অসুস্থতায় মোড়া একটি সপ্তাহ
Copyright Free Image Source:Pixabay
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে টিনটিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলো কাশতে কাশতে । গায়ে হাত দিয়ে দেখি বেশ জ্বর । সাথে সাথেই বাচ্চাদের প্যারাসিটামল সিরাপ খাইয়ে দিলাম । এরপরে দুধ খেয়ে ওর মায়ের সাথে ঘুমোতে গেলো । ওর মায়েরও তখন শরীর বেশ খারাপ । সোমবার রাত থেকেই হালকা জ্বর, গায়ে ব্যাথা আর কাশি । মঙ্গলবারে একটু বেড়েছিল জ্বর আর মাথা ব্যাথা । বুধবারে জ্বর কমলেও মাথা ব্যাথা আর গায়ে ব্যাথা বেড়েছিল । তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেশ কমে গিয়েছিলো । স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম তাই ।
কিন্তু, ওই বৃহস্পতিবার সকালে তনুজা মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠলেও টিনটিন অসুস্থ হয়ে পড়লো । তো টিনটিন দুধ খেয়ে ওর মায়ের পাশে শুয়ে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল । হঠাৎ ঘুম ভেঙে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো বেডরুমের সিলিং এর দিকে । কয়েকবার নাম ধরে ডাকলাম, কিন্তু কোনো সাড়া মিললো না । ঘাবড়ে গেলুম বেশ । কোলে নিয়ে গালে চুমু টুমু খেলাম, পিঠে চাপড় মারলাম তাও সেই একই ভাবে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে নীরব রইলো । ভয়ের একটা হিমশীতল স্রোত বয়ে গেলো মেরুদন্ড দিয়ে ।
বাড়ির সবাই তখন ছুটে এসেছে । টিনটিনের মুখের ভঙ্গি দেখে আমার মনে হলো বোধ হয় বমি আসছে । নিলয় ততক্ষনে ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে ফোন দিলো । আমার ভাই এপোলো ক্লিনিকে ফোন করে ডক্টর এর সাথে এপয়েন্টমেন্ট করে ফেললো । আর ততক্ষণে টিনটিন একভাবে বমি করা শুরু করলো । বমির সাথে সমস্ত দুধ আর ওষুধ বেরিয়ে গেলো । একদম নেতিয়ে পড়লো বেচারা ।
আমরা আর দেরি না করে বেরিয়ে গেলুম ক্লিনিক এর উদ্দেশ্যে । মোটে মিনিট পাঁচেক এর পথ । পৌঁছেই বিল পেমেন্ট করা মাত্রই আমাদের ডাক পড়লো চেম্বারে । এই ডক্টর শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপ্রসিদ্ধ । বোস্টন থেকে এম ডি করা । তো উনি খুব ভালো ভাবে examine করে common influenza র কথাই বললেন । এবং, যেহেতু, টিনটিনের influenza র ভ্যাকসিন নেওয়া আছে, তাই তেমন কোনো জটিলতার আশংকা করলেন না উনি । একটি এন্টিবায়োটিক, গ্যাস এর ওষুধ, প্যারাসিটামল সিরাপ আর কাশির সিরাপ prescribe করলেন ।
ওষুধ খাওয়ানো শুরু করে দিলাম । টিনটিন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলো । ২ দিন পরে আর জ্বর এলো না । কিন্তু, এবার আমি ধরা পড়লুম । প্রথম দিন হালকা জ্বর আর গায়ে ব্যাথা দিয়ে শুরু হলো । দ্বিতীয়দিন জ্বর ঘন ঘন আসতে লাগলো, সেই সাথে মাথা আর গায়ে ব্যাথা । তাও আমি মোটে আমলই দিলাম না । কিন্তু, প্যারাসিটামল খেলুম । কিন্তু, ওই দিন রাতেই এলো ধুম জ্বর । জ্বরের ঘোরে হুঁশ ছিল না । জ্বর বাড়ার মুহূর্তে তাপমাত্রা মাপি । ১০২.৮ ডিগ্ৰী । এরপরে আর কিছু জানি না । খুব সম্ভব ১০৪ ডিগ্রী অব্দি উঠেছিল । তবে কাউকে জানাইনি জ্বরের কথা । ভোর রাত্রে ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে গেলো ।
সকালে দেখলাম তাপমাত্রা একদম নরমাল ৯৮.৩ ডিগ্রী । ভাবলুম যাক সুস্থ হলাম বুঝি । কিন্তু, ধারণা ভুল ছিল । বেলা বাড়ার সাথে সাথে আবার গায়ের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলো । সেই সাথে তীব্র কাশি আর গায়ে ব্যাথা । সন্ধ্যায় জ্বর ছেড়ে গেলো কিন্তু কাশি বা গায়ে ব্যাথা কমলো না একটুও ।
রাতে আর ঘুম হলো না । ১০১-১০২ ডিগ্রি জ্বর ছিল সারা রাত ধরেই । এদিন তনুজা বার বার গা মাথা মুছিয়ে দেওয়াতে জ্বর বারবার কমে গিয়েছিলো । কিন্তু, বেচারি নিজেই এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ হয়নি । তাই আমি জোর করে ঘুমোতে পাঠালাম । কাল সারা রাত ছটফট করেছি আমি । বহুকাল এতটা যন্ত্রণা পাইনি । কারণ, আমার রোগ টোগ সাধারণতঃ খুবই কমই হয়ে থাকে ।
