ছোট গল্প - "তীর্থ" || ( ১০%লাজুক খ্যাকের জন্য)
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@ripon40 বাংলাদেশের নাগরিক
- তীর্থ
- ২৯, মে ,২০২২
- রবিবার
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি " তীর্থ " গল্প শেয়ার করছি । আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
আমি মনে করি গল্প মানেই কোন বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার সাথে পরিচিত হওয়া।জীবনের ইতি হয়ে যাবে কিন্তু থেকে যাবে স্মৃতি বিজরিত অতীত বা জীবনের গল্প। বেশিরভাগ মানুষ জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি করার চেষ্টা করে নাহ।আমি গল্প পড়তে পছন্দ করি কারণ বাস্তবতার সাথে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি।জীবনে লুকিয়ে থাকা ঐতিহাসিক বড় ঘটনা গুলোই হলো অনেক বড় গল্প।বাস্তব জীবনের সাথে জড়িত জীবন চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো।
গল্প - তীর্থ
আজকাল রাতে না ঘুমানোটা আমার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে । যদিও অভ্যাসটা খুব ভালো নয় , কিন্তু কি করার আছে , প্রযুক্তি আমাদের রাতের ঘুম চিবিয়ে খাচ্ছে আর আমরাও নির্দ্বিধায় তা পরিবেশন করছি । সেদিন রাতে অনেকক্ষণ ফোনের পেছনে সময় ব্যয় করে আঙুল আর চোখ ব্যাথা বানালাম । এখনকার সময় আমরা ফোনের স্ক্রিনের দিকে যত সময় তাকিয়ে থাকি ততো সময় বোধ হয় নিজের প্রেমিকাকেও দেখি না । যাই হোক , সেদিন রাতে কিছুই ভালো লাগছিল না । একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসতে ইচ্ছে হলো । কিছু না ভেবে বেরিয়ে পড়লাম । এয়ারপোর্টের পাশের নির্জন ফাঁকা জায়গাটায় গিয়ে বসলাম । রাত তখন দেড়টা । আশা করিনি এমন সময় আরও কাউকে সেখানে পাব । একটা ছেলে খানিকটা দূরে বসে আছে । নিজের অজান্তেই ছেলেটার পাশে গিয়ে বসলাম ।
ছেলেটা একবার দেখল ঠিকই , কিন্তু কিছু বলল না । আনমনে বসে সিগারেট টানছে । অনেকক্ষণ দেখার পর নিজেই জিজ্ঞাস করলাম , এত রাতে এখানে কী করছেন ভাই ? কোন উত্তর না দিয়েই উঠে চলে গেল । একটু অপমানবোধ করলাম বটে , কৌতূহলও জাগল অনেক । তারপর আমিও বাসায় চলে এলাম । কিন্তু , সারারাত সেই ছেলের কথাই ভাবলাম , অদ্ভুত ছেলেটা । পরদিন রাতে নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না । আবারও বেরিয়ে পড়লাম । কেন যেন মনে হচ্ছিল ছেলেটা আজও আসবে , হলোও তাই । সেদিনও ওখানেই বসে ছিল । আগের দিনের অপমানের কথা মনে করে আর কাছে গেলাম না । দূর থেকেই দেখলাম ।
