৮ম পর্বঃ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা [১৬ গুটি ]
03-02-23
২১মাঘ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
৭ম পর্বের পর
গ্রাম বাংলার চিরায়িত আরেকটি জনপ্রিয় খেলা হলো ১৬ গুটি খেলা! এই খেলাটি খেলা হয় ১৬ অথবা ১২ গুটি দিয়ে! খেলাটি তখন অনেক জনপ্রিয় ছিল! গাছের ছোট ছোট সুপারির বীজ দিয়ে তৈরি করে নেয়া হতো গুটি! খেলায় দুজন সুযোগ পেত। দুজনের কাছেই সমান সংখ্য গুটি থাকতো! তবে খেলার কিছু নিয়ম আছে। আগে মাটিতে আটটি ঘর করে নেয়া হতো। একপাশে চারটি আরেক পাশে আটটি। যেহেতু দুজনের কাছেই সমান সংখ্যক গুটি থাকতো তাই আটটি ঘর সমান সংখ্য ক গুটি দিয়ে ফিল আপ করা হতো। সম্ভবত প্রত্যেক ঘরে পাচঁটি করে গুটি রাখা হতো। যে আগে সুযোগ পেত সে প্রত্যেক ঘরে একটা একটা করে গুটি দিতো! এভাবে একের পর এক দান চলতেই থাকতো। একটা সময় দেখা যেত মাঝে কোনো একটা ঘর ফাকাঁ হয়ে গেছে। আর তখনই ফাকাঁ ঘর পাস করে পরের ঘরের গুটি খেয়ে নিতো!
তবে আমাদের সময়ে গুটি ম্যানেজ করাই ঝামেলার বিষয় ছিল! কারণ গুটি না পেলে তো আর খেলা যাবে না। তখন মাথায় বুদ্ধি আসতো যে সুপারি গাছের ছোট ছোট সুপারির বীজ পেরে খেলা যাবে। সোজা গাছের উপর থেকে সদ্য হওয়া সুপারির বীজ পেরে নিয়ে আসতাম! তখন মোটামোটি সুপারি যে এই ছোট বীজ থেকেই হয় তা জানতাম না! আবার মাঝে মাঝে বদ্ধিরা গাছের বিচি! আপনাদের দিকে এই গাছটিকে কি বলে আমার সঠিক জানা নেই! তবে আমাদের দিকে বদ্ধিরা গাছ বলে! এ গাছে লাল রঙের বীজ পাওয়া যেত, এর ভিতরে থাকতো বাদামী বর্ণের শক্ত আরেকটি বীজ! উপরের ছোলা ফালায় দিয়ে সেই বীজ দিয়ে খেলা হতো! তবে এই বীজ দিয়ে খেলতে একটু ঝামেলা পোহানো লাগতো! মাটিতে গর্ত করতে হতো বড় বড় করে! যেহেতু গুটির সাইজও একটু বড়! তবে সুপারির বিচি দিয়েই খেলা হতো! গাছে তখন নতুন সুপারির বীজ হতো! বসন্তের শেষে সম্ভবত সুপারির গাছে সুপারির বীজ হয়।
ঘুম থেকে উঠে চলে যেতাম সুপারি গাছের নিচে! গিয়ে দেখতাম অনেক বিচি পরে আছে! হালকা লড়া লাগলেই সুপারির বিচি পরে যায়! আর সুপারি গাছের নিচেই খেলতে বসে যেতাম! দুই পক্ষে যেহেতু খেলা হতো, যার কাছে বেশি গুটি থাকতো সে খেলায় জিততে পারতো। এটা অনেকটা বালিশ খেলার মতো! একের পর দান দিতেই হয়! এক সময় ঘরের গুটি ফাকাঁ হয়! আর ফাকাঁ ঘরের পরে যে ঘরে গুটি থাকবে সবগুলো ঘরের গুটি যার দান থাকতো সে নিয়ে নিত! এভাবে করে এক সময় গুটি সব নিয়ে নিত! তবে গুটি নিলেই হবে না! আটটি ঘরে একটু একটি করে গুটি দিয়ে যেতে হবে! যতক্ষণ পর্যন্ত না ঘর ফাকাঁ হয়! ধরেন, আপনার হাতে গুটি আছে ১০ টি! আট করে আটটি ঘরে গুটি দিছেন! আর বাকি রইল দুইটা! আর সে দুইটা গুটি অন্য ঘরে দিয়ে দিলেই হতো।
১৬ গুটি খেলাটা দেখতাম অনেকেই খেলতো। বিশেষ করে যারা ঢাকা থেকে গ্রামে আসতো তখন অলস সময়টাতে ১৬ গুটি খেলে পার করে দিতো। এই খেলা আবার অনেকটা বাঘ বন্দি খেলার মতো। বাঘ, ছাগলকে আটকিয়ে রেখে দেয়। ঘর ফাকাঁ পেলেই! এই খেলাটা যেহেতু অলস সময়টা অতি বাহিত করার জন্য এজন্য এতো বেশি জনপ্রিয় ছিল না! তবে গ্রামে বেড়াতে আসা পাবলিকরা দেখতাম রাস্তার পাশে বসেই খেলতে শুরু করে দিতো!
