গোয়েন্দা রহস্য গল্প - "এলাচির উইল"( শেষ পর্ব) || ( ১০%লাজুক খ্যাকের জন্য)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@ripon40 বাংলাদেশের নাগরিক


  • এলাচির উইল
  • ০৪, মে ,২০২২
  • বুধবার


আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি " এলাচির উইল" গল্প শেয়ার করছি । আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।



আমি মনে করি গল্প মানেই কোন বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার সাথে পরিচিত হওয়া।জীবনের ইতি হয়ে যাবে কিন্তু থেকে যাবে স্মৃতি বিজরিত অতীত বা জীবনের গল্প। বেশিরভাগ মানুষ জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি করার চেষ্টা করে নাহ।আমি গল্প পড়তে পছন্দ করি কারণ বাস্তবতার সাথে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি।জীবনে লুকিয়ে থাকা ঐতিহাসিক বড় ঘটনা গুলোই হলো অনেক বড় গল্প।

philatelist-1844080__480.webp

Source

গল্প - এলাচির উইল



তাহলে চলুন গল্পটি শুরু করি


আপাদমস্তক আমাকে একবার দেখে নিয়ে বললেন , “ অযথা আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবো কেন আমি ? ” আমি সূচনা না বাড়িয়ে মূল প্রসঙ্গে চলে গেলাম । জিজ্ঞেস করলাম । “ আজমান সাহেব যে মারা গেছেন , তা জানেন ? কথাটা শুনে মনে হলো কিছুটা খুশিই হয়েছেন , বললেন , “ বুড়ো মরেছে তো , বেশ হয়েছে । তা এখন আমার কাছে কী জানতে চান ? ” অবাক হলাম কিছুটা ; প্রাক্তন স্বামী ও মৃত মানুষের প্রতি এত অশ্ৰদ্ধা ! যাই হোক আবার প্রশ্নপর্বে ফিরে গেলাম । “ অমিয়া কোথায় , এই ব্যাপারে কিছু জানেন ?

এবার কিছুটা অবাক হয়ে বললেন , “ মেয়ে মরেছে প্রায় একযুগ হলো ; এখন আবার এই প্রসঙ্গ টানছেন কেন ? ” আমি উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম । অমিয়া মারা গেছে কে বললো ? এবার কিছুটা ভয় পাওয়া গলায় বললেন , “ এতো বছর ধরে পাইনি তাই নিজেকে সান্তনা দেয়ার জন্য ধরেই নিয়েছি মারা গেছে অমিয়া । কিন্তু তার খোঁজ কেন করছেন ? সম্পত্তির উইলে কি তার নাম লেখা ? ” কন্ঠে সন্দেহ ছিল কিছুটা । বললাম , “ না । আজমান সাহেব কোন উইল করে যাননি । ” খামের কথাটা গোপনই রাখলাম । আমার কথা শুনে মহিলার চোখ চকচক করে উঠলো । বললো , তা হলে সম্পত্তি কার নামে যাবে ? ” আমি উত্তর দিলাম , “ তারই তো খোঁজ করছি । উত্তরাধিকারী না পেলে ট্রাস্টের নামে জমা হবে । ” “ তা কী করে হয় ? আমি তো আছি । উনার চারকূলে আমি ছাড়া কেউ নেই । সম্পত্তির উত্তরাধিকারী তো তবে আমি … ... ? আমি খানিকটা ঠাট্টা করেই বললাম , “ তা বলতে পারি না । তবে বুড়োর সম্পত্তির জন্যই তার মরার অপেক্ষা করছিলেন ? ”

