গ্রামবাংলার অন্যতম একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা-লাটিম
হ্যালো বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি। |
---|
From Wikimedia Commons, the free media repository
আজকে আপনাদের সাথে একটা খেলার বিষয়ে পোস্ট শেয়ার করবো। তবে এই খেলাটা কিন্তু আমাদের শৈশবের খেলা, আর অনেকেই খেলেছেন, আমিও খেলেছি। এই খেলাটা হলো লাটিম খেলা, এইবার তাহলে সবাই নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন এই খেলাটা কি খেলা। লাটিম বা লাট্টু যেকোনো নামেই এই খেলাটাকে ডাকা হয়ে থাকে। তবে গ্রামবাংলায় বেশিরভাগই লাটিম শব্দটা প্রচলিত হয়ে এসেছে, আমিও লাটিম বলি। গ্রামবাংলার সবথেকে প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী একটি খেলা ছিল এই লাটিম। আমাদের ভারত ও বাংলাদেশে এই খেলাটা একসময় জনপ্রিয় ছিল। শৈশবের এই খেলাটা গ্রামাঞ্চলে থাকতে কত খেলেছি, তা এখনো মনে পড়ে। আজকে হঠাৎ করে শৈশবের এই লাটিম খেলার কথাটা মনে পড়লো এবং এই খেলাটাকে আমার মনে পড়লে অনেক মিস করি এখনো। লাটিম কিন্তু ছেলে বা মেয়ে সবাই খেলতে পারে। আমাদের গ্রামের বাড়িতে ছোটবেলায় সব বন্ধুরা মিলে লাটিম খেলায় বেশ মেতে থাকতাম।
বিকেল হলেই সবাই খেলা করতে নেমে পড়তাম এই লাটিম নিয়ে। খেলাটা আমাদের বাড়িতেই খেলতাম, সব বন্ধুরা আমাদের বাড়িতে চলে আসতো এবং তখন খেলতাম। তখনকার সময়ে লাটিম গ্রামের দোকানগুলোতে খুবই বিক্রি হতো আর প্রচলন ছিল খুব, স্কুলের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে আগে এই ৫ টাকা কি ১০ টাকার লাটিমগুলো কিনে কিনে খেলতাম, একটা ভীষণ নেশার মতো কাজ করতো এই লাটিম খেলার প্রতি। এমনকি স্কুলেও আমরা বন্ধুরা মিলে লাটিম নিয়ে যেতাম আর টিফিনের সময়ে খেলতাম, বেশ মজা হতো সবাই মিলে একসাথে খেলার মাধ্যমে। তবে লাটিম খেলা বা সব থেকে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো লাটিম ঘুরানোটা, এইটা আমি প্রথমে একদমই পারতাম না, অনেকবার ধরে ধরে চেষ্টা করতাম কিন্তু হাত থেকে ছিটকে চলে যেত, এর একটা কৈশলও আছে, ধুম করে ঘুরাতে চাইলেই ঘুরানো যায় না।
একভাবে এইরকম চেষ্টা করতে করতে একদিন হঠাৎ করে লাটিম ঘুরে গেলো, ওইদিন নিজের মনেই খুব আনন্দ হচ্ছিলো, যে আমিও ঘুরাতে পেরেছি। লাটিম সোজা ভাবেও ফেলে ঘুরানো যায় আবার উল্টো করে ফেলেও ঘুরানো যায়। তবে সব থেকে উল্টো করে ফেলে ঘুরালে লাটিম বেশি জোরে ঘরে আর বনবন করে শব্দ হয়। আমি সবসময় উল্টো করেই ফেলে ঘুরাতাম। এর মেইন যে বিষয়টা হচ্ছে লাটিমের প্রত্যেকটা খাঁচে দড়ি ঠিকঠাক পেঁচানো, এইটা ঠিক না হলে লাটিম ঘুরানো যায় না। বেশি ঢিলা করেও পেঁচানো যাবে না, আবার বেশি হার্ড করেও পেঁচানো যাবে না, কারণ বেশি জোর খাটিয়ে যদি দড়ি পেঁচানো হয় তাহলে কিন্তু পেঁচ শেষ অব্দি নিয়ে যেতে যেতে খুলে যায়, আর এই ভুলটা আমার বেশি হতো প্রথম প্রথম । একদম মসৃন ভাবে পেঁচিয়ে মাথায় আনতে পারলে তারপর ঠিক ঠাক হয়।
