আমার মেয়েকে নিয়ে স্মরণীয় ঘটনা
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারও ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। মানুষের জীবনে কত রকম ঘটনাই না ঘটে। হয়তো কোন ঘটনা সারা জীবন হৃদয়ে অমলিন হয়ে রয়। আবার হয়তো অনেক ঘটনা মানুষ মুহূর্তেই ভুলে যায়। তবে এমন কিছু ঘটনা রয়েছে যে ঘটনাগুলো মনে করলে সত্যিই শরীরে শিহরণ দিয়ে ওঠে। আজ হঠাৎ করে তেমনি একটি ঘটনা আমার মনে পড়ে যাচ্ছে তাই আপনাদের সাথে সেই ঘটনাটি শেয়ার করতে চলে এলাম। যদিও বা ঘটনাটি খুবই ছোট্ট একটি ঘটনা, তবে এই ছোট্ট ঘটনা সারা জীবন আমার পরিবারের লোকজনের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিশেষ করে আমি ও আমার অর্ধাঙ্গীনির এর কাছে এই ঘটনা খুবই স্মরণীয় ঘটনা হয়ে রয়েছে।
আজ থেকে প্রায় বেশ কয়েক বছর আগে, যখন আমার মেয়ের বয়স এই হবে হয়তো চার বছর কিংবা পাঁচ বছর। বয়সের কথাটা খুব একটা মনে নেই। তবে আমার মেয়ের ছোটবেলার এই ঘটনাটি যখনই মনে পড়ে, তখনই আমার কাছে খুবই খারাপ লাগে। যাই হোক একদিন আমার মেয়ে বাড়িতে বিভিন্ন রকমের খেলনা দিয়ে খেলা করছিল। আমরাও তাকে দেখেশুনে রাখছিলাম। আমার মেয়ে কখনো আমাদের না বলে বাড়ির গেটের বাইরে কোনদিনও যেত না। তাই আমরা সব সময় নিশ্চিন্তে থাকতাম, আমার মেয়ে আমাদেরকে না বলে কোথাও যাবে না। এমন সময় আমাদের বাড়িতে আমার বড় মামি ও তার ছেলের বউ এসেছিল আমাদের বাসায় বেড়াতে। আমার মামাতো ভাইয়ের বাড়ি আবার আমার বাড়ি থেকে হাফ কিলোমিটার দূরে।
মূলত আমার মামি ও মামাতো ভাইয়ের বউ, আমার সেই মামাতো ভাইয়ের বাড়ি থেকে আমাদের এখানে বেড়াতে এসেছিল। আর যখন তারা আমাদের বাসায় এসেছিল, তখন তারা আমার মেয়েকে ঘরের সামনে খেলতে দেখে তার সাথে কথা বলেছিল। আর যখন তারা ঘরে প্রবেশ করেছিল, তখন তাদের দেখে আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম। যার কারনে গল্প গুজবে আমার মেয়ের কথা খানিকটা সময়ের জন্য ভুলে গিয়েছিলাম। আর এরই মধ্যে ঘটে গিয়েছিল সেই স্মরণীয় ঘটনাটি। আমরা যখন গল্পগুজব করে বাইরে এসে মেয়েকে ডাকাডাকি করছিলাম, তখন আর আমার মেয়ে আমাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছিল না। এজন্য আমরা পরিবারের সবাই খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে বের হয়ে বাইরে গেট পর্যন্ত তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছিলাম, সেই সাথে পাশের একটি দোকান ও আমাদের এলাকার দুই একটি বাড়ি ঘুরেফিরে দেখেছিলাম।
কোথাও আমার মেয়েকে তখন খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এমনকি দোকানে থাকা লোকগুলো কিংবা আশে পাশে থাকা লোকজনও আমার মেয়েকে কোথাও দেখতে পাইনি। আর এ কথা শুনে আমি ও আমার অর্ধাঙ্গিনী যেন দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। একজন বাবা মায়ের কাছে তার সন্তান জীবনের চেয়েও বেশি দামি। আর তাইতো সেদিন যখন আমার মেয়েকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তখন মনের ভেতরে কত ধরনের দুশ্চিন্তা এসে বাসা বেধেছিল। আর সেই দুশ্চিন্তা করতে গিয়ে আমি তো হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেছিলাম। একদিকে আমার অর্ধাঙ্গিনী কেঁদে চলেছে অন্যদিকে আমি তো দিশেহারা। সবমিলিয়ে আমার পরিবারের সবাই খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। পুরো এলাকায় যখন আমাদের মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তখন আমরা কি করব কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
