়ার গল্প
০২২৬/০৭/২০২১টিয়া পাখির কৌশল
০৩২৭/০৭/২০২১গর্তের ব্যাঙ ও সফলতার দুই চাবিকাঠি
০৪০২/০৮/২০২১কৃষকের ছেলের ছাগলছানা ও অনুশীলনে অভ্যাস পরিবর্তন
০৫০৯/০৮/২০২১দৈত্য কর্ত্রিক তিন ইচ্ছা পূরণ ও অন্যের সম্পদে ঈর্ষা
০৬১৩/০৮/২০২১হরিণের শিং ও পা এর গল্পে রূপকে নয় কাজকে মূল্যায়নের শিক্ষা

Line Break Steem.png

আমি কেঃ

আমি সাইফুল বাংলাদেশ থেকে। পেশায় শিক্ষক এবং সাবেক ব্যাংকার। পড়াশুনা করেছি প্রকৌশলবিদ্যায়। আমি আমার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলি ব্লগে শেয়ার করতে ভালবাসি। স্টিম এ ২০১৯ সাল থেকে নিয়মিত লিখালিখি করে আসছি। আমি টেক্সটাইল, অনলাইন অর্থ উপার্জন, কৃষি, প্রযুক্তি, রান্না, ও জীবন্ঘটিত অন্যান্য আরো কিছু বিষয় নিয়ে লিখি। প্রকৃতির পাশাপাশি যাওয়ার জন্য ঘুরে বেড়ানো এবং ক্রিকেট খেলা আমার শখ। আমি সর্বদা একজন শিক্ষানবিস এবং সবার থেকে শিখতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, আমার জ্ঞান ও লিখা থেকে একজনও যদি উপকৃত হল বা নতুন কিছু শিখতে পারে তবেই আমার ব্লগে লিখালিখি সার্থক

Line Break Steem.png

Intro Steem.gif

ভোট দিন, মতামত থাকতে মন্তব্য করুন, পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন এবং আমাকে ফলো করুন @engrsayful

Line Break Steem.png

অন্যান্য মিডিয়াতে আমার সাথে যুক্ত হতে পারেনঃ

FacebookTwitterInstagram
YoutubeThreeSpeakDTube


Amar Bangla Blog Logo.png


Sort:  
 3 years ago 

আপনার গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার জন্য শুভকামনা রইলো 🥀

 3 years ago 

ভাইয়া খুবই শিক্ষণীয় একটা পোস্ট। অনেক কিছু শিখতে পারলাম আপনার পোস্ট টি পড়ে। অনেক ধন্যবাদ ভাই।

 3 years ago 

এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি কিছু শিখতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন এটা জেনে অনেক ভালো লাগছে এবং ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

গল্পটা পড়ে ভালো লাগল এবং কিছু শিখতে পারলাম। ধন্যবাদ এরকম গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

গল্পটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অভিনন্দন

 3 years ago 

🙂

!invest_vote

@umuk denkt du hast ein Vote durch @investinthefutur verdient!
@umuk thinks you have earned a vote of @investinthefutur !

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 57951.98
ETH 3051.79
USDT 1.00
SBD 2.26