ছোট গল্প - "ছায়া" || ( ১০%লাজুক খ্যাকের জন্য)
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@ripon40 বাংলাদেশের নাগরিক
- ছায়া
- ২২, মে ,২০২২
- রবিবার
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি " ছায়া " গল্প শেয়ার করছি । আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
আমি মনে করি গল্প মানেই কোন বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার সাথে পরিচিত হওয়া।জীবনের ইতি হয়ে যাবে কিন্তু থেকে যাবে স্মৃতি বিজরিত অতীত বা জীবনের গল্প। বেশিরভাগ মানুষ জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি করার চেষ্টা করে নাহ।আমি গল্প পড়তে পছন্দ করি কারণ বাস্তবতার সাথে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি।জীবনে লুকিয়ে থাকা ঐতিহাসিক বড় ঘটনা গুলোই হলো অনেক বড় গল্প।বাস্তব জীবনের সাথে জড়িত জীবন চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো।
গল্প - ছায়া
মেয়েটির নাম তূর্ণা । সে মেডিকেলের শেষ বর্ষের ছাত্রী । পরিবারে একমাত্র বাবা ছাড়া আর কেউ নেই । রহমত মিয়াকে বাবা বলে ডাকলেও সে তার জন্মদাতা পিতা নয় । বহুদিন আগে রহমত মিয়া রিক্সা চালানোর সময় তূর্ণাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে বাড়িতে নিয়ে আসে । তখন থেকেই রহমত মিয়া তূর্ণাকে নিজের মেয়ের মতো লালন পালন করছেন ।
বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে রহমত মিয়া আর বিয়ে করেনি । তাই তার পরিবার বলতে সে এবং তার আদরের মেয়ে তূর্ণা রহমত মিয়া সারাদিন রিক্সা চালায় আর উপার্জিত অর্থ দিয়ে পরিবারের খরচ চালায় । অভাব অনটনের পরেও রহমত মিয়া তূর্ণার আবদার পূরণে সচেষ্ট ছিল ।
তূর্ণা বলত , ‘ বাবা , আমার জন্য লাল শাড়ি পরা পুতুল নিয়ে আসবে ' । রহমত মিয়া সাথে সাথেই পুতুল এনে দিত । ঐ ছোট্ট তূর্ণা আজ বড় হয়ে মেডিকেলে পড়ছে ।
তূর্ণা হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে । ছুটি পেলেই সে তার বাবার কাছে চলে যায় । অনেকদিন হলো তূর্ণা বাবার কাছে যেতে পারেনি । তাই এবার শীতের ছুটি পাওয়ার সাথে সাথেই সে বাবার কাছে চলে গেল । রহমত মিয়া বলে , ‘ তুই না থাকলে আমার কিছুই ভালোলাগে না ” । তূর্ণা হেসে মাথা নাড়ে ।
রাতে খাবারের সময় রহমত মিয়া তার মেয়েকে বলে , “ মা , ডাক্তার হইতে তোর আর কতদিন লাগব ? ’
তূর্ণা বলে , ‘ বাবা , আর বেশিদিন লাগবেনা । এই মাসের পরই আমি ডাক্তার হয়ে যাব ' । এক ঝলক হাসি দিয়ে রহমত মিয়া বলে , ‘ তখন আমি সবাইরে মিষ্টি খাওয়ামু । '
সকালে না খেয়েই রহমত মিয়া রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে গেল । দুপুর পার হয়ে যাবার পরেও তার বাবা না আসায় তূর্ণার অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল । বিকেলের দিকে একজন বাড়িতে এসে জানালো যে , রহমত মিয়া অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল পরে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । একথা শোনার সাথে সাথে তূর্ণা হাসপাতালে চলে গেল । গিয়ে দেখল তার বাবার জ্ঞান ফিরে এসেছে । এতে তূর্ণা কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেল । তূর্ণা বলল , ‘ বাবা , এখন ঠিক আছো ? তোমাকে না কতবার বলেছি না খেয়ে রিক্সা নিয়ে বের হবে না । কোন কথাই শুনছ না তুমি ’ । রহমত মিয়া বলে , ‘ সে মা আর ভুল হইবনা ’ । আমি ঠিক আছি । তুই এইসব নিয়া চিন্তা করিস না ’ । পরে তূর্ণা ডাক্তারের কাছ থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করে । রিপোর্ট দেখে তূর্ণা পাথরের মত স্থির হয়ে আছে । অজান্তেই চোখ থেকে দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল।রিপোর্টে লেখা অসুখের নাম ‘ লিউকোমিয়া ’ । অর্থাৎ ব্লাড ক্যান্সার । রহমত মিয়া বলে , ‘ কিরে চুপ কইরা রইলি ক্যান ‘ মা ’ কি হইছে আমার ’ ? মেয়ে জবাব দেয় , ‘ কই , কিছুতো হয়নি , বাবা ’ ।
