ছোট গল্প - "অশ্রুর তির্থস্থানে একদিন"( শেষ পর্ব) || ( ১০%লাজুক খ্যাকের জন্য)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@ripon40 বাংলাদেশের নাগরিক


  • অশ্রুর তির্থস্থানে একদিন
  • ১১, মে ,২০২২
  • বুধবার


আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি "অশ্রুর তির্থস্থানে একদিন " গল্প শেয়ার করছি । আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।



আমি মনে করি গল্প মানেই কোন বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার সাথে পরিচিত হওয়া।জীবনের ইতি হয়ে যাবে কিন্তু থেকে যাবে স্মৃতি বিজরিত অতীত বা জীবনের গল্প। বেশিরভাগ মানুষ জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি করার চেষ্টা করে নাহ।আমি গল্প পড়তে পছন্দ করি কারণ বাস্তবতার সাথে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি।জীবনে লুকিয়ে থাকা ঐতিহাসিক বড় ঘটনা গুলোই হলো অনেক বড় গল্প।বাস্তব জীবনের সাথে জড়িত জীবন চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো।

christmas-5842978__480.webp

Source

গল্প - অশ্রুর তির্থস্থানে একদিন



তাহলে চলুন গল্পটি শুরু করি


হারানোর নেই তাদের । শুধু প্রাণটা কখন যাবে সেই অপেক্ষায় বসে আছে । ভাইয়ার সাথে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম , মাঝে মাঝে কারও সাথে টুকটাক কথা বলছিলাম । খাটগুলো বসানোর সিস্টেম , রূমগুলোর ওভার - অল সাজ দেখে মন্দ লাগেনি ।

কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ৬০ বছর বয়স্কা মহিলা কোথা থেকে এসে আমার হাতের ঘড়িটা ধরে বলতে লাগলেন ·
মহিলা ১ : এইতো , এইতো তোর ঘড়িটা , বাবু তুই তোর ঘড়িটা ফেলে চলে যাচ্ছিস , নিয়ে যা ... আমি বা আপু ভাইয়া কেউই কিছু বুঝতে পারলাম না । বোঝানোর চেষ্টা করলাম এটা আমার ঘড়ি কিন্তু কোন লাভ হলো না । এমতাবস্থায় আরেকজন মহিলা এসে ওনাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন মহিলা ২ : চাচি , ওটা এই আপামনির ঘড়ি , বাবুর না । দেখেন বাবুর ঘড়ি তো কালো ছিল ; এটা তো বাদামী । এটা বাবুর না , বসবেন চলেন । মহিলা ১ : এটা বাবুর না ? ও হ্যাঁ ঠিক ঠিক । এটা বাবুর না চলো বসি । খুব অবাক লাগল । মনে হয় এই মহিলার মানসিক সমস্যা আছে । খুব আগ্রহ নিয়ে ওনার সাথের একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম ব্যাপার কি ? তখন তিনি সব খুলে বললেন ... সাথের একজন : আজ প্রায় ৫ বছরের অধিক হয়ে গেল চাচি আমাদের সাথে আছেন । এই আশ্রমের সবার কাছেই খুব প্রিয় একজন মানুষ ।

gift-548290__180.webp

Source

তার জীবনের কাহিনী নিজেই আমাদের বলেছিলেন । আপামনি , আপনি হয়ত ভাবছেন তিনি পাগল ? আমি : না মানে , আমি কিছু মনে করিনি । - সাথের একজন : চাচি আসলে এমন ছিলেন না । তিন চার মাস ধরে সমস্যাটা দেখা দিয়েছে । ডাক্তার বলেছেন অতিরিক্ত চিন্তা থেকে এরকম হয়েছে । মৃত্যু পর্যন্ত এমনই থাকবে । - আপু : আচ্ছা , বাবু বলে কাকে ডাকছিলেন তিনি ... ? সাথের একজন : হ্যাঁ বাবু চাচির ছেলে । এক ছেলে এক মেয়ে আর স্বামী নিয়ে ছিল তার সংসার । মেয়েটা বড় হলো , ভালো ঘরে বিয়ে দিলেন , কিন্তু হঠাৎ মেয়েটা বাবা মার সাথে সব সম্পর্ক ভেঙে দিল । অনেক কষ্ট পেলেন দুজন । ছেলেটাই একমাত্র ভরসা তখন ।

