৯ম পর্বঃ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা [ ঘুড়ি উড়ানো ]

14-02-23

০২ ফাল্গুন ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


children-1822688_1280.jpg

copyright free image from pixabay

৮ম পর্বের পর থেকে

সবাইকে ফাল্গুনের শুভেচ্ছা 🌼🦋! বসন্তের দোলা যেন আপনার মনকে রাঙিয়ে দেয় সেই কামনাই করছি! যাক, ঘুড়ি খেলার কথা তো সবাই জানেন! আমার মনে হয় বাংলাদেশের ৯০% এর ও উপরে ঘুড়ি উড়ানো খেলা সম্পর্কে জানে! এটা এখন শহরের একটা ঐতিহ্যবাহী খেলাও হয়ে গেছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় তো ঘুড়ি উড়ানো উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। কত রকমের রঙিন ঘুড়ি এখন পাওয়া যায়। তবে শৈশবের সেই পলিথিন দিয়ে বানানো ঘুড়ি মুহূর্তটার হবে কি এখন!! ছোট বেলায় পলিথিন কাগজ দিয়েই ঘুড়ি বানিয়ে ফেলতাম! প্রথম প্রথম তো ঘুড়ি বানানো টাফ ছিল! ঘুড়ির মাপই নিতে পারতাম না! পাড়ার ছেলেদের কাছ থেকে বানানো দেখে শিখেছিলাম! তখন ইউটিউবে যে ঘুড়ি বানানো দেখবো ঐরকম ব্যবস্থাও ছিল না। বলতে পারেন ইউটিউব ছিল কি না তাও জানতাম না!

ঘুড়ি বানানোটা আয়ত্ত করতে হয়েছে অনেকবার প্র্যাকটিস করার মাধ্যমে । ব্লেড দিয়ে কেটে কেটে ঘুড়ির সাইজ বানাতাম! ঝাড়ুর শলা তখন ছিল ঘুড়ি ডানা বানানোর উপরকরণ! কতো ঝাড়ুর শলা যে নষ্ট করেছি তার হিসেব কি আর আছে। মায়ের হাতের মারও খেয়েছি ঝাড়ুর শলা ভাঙার জন্য! তবে আমার ঘুড়ি বানানো আটকায় কে! গ্রামের ছেলেরা তখন ঘুড়ি বানিয়ে সোজা চলে যেত খোলা ধান ক্ষেতের প্রাঙ্গণে! এদিকে আমি তাড়াহুড়ো করে ঘুড়ি বানাতাম! কখন আমার ঘুড়ি আকাশের সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠবে। ঘুড়ি বানানোর আরেকটা উপকরণ ছিল সুতাঁ। তখনকার সময়ে দুই টাকার সুতার গুটিঁ পাওয়া যেত। সেটা দিয়েই ঘুড়ি বানানো আর আকাশে উড়ানো। কিন্তু ঝামেলা হতো দুই টাকার সুতার গুটিঁ তে বেশি সুতাঁ থাকতো না! তাই ঘুড়িও বেশিদূর যেতে না। যাদের সুতাঁ বেশি থাকতো তাদের ঘুড়ি অনেক উপরে থাকতো।