তখন হঠাৎ করে আমার মামাতো ভাইয়ের বউ বলে উঠলো, তোমার ভাই আবার তোমার মেয়েকে নিয়ে যায়নি তো। আমার মামাতো ভাই আবার আমার মেয়েকে ভীষণ আদর করত। যখন আমার মামাতো ভাইয়ের বউ এই কথাটি বলেছে, তখন আমার মাথাতেও শুধু এই কথাটি ঘুরেছিল। মনে মনে চিন্তা করছিলাম যেন আমার মামাতো ভাই, আমার মেয়েকে নিয়ে যায়। কেননা যদি আমার মামাতো ভাই আমার মেয়েকে না নিয়ে যেয়ে থাকে, তাহলে হয়তো আমার মেয়ের বড় ধরনের কোন বিপদ হয়েছে, এটাই হয়তো আমাকে মানতে হতো। আমি আমার মামাতো ভাইয়ের বউয়ের কথা শুনে খুব দ্রুত তাদের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম।
আর সেখানে গিয়ে দেখি আমার মেয়ে, আমার মামাতো ভাইয়ের বাসায় গিয়ে দোলনায় বসে দুলছে। তখন আমি তাকে দেখে, দৌড়ে গিয়ে কোলে জড়িয়ে নিয়েছিলাম। তাকে যখন আমি আমার মামাতো ভাইয়ের বাড়িতে দেখেছিলাম, তখন বুকের ভেতরে খুব শান্তি অনুভব করেছিলাম। আর তৎক্ষণাৎ আমি আমার বাড়িতে ফোন দিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করেছিলাম, আমার মেয়েকে খুঁজে পেয়েছি। তখন আমার অর্ধাঙ্গিনীও দ্রুত আমার মামাতো ভাইয়ের বাসায় চলে এসেছিল। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না করেছিল তা আজও যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আমার মেয়ে আমাদের এমন কান্ড দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল।
ছোট মানুষ সে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি, শুধু আমরা তাকে বলেছিলাম কেন সে আমাদের না বলে তার চাচ্চুর সাথে চলে এসেছিল। আমার মামাতো ভাই আমাদেরকে দেখে বলেছিল, আসলে তোমার মেয়ের কোন দোষ নেই, সে বলে আসতে চেয়েছিল, আমি বললাম চলো আমার ছেলের সাথে গিয়ে খেলা করবে। একটু পরে আমি আবার তোমাকে রেখে আসবো। আমার মামাতো ভাই যদিও বা আমার মেয়েকে ভীষণ আদর করত, তবে তার না বলে নিয়ে যাওয়ার কারণে, আমরা কতটা পেরেশানিতে পড়েছিলাম, তা হয়তো সে পরে বুঝতে পেরেছিল।
আমার মেয়েকে কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে, আমরা বেশ উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম, একজন সন্তানহারা বাবা-মায়ের কতটা খারাপ লাগতে পারে। আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন কখনো কোন বাবা মায়ের কোল থেকে তার সন্তানকে আলাদা না করেন। কোন সন্তান যেন তার বাবা মায়ের কোল থেকে হারিয়ে না যায়। আর যে সন্তানেরা তাদের বাবা-মার কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছে, তারা যেন তাদের বাবা মায়ের কাছে ফিরে যেতে পারে এই প্রত্যাশা করছি।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
আপনার পোস্টটি পড়ে মনে হচ্ছে এটি অত্যন্ত আন্তরিক এবং হৃদয়গ্রাহী। আপনি যেভাবে আপনার মেয়ের সাথে ঘটে যাওয়া স্মরণীয় ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন, তা পাঠকের মনে গভীর ছাপ রেখেছে। আপনার লেখনীর মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারের সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের অফুরান ভালোবাসা এবং চিন্তার প্রকাশ পেয়েছে। আপনার পোস্টটি অনেকের জন্য শিক্ষামূলক এবং অনুপ্রেরণাদায়ক হবে। শুভ কামনা রইলো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই, আপনার সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
একদমই ঠিক বলেছেন মিতা একজন বাবা মায়ের কাছে তার সন্তান জীবনের চেয়েও বেশি দামি। প্রথমের দিকে লেখা গুলো পড়ে যদিও মনের ভিতরে ভয় কাজ করছিলো। পরে শেষের দিকে গিয়ে মনের ভিতরে শান্তি কাজ করলো। মিতা আপনার লেখা গুলো পড়ে তো আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিলো। তাহলে বুঝতে পারছি আপনার এবং ভাবির কি অবস্থা হয়েছিলো। সর্বোপরি আপনার পুরো পরিবারের জন্য দোয়া এবং শুভ কামনা রইলো। ভালো থাকবেন সব সময়ই এই কামনাই করি।
