মুভি রিভিউ: শেষ অঙ্ক

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago
হ্যালো বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।

আজকে আপনাদের সাথে একটি মুভি রিভিউ শেয়ার করে নেবো। এই মুভিটির নাম হলো "শেষ অঙ্ক"। এই মুভিটি উত্তম কুমারের বহু পুরানো একটি মুভি, যা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো সাড়া ফেলেছিলো, এখনো এই মুভি অনেকের কাছে জনপ্রিয়। যাইহোক, এই মুভিটির গল্প কিভাবে কি দিয়ে হয় সেটা দেখা যাক।


স্ক্রিনশর্ট: ইউটিউব


✠কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:✠

মুভির নাম
শেষ অঙ্ক
প্লাটফর্ম
hoichoi
পরিচালকের নাম
হরিদাস ভট্টাচার্য
লেখকের নাম
শ্যামল গুপ্ত
অভিনয়
উত্তম কুমার, পাহাড়ি সান্যাল, শর্মিলা টগর, বিকাশ রায়, কমল মিত্র, সাবিত্রী চ্যাটার্জি ইত্যাদি
মুক্তির তারিখ
১৯৬৩ সালে
সময়
২ ঘন্টা ১১ মিনিট
মূল ভাষা
বাংলা
কান্ট্রি অফ অরিজিন
ইন্ডিয়া


☬মূল কাহিনী:☬


স্ক্রিনশর্ট: hoichoi

মুভিটার মেইন কাহিনী সাধারণত শুরু হয় একটি বিয়ের আসর থেকে। এখানে সুধাংশু আর সোমা দুইজনের মধ্যে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল এবং তাদের বিয়েও ঠিক হয় ওইদিনই। মেয়ের বাবাও বেশ বড়ো একজন ব্যবসায়ী আর ছেলেও ভালো ব্যবসা করতো। তবে সুধাংশুর আগে একটা বিয়ে ছিল আর তার প্রথম স্ত্রী আত্মহত্যা করে সেটাও জানে মেয়ে এবং তার বাবা। আর সবকিছু শুনেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক পাকাপাকি হয়। আর তার আগে থেকেই তাদের নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। এখন এখানে বিয়ের আসরে একদিন একটা মহিলা একজন উকিলকে সাথে করে নিয়ে এসে সুধাংশুর প্রথম স্ত্রী বলে দাবি করে, কিন্তু সে তার স্ত্রীই ছিলই না। এখন এইটা নিয়ে বিষয়টা অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে যায় আর বিয়েটা বন্ধ রাখে আপাতত। তবে মেয়ে আর মেয়ের বাবা প্রথমে এই কথা শুনে অতটাও বিশ্বাস করিনি। যে উকিলকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলো সেই বেশি কথার জালে জড়িয়ে ফেলে। এরপর কথা তর্কবিতর্ক হতে থাকে আর সুধাংশু ওই মহিলাকে অস্বীকার করে। সেখানে পুলিশ ডাকার পরে প্রমান স্বরূপ ডেথ সার্টিফিকেট আর কিছু অ্যালবাম দেখতে চায় তার আগের স্ত্রীর ছবি আছে কিনা তাতে।


স্ক্রিনশর্ট: hoichoi

সুধাংশু তাতে রাজি হয়ে যায় আর বাড়ি এসে অ্যালবাম পুলিশের কাছে দিয়ে দেয়, কিন্তু সেই অ্যালবাম-এ এই অপরিচিত মহিলার ছবি লাগানো থাকে। তাছাড়া যে গহনার বাক্স ছিল তার থেকেও কিছু প্রয়োজনীয় গহনা চুরি হয়ে যায়। যেটা আবার ওই মহিলার হাতে, গলায় পড়ে থাকতে দেখে। এ একটা রহস্যের মতো জালে জড়িয়ে যায় সুধাংশু। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেট, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এইগুলো সবই ঠিক ছিল। আর তার ভিত্তিতে পুলিশ আবার ওই মহিলাকে সন্দেহ করতে থাকে আর তাকে গ্রেফতার করেও নিয়ে যায়। তবে এই মহিলাকে বিকাশ নামের একজন লোক পাঠিয়েছিল যে, সবসময় সাথে পিছে ঘোরাঘুরি করতে থাকে আর এটা নিয়েও একটা সন্দেহ তৈরি হয় যে, কোনো স্বার্থে নিশ্চই এইগুলো করছে বা জড়িত আছে এইসব বিষয়ের সাথে। তবে এখন বিষয়টা কোর্টের দিকে চলে যায় ধীরে ধীরে, কারণ একজন তার স্ত্রী হিসেবে দাবি করছে আর আরেকজন তাকে চেনেই না বা কোনোদিন দেখেনি বলে দাবি করতে থাকে।