এখন আর ১৬ গুটি বা বাঘ বন্দি খেলা দেখা যায় না! এখন একজন রিকশাচালকের কাছে স্মার্টফোন! আর স্মার্টফোন এ লুডু খেলাটা নামিয়ে সবাই মিলে খেলা শুরু করে দেয়! ১৬ গুটি খেলা বলতে গেলে একটি আবেগের নাম! মাটির উপর গর্ত করে কতো খেলেছি। বৃষ্টির পানিতে মাটির গর্ত ভরে যেত তারপর সেখানেই পরে আবার মাটি খুড়ে গর্ত করে খেলা হতো! মেয়েরাও খেলতো এই খেলাটা! অলস সময়টা তারা এই খেলাটা খেলেই পার করে দিতো! বিশেষ করে গরমকালে যখন গ্রামে বিদ্যুৎ থাকতে না, তখন বাতাসের খুজেঁ চলে যাওয়া হতো বাড়ির পিছনে সুপারির গাছের এখানে! আর সেখানেই খেলা হতো বসে বসে! তখনকার সময়ে মাটির সাথে আমাদের যেন অন্যরকম একটা সখ্যতা কাজ করতো! আর এখন মাটিই চোখে পড়ে না! একটা সময় হয়তোবা চোখেও পড়বে না। আধুনিকতার ছোয়ায় যেন সব হারিয়ে যাচ্ছে!
যাক, আর বেশি কথা বাড়ালাম না! আপনাদের সাথে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী বেশ কয়েকটি খেলা পর্ব আকারে শেয়ার করেছি! আর কিছু খেলা বাকি আছে। আপনাদের উৎসাহ পেলে সেগুলোও শেয়ার করার চেষ্টা করবো! আপনাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ 🌼🦋
চলবে.....
১৬ গুটি খেলা আমরা নিজেরাও কত খেলেছি। সেই সময়টা একদম এক নিমিষেই মনে পড়ে গেল। আর এই খেলার মুহূর্তগুলো চোখের সামনে ভাসছে। সত্যি বলতে একটা সময় যখন খেলাধুলার বয়স তখন যেন সারাদিনই খেলাধুলা করতে ইচ্ছে করত। কিন্তু বর্তমানে খেলা তো দূরের কথা খেলা দেখার ও সুযোগ পাই না। ব্যস্ততাময় সময় নিজেদের গ্রাস করে নেয়। তবে আমাদের শৈশব খুব সুন্দর ছিল এটা বলতেই হবে। বর্তমানে সবার হাতে স্মার্টফোন। প্রযুক্তির অগ্রগতিতে এখন সবাই সেই খেলাগুলো থেকে নিজেদের পিছিয়ে নিয়েছে। যাই হোক খুব সুন্দর করে লিখেছেন, ভালো লাগলো বেশ।
স্মার্টফোনের এ যুগে এ খেলাগুলো এখন হারিয়ে গেছে আসলে ভাইয়া। এখন সবাই স্মার্টফোন নিয়েই পরে থাকে।
একদম ঠিক বলেছেন ভাই মোবাইলের অত্যাধিক ব্যবহার করছে এখনকার জেনারেশন। ধন্যবাদ খুব চমৎকার একটি ফিডব্যাক দেয়ার জন্য।
Thank you, friend!