অনেকক্ষণ পর ছেলেটা উঠে চলে গেল । পরদিন আবার যথারীতি সেখানে গিয়ে তাকে দেখলাম । হঠাৎ খেয়াল করলাম ছেলেটা আমাকে ডাকছে । কাছে গিয়ে বসলাম । চাঁদের আলোয় তার চেহারাটা পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে । চেহারার মাঝখানে একটা গভীর মায়া লুকায়িত । সম্পূর্ণ ধরতে পেরেছি কিনা জানিনা , তবে কিছু একটা ভেবে মনে মনে খুব আনন্দিত হলাম । নিজেকে নিজে বললাম , আমি তো কবি মানুষ , চেহারা দেখে অনেক কিছুই বলে দিতে পারি । হঠাৎ ছেলেটা বলল , ‘ ভাই কি করেন আপনি ’ ? বললাম ‘ অর্নাসে পড়ি । তার সম্পর্কে জানতে পারলাম , তার নাম তীর্থ । আমার জুনিয়র , অর্নাস ১ ম বর্ষ - কম্পিউটার সাইন্স । ছেলেটা খুব অল্প কথা বলে । এভাবে প্রতিদিনই দেখা হতো ছেলেটার সাথে । সেদিন মনটা খুব খারাপ ছিল একটা হৃদয় ঘটিত ব্যাপার নিয়ে ।
প্রতিদিনের মতো সেদিনও গেলাম তীর্থের সাথে দেখা করতে । মন খুবই খারাপ ছিল । তীর্থের সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ তাকে জিজ্ঞাসা করলাম , ' আচ্ছা তোমার কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা কি ’ ? আজ সে মুখ খুলল । ‘ ভালোবাসা বলতে এই পৃথিবীতে কিছুই নেই । এই শব্দটা টোটালী একটা ফেক , এই শব্দটাতে ঘোর ছাড়া কিছুই নেই ’ । খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলাম ‘ কেন ? তীর্থ বলল , ‘ জন্মের পর থেকেই দেখেছি আব্বু - আম্মুর মধ্যে কোন মিল নেই । আব্বু অনেক রাত করে বাড়ি ফিরত । আম্মুও সারাদিন কার সাথে যেন ফোনে কথা বলত । আব্বু মাঝে মাঝে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরে আম্মুকে মারত । আম্মুও মাঝে মধ্যে বাড়ির বাইরে থাকত । আমি কেবল নীরব দর্শক , খুব কান্না পেত ।
বলতে বলতেই চোখ ছল্ছল্ করে উঠল ছেলেটার । এই কয়েকটা কথাতেই বাতাস ভারী হয়ে গেছে । আমার সমস্ত মনোযোগ তীর্থের দিকে । কান্না আড়াল করে তীর্থ বলল , ‘ আমার বেসিকেই তো ভালাবাসা নেই । অথচ আব্বু - আম্মু নাকি পাঁচ বছর প্রেম করে বিয়ে করেছিল । আমার বুঝতে বাকি ছিল না যে আব্বুর অঢেল সম্পত্তির কাছেই বিক্রি হয়েছিল আম্মুর মেয়াদহীন ভালোবাসা । আমার বয়স তখন ১১ বছর । একদিন আব্বু - আম্মুর মাঝে প্রচুর ঝগড়া হলো । পরদিন আব্বু - আম্মুকে ছেড়ে দিল । আম্মুও তা স্বাচ্ছন্দে মেনে নিল । এতটুকু পানি ঝরল না কারও চোখ দিয়ে । আব্বু বাসা থেকে চলে গেল । আম্মুও পরদিন চলে গেল । আমি কেবল একাই কাজের মেয়ের হাতে মানুষ হতে লাগলাম ।
প্রথম কিছুদিন আম্মু দেখতে আসত । আস্তে আস্তে সেটাও বন্ধ হয়ে গেল । এক মামার বাসায় মানুষ হলাম । আর সেটাও সম্ভব হয়েছে তাদের কোন সন্তান ছিল না বলে । পড়াশোনা করলাম , অর্নাসে - এ ভর্তি হলাম । পাশ করার পর হয়ত একটা চাকরিও জুটে যাবে । জীবন কেটে যাবে ভালোবাসা শব্দটাকে ঘৃণা করতে করতে । এই শব্দটাকে ঘৃণা করতেও প্রচন্ড ঘৃণা হয় এখন । আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে কখন যে শার্টটা অনেকখানি ভিজে গেছে বুঝতেই পারিনি । তীর্থ একটা সিগারেট ধরালো । বলল , প্রতিদিন এখানে আসলে একটু ভালো লাগে । অতীতকে কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলে থাকা যায় । এই বলে একটা ঢোক গিলে তীর্থ আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল । আকাশের কাছেই কি এই ব্যাথার সান্তনা পাওয়া যায় ?