ওনার স্বামী সৎ স্কুল মাস্টার ছিলেন । হার্ট অ্যাটাকে তিনিও পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন । মা আর ছেলের জীবন তখন হাজার বিপর্যয়ের মুখে । ভাইয়া : আচ্ছা মেয়েকে জানানো হয়েছিল বাবার মৃত্যুর খবর ? তিনি একটা বিদ্রুপের হাসি হাসলেন - সাথের একজন : মেয়ে সাফ জানিয়ে দিল অমন বড়লোক বাড়ির বউ সামান্য স্কুল মাস্টারকে দেখতে যাবে কেন ? খুব ধাক্কা লাগল আমার । যে বাবা মেয়ের জন্য এতো কষ্ট করলেন সারাটা জীবন , সেই বাবা আজ মেয়ের জন্য গরিব হয়ে গেল যে , মৃত বাবার মুখটাও দেখতে আসল না ? চোখের কোনে অশ্রু চলে এলো কিন্তু কাউকে বুঝতে দিলাম না । আমি : তো , ছেলেটা তো মায়ের সাথে ছিল , কিন্তু তিনি এখানে ... ? • সাথের একজন : আপামনি কপাল বলে একটা কথা আছে জানেন তো ?

girl-388652__480.webp

Source

ছেলেটারে শখ করে বিয়ে দিয়ে ঘরে টুকটুকে বউ আনলেন । কিন্তু আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বউয়ের কাছে তার গেঁয়ো শ্বাশুড়ি একখানা বোঝা ছাড়া আর কিছুই না । আর বাকি রইল ছেলের কথা , সে তো বউয়ের কথায় ওঠে আর বসে । বছরে একখানা কাপড় ছাড়া আর মাকে কিছুই দেয় না । শুধু তিনি কেন ? এখানে যারা আছে বা আসবে সবারই এমনই কপাল ৷ আমিই বা তাদের থেকে আলাদা কিসে ?

আপু ভাইয়া সবাই শুধু শুনছিল ওনার কথা । কেউই আর নিজেদের সামলে রাখতে পারল না । আচ্ছা , আমাদের শুনে এতো কষ্ট হচ্ছে কিন্তু যেসব সন্তানরা এ কাজ করল তারা কি মানুষ , না অন্য কিছু ? ছোট থেকে যে শুনছি , ‘ মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত , পিতা স্বর্গ , পিতা ধর্ম ' এসবের কী কোন দাম নেই ? সব মিথ্যে ? আর এক মুহূর্তও ইচ্ছা করল না ওখানে থাকতে । আপু ভাইয়া হয়ত কিছু আন্দাজ করেছিল তাই নিজে থেকেই বলল - ভাইয়াঃ চল্‌ , বাসায় ফিরে যাই -

christmas-6578796__480.jpg

Source

সেখানকার সবাই অনেক অনুরোধ করল কিছুক্ষণ থাকতে কিন্তু পারলাম না । সেই মাকে হয়তো কিছু দিতে পারব না , তার কষ্ট কমাতে পারব না , কিন্তু একটা কাজ করতে পেরেছিলাম , তার বাবু হয়ে আমার ঘড়িটা দিয়ে এসেছিলাম আমার সেই মাকে । এটা নিয়ে যদি তিনি খুশি থাকেন । গাড়িতে আসার পথে আর কারও মুখ খেকেই কোন কথা বেরুল না । আমার শুধু একটাই প্রশ্ন জিজ্ঞাস করতে ইচ্ছে হচ্ছিল সেই সন্তানদের তোমরা যখন এই পৃথিবীতে এসেছিলে তখন তোমাদেরকে তো বাবা - মা বোঝা মনে করে ফেলে দেননি । তাহলে তোমরা কি করে এমনটা করতে পারলে ? আমরা আসলে নামেই সন্তান , কাজে নয় । এমন সন্তানও পৃথিবীতে আছে যারা গাজীপুর সরকারী বৃদ্ধাশ্রমের মতো আরও অনেক বৃদ্ধাশ্রমে বোঝা মনে করে বাবা - মাকে রেখে আসে ।

maki-3295891__480.jpg

Source

তারপর অনেক দিন পর্যন্ত , চট্টগ্রামে ফিরে আসার পরেও এই ঘটনা মনে করে গুম হয়ে থাকতাম । মা জানতে পেরে অনেক রাগারাগি করেছিলেন । মায়ের বকা শুনে হয়ত ভাইয়া প্রমিজ করেছিল যে আমাকে নিয়ে আর কোথাও যাবে না । কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ ভাইয়ার কাছে , আমাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য । আমি অন্তত এটা বুকে হাত রেখে বলতে পারি যে , মা বাবা তোমরা যতই বৃদ্ধ হওনা কেন , মৃত্যু পর্যন্ত আমি তোমাদের সেবা করে যাব , অকৃতজ্ঞ সন্তান আমি নই ।