স্ক্রিনশর্ট: hoichoi

মেয়ের বাবা কলকাতার একজন নাম করা উকিলকে হায়ার করে এই কেসের জন্য ,কিন্তু সুরেন নামের উকিলটা কথার খুবই মারপ্যাঁচ জানতো। কোর্টে বিভিন্ন ভাবে জেরা করে সুধাংশুকে ভুল প্রমাণিত করার চেষ্টা করতে থাকে এবং তার জন্য বিভিন্ন প্রমাণও মোটামুটি ম্যানেজ করে। এই নিয়ে দুই উকিলের মধ্যেও বেশ তর্ক বেধে যায় শেষ পর্যন্ত। বিচারপতি এইসবের প্রমান অতটা গুরুত্ব না দিয়ে তার ভাইকে সামনে আনতে বলে, আর সেটাই হবে মূল প্রমান, কারণ সেই দেখে বলতে পারবে এই মহিলা আসল না নকল। এরপর তাকে খোঁজার জন্য হাইপার হয়ে যায়, কিন্তু তার ভাই আবার থাকে বার্মায়, যেখানে নৌ সেনার কাজ করে। তাকে চিঠি লিখে নিয়ে আসে ঠিকই, কিন্তু সেও মিথ্যা বলে যে এই মহিলা তার বোন হয়। এই নিয়ে সুধাংশুর একপ্রকার পাগল এর মতো অবস্থা হয়ে যাওয়ার মতো, কারণ সবাই তাকে কোনো না কোনো ভাবে ভুল প্রমান করার চেষ্টাই করে যাচ্ছে। আর এতে সেই মেয়ের বাবা আর মেয়ে তাকে সন্দেহ করতে থাকে, কারণ সবাই এক রকম বলতে পারে না, নিশ্চই কোনো কারণ আছে।


☬ব্যক্তিগত মতামত:☬

এই কাহিনীতে একটা বড়ো রহস্য লুকিয়ে ছিল, সেটা হলো সুধাংশুর প্রথম স্ত্রী কিভাবে খুন হয়েছিল বা আত্মহত্যা করেছিল সেটা একমাত্র সেই জানতো আর সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিলো। সবাইকে সে একটাই কথা বলতো যে ট্রেনের থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এখন এই বিষয়টা যখন তার ভাই জানতে পেরেছিলো সে এই কথাটা একদমই মেনে নিতে পারেনি আর বিষয়টা সন্দেহ করে যে তার বোন এর ব্রেনে একটু সমস্যা থাকলেও এই ডিসিশন সে নিতে পারে না। আর তার জন্য বিকাশ নামের এই লোকটাকে এখানে একজন ব্যাপারী হিসেবে পাঠিয়েছিল, মূলত সে একজন ছিল গোয়েন্দা। আর এখন সুধাংশুর বাড়িতে যে দুইজন কাজের লোক হিসেবে ছিল তারা দুইজনও ছিল তার লোক। সুধাংশু একদিন যখন অফিস থেকে সোমাদের বাড়িতে যায় সেদিন রাতের দিকে বাড়িতে কাজ করা একজন এই বিকাশকে ফোন করে জানায় যে বাড়িতে ফিরতে রাত হবে, আর তখনি বাড়িতে এসে আলমারিতে থাকা অ্যালবাম নিয়ে সেখান থেকে ছবি সরিয়ে এই অচেনা মহিলার ছবি লাগিয়ে দেয় আর কিছু গহনার বাক্স এবং ডায়েরি নিয়ে যায়। আর এই নিয়ে কাহিনী শুরু হয়, কারণ সুধাংশু তার প্রথম স্ত্রীকে নিজে হাতে খুন করে রেল লাইনের উপর রেখে এসেছিলো আর তাতে ট্রেনে কাটা পড়ে গেলে একটা আত্মহত্যা এর কেস সাজিয়ে দেয় সবার সামনে। আর এই সত্যিটা তার নিজের মুখ থেকে শোনার জন্য এই প্ল্যান সাজিয়েছিল সবাই মিলে। আর একদিন যখন সবাই সন্দেহ করলো তখন সোমার সামনে সব সত্যিটা বলে দেয় যে, যাকে আমি নিজে হাতে মেরেছি সে কোথার থেকে আসবে। এই ছিল রহস্যে ঘেরা এর মূল কাহিনী।