লাটিম খেলা নিয়ে আমাদের বন্ধুদের মধ্যে মাঝে মাঝে বেশ প্রতিযোগিতা হতো। যেমন, অনেক সময় আমরা মিডিয়াম সাইজের ঘর কাটতাম, আর সেখানে সবাই যার যার মতো পর পর লাটিম ঘুরাতাম আর যারটা ঘুরতে ঘুরতে দাগের বাইরে চলে যেত সে বাদ পড়ে যেত। এইরকম করে করে শেষ অব্দি যে টিকে থাকতো সে উইনার হতো। তবে আমার ম্যাক্সিমাম সময় বাইরে চলে যেত কারণ, অনেক জোরে ঘুরাতাম, ফলে ঘুরতে ঘুরতে বেরিয়ে যেত দাগের বাইরে, মাটিতে খেললে তেমন সমস্যা হয় না, কিন্তু পাকা জায়গায় খেললে লাফায় খুব। এছাড়া আরো একটা খেলা খেলতাম সেটা হলো একজনের লাটিম ঘূর্ণন অবস্থায় আরেকজন সেই লাটিমের উপরে লাটিম ঘুরিয়ে সেই লাটিমকে নষ্ট করে দেওয়া বা ক্ষত বিক্ষত করে দেওয়া। এইটা আমি বেশ পটু ছিলাম, কারণ জোরে জোরে ঘুরতাম, তাতে হুল অন্য লাটিমে ফুটুক আর না ফুটুক সেই লাটিমের বারোটা বেজে যেত আঘাতে হা হা।
এইরকম আরো বহু পদ্ধতিতে খেলার মাধ্যমে আমরা প্রতিযোগিতা লাগাতাম, তবে টাকা পয়সার না,এমনি এমনি খেলতাম আর মজা করতাম। এর প্রতি এতো নেশা বেড়ে গিয়েছিলো যে বর্ষাকালেও স্কুলের বারান্দায় গিয়ে বিকেলে খেলা করতাম। এই খেলায় সত্যি অনেক আনন্দ হতো। তবে এই লাটিম দিন দিন এখন হারিয়ে যাচ্ছে, এবং গেছেও, আর দেখা যায় না তেমন গ্রামঞ্চলের দিকে। মাঝে মাঝে এখনো তো গ্রাম অঞ্চলের দিকে যাওয়া আসা হয় কিন্তু কোথাও খেলতে দেখি না লাটিম খেলতে। শৈশবের এই ঐতিহ্যবাহী খেলা এখন বিলুপ্তের পথে, দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এইসব খেলা।
শুভেচ্ছান্তে, @winkles
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
দাদা,এই খেলাটি অনেক কষ্টে আমি শিখেছিলাম।মনে হয় 20- 30 বার ট্রাই করার পর একদিন পেরেছিলাম ঘুরাতে,হি হি☺️☺️।আমাদের শৈশব কত সুন্দর ছিল, এখন এই মজার জনপ্রিয় খেলাটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।গ্রামের বাচ্চাদেরকেও খেলতে দেখা যায় না।এমনকি মেলায় খুঁজে পাওয়া যায় না লাটিম।আর দড়ি পেঁচাতে পেঁচাতেই শেষ আর হাতের কারসাজিতে ঘুরানো।যাইহোক আপনার পোষ্টের মাধ্যমে আবারো শৈশবের কত খেলার কথা মনে পড়ে গেল।যার সবটাই ভীষণ মিস করি।লাটিমের পেরেক কখনো কখনো আবার পায়ে ফুটে যেত,সুন্দর লিখেছেন।ধন্যবাদ আপনাকে দাদা।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দাদা আপনি একদমই ঠিক বলেছেন। গ্রামবাংলার অন্যতম একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা-লাটিম। লাটিম খেলার নাম শুনে ছোট বেলায় মধুর স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। লাটিম ছোটবেলায় কথো খেলেছি তা এখনো মনে আছে। চমৎকার লিখেছেন দাদা ভালো লাগলো। শৈশবের স্মৃতি গুলো মনে পড়লে এখনো হারিয়ে যাই।
দাদা ছোটবেলায় এই খেলাটা যদিও আমার খেলা হয়নি তবে প্রচুর দেখা হয়েছে। আসলে আমি বাহিরে তেমন খেলাধুলা করতে পছন্দ করতাম না। তবে সমবয়সি যারা ছিল তাদের সাথে কিছুটা কথা অথবা খেলার মত। এমনিতে এই খেলাগুলো দেখতে আমার কাছে খুব ভালো লাগলো। বিশেষ করে লাটিম খেলা দেখতে আমি একটু বেশি পছন্দ করতাম। অনেক জনকে তো দেখতাম হাতের মধ্যে লাটিম ঘুরাতে। এই বিষয়টা সত্যি আমাকে অনেক বেশি আনন্দ দিত। স্কুলেও ছেলেমেয়েদেরকে এই লাটিম নিয়ে যেতে দেখতাম। তারা সেখানে