তখন কেউ একজন রহমত মিয়াকে বলে দিয়েছ যে , তার ক্যান্সার হয়েছে । ক্যান্সার কথাটার অর্থ বোঝে রহমত মিয়া । কারণ , কিছুদিন আগে পাশের বাড়ির রহিম খাঁ কে ক্যান্সারে মরতে দেখেছে সে । সে বুঝতে পেরেছে যে সে হয়তো আর বাঁচবে না । বাসায় এসে সে মেয়েকে সব বলল । তূর্ণা বুঝে গেছে যে , তার বাবা সব জানতে পেরেছে । তখন তূর্ণা বলে , ‘ তুমি চিন্তা কোরো না বাবা । আমি ডাক্তার হয়েই তোমাকে সুস্থ্য করে তুলব ' ।
রহমত মিয়া বলে , ‘ হ মা , আমি জানি তুই ডাক্তার হইয়া আমারে ভালো কইরা তুলবি ’ । তূর্ণার চোখে জল । ধীরে ধীরে রহমত মিয়ার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল । এর মধ্যে তূর্ণাকে আবার হোস্টেলে ফিরে যেতে হবে । এক মাস পরই সে ডাক্তার হয়ে যাবে । রহমত মিয়া তূর্ণাকে বিদায় দিল । যাওয়ার পূর্বে তূর্ণা পাশের বাড়ির মরিয়মকে তার বাবার দেখা শোনার দায়িত্ব দিয়ে গেল । মরিয়ম তার সাধ্যমত রহমত মিয়ার সেবা করছিল । এর মধ্যে দু'বার তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল । এখন রহমত মিয়া আর রিক্সা চালাতে পারে না । ভালোভাবে হাঁটতেও পারে না । রহমত মিয়া বলে , ‘ মা , মরিয়ম , তূর্ণা মা কবে আইব ’ ?
মরিয়ম বলে , ‘ চাচা , তিনদিন পরেই চইলা আইব ' ।
রহমত মিয়া কি যেন ভেবে মাথা নাড়ে । রহমত মিয়ার অবস্থার এখন খুবই আশঙ্কাজনক । তূর্ণা অবশেষে তার সার্টিফিকেট পেয়েছে । এখন সে ডাক্তার । তাড়াতাড়ি সে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল । সকালে খুশিতে দৌড়াতে দৌড়াতে তূর্ণা বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল । গিয়ে দেখল বাড়িতে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে । হঠাৎ সে দেখল খাটিয়াতে তার বাবার লাশ । তূর্ণা তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না । শোকে সে যেন পাথরে পরিণত হয়েছে । আজকে তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে না । চোখ দুটো স্থির হয়ে লাশের দিকে তাকিয়ে আছে । দুপুরে বাড়ির পাশেই রহমত মিয়ার দাফন সম্পন্ন হয় ।
কবরের পাশে তূর্ণা একা দাঁড়িয়ে আছে । বাবার আদর স্নেহের কথা খুব মনে পড়ছে তার । সার্টিফিকেটটা ধুলোতে পড়ে আছে অবহেলিত ভাবে । সে আকাশের দিকে তাকালো । তূর্ণার মনে হলো তার বাবা তার সাথেই আছে । এসব ভাবতে ভাবতে সে লক্ষ্য করল সূর্য্য তার নির্মম তীব্র আলোক রশ্মিগুলো তার উপরে ছড়িয়ে দিয়েছে । তখন তূর্ণা একটু ছায়ার জন্য এদিক ওদিক তাকাল । হঠাৎ তার মনে হলো , জীবনের সব থেকে বড় ছায়াটাই তো চিরদিনের মত আমাকে ছেড়ে চলে গেছে । এখন এই সামন্য ছায়া আঁকড়ে ধরে আর কি হবে । এসব ভাবতে ভাবতে সূর্যের প্রখর তাপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে কবরের দিকে তাকিয়ে রইল তূর্ণা । তখন একখন্ড মেঘ এসে তূর্ণার উপর ছায়া ফেলল । তূর্ণার মনে হয় তার বাবা - ই যেন ছায়া হয়ে তার পাশে আছে ।
আশাকরি গল্পটি আপনারা পড়বেন। গল্প পড়তে আমি খুবই পছন্দ করি। যেটা প্রায়ই পড়া হয়ে থাকে ভালো লাগে পড়তে।গল্প পড়া মানেই নতুন কোন কিছু ঘটছে তার সাথে পরিচিত হওয়া। আমার লেখা গল্প পড়ে ভালো লাগলে নিশ্চয় মতামতের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন নাহ।
প্রথম গল্প:-গোয়েন্দা রহস্য গল্প - "এলাচির উইল"( শেষ পর্ব) |
source |
দ্বিতীয় গল্প:-ছোট গল্প - "অশ্রুর তির্থস্থানে একদিন"( শেষ পর্ব) |
source |
তৃতীয় গল্প:-ছোট গল্প - "শোনার পাহাড়ের পাখি"( পর্ব নেই ) |
source |
আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি আশা করছি আপনারা সবাই আমার পোষ্ট উপভোগ করবেন এবং আপনারা সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন
বিভাগ | ছোট গল্প । | |
---|---|---|
বিষয় | ছোট গল্প - "ছায়া") | @ripon40 |
গল্প তৈরি করার অবস্থান | লিংক |