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmd7of2TpLGqvckkrReWahnkxMWH6eMg5upXesfsujDCnW/image.png)
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmWDnFh7Kcgj2gdPc5RgG9Cezc4Bapq8sQQJvrkxR8rx5z/image.png)
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনি একেবারে ঠিক বলেছেন ছোটবেলায় এরকম খেলা গুলো খেলতে ভীষণই ভালো লাগতো। কিন্তু আমি সুপারিশ বিচি নিয়ে এই খেলাটি আগে কখনো খেলিনি। আমরা তো লতাপাতা দিয়ে ছোট ছোট পুতুল তৈরি করে অনেক ধরনের খেলা খেলেছি। কিন্তু আপনারা এরকম খেলা খেলতেন দেখে আমার নিজেরও এখন খেলতে খুব ইচ্ছে করছে। বিশেষ করে ঘুম থেকে সকাল সকাল উঠে সুপারি গাছের নিচে ছোট সুপারি কুড়াতে চলে যেতেন এটি দেখে বেশ ভালো লাগতো। ছোটবেলাটা আসলেই খুবই মজা ছিল। আবার যদি ছোটবেলায় ফিরে যেতে পারতাম হয়তো খুবই ভালো হতো। সকল বন্ধু-বান্ধবদেরকে খুবই মিস করি এখন। কারণ তারা সবাই এখন একেক জায়গায় একেক ভাবে থাকে। কখনো কখনো হয়তো তাদের সাথে দেখা হয় কখনো আবার হয়ও না। তাই নিজেদের ছোটবেলা খেলা গুলোকেও খুবই মিস করি। আপনার পরবর্তী খেলার পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
খেলতে ইচ্ছে করলেই তো এখন আপু খেলতে পারবেন না 😁😁। এখন খেলাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমে ক্রমে।
আমাদের এখানে এটাকে ১৬পাতি বলত।প্রচুর প্রচলন ছিল খেলাটির। অনেকে তো টাকা দিয়ে বাজিও ধরত জুয়ার মত।তবে খেলা একবার জমলে দারুন সময় কাটত।আপনার এই সিরিজ টি ছোট বেলার কথা মনে করায়।ধন্যবাদ ভাইয়া সিরিজটির জন্য।
১৬ পাতি, বাঘ বন্দি, গুটি খেলা এগুলা আমাদের দিকেও বলতো। তবে খেলার কিছহ রোলস শুধু পরিবর্তন হতো।
twitter share link
ছোট বেলায় আমিও এই খেলাটি খেলেছি বন্দুদের সাথে । তবে আমরা খেলতাম ছোট ছোট পাথর দিয়ে। এখন অবশ্য খেলার নিয়ম ভুলে গেছি। এক সময় এ ধরনের অনেক খেলাই গ্রামে প্রচলিত ছিল যা আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোষ্টের জন্য।
জি ভাইয়া! ছোট পাথর দিয়ে মাটিতে একেঁ খেলা যেত! এখন এই খেলাটা আমিও ভুলে গেছি সম্ভবত 😐
আমরা সাধারণত ছোট পাথর এবং কাঠি দিয়ে ১৬ গুটির গুটি তৈরি করে নিতাম।যদিও আমি খুব একটা ভালো পারতাম না। বারে বারে হেরে যেতাম। তবে এখন মাটিতে না ফোনে খেলার জন্য অ্যাপস ও আছে। এবং বাঘ ছাগল টাও বেশ চমৎকার ছিল। আমার অনেক পছন্দের গেম ছিল দুইটাই। গ্রাম বাংলার এই খেলা গুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে স্মার্টফোনের ভীড়ে😐।।
একদম ভাই! এ খেলাগুলো এখন হারিয়ে যাচ্ছে! এখনকার কেউ হয়তো জানেও না এই খেলাটা আছে কি না!
ছোটবেলায় কত রকমের না খেলা খেলতাম আমরা সবাই মিলে যেগুলো মনে পড়লে এখনো ভীষণ ভালো লাগে। ১৬ গুটি খেলাটি আমার এখনো মনে আছে। যদিও ছোটবেলায় প্রচুর পরিমাণে খেলাটি খেলতাম আমরা। আসলে বৃষ্টির দিনে এই খেলাটি একটু বেশি খেলা হত। আমরা যেহেতু বৃষ্টির দিনে ঘর থেকে বাহির হতে পারতাম না তাই ঘরের পাশেই গর্ত করে খেলাটি খেলতাম। গ্রাম বাংলার এরকম ঐতিহ্যবাহী খেলা গুলোর মধ্যে এটি ছিল একটি। এখন তো এরকম খেলা গুলো একেবারেই দেখা যায় না। আমি শেষবার কখন দেখেছিলাম মনে নেই। অতীতের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল। ভালোই লাগলো পড়ে।
জি আপু! যারা গ্রামে বড় হয়েছে সবাই মনে হয় এই খেলাটা খেলেছে। অতীতের দিনগুলো ভালোই ছিল।