ঘুড়ি বানানোর পর আরেকটা ঝামেলা হতো। সেটা হচ্ছে ঘুড়ি উল্টাভাবে ডিগাবাজি মারতো যেটাকে আমাদের দিকে গুট খেয়েছে বলতো। গুট খেয়ে সোজা ঘুড়ি মাটিতে পড়ে যেত। যার জন্য ঘুড়ির লেজের সাইজ একটু বড় করা হতো। যাতে নিচের দিকে কিছুটা টান ফিল হয়। কিন্তু না! লেজ বড় দেয়ার পরেও অনেক সময় দেখতাম ঘুড়ি গুট খাইতো! পরে অবশ্য ঘুড়ি দুই পাশে সমান সমান অংশ করে কাগজের আরও দুটি লেজ বানিয়ে দেয়া হতো। যাতে ঘুড়ি ব্যালেন্স থাকে। ঘুড়ি ব্যালেন্স থাকলে শূন্যে অনেকক্ষণ একদম সঠিক ওয়েতে উড়তো। তবে ঘুড়ি উড়াতে দরকার ছিল বাতাস! বাতাস তো আর এমনি এমনি দেয়া যায় না! প্রকৃতি প্রদত্ত বাতাস। বৈশাখ মাসের ঠিক আগের মুহূর্তটাতে সম্ভবত বাতসের সাথে আকাশটাও ঘনকালো মেঘে ঢেকে থাকতো। আর তখনই ঘুড়ি উড়ানোর উপযুক্ত সময় ছিল। মেঘ এসে পরলে তাড়াতাড়ি করে ঘুড়ির সুতাঁ ভাজ করে পেচানো হতো।

ঘুড়ি উড়ানোর সবচেয়ে মজার পার্ট ছিল একটি ঘুড়ির সাথে আরেকটি ঘুড়ির দ্বন্ধ! সেটা সুতাঁর সাথে সুতাঁর লড়াই! যারা সুতাঁর পরিমাণ বেশি তার ঘুড়ি অনেক উপরে থাকতো। আর যারা সুতাঁর পরিমাণ কম তার ঘুড়ি বেশি উপরে উঠতে পারতো না। আমার তখন দুই টাকার সুতাঁর গুটি ছিল। তাই বেশিদূর ঘুড়ি যেত। পাড়ার অন্য ছেলেদের দেখতাম তাদের ঘুড়ি আকাশের অনেক উপরে চলে যেত। নিচে থেকে মাঝে মাঝে ঘুড়ি দেখাই যেত না। সেবার একটা ৩২ টাকা দামের সুতারঁ গুটি কিনেছিলাম! অনেক মোটা সাইজ! একটা দিয়েই ঘুড়ি অনেক দূর যাবে। স্কুল থেকে আসার পথে সুতার গুটিঁ কিনে নিয়ে এসেছিলাম! তখন ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে পড়ি সম্ভবত! বিকালে ছুটি দিতো স্কুল। আর বাড়িতে এসেই কোনো কথা নেই ঘুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। তখনকার সময়ে পলিথিন কাগজ দিয়ে বানানো তেলেঙ্গা ঘুড়ি অনেক জনপ্রিয় ছিল। আমাদের দিকে তখন পলিথিন দিয়ে বানানো ঘুড়িকে তেলেঙ্গা ঘুড়িই বলতো!!

স্কুলের ড্রেস চেইঞ্জ না করেই বেরিয়ে পড়তাম ঘুড়ি নিয়ে। পাড়ার আরও অনেক ছেলেই বেরিয়ে পড়তো তখন ঘুড়িয়ে। শুরু হতো প্রতিযোগিতা। কার ঘুড়ি বেশি উপরে উড়বে! আমি বাজার থেকে ৩২ টাকা সুতাঁর গুটি কিনে নিয়ে এসেছিলাম! ধরেই নিয়েছিলাম আমার ঘুড়ি আকাশে বেশিদূর পর্যন্ত যাবে। আকাশে বাতাসও ছিল। শুরুতেই ঘুড়ি উড়তে শুরু করে দিল। আস্তে আস্তে আমি সুতাও ছাড়তে লাগলাম! একটা সময় দেখি সবার উপরে আমার ঘুড়ি। কিন্তু তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। আমার ঘুড়ি এতোটাই দূরে গিয়েছিল যে চোখে দেখাই যাচ্ছিল না! সুতাঁ পেচানো আজকে সম্ভব না! পুরো সুতায় ছাড়া হয়েছিল। কিছুক্ষণ সুতাঁ পেঁচিয়ে দেখি আঙুল লাল হয়ে গিয়েছে। ভেবেছিলাম আজ বরং গাছের সাথে ঘুড়ি বেধেঁ রেখা যায়। সকাল সকাল এসে ঘুড়ির সুতা পেচানো যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। রেইন্ট্রি গাছের উপরের ঢালে ঘুড়ির সুতা বেধেঁ রেখেছিলাম। তারপর বাড়িতে চলে যায়।