noir-3783057__480.webp

Source

কি বলবে বুঝতে না পেরে খানিকটা ইতস্তত করেই বললো , “ আসলে আমারও তো বয়স হয়েছে । আর শেষের দুমাস এত ফোন করেছিল যে বিরক্ত হয়ে মুখ দিয়ে এসব বেড়িয়ে গেছে । মাফ করবেন । ” এবার আমার চোখ দুটো চক চক করে উঠল , “ কি জন্য ফোন দিতেন ? ” সঙ্গে সঙ্গে উত্তর পেলাম “ অমিয়া কোথায় তা জানতে ফোন দেয় । আমি কী করে জানবো বাবা অমিয়া কই ? মেয়ে তো হারিয়েছে সেই কবে । ” বলেই মনে হলো ভুল করলেন , দাঁতে জিভ কাটলেন তাড়াতাড়ি । আমার হাতে এখন সোনার ডিম । মিসেস আজমানের দিকে তাকিয়ে বললাম “ আপনি মনে হয় কোথাও যাচ্ছিলেন । দেরি করিয়ে দিলাম না তো ? মাফ করবেন । আমি তাহলে আসি । বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে আসলাম । পিছনে না তাকিয়েও বলতে পারব , মিসেস আজমান আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছেন ।

বিকেলের ট্রেনে বাড়ি ফিরে আসলাম । এসেই মিসেস আজমানের ফোনকল লিস্ট বের করে ফেললাম । একসময় গোয়েন্দাগিরির সাথে যুক্ত থাকায় কাজটা খুব বেশি কঠিন হল না । কিছু পরিচিত মানুষের সহায়তায় সহজেই কললিস্ট পেয়ে গেলাম । সেখান থেকে দেখলাম প্রতি সপ্তাহে একটি নম্বরে ফোন দেয়া হয়েছে । ওই নম্বরের ডিটেইলস নিয়ে মালিককে খুঁজতে বের হলাম । অনেকগুলো ক্রু পেয়ে গেছি । এখন শুধু কড়ার সাথে কড়া মেলানো বাকি । তাহলেই কেস সলভ । বড় রাস্তা থেকে গলির ভিতর একটি টিনশেড বাড়ি । কড়া নেড়ে নিজেকেসাংবাদিক পরিচয় দিলাম । ঘরের অবস্থা দেখে বুঝতে পারলাম দিন আনে দিন খায় অবস্থা । গৃহকর্তার সাথে আশে পাশের পরিবেশ সম্পর্ক প্রশ্ন করতে লাগলাম । এমন সময় ১৪-১৫ বছর বয়সী এক মেয়েকে রান্নাঘর হতে বের হতে দেখে জিজ্ঞাস করলাম “ আপনার মেয়ে ? উত্তরেতারা বলল “ না , ৭-৮ বছর ধরে বাড়িতে আছে । কাজ করে । ” জিজ্ঞেস করলাম । কোথায় পেলেন তাকে ?

sherlock-4445206__480.webp

Source

বলল , “ এক মধ্যবয়স্ক মহিলা টাকার বিনিময়ে একে তাদের কাছে রেখে গেছে । প্রতি মাসে টাকা পাঠায় । প্রতি সপ্তাহে ফোন করে খোঁজ নেয় । ” বললাম , “ অচেনা এক মেয়েকে ঘরে রেখেছেন , সমস্যা হয়নি কখনো ? ” গৃহকর্তার সরল উত্তর , “ এতো বছর হয়নি , পরেও হবে না আশা করি । “ আমি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম “ কি নাম তোমার ? ” ভয় পাওয়া কণ্ঠে মেয়েটি বলল কুসুম । আমি দম্পত্তির উদ্দেশ্যে বললাম “ কুসুম যখন এ বাড়িতে এসেছিল তখন তার কাছে কি কিছু ছিল ? তারা একজন আরেকজনের দিকে তাকালেন এবং উত্তর দিলেন “ একটা ব্যাগ ছিল আর বই খাতা ছিল । ” “ আর কিছু ছিল না ? ” জিজ্ঞাসা ভরা দৃষ্টিতে তাকালাম তাদের দিকে । তারা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল । কিন্তু হঠাৎ আমার চোখ পড়ল কুসুমের গলায় ঝুলে থাকা লকেটের দিকে ।

