সামান্তা
সামান্তার মৃত্যুকে সবাই সুইসাইড হিসেবে দেখলেও, নাহিদ এটা কোনভাবেই সুইসাইড হিসেবে মানতে পারছে না। কেননা আর যাইহোক সামান্তা সুইসাইড করার মেয়ে না। নাহিদ আর সামান্তার পরিচয়ের সূত্র মূলত মেডিকেলের প্রথম বর্ষ থেকেই। বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল দুজনের মধ্যে।
একটা বিষয় কখনো খেয়াল করে দেখেছেন কি, প্রতিবছরই কত ছাত্র-ছাত্রীর প্রাণ যে অকালে ঝরে যায়, তা হয়তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। খবরের কাগজগুলো খুললেই এইসব খবর চোখের সামনে প্রতিনিয়ত ভাসমান। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্যান্য সেক্টরের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এমন প্রবণতা অনেকটাই কম। তবে মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটে।
যার কারণ হিসেবে দেখানো হয়, অতিরিক্ত চাপ নিতে পারেনি। তাছাড়া এমনও নজির আছে, অনেকে তো পড়তে পড়তে পড়াশোনা ছেড়েই দেয়। মানে বাধ্য হয়ে মেডিকেলের ছাত্রজীবন কে বিদায় জানায়।
সামান্তার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্যরকম ছিল, এটা অনেকটা বলা যায় মানসিক নির্যাতন। ব্যাপারটা অন্য কেউ না জানলেও, নাহিদ খুব ভালোভাবেই জানত। প্রথম বর্ষে এনাটমি সাবজেক্ট ব্যতীত সব সাবজেক্টেই মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করে সামান্তা।
লেকচারার মূলত যে ছিল, সে বেশ ভালোভাবেই খাতা কেটে ছিল সামান্তার। মেয়েটা বড্ড ভালোই লিখেছিল খাতায়, পাস নাম্বারের থেকেও বেশি নাম্বার পেয়েছিল লিখিত পরীক্ষাতে। তবে মৌখিক পরীক্ষার দায়িত্বে যে অধ্যাপক নিয়োজিত ছিল, তার আসলে কুনজরের শিকার হয়েছিল সামান্তা। যে প্রস্তাবগুলো পেয়েছিল, সবগুলোই প্রত্যাখ্যান করেছিল সামান্তা।
মৌখিক পরীক্ষার রুম থেকে বেরিয়েই, নাহিদকে বিষয়গুলো জানিয়েছিল। তবে নাহিদ আসলে সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। কেননা সে নিজেও মৌখিক পরীক্ষার্থী ছিল। নাহিদের তাও টেনেটুনে এনাটমিতে লিখিত আর মৌখিক মিলে কোন রকমে পাস হয়ে যায়। তবে আটকা পড়ে যায় সামান্তা। সামান্তা আসলে ভুক্তভোগী থেকেই যায়।
সব বিষয়ে পাস করা হলেও, এনাটমি আর পাস করা হয়ে ওঠেনি সামান্তার ভাগ্যে। যদিও সামান্তা ভেবেছিল, এই অধ্যাপক হয়তো ছয় মাস পরেই অন্যত্র চলে যাবে তখন হয়তো তার মুক্তি মিলবে। তবে ব্যাপারটা এতটাই জটিল হয়ে গিয়েছিল যে, অধ্যাপক যেন জোঁকের মতো গেঁথে গিয়েছিল ঐ মেডিকেল কলেজে।
আবারো ছয় মাস পরে সামান্তার সঙ্গে অধ্যাপকের দেখা এনাটমির মৌখিক পরীক্ষার রুমে , যদিও এর মাঝে অধ্যাপক বহুবার মুঠোফোনে সামান্তাকে প্রলোভিত করার চেষ্টা করেছিল, তবে প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষার রুমটা বড্ড ছোট, বলতে গেলে অধ্যাপকের চেম্বারেই পরীক্ষা হয়ে থাকে। বিগতবার অধ্যাপক শুধু প্রস্তাব দিয়েই শান্ত ছিল, তবে এবারের ঘটনাটা ছিল আরো কিছুটা ব্যতিক্রম মানে বড্ড বাজে।
সামান্তা এটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তাছাড়া এটা মেনে নেওয়ার মতো ঘটনাও না। সামন্তা যে কি পরিমাণ মানসিক নির্যাতনের ভিতর দিয়ে গিয়েছে, সেটা শুধুমাত্র ও নিজেই জানে। এমনিতেই বেসরকারি মেডিকেল, তার ভিতরে তার পরীক্ষাগুলো ক্লিয়ারেন্স হচ্ছিল না, যার কারণে প্রতিনিয়ত বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছিল।