কিন্তু বাড়িতে গিয়ে টেনশন কাজ করছিল। কারণ যদি ঘুড়ি ছিঁড়ে চলে যায়, তখন কি হবে!! যেই কথা সেই কাজ! পরদিন সকালে গিয়ে দেখি আমার ঘুড়ি নেই! কিছুটা সুতাঁ পরে আছে। হয়তো আমার ঘুড়ি অনেকটা পথ পাড়ি দিয় দূর বহুদূরে চলে গিয়েছে। হারালাম আমার প্রিয় একটি ঘুড়ি। এরপর থেকে তেমন ঘুড়িও উড়ানো হয়নি।কারন প্রিয় কিছু হারিয়ে গেলে সেটার প্রতি আর আগ্রহ কাজ করে না। তারপর শুধু গ্রামের ছেলেদের ঘুড়ি বানিয়ে দিতাম! আকাশে আর ঘুড়ি উড়ানো হয়নি। এখন গ্রামে ঘুড়ি উড়ানো দেখি না। শহরে অবশ্য এটা ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে তাই বেশি দেখি যায়। ঘুড়ে উড়ানোর দিনগুলো স্মৃতির অ্যালবামে পরেই রইলো!!

যাক আর বেশি কথা বাড়ালাম না! আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি! আপনাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি । আল্লাহ হাফেজ 🌼🦋

চলবে....



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  
 last year 

আসলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেলা গুলোর মধ্যে একটি ছিল ঘুড়ি উড়ানো খেলা। ছোটবেলায় প্রচুর পরিমাণে এই খেলাটি সবাই মিলে খেলতাম। যদিও এখন অনেক জায়গায় খেলাটি দেখা যায়। এখন তো বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলায় ঘুরি খেলা ও রয়েছে। সবাই ঘুড়ি খেলায় অংশগ্রহণ করে। বেশ মজা হত ছোটবেলায় খেলা গুলো খেলার সময়। যখন ঘুড়ি খেলার সৃজন আসতো তখন সবাই মাঠে ঘুড়ি নিয়ে চলে যেতাম। অতীতের স্মৃতি গুলো মনে পড়ে গেল। ভালোই লাগলো।

 last year 

জি ভাইয়া। সবাই একসাথে ঘুড়ি উড়ানোর মুহূর্তটা ছিল অন্যরকম। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া 🌼🦋

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

যদিও আমি ঘুড়ি উড়াতে পারি না,তবে ছোট বেলায় পলিথিন আর ঝাড়ুর কাঠি দিয়ে ঘুড়ি বানাতে পারতাম।আবার সুতা ধার হওয়ার জন্য কাঁচের একটা প্রলেপ দেওয়া হত যেন অন্যর ঘুড়ি সহজেই কাটতে পারে।আসলেই ছোট বেলা গুলো দারুন ছিলো।কোথায় গেলো সেই দিন।ভালো লাগলো।ধন্যবাদ

 last year 

হাহাহা! ঘুড়ি কাটার জন্য আপু তাহলে কাচের একটা প্রলেপ দিতেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু 🌼🦋

 last year 

আমার জীবনে ঘুড়ি উড়ানোর অনেক ইতিহাস রয়েছে। যেহেতু জীবনে অনেক প্রকার খেলা খেলেছি। সব বিষয় সব সময় স্মরণ হয় না। তবে আজকে আপনার এই পোস্ট পড়ার মধ্য দিয়ে সে স্মৃতি ভেসে আসলো। বিশেষ করে ধানের মাঠে যখন ধান কাটা হয়ে যেত ঠিক সেই মুহূর্তে 'বউড়া' নামে একটা ফল পাকতো, আর সেই ফলের আঠা দিয়ে আমরা ঘড়ি তৈরি করে উড়িয়ে বেড়াতাম মাঠে মাঠে। এমনকি মাঝেমধ্যে ঘুরে উড়ানোর প্রতিযোগিতা হতো এবং প্রাইজ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকত। যাই হোক, আপনার আজকের এই পোষ্টের মধ্য দিয়ে অতীতের সেই স্মৃতিগুলো খুজে পেলাম। তাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা পোস্ট উপস্থাপন করার জন্য।