দেখতে আমার চোখ পড়ল কুসুমের গলায় ঝুলে থাকা লকেটের দিকে । দেখতে অনেকটা এলাচি আকৃতির । আমি মনে মনে খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম । ইউরেকা !! পেয়েছি ! বাইরে থেকে নিজেকে শান্ত রেখে কুসুমকে তার লকেটের কথা জিজ্ঞেসা করলাম । কুসুম বলল এটি ছোট থেকেই তার গলায় আছে । কিন্তু কোথা থেকে পেয়েছে এই ব্যাপারে কিছু জানে না । লকেটটা সবসময় তার গলাতেই পরানো থাকে । আমি কুসুমকে লকেটটা দিতে বললাম । লকেটটা হাতে নিয়েই দেখলাম লকেটটা খোলা যায় । লকেট খুলেই ভিতরে একটা ছোট কোড পেলাম । বুঝতে বাকি রইল না ব্যাংকের দ্বিতীয় একাউন্ট খোলার কোড । আর দেরি না করে বেরিয়ে গেলাম ব্যাংকের উদ্দেশ্যে । এতক্ষণ আমার কর্মকান্ড হা করে দেখছিল ৩ জন মানুষ । কাওকে পাত্তা না দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম ।

spy-5821903__480.webp

Source

কুসুমদের বাড়ি থেকে বেরিয়েই সরাসরি ব্যাংকে চলে আসলাম । কোড নাম্বরটি দিয়ে লকারটি খুলে দেখলাম লকারের ভেতর একটি সাদা খাম । খামটা নিয়ে অফিসে চলে আসলাম । খামটা খুলে ভেতরে দেখলাম সাদা কাগজ । সাদা কাগজটা দেখেই আমি একটু হাসলাম । সেই পুরোনো পদ্ধতি । একটু ছাই দিয়ে সাদা কাগজে ঘষে ফু দিতেই পরিষ্কার লেখা ভেসে উঠল । একটি সম্পত্তির উইল । স্পষ্ট ভাষায় লেখা আছে আজমান সাহেবের সমস্ত সম্পত্তি অমিয়ার নামে । পুরো ঘটনা বুঝে গেলাম । মিসেস আজমান এই উইলের খোঁজেই এতদিন অমিয়াকে নিখোঁজ রেখেছিলেন যাতে আজমান সাহেবের মৃত্যুর পর সমস্ত সম্পত্তির তিনি পান । কিন্তু আজমান সাহেবও কম চালাক নন । তিনিও অমিয়াকে বাঁচানোর জন্যই মৃত্যুর আগে কেয়ারটেকারকে “ লেটার হিন্ট ” ও আমার বাঁচানোর জন্যই মৃত্যুর আগে কেয়ারটেকারকে “ লেটার হিন্ট ” ও আমার ঠিকানা দিয়েছিলেন । যাতে সম্পত্তির আসল উত্তরাধিকারকে খুঁজে তার হাত সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে পারি । শেষমেষ সফল হলাম কাজে । কুসুমকে ট্রেনে করে নিয়ে আসলাম তার আসল জায়গায় । অবশ্যই কুসুম না , অমিয়া । প্রথমে সে বিশ্বাসই করতে পারছিল না । এতো বছর এতো কষ্ট করে থাকার পর হঠাৎ এতো সম্পত্তির মালিক হয়ে যাওয়া , ব্যাপারটা আসলেই অবিশ্বাস্য । অমিয়ার এই বিস্মিত চেহারা দেখে নিজের অজান্তেই একটু শব্দ করেই হেসে উঠলাম । কারণটা বলতে পারছিনা অবশ্য ।




আশাকরি গল্পটি আপনারা পড়বেন গল্প পড়তে আমি খুবই পছন্দ করি। যেটা প্রায়ই পড়া হয়ে থাকে ভালো লাগে পড়তে।গল্প পড়া মানেই নতুন কোন কিছু ঘটছে তার সাথে পরিচিত হওয়া। আমার লেখা গল্প পড়ে ভালো লাগলে নিশ্চয় মতামতের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন নাহ।