একদিকে বাড়ি থেকে নানান রকম কথাবার্তা পরিবারের, কেন সে পরীক্ষায় পাস করতে পারছে না, সেটা নিয়ে ক্রমাগত কথা চলছেই, তাছাড়া অর্থনৈতিক ব্যাপার তো ছিলই। আর এদিকে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের ক্রমাগত শিকার হয়েই যাচ্ছিল সামান্তা।
সুন্দর পৃথিবীটা মুহূর্তেই তার কাছে বিষিয়ে উঠেছিল, এই চাপ সে কোন ভাবেই নিতে পারেনি। তাই নিজেকে ছাত্রী হোস্টেলের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়ে, সে মুক্তি নিয়েছিল। নাহিদ এখনো কথাগুলো জানে, তবে কাউকেই বলতে পারেনা। তাছাড়া বলেই বা কি হবে, সামান্তা তো আর ফিরে আসবে না।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1751508403703435648?t=I_cOpE8kVuL8oRQYBrs4QA&s=19
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
সামান্তার ঘটনা পরে কষ্ট লাগলো ভাইয়া।কত সামান্তা অকালে ঝরে যাচ্ছে তার হিসেব কেউ রাখেনা। গতকাল একটি রিপোর্টে দেখলাম সুইসাইড করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬০ ভাগ মেয়ে শিক্ষার্থী। এর কারণ সহজেই অনুমেয় অধিকাংশ মেয়েই সামান্তার মত লালসার শিকার। শিক্ষক ও পুরুষরুপি অমানুষদের দ্বারা। তবে ছোট থেকে যদি সন্তান্দের অধিকার সচেতন করে গড়ে তোলা যায় এবং অন্যায় কে মেনে না নেয়ার মানসিকতায় তৈরি করা যায় তাহলে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাছাড়া নাহিদের উচিত ছিল সামান্তার পাশে শক্ত করে দাঁড়ানো। অকালে ঝরে না যেয়ে সামান্তারা প্রতিবাদী হয়ে উঠুক এই কামনা করি। পোস্টটি শেয়ার দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিবাদ করা ছাড়া আসলে কোনো উপায় নেই, তবে মানসিকতার পরিবর্তন বড্ড জরুরি সকলের।
সামান্তার মতো অনেক মেয়েই প্রতিনিয়ত হায়ানার শিকার হচ্ছে! একজন অধ্যাপক হয়েও তার লোলুপদৃষ্টি এতো বাজে ছিল! এমন অধ্যাপক সমাজ ও দেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর! নাহিদের উচিত ছিল সমাজের চোখে প্রক্টরের মুখোশ উন্মোচন করা। কিন্তু আফসোস, তারও ভয়! তাকে যদি ফেল করিয়ে দেয়!!
মানুষের ভিতরে মানসিকতার পরিবর্তন না আসলে, এ ধরনের ব্যাধি দূর করা খুব কষ্টকর।
ভাবতেই অবাক লাগে, মাত্র একজন মানুষের কুনজরের কারণে, একটি মেয়ের জীবনটা একেবারে শেষ হয়ে গেল। মুখোশধারী এই লম্পট অধ্যাপকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। এই সমস্ত লম্পট লোকদের ভাগ্য আসলেই খুব ভালো, নয়তোবা একের পর এক কুকর্ম করার পরেও ধরা পড়ে না যথাযথ প্রমাণের অভাবে। সামান্তার জন্য আসলেই খুব খারাপ লাগছে। নাহিদের মাধ্যমে যদি এই ভন্ড অধ্যাপককে বিচারের আওতায় আনা যেতো, তাহলে খুব খুশি হতাম। যাইহোক ইহকালে এই লোকটা পার পেয়ে গেলেও, পরকালে তার জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
নাহিদ তো নিজেও ভুক্তভোগী, বলতে গেলে অনেকটা ভয়ের মধ্যে আছে।
সামান্তার মত মেয়েরা হয়তো পরিস্থিতির চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। হয়তো তাদের জীবনের মূল্য কেউ দিতে পারে না। আর কিছু কুৎসিত মানুষের লালসার জন্য তাদেরকে মৃত্যুর পর বেছে নিতে হয়। সত্যি বিষয়গুলো অনেক বেশি কষ্টের। দারুন লিখেছেন ভাইয়া। অনেক ভালো লাগলো।