আশাকরি গল্পটি আপনারা পড়বেন। গল্প পড়তে আমি খুবই পছন্দ করি। যেটা প্রায়ই পড়া হয়ে থাকে ভালো লাগে পড়তে।গল্প পড়া মানেই নতুন কোন কিছু ঘটছে তার সাথে পরিচিত হওয়া। আমার লেখা গল্প পড়ে ভালো লাগলে নিশ্চয় মতামতের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন নাহ।
প্রথম গল্প:-গোয়েন্দা রহস্য গল্প - "এলাচির উইল"( শেষ পর্ব) |
source |
দ্বিতীয় গল্প:-ছোট গল্প - "অশ্রুর তির্থস্থানে একদিন"( শেষ পর্ব) |
source |
তৃতীয় গল্প:-ছোট গল্প - "শোনার পাহাড়ের পাখি"( পর্ব নেই ) |
source |
চতুর্থ গল্প:-ছোট গল্প - "ছায়া"( পর্ব নেই ) |
source |
আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি আশা করছি আপনারা সবাই আমার পোষ্ট উপভোগ করবেন এবং আপনারা সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন
বিভাগ | ছোট গল্প । | |
---|---|---|
বিষয় | ছোট গল্প - "তীর্থ") | @ripon40 |
গল্প তৈরি করার অবস্থান | লিংক |
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি মোঃ রিপন মাহমুদ। আমার স্টীমিট একাউন্ট@ripon40। আমি একজন বাঙালি আর আমি বাঙালী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করি। আমি স্টীমিটকে অনেক ভালোবাসি। ভালোবাসি পড়তে, লিখতে, ব্লগিং,ফটোগ্রাফি,মিউজিক,রেসিপি ডাই আমার অনেক পছন্দের। আমি ঘুরতে অনেক ভালোবাসি। আমার সবচেয়ে বড় গুণ হলো কারোর উপর রাগ করলে সহজেই ভুলে যাই।
আপনার ক্ষুদ্রতম ক্ষুদ্র সাপোর্ট গুলো আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া এভাবেই পাশে থাকবেন সব সময় কামনা।
ভালোবাসা নিয়ে তীর্থ যে সংজ্ঞা দিয়েছে সেটি সবার ক্ষেত্রে এক হয়। যাইহোক অনেক ভাল ছোট গল্প লিখেন আপনি। এর আগেও কয়েকটি গল্প পড়েছিলাম আপনার। ভাল লাগে। আপনার জন্য অনেক অনেক ভালবাসা থাকবে।
ভাইয়া চেষ্টা করি বাস্তবিক জীবনের কিছু গল্প আপনাদের মাঝে তুলে ধরার। যেটা পড়তে আপনারা খুবই পছন্দ করেন এটাই আমার অনেক বড় পাওয়া।
ভাইয়া আপনার গল্পটা পড়ে আমার মন খারাপ হয়েগেল। সংসারে জামেলা,অমিল সেটা আমি একবারে পছন্দ করি না। সংসারে জগড়া হলে আমার অনেক কষ্ট লাগে। ধন্যবাদ ভাইয়া খুব সুন্দর একটি গল্প সেয়ার করেছেন।নামটাও পছন্দ হয়েছে।
পারিবারিক জীবনে অনেক ধরনের কলহ থাকে যেগুলো অনেকের জীবনে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায় যাই হোক গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভাই আপনার ছোট গল্পের পোস্টগুলো যত পড়ি ততই মুগ্ধ হয়ে যাই। আপনার গল্পটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে এভাবেই এগিয়ে যান আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
তাই নাকি আপনি আমার গল্প গুলো পড়ে সত্যি মুগ্ধ হয়ে যান যেটা জেনে অনেক ভালো লাগলো ।
খুব বাস্তব একটা লেখা।
বাস্তব জীবনের দলিল বলা যেতে পারে।
ভালো লিখেছেন।
শুভেচ্ছা আপনাকে।
সংসারে যদি কোন জামেলা থাকে তাহলে লোন কাজেই মনোনিবেশ আছে না।আর এই ঝামেলা যদি লেগেই থাকে তাহলো তো কোন কিছু করতে মন চায় না।সারা দিনরাত মন বিষণ্ণ অবস্থা থাকে।তবে আপনি খুবই ভালো একটা গল্প শেয়ার করেছেন আমাদের মাঝে।