সকালে উঠে শুনি আমার শাশুড়ী মাতাকেও ধরা করেছে influenza । এন্টিবায়োটিক আর প্যারাসিটামল যেটা আমি খাচ্ছি সেটা ওনাকেও দিলাম । আজ সকাল থেকে আমার জ্বর কম কিন্তু হাঁচি কাশি আর গায়ে ব্যাথা বহুগুন বেড়ে গিয়েছে । আবার শুনছি আমার ভাইয়েরও গা হাত পায়ে ব্যথা করছে । কি যে হবে তা বুঝতে পারছি না । তবে, আমার শ্বশুরমশাই এখনো দিব্যি ফিট আছেন ।
ওরে বাবারে, আমাদের টিনটিন সোনার উপর দিয়ে এত কিছু চলে গেল বুঝতেই তো পারলাম না। তারপর আবার পুরো পরিবারের লোক একসাথে অসুস্থ হয়ে পড়েছ। তবে দাদা তুমি তো অনেক ধৈর্যশীল মানুষ, আশা করি সবকিছু আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে। তোমাদের সবার জন্য আমার আশীর্বাদ রইল।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দাদা পুরো বিষয় টা পড়ে খুব খারাপ লেগেছে।বিশেষ করে টিনটিন বাবার জন্য । বেচারা এইটুকু বাচ্চা কতো না কষ্ট পেলো।আর দাদা এইটা ভাইরাস জ্বর যাদের বাসায় আসে একবার সবাইকে ধরে এরপর ছাড়ে।আমাদের বাসায়ও কিছু দিন এই অবস্থা গিয়েছে।দাদা টেনশন করবেন না। আর দাদা ঔষধ এর পাশাপাশি আদা লেবুর রস ও লবঙ্গ দিয়ে চা করে খান কাশি আর ঠান্ডা টা কমে যাবে।দাদা দুআ করি আপনি এবং বাসার সবাই যেনও খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান।
দাদা আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে এটা নিশ্চয়ই ভাইরাস জ্বর হবে। না হলে একের পর এক সবাইকে দেখছি আক্রমণ করছে। তবে টিনটিন বাবুর জন্য সব থেকে বেশি খারাপ লাগলো। কারণ ও তো একদম ছোট। বৌদি একে তো নিজেও সুস্থ হয়নি তারপর আপনার সেবা ও করছে। তবে যেহেতু এটা অনেকটা ভাইরাস এর মত। তার জন্য আমি বলছি সবাইকে ভালোভাবে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করানোটাই বেটার। আপনাদের পরিবারের সবার জন্য শুভকামনা রইল। সবাই যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়
বর্তমানে ঋতু পরিবর্তনের কারণে চারদিকে অসুস্থতার প্রকোপ বেড়ে গিয়েছে। টিনটিন বাবুকে বেশ দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে বেশ ভালোই করেছিলেন। টিনটিন বাবু সুস্থতা লাভ করেছে এটাই আমাদের সব থেকে বড় পাওয়া। ঈশ্বরের কাছে কামনা করি দাদা আপনার পরিবারের সকল সদস্যের রোগ থেকে মুক্তি লাভ করুক। আর আপনার শ্বশুর মশাই যে, এখনো দিব্যি ফিট আছে জেনে ভালো লাগলো।
শুনে খুব খারাপ লাগল দাদা, দোয়া করি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন।
প্রিয় দাদা প্রথমেই আপনার পরিবারের সকলের সার্বিক সুস্থতা কামনা করছি। আসলে বাচ্চাদের জ্বর হলে সাথে বমিও হয়ে যায়। আমাদের টিনটিন বাবু যেহেতু সুস্থ হয়েছে এজন্য বেশ ভালো লেগেছে আমার। তবে প্রিয় দাদা আপনার ১০২.৮ ডিগ্ৰী জ্বর উঠেছিল মানে একেবারেই সর্বোচ্চ মানের জ্বর উঠেছিল আপনার। যাহোক, দাদা নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন যাতে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর এখনকার জ্বর হচ্ছে আবহাওয়াভিত্তিক জ্বর। পরিবারের একজন জ্বরে আক্রান্ত হলে আস্তে আস্তে সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। আর এমন অবস্থায় আপনার শ্বশুরমশাই খুবই ফিট আছে জানতে পেরে বেশ আনন্দ পেলাম।
দাদা, টিনটিনের অসুস্থতা এতটাই তীব্র হয়েছিল যে শেষ অব্দি টিন টিন বাবুকে হাসপাতালে পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়েছিল। আর এই ঘটনা গুলো যখন পড়ছিলাম তখন আমার শরীরে শিহরণ দিয়ে উঠছিল। ছোট মানুষ জ্বর এলেই শরীর নেতিয়ে যায়, তার উপরে আবার বমি। না জানি কতটা খারাপ লেগেছে টিন টিন বাবুর। যাক এখন সুস্থ আছে জেনে খুব ভালো লাগছে। দাদা, এই ভাইরাস এতটাই খারাপ যাদের বাসায় প্রবেশ করে, তাদের সকলকেই ঘায়েল করে যায়। তবে আপনার শ্বশুরমশাই এখনো দিব্যি ফিট আছে জেনে খুব ভালো লাগলো। দাদা, আপনার পরিবারের সকলের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
সেদিন হ্যাং আউটে শুনেছিলাম টিনটিন বাবুর জ্বর।আসলে বাচ্চাদের কিছু হলে আমার বুকের মাঝে চাপ অনুভব করি।খুব কষ্ট হয় আমার।ওরা তো তেমন খারাপ লাগা বলতেও পারেনা।আর ভাইরাস জ্বর একবার ঘরে কারো হলে একে একে সবাইকেই ধরে।দাদা আপনি এতোটা সিক হয়ে গেলেন।এই এক বছরে আপনার কোন অসুস্থতা আসলে শুনিনি।যাক সাবধানে থাকেন সবাই।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি।তিনি আপনাদের সুস্থতা দান করুন, আমিন।খুব খারাপ লাগলো পোস্টটি পড়ে। 😔😑