☬ব্যক্তিগত রেটিং:☬
৮.৯/১০


☬ট্রেইলার লিঙ্ক:☬



শুভেচ্ছান্তে, @winkles


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 11 months ago 

"শেষ অঙ্ক" মুভি রিভিউ পড়ে অনেক ভালো লাগলো দাদা। পুরনো মুভি হলেও এই মুভির গল্পটি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। উত্তম কুমার সর্বকালের সেরা নায়ক। আর উত্তম কুমারের অভিনয় দক্ষতা আমরা সবাই জানি। এখনো সবাই উনার অভিনয় পছন্দ করে। পুরনো মুভিগুলোতে উনার অভিনয় দক্ষতা দেখে দর্শক আজও মুগ্ধ হয়। এই মুভির গল্পটিও আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। সুধাংশুর প্রথম স্ত্রী কে সে নিজে মেরে ট্রেনের নিচে চাপা দিয়েছে। আর সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। যেহেতু তার স্ত্রীর মাথায় কিছুটা সমস্যা ছিল তাই তো খুব সহজেই সবকিছু তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে। তবে তার স্ত্রীর ভাই বিষয়টা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। তাই তো সে সবকিছুই খোলাসা করার জন্য এবং সত্যটা সামনে আনার জন্য অনেক প্ল্যান করেছে। আসলে সত্য কখনো চাপা থাকে না। আর খুনি কখনো রক্ষা পায় না। যেভাবেই হোক নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়। সুধাংশুরও চাপে পড়ে শেষমেষ নিজের মুখেই দোষ স্বীকার করে নিয়েছে। আসলে সত্যের জয় সব সময় হয়। দারুন একটি মুভি রিভিউ শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি দাদা। পুরনো দিনের মুভি দেখতে সত্যিই অনেক ভালো লাগে। সময় পেলে অবশ্যই এই মুভিটি দেখার চেষ্টা করব দাদা।

 11 months ago 

উত্তম কুমার আমার খুব কিছু একটা নায়ক। তার বেশ কিছু সিনেমাগুলো দেখেছি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে এত নিখুত অভিনয় করতেন উনি, তার প্রতিটা অভিনয় ছিল খুবই মার্জিত এবং রুচিশীল। মুভি রিভিউ পরে বুঝতে পারলাম সিনেমাটি দারুন একটি সিনেমা। পুরো সিনেমাটা যেন একটা রহস্য ভরা। সত্য কখনো ঢাকা থাকে না এই ছবিটা তার একটা প্রমাণ।

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

উত্তম কুমারের মুভি গুলোর আবেদন অনেক বেশি।আপনার আজকের মুভির রিভিউ পোস্ট পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো দাদা।মুভিতে রহস্যে ভরপুর।সেই রহস্যকে নিয়েই মুভিটা করা।এ ধরনের মুভি গুলো খুব ভালো লাগে দেখতে।আপনি মুভির রিভিউ খুব চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন। উত্তম কুমারের মুভি গুলো পুরনো হলেও আমার খুব দেখতে ভালো লাগে। ধন্যবাদ দাদা সুন্দর একটি মুভির রিভিউ পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 11 months ago 