 last year 

বউড়া ফলের নামটি প্রথম শুনলাম ভাইয়া। তবে আমাদের দিকে কুটুর নামে একটি ফল ছিল এটা দিয়ে খেলা যেত। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া 🌼🦋

 last year 

এই ঘুড়ি ওড়ানোর মজা এখনকার প্রজন্ম বুঝবে না।অনেক পুরোনো স্মৃতি তাজা করে দিলেন ভাই।ঘুড়ি বানানো টা ছিল এক ধরনের শীল্প।যে একটু ভালভাবে বানাতে পারত তার তো গর্বে মাটিতে পার পড়ত না।ঝাড়ুর শলা,পেপার আর ভাতের আঠা দিয়ে ঘুড়ি বানাতাম।ধন্যবাদ ভাই সুন্দর পোস্টটির জন্য।

 last year 

জি ভাইয়া আপনি ঠিক বলেছেন। এখনকার প্রজন্ম এ খেলাগুলো বড্ড মিস করবে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া 🌼🦋

 last year 

আমাদের শৈশবের জীবনটা অনেক বেশি সুন্দর ছিল যেখানে আমরা বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলতাম। ঘুড়ি ওড়ানো, গুটি খেলা, গোল্লাছুট, ফুটবল, ক্রিকেট সবকিছুই হতো। স্কুল থেকে আসার পর পরই এসব কিছু নিয়ে বেরিয়ে যেতাম খেলার উদ্দেশ্যে। কোথায় খাওয়া-দাওয়া কোথায় ঘুম সব ফেলে আগে খেলতে চলে যেতাম। কিন্তু সেই মুহূর্তগুলো হারিয়ে গেছে বহু বছর আগে। আর আপনি সেই ঘুড়ি ওড়ানোটাকে কেন্দ্র করে এই মুহূর্তটা আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। মনে পড়ে গেল সেই পুরনো স্মৃতি। সত্যি বলতে খুব ভালো লাগলো আপনার এই পোস্ট পড়ে।

 last year 

এখন তো সব স্মৃতি ভাইয়া। চাইলেই কি আর আগের শৈশবে ফিরে যাওয়া যায়। মুহুর্তগুলো তখন ভালোই ছিল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া 🌼🦋

 last year 

একদম ঠিক আর আমরা যেগুলো এখন দেখছি আগামী প্রজন্ম মনে হয় সেটাও দেখবে না। ধন্যবাদ চমৎকার একটি ফিডব্যাক দেওয়ার জন্য।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপনি আমরা সবাই জানি আমাদের অনেক ধরনের ঐতিহ্যবাহী খেলা রয়েছে। কিছু কিছু খেলা তো আমি কখনো দেখেছি বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু অনেক ধরনের খেলার নাম শুনেছি শুধুমাত্র। কিন্তু ঘুড়ি উড়ানি খেলা আমি অনেকবার খেলেছি। ছোটবেলায় আপনাদের মত আমরাও পলিথিন দিয়ে অনেক রকম ঘড়ি তৈরি করতাম। বিশেষ করে আমার কাছে মাছঘড়ি তৈরি করতে অনেক ভালো লাগতো। অনেক বার পলিথিন দিয়ে আমি মাছ ঘুড়ি তৈরি করেছিলাম। আপনার ঐতিহ্যবাহী খেলা গুলো গল্প আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। পরবর্তী খেলার গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।

 last year 

জি আপু! ঘুড়ি উড়ানোর খেলাটা সবাই প্রায় খেলেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু 🌼🦋

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 59908.77
ETH 3191.82
USDT 1.00
SBD 2.43