ছোট গল্প - "অবয়ব"|| ( ১০%লাজুক খ্যাকের জন্য) by ripon40
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@ripon40 বাংলাদেশের নাগরিক
- অবয়ব
- ০৯, সেপ্টেম্বর ,২০২২
- শুক্রবার
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি " অবয়ব " গল্প শেয়ার করছি । আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
আমি মনে করি গল্প মানেই কোন বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার সাথে পরিচিত হওয়া।জীবনের ইতি হয়ে যাবে কিন্তু থেকে যাবে স্মৃতি বিজরিত অতীত বা জীবনের গল্প। বেশিরভাগ মানুষ জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি করার চেষ্টা করে নাহ।আমি গল্প পড়তে পছন্দ করি কারণ বাস্তবতার সাথে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি।জীবনে লুকিয়ে থাকা ঐতিহাসিক বড় ঘটনা গুলোই হলো অনেক বড় গল্প।বাস্তব জীবনের সাথে জড়িত জীবন চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো।
গল্প - অবয়ব
ছোট্ট একটা পরিবারের আত্মকথা লিখতে বসলাম । বাইরে থেকে দেখলে পরিবারটিকে বেশ গোছান ছিমছামই মনে হচ্ছিল । বৃদ্ধ বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ‘ রক্তিম ' । বাবা নিম্ন আয়ের এক সাধারণ কর্মচারী । আর্থিকভাবে পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলেও একমাত্র সন্তানকে কোনদিনই দারিদ্র্যের কষাঘাতে বা রোষানলে পড়তে হয়নি । রক্তিমকে তার বাবা - মা ভর্তি করলেন একটা খ্যাতনামা স্কুলে । সেই খ্যাতনামা স্কুল থেকে যথেষ্ট সুনাম নিয়ে রেকর্ড রেজাল্ট করে সে কলেজে ভর্তি হলো । কলেজ পাস করার পর সে বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে একজন প্রতিষ্ঠিত সার্জিক্যাল ডাক্তার হয়ে নিজের জীবন গড়ে নেয় এবং বাবা মায়ের মনোনীত মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সংসার জীবন শুরু করে । যাই হোক , এবার আসি আসল কথায়- বিয়ের দুই বছরের মাথায় তাদের ঘর জুড়ে এলো এক নতুন সদস্য সুন্দর লাল টুকটুকে একটা মিষ্টি মেয়ে , প্রিয়দর্শিনী ।
তার পরেই আসে পিতা - মাতার সাথে সন্তানের বিচ্ছেদকাল । একটা জরুরী ‘ ওটি ’ করতে তাকে সুইডেনে চলে যেতে হয় এবং সেখানেই তারা থেকে যাবে মনস্থির করে । একদিন হঠাৎ করে তার বৃদ্ধ পিতা - মাতা যে বাসায় থাকতেন সেই বাসার দরজায় একটা কলিং বেলের আওয়াজ হলো । রক্তিমের মা বুঝেই উঠতে পারলেন না , এই সময়ে আবার কে এলো । এমনিতেই সন্তানের স্মৃতিকাতরতায় তাঁর মন বিষণ্নতা আর রিক্ততার মেদুরতায় ভরে উঠেছিল । তার পুত্রেরই হয়ত কোনো সংবাদ আছে আশাময়ী , মমতাময়ী মা অশ্রুসিক্ত নয়নে উচ্ছ্বাস ধরে রাখতে না পেরে দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলল । দরজা খুলেই সে হাতে পেয়ে গেল তার একমাত্র নাড়ি ছেঁড়া ধন , আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক , একমাত্র অবলম্বন , তার ‘ রক্তিমের ’ চিঠি । সেই চিঠিতে লেখা আছে , ‘ শ্রদ্ধেয় বাবা - মা আমার সালাম নিবেন । আর একটা কথা না বললেই নয় যে , আপনাদেরকে আমি আর আগামী মাস থেকে টাকা পাঠাতে পারব না । আমার মেয়েকে আমি সব দিক থেকে যোগ্য থেকে যোগ্যতর করে গড়ে তুলতে চাই । আমি চাইনা , আমি যেমন কুকুর বিড়ালের মত করে মানুষ হয়েছি , সুবিধাবঞ্চিত হয়েছি , আশা আকাঙ্ক্ষা মেটানো সম্ভব হয়নি । আমার মেয়ে যেন তেমন করে মানুষ না হয় ।
' মা তার প্রাণাধিক প্রিয় পুত্রের এই চিঠিটা পড়ে হতভম্ব হয়ে গেলেন । পরে রক্তিমের বাবা বেলা বারটার সময় ঘরে ফিরে এলেন এবং তিনিও চিঠিটা পড়লেন । পরের দিনই রক্তিমের বাবা রক্তিমকে একটা চিঠি লিখলেন । চিঠিতে লেখা ছিল— ‘ বাবারে , আমি বড় দুর্ভাগা রে । তুই একমাত্র সন্তান ছিলি আমাদের । শত চেষ্টা , দারিদ্র্যের কষাঘাতে , বাস্তবতার নির্মমতা , প্রতিকূলতার অগ্নিদহন সকল কিছুর হাত থেকে সদা সর্বদা তোকে তোলা তোলা করে রেখেছিলাম । বাবারে , আমার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক দোয়া রইল , তুই তোর মেয়েকে যোগ্য থেকে যোগ্যতম করে গড়ে তোল এবং শুধু তাই নয় , যেদিন তোর মেয়ে আপন পায়ে দাঁড়াতে পারবে সেদিন তোর জীবনে যেন নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে ।