যেদিন আমার মেয়ে খানিকটা সময়ের জন্য হারিয়ে গিয়েছিল, সেদিন আমরা দুজনে সত্যি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যাই হোক পরবর্তীতে আমার মেয়েকে ফিরে পেয়ে মনে হয়েছিল আমার জীবনটাই আবার ফিরে পেলাম।
সম্পূর্ণ ঘটনাটা পড়ার পর অনেক কিছু জানতে পারলাম। আসলে বাচ্চাদের সব সময় নজরে রাখতে হয়। আবার অনেক সময় হুট করে নজরের বাইরে চলে যাই। ছোট মানুষ প্রতিনিয়ত একটা অভ্যাস গড়ে তুললেও মাঝে মধ্যে তারতম হয়ে যায় যেহেতু তারা অবলা। যাই হোক এতঃপর আত্মীয়ের বাসায় পেয়েছেন এটাও কিন্তু কপাল। অনেক সময় যেকোনো দুর্ঘটনার স্বীকার হতে হয়। সাবধান হয়ে গেলাম আপনার এই ঘটনার মধ্য দিয়ে।
আপু আমার মেয়েকে সবসময় আমরা চোখের নজরে রাখতাম, তবে সেদিন আমার মামাতো ভাই না বলে নিয়ে যাওয়ার কারণে, সে নিজেও অপরাধবোধে ভুগে ছিল। যাইহোক আপু, আপনার সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মা বাবার কাছে মাত্র মূল্যবান জিনিস আছে তার সন্তান। নিজের সন্তানকে একটু চোখের আঘাত নিতে দেখলেই বুকের ভেতরটা যেন কেমন করে ওঠে মনে হয়। আপনার মামাতো ভাই আপনার মেয়েকে না বলে নিয়ে গিয়েছিল সে এই জায়গাতে একটু ভুল করেছিল। যদি উনি আপনাদেরকে বলে নিয়ে যেতেন তাহলে হয়তো বা আপনার এত পেরেশানি হতেন না। যাইহোক অবশেষে আপনারা আপনার মেয়েকে পেয়ে গেছেন এটা জানতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে। আমি তো গল্পটি পড়তে পড়তে একদম অন্যরকম হয়ে গিয়েছিলাম যে কি হবে শেষে। খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে ধন্যবাদ।
আপু,মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে অসংখ্যবার শুকরিয়া জানিয়েছিলাম, যখন আমার মেয়েকে খুঁজে পেয়েছিলাম। আপনার সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://twitter.com/mahbubullemon/status/1787162546723844177?t=15EJN8SCUQmjM5N__eWfKw&s=19
আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন বিপদগুলো এমনি ঘটে যায়। দেখেন আপনারা সারাদিন দেখে শুনে রাখছিলেন হঠাৎ করে একটু গল্প গুজব করাতে মেয়ে হারিয়ে গেল। যদিও আপনার মামাতো ভাই নিয়ে গেছিল না হয় বড় ধরনের বিপদ ঘটে যেত। আমাদের একটু সাবধান থাকা উচিত আরো বেশি। আসলে এ ধরনের ভুলগুলো অজান্তেই হয়ে যায়। আপনার এমন স্মরণীয় ঘটনাটি যত পড়ছিলাম আমার গায়ের লোম শিহরিত হয়ে গেল। আবার পরে যখন আপনার মামাতো ভাইয়ের বাসায় পেয়েছেন জানতে পারলাম তখন কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছি। অনেক ভালো লাগলো আপনার মেয়ের গল্পটি পড়ে।
হ্যাঁ আপু যখন আমার মামাতো ভাইয়ের বাড়িতে আমার মেয়েকে পেয়েছিলাম, তখন আমি নিজেও স্বস্তি পেয়েছিলাম। আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
একজন বাবা-মার কাছে সন্তানের চেয়ে দামি জিনিস আর কিছু হতে পারে না। আসলে সন্তানকে না বলে কেউ কোথাও নিয়ে যাওয়া ঠিক না।কারন টেনশনে বাসার মানুষগুলোর কোন একটা সমস্যা হতে পারে।আমাদেরকে অনেক সাবধানে থাকতে হবে।মনের অজান্তেই বিভিন্ন রকমের সমস্যা হয়ে যায়।সতর্কতামূলক একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ধন্যবাদ ভাই।
ঠিক বলেছেন আপু, প্রতিটি বাবা-মায়ের কাছে তার সন্তানের চেয়ে দামি জিনিস আর কিছুই হতে পারে না। আপনার সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।