পরবর্তী পর্বের লিংক সমূহ

প্রথম পর্বের লিংক:-
source
চাইলে আপনারা এখানে ক্লিক করে গল্পটি পড়ে আসতে পারেন, আগের পর্বটি পড়লে আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।



আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি আশা করছি আপনারা সবাই আমার পোষ্ট উপভোগ করবেন এবং আপনারা সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন

বিবরণ
বিভাগছোট গল্প ।
বিষয়গোয়েন্দা রহস্য গল্প - "এলাচির উইল"(শেষ পর্ব)@ripon40
গল্প তৈরি করার অবস্থানলিংক

ধন্যবাদ সবাইকে



20211112_012926-01.jpeg

আমি মোঃ রিপন মাহমুদ। আমার স্টীমিট একাউন্ট@ripon40। আমি একজন বাঙালি আর আমি বাঙালী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করি। আমি স্টীমিটকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসি পড়তে, লিখতে, ব্লগিং,ফটোগ্রাফি,মিউজিক,রেসিপি ডাই আমার অনেক পছন্দের। আমি ঘুরতে অনেক ভালোবাসি। আমার সবচেয়ে বড় গুণ হলো কারোর উপর রাগ করলে সহজেই ভুলে যাই।



standard_Discord_Zip.gif

>>>>>|| এখানে ক্লিক করেন ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<

gPCasciUWmEwHnsXKML7xF4NE4zxEVyvENsPKp9LmDaFuzVwHnY92rponrLLcEknitVG5yvYaPTExVtjfc6Bi4cvC9ppuyLmaATGbhg8UF4suiCxVfuw2YuSWJftJo9C74dQUN2WE1yNJmdtXp.png

💞 আল্লাহ হাফেজ 💞

k75bsZMwYNtze9xHvT6xWCdz7q3QGD35ZKdaPpVrFksWkDGMy52wVotParwf9eYo99FhcDG9yRVNaQxotVf91vSjAbxytemWEpH4UCMBVKo32iMz6Mc3c23ZDcBfZ1ESGR5dcG9hmK3xvsmcahC4GSPabbvtjdepn.png

Sort:  
 2 years ago 

আমি মনে করি গল্প মানেই কোন বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার সাথে পরিচিত হওয়া।জীবনের ইতি হয়ে যাবে কিন্তু থেকে যাবে স্মৃতি বিজরিত অতীত বা জীবনের গল্প।

উপরের লাইন গুলো খুবই চমৎকার দুইটি লাইন এবং সেইসাথে অনেক কিছু অর্থ বহন করে। আমার কাছে লাইন দুটি অনেক ভালো লেগেছে। সেইসাথে আপনার গল্পটিতে যেটা পড়ে বুঝতে পারলাম সম্পত্তি নিয়ে বেশ কিছু ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে এবং যার সম্পত্তি সে তার প্রকৃত ওয়ারিশকে দেওয়ার জন্য একজনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং সে তার দায়িত্ব পালনের জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করে তার কথা রাখতে পেরেছেন। গল্পটি অনেক ভালো লেগেছিল আমার। অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

হ্যাঁ ভাইয়া গল্পটির মূল রহস্য হলো প্রকৃত ব্যক্তিকে তার ন্যায্য সম্পদ বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা যেটা আপনি পড়ে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আমিতো প্রথমদিকের গল্পগুলো ভুলেই গিয়েছিলাম। যাইহোক খুব ভালো লেগেছে এত সুন্দর গল্প। আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আসলে যত গল্প পড়া যায় তার মধ্যে অনেক শিক্ষনীয় বিষয় লুকিয়ে থাকে। আপনার এর মধ্যে কম ছিলনা। খুবই খুশি হলাম ভাই।

 2 years ago 

হ্যাঁ যত গল্প করবেন সেখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন আপনি যেটা আপনার অনেক বড় পাওয়া সেজন্য বেশি বেশি গল্প করা সবারই উচিত।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 57831.03
ETH 3136.64
USDT 1.00
SBD 2.42