তুই যেখানেই থাকিস , ভালো থাকিস , সবাইকে ভালো রাখিস সুস্থ থাকিস । আমার আর তোর মায়ের কথা বাদ দে । আমরা আজ আছি , কাল নেই ' । আজ রক্তিম তার স্বপ্নের বাড়ির পশ্চিম দিকের বারন্দার করিডোরে বসে পশ্চিম আকাশে অস্তমিত সূর্যের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই দীর্ঘ ৫৭ বছরের জীবনের অবয়ব নীরবে নীভৃতে কেঁদে উঠল । তার স্ত্রী আর কন্যা আজ তার সাথে থাকে না । সে আজ সম্পূর্ণ একাকীত্বের মধ্য দিয়ে জীবন পার করছে । যে মেয়ের জন্য সে সর্বস্ব ছেড়েছে , সেই মেয়েই আজ তাকে মনে রাখেনি । বিচ্ছেদ হয়ে গেছে বাবা মেয়ের নাড়ির টান । উল্টো প্রিয়দর্শিনী তার দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলে যে , সে কেন ছোট থেকেই তাকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করেনি ।
বাংলা ভাষার মত নীচু স্তরের ভাষায় কথা বলা নাকি রক্তিমের মত লোকদেরই সাজে । আহা ! ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস । নীরব ভাষায় প্রকৃতির সুপ্ত নীরবতা , বিশাল এর মাঝে শূন্যতার হিরিক পড়ে গেছে । অপরূপ বৃক্ষের সমারোহ সে যখন অনুভব করে প্রকৃতির অবিরাম নিস্তব্ধতা আর নিজের খেয়ালে ছুটে চলা প্রকৃতির একাত্মতার মাঝেই রক্তিম যেন খুঁজে পায় তার বাবাকে , অনুভব করতে পারে বাবার অন্তঃস্থলে গ্রেথিত হাহাকার , শূন্যতার মর্মবেদনা , মণিকোঠায় গ্রথিত রিক্ততার জ্বালা , আর বিষণ্নতার অগ্নিবর্ষণ আজ তাকে কীভাবে জর্জরিত করে ফেলেছে । শত আঘাত , ব্যাথা , হতাশা , রিক্ততা আর শূন্যতার মাঝে গোধূলি , ঊষালগ্ন পেরিয়ে সেই বারান্দার করিডোরে কফি হাতে বসে আশার আলো খুঁজতে থাকে তারই শূন্যতার অবয়বের মাঝে রক্তিম আর বৃষ্টির ধারার মত অশ্রু ধারাও ঝরতে থাকে ঝরঝর করে ।
আশাকরি গল্পটি আপনারা পড়বেন। গল্প পড়তে আমি খুবই পছন্দ করি। যেটা প্রায়ই পড়া হয়ে থাকে ভালো লাগে পড়তে।গল্প পড়া মানেই নতুন কোন কিছু ঘটছে তার সাথে পরিচিত হওয়া। আমার লেখা গল্প পড়ে ভালো লাগলে নিশ্চয় মতামতের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন নাহ।
প্রথম গল্প:-গোয়েন্দা রহস্য গল্প - "এলাচির উইল"( শেষ পর্ব) |
source |
দ্বিতীয় গল্প:-ছোট গল্প - "অশ্রুর তির্থস্থানে একদিন"( শেষ পর্ব) |
source |
তৃতীয় গল্প:-ছোট গল্প - "শোনার পাহাড়ের পাখি"( পর্ব নেই ) |
source |
চতুর্থ গল্প:-ছোট গল্প - "ছায়া"( পর্ব নেই ) |
source |
পঞ্চম গল্প:-ছোট গল্প - "তীর্থ"( পর্ব নেই ) |
source |
আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি আশা করছি আপনারা সবাই আমার পোষ্ট উপভোগ করবেন এবং আপনারা সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন
বিভাগ | ছোট গল্প । | |
---|---|---|
বিষয় | ছোট গল্প - "অবয়ব") | @ripon40 |
গল্প তৈরি করার অবস্থান | লিংক |
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি মোঃ রিপন মাহমুদ। আমার স্টীমিট একাউন্ট@ripon40। আমি একজন বাঙালি আর আমি বাঙালী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করি। আমি স্টীমিটকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসি পড়তে, লিখতে, ব্লগিং,ফটোগ্রাফি,মিউজিক,রেসিপি ডাই আমার অনেক পছন্দের। আমি ঘুরতে অনেক ভালোবাসি। আমার সবচেয়ে বড় গুণ হলো কারোর উপর রাগ করলে সহজেই ভুলে যাই।
একটা কথা আছে না ভাই ইতিহাস বার বার ফিরে আসে। রক্তিম তার বাবা মায়ের সঙ্গে যেটা করেছিল। রক্তিমের মেয়ে প্রিয়দর্শীনী তার সঙ্গে সেটাই করছে। গল্পটা বতর্মান সময়ের বাস্তব চিএ। দারুণ শিক্ষনীয় ছিল গল্পটা।।
সেজন্যই তো পরিবেশ ব্যবহারের সততা থাকলে সঠিক সম্মানবোধ টা পাওয়া যায়।
দারুন লাগলো! একেই বলে যেমন কর্ম তেমন ফল। রক্তিমের জন্য কোন সমবেদনা আসছে না! জানিনা কেন মনে মনে একটা প্রশান্তি অনুভব করলাম।
সেজন্য প্রতিটা মানুষের ক্ষেত্রে একই রকম কর্মের মাধ্যমে ফল পাওয়া যায়।