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি মোঃ রিপন মাহমুদ। আমার স্টীমিট একাউন্ট@ripon40। আমি একজন বাঙালি আর আমি বাঙালী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করি। আমি স্টীমিটকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসি পড়তে, লিখতে, ব্লগিং,ফটোগ্রাফি,মিউজিক,রেসিপি ডাই আমার অনেক পছন্দের। আমি ঘুরতে অনেক ভালোবাসি। আমার সবচেয়ে বড় গুণ হলো কারোর উপর রাগ করলে সহজেই ভুলে যাই।
আরে ভাই আপনি কে বলেন তো এই যে প্রতিনিয়ত আপনার ট্যাগ ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি সাপোর্ট দিয়ে চলেছেন যেটার জন্য অপেক্ষায় থাকি।
😄😄😄😄
হাসাহাসি করলে কেন লিখে ফেলো লেখা শুরু করলে অনেক ভাল লিখতে পারবে।
তুর্ণা ও রহমত মিয়ার গল্প পড়ে ভালো লাগল। আপনিতো অনেক ভালো একটি গল্প লিখেছেন এবং ভাল লিখতে পারেন। আমাদের সমাজে এরকম অনেক কাহিনী আছে। বাবা মা অনেক কষ্ট করে ছেলে নাকি পড়াশোনা করাই কিন্তু সেই সুখ অনেক সময় বাবা-মায়ের কাউকে সহ্য হয় না। তুর্না ক্ষেত্রে তাই হয়েছে সে ডাক্তার হয়ে ফিরেছে কিন্তু তার বাবা তার এই ডাক্তারি তাকে দেখতে পারলো না সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে পারল না। আপনি এত সুন্দর একটা গল্প আমাদের কাছে তুলে ধরার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন মা বাবা অনেক কষ্ট করে ছেলে পেলের মানুষ করে কিন্তু সুখ খেতে পারেনা। সে সময় তাদের অনুপস্থিতি যেটা খুবই কষ্ট দেয়।
চমৎকার একটি গল্প লিখেছেন। তুর্না এবং রহমতের সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন যা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এত সুন্দর একটি কবিতা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আমার খুব ভালো লেগেছে আপনার কবিতাটি পড়েছি এবং অনেক জ্ঞান পেয়েছি। সুন্দর একটি কবিতা আমাদের মাঝে উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ভাই আমি তো কবিতা লিখিনি গল্প লিখেছি। এর আগে অনেক কবিতা লিখেছিলাম। আপনি বোধহয় গল্পটি না পড়ে কমেন্ট করেছেন।😄
আপনার ছায়া গল্পটি পড়ে খুবই মর্মাহত হলাম। বিশেষ করে রহমত মিয়া মরে যাওয়ার পর তার মেয়ের পাশে ছায়া হয়ে থাকে ।গল্পটি পড়তে বেশ কষ্ট লাগলো।
ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
আসলে গল্পের শেষ বিষয়টি অনেক কষ্টের ছিল। পৃথিবীতে মা-বাব একমাত্র ছায়া হিসেবে থাকে। সেটা চলে গেলে সেই কষ্টের অনুভূতি প্রকাশ অনেক কষ্টের ব্যাপার।
প্রতিনিয়ত আপনার গল্পগুলো আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। এভাবে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাবেন আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
চেষ্টা করি নতুন মত প্রকাশ করার গল্পও গুলো আপনার কাছে ভালো লাগে জেনে খুশি হলাম সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকবেন এটাই কামনা করি।
তূরনা নামে আমাদের এক স্কুল বান্ধবি আছে। আপনার ছোট গল্পটি বেশ ভাল ছিল। আগের অনেক গল্পের লিংক জুড়ে দিয়েছেন দেখলাম। ভালই হল এই গল্প গুলোও পড়ে নিব একসময়। ধন্যবাদ আপনাকে
হ্যাঁ সমস্ত গল্পের লিংক দেওয়া আছে ওখান থেকে পড়তে পারেন অনেক ভালো লাগবে তূর্ণা নামে আপনার বান্ধবী আছে জানতে পারলাম ভালো লাগলো।
হঠাৎ তার মনে হলো , জীবনের সব থেকে বড় ছায়াটাই তো চিরদিনের মত আমাকে ছেড়ে চলে গেছে । এখন এই সামন্য ছায়া আঁকড়ে ধরে আর কি হবে ।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তূর্ণা কে নিয়ে কাব্যময় উপস্থাপন ছিল। দোয়া করি চালিয়ে যান।
হ্যাঁ ভাই জীবনের বড় ছায়া হল মা বাবা সেটা না থাকলে বুঝতে পারা যায়। যেটা তূর্ণা অনুভব করতে পেরেছে।
আপনার লেখার বদৌলতে সমাজের তুর্নারা আজ আপন শক্তিতে বিচরণ শুরু করুক এই কামনা করি।
ওয়াও মামা আপনি দেখি দারুন গল্প লিখেছেন আপনার গল্পটি বেশ চমৎকার ছিল। শুভকামনা রইল আপনার জন্য
হ্যাঁ মামা আপনিও গল্প লিখতে পারেন গল্প পড়লে অনেক ভালো লাগে মামা।