দাদা আজকেও আপনি অনেক সুন্দর একটা মুভির রিভিউ আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন যেটা খুবই সুন্দর ছিল। আমার কাছে মুভির রিভিউ পড়তে খুবই ভালো লাগে। আপনি সবসময় আমাদের মাঝে অনেক সুন্দর করে মুভির রিভিউ শেয়ার করেন, যেগুলো আমি সবসময় পড়ার চেষ্টা করি। সুধাংশু তার প্রথম স্ত্রীকে নিজের হাতে মেরে ফেলেছে, এটা সে শুরু থেকে না স্বীকার করলেও পরবর্তীতে নিজের মুখে বলে দিয়েছিল। আসলে এরকম ভাবে যদি একটা মানুষকে মারা হয়, তাহলে কেউই বুঝতে পারবে না এটা আত্মহত্যা নাকি খুন। তাইতো সুধাংশু তার স্ত্রীকে মেরে ট্রেনের রাস্তায় রেখে দিয়েছিল আর এটা সে আত্মহত্যা করেছে বলে চালিয়ে দিয়েছিল। রহস্যে ঘেরা এরকম মুভি গুলো দেখতে ভালো লাগে অনেক বেশি। তবে এই রহস্য ফাঁস হয়ে গিয়েছিল এটা দেখতে ভালো লেগেছে। উত্তম কুমারের মুভি কখনো দেখা হয়নি, তবে এই মুভিটার রিভিউ পড়ে বুঝতে পারছি তার অভিনয় অনেক সুন্দর। তবে এরকম মুভি গুলো পুরনো হলে ও এমনিতে দেখতে ভালো লাগে। আর আমার কাছে এটা ভালো লেগেছে, তাই ভাবছি সময় পেলে এটি দেখে নেওয়ার চেষ্টা করব আমি। ধন্যবাদ দাদা এত সুন্দর মুভির রিভিউ সবার মাঝে ভাগ করার নেওয়ার জন্য।

 11 months ago 

দাদা আমি মুভি দেখতে যেমন পছন্দ করি, আমার কাছে মুভিগুলোর রিভিউ পোস্ট পড়তে ও সব সময় খুব ভালো লাগে। শেষ অংক এই মুভিটা আমার এখনো দেখা হয়নি। উত্তম কুমারের মুভির মধ্যে আমি কয়েকটা দেখেছিলাম। আর আমার এখনো পর্যন্ত এই মুভিটা দেখা হয়নি। আর এরকম রহস্য ভরা মুভিগুলো আমি সবসময় অনেক পছন্দ করি। যখন প্রত্যেকটা কাহিনী একটার পর একটা রহস্য থেকে বের হয় তখন তা দেখতে অনেক ভালো লাগে। আমি তো পুরো মুভিটা বেশ ভালোভাবে উপভোগ করেছি দাদা। আমি ভাবছি সময় পেলে এই মুভিটা দেখবো কারণ রিভিউটা সুন্দর লেগেছে। ওই লোকটা কিন্তু অনেক বেশি জঘন্য ছিল, কিভাবে পরলো নিজের স্ত্রীকে এরকম ভাবে হত্যা করতে। আবার হত্যা করার পর আত্মহত্যা বলে এটা চালিয়ে দিয়েছিল যেন কেউ না বুঝতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত সত্য কথাটা সবার সামনে বেরিয়ে এসেছে। পুরোটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে দাদা রিভিউর মাধ্যমে পড়তে। পরবর্তী মুভির রিভিউ পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে থাকলাম।

 10 months ago 

দাদা আমাদের গ্রামে একটি প্রবাদ আছে যে ফুটকার স্বাক্ষী ফুটকা নিজেয় দেয়। আজকের মুভিতে সেটাই ঘটেছে।সবাই এটাই ধারনা করেছিলে যে, সুধাংশুর স্ত্রীর ব্রেনে একটু সমস্যা থাকলেও সে আত্নহত্যার ডিসিশন নিতে পারে না। আর সেই সত্যটা উদঘাটন করার জন্য এত কিছু করা হয়েছে। সত্য ঘটনা বের করতে বিকাশ এক জন গোয়েন্দা তাকে ব্যাপারী সাজতে হয়ে ছিল, সুধাংশুর বাড়িতে দুইজন কাজের লোক হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। মূলত এই তিনজন মিলেই সত্য ঘটনাটা বের করেছে। অবশেষে এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে সুধাংশু নিজেই স্বীকার করলো যে যাকে সে নিজ হাতে হত্যা করে রেললাইনে শুয়ে দিয়েছে সে কিভাবে ফিরে আসতে পারে। যায়হোক দাদা শেষ অঙ্ক মুভি তো অনেক আগের। সাদা কালো মুভি। এটা দেখার মত ধৈর্য আপনার হলো কিভাবে।সেটাই চিন্তা করছি। ধন্যবাদ দাদা।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59887.64
ETH 2670.13
USDT 1.00
SBD 2.47