ঘটনাটা এক - দেড় কি দুই বছর আগের কিন্তু আমি এটুকু বলতে পারি এটা পড়ে কোন না কোন বাবা - মায়ের সন্তান অনুতপ্ত হবে , আমার মতোই প্রতিজ্ঞা করবে । আর সেখানেই আমার সার্থকতা । সেই বৃদ্ধাশ্রমে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি । জানিনা কেমন আছেন আমার সেই মা , কেমন আছেন তার বাবু সেই বৃদ্ধাশ্রমের সন্তানের কাছে বোঝা হয়ে যাওয়া সকল হতভাগ্য বাবা মা ...




আশাকরি গল্পটি আপনারা পড়বেন গল্প পড়তে আমি খুবই পছন্দ করি। যেটা প্রায়ই পড়া হয়ে থাকে ভালো লাগে পড়তে।গল্প পড়া মানেই নতুন কোন কিছু ঘটছে তার সাথে পরিচিত হওয়া। আমার লেখা গল্প পড়ে ভালো লাগলে নিশ্চয় মতামতের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন নাহ।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক সমূহ

প্রথম পর্বের লিংক:-
source
চাইলে আপনারা এখানে ক্লিক করে গল্পটি পড়ে আসতে পারেন, আগের পর্বটি পড়লে আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।



আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি আশা করছি আপনারা সবাই আমার পোষ্ট উপভোগ করবেন এবং আপনারা সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন

বিবরণ
বিভাগছোট গল্প ।
বিষয়রহস্যময় গল্প - "অশ্রুর তির্থস্থানে একদিন" (শেষ পর্ব)@ripon40
গল্প তৈরি করার অবস্থানলিংক

ধন্যবাদ সবাইকে



20211112_012926-01.jpeg

আমি মোঃ রিপন মাহমুদ। আমার স্টীমিট একাউন্ট@ripon40। আমি একজন বাঙালি আর আমি বাঙালী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করি। আমি স্টীমিটকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসি পড়তে, লিখতে, ব্লগিং,ফটোগ্রাফি,মিউজিক,রেসিপি ডাই আমার অনেক পছন্দের। আমি ঘুরতে অনেক ভালোবাসি। আমার সবচেয়ে বড় গুণ হলো কারোর উপর রাগ করলে সহজেই ভুলে যাই।



standard_Discord_Zip.gif

>>>>>|| এখানে ক্লিক করেন ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<

gPCasciUWmEwHnsXKML7xF4NE4zxEVyvENsPKp9LmDaFuzVwHnY92rponrLLcEknitVG5yvYaPTExVtjfc6Bi4cvC9ppuyLmaATGbhg8UF4suiCxVfuw2YuSWJftJo9C74dQUN2WE1yNJmdtXp.png

💞 আল্লাহ হাফেজ 💞

k75bsZMwYNtze9xHvT6xWCdz7q3QGD35ZKdaPpVrFksWkDGMy52wVotParwf9eYo99FhcDG9yRVNaQxotVf91vSjAbxytemWEpH4UCMBVKo32iMz6Mc3c23ZDcBfZ1ESGR5dcG9hmK3xvsmcahC4GSPabbvtjdepn.png

Sort:  
 2 years ago 

কেউ কমেন্ট করে না রে

 2 years ago 

গল্প করার মধ্যে আলাদা মজা রয়েছে যেটা কেউ পড়ে না

 2 years ago 

আসলে গল্প করতে আমার কাছে অনেক ভালো লাগে যেটা সবারই পড়া উচিত।

 2 years ago 

গল্প করতে আসলেই ভালো লাগে গল্প করাটাই অনেক বড় পাওয়া

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 57653.41
ETH 3122.86
USDT 1.00
SBD 2.41