খেলতো আমি তা উপভোগ করতাম। এখন তো এই খেলাটির প্রচলন একেবারে নেই বললে চলে। শুধু লাটিম খেলা না অন্যান্য আগে যেসব খেলা ছিল সেগুলোর প্রচলন আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে। আমাদের কাছ থেকে সেই খেলাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। যে খেলা গুলো গ্রাম বাংলার অনেক বেশি ঐতিহ্যবাহী খেলা ছিল, সেগুলো এখন গ্রাম অঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। অনেক সুন্দর করে আজকে পোস্ট লিখেছেন। অনেক ভালো লেগেছে আমার কাছে।
প্রিয় দাদা অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আসলে আপনার এই পোষ্টটি পড়ে আমারও সেই ছোটবেলায় লাটিম খেলার কথাগুলো খুবই মনে পড়ে গেল। আপনার এ পোস্টটি পড়ার সাথে সাথে আমার শৈশবের লাটিম খেলার স্মৃতিগুলো কেমন যেন আমাকে আঁকড়ে ধরেছে। আসলে ছোটবেলায় লাটিম খেলার মৌসুমে সব সময় আমার প্যান্টের পকেটে লাটিম থাকতো। এমনকি স্কুলে গেলেও ব্যাগে করে লাটিম নিয়ে যেতাম এবং সুযোগ পেলেই লাটিম খেলা শুরু করতাম। যাহোক খুবই সুন্দর একটি শৈশবের স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য প্রিয় দাদা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ছোটবেলার সুন্দরতম পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন ভাইয়া। লাটিম ছোটবেলায় আমার খুবই পছন্দের একটি খেলা ছিল। আমিও স্কুলের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে অনেক লাটিম কিনতাম। প্রথম প্রথম আমিও লাটিম ঘুরাতে পারিনি তবে দুই দিনের মধ্যেই খুব ভালোভাবে লাটিম ঘোরানো শিখে গিয়েছিলাম। তবে এখন এই খেলা গুলো সচরাচর আর কাউকে খেলতে দেখা যায় না। বর্তমান সময়ের ছোট বাচ্চাদের মধ্যেও এই খেলার প্রচলন আর নেই বললেই চলে। এই বিলুপ্তপ্রায় লাটিম খেলাটির সাথে ছোটবেলার অনেক সুন্দর সুন্দর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া স্মৃতিগুলো আবারও মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
আসলে দাদা ছোটবেলায় লাটিম অনেক খেলেছি। লাটিম আমার সব থেকে পছন্দের একটা খেলা ছিল। বিকেল হলেই বন্ধুদের সাথে এই লাটিম খেলা হত। শুধু লাটিম খেলা না, আরো অনেক রকমের খেলা রয়েছে যেগুলো আমরা সবাই একসাথে খেলতাম। এটা কিন্তু সত্যি যে এইসব খেলা এখন হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই দিকেও লাটিম খেলা এখন আমি একেবারেই দেখি না। তবে এই খেলা গুলোর প্রচলন আগে সবথেকে বেশি ছিল। এখন তো ছেলে মেয়েরা ঘর থেকেও বের হয় না, সবাই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তবে মাঝে মাঝে ফুটবল খেলতে দেখা যায়। শেষবার কবে এই লাটিম খেলা দেখেছিলাম এটাও আমার মনে নেই দাদা। ছোটবেলার স্মৃতি গুলোর কথা মনে পড়ে গেল দাদা আপনার এই পোস্ট পড়ে। এখন তো কোন দোকানে লাটিম পাওয়া যাবে বলেও আমার মনে হয় না। ভালো লাগলো দাদা সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে।
দাদা আপনার লেখাটা পড়ছিলাম, আর মনে হচ্ছিল শৈশব স্মতি যেন চোখের সামনে ভাসছিল। আহারে আমার শৈশব, কতই না স্মৃতিমধুর।
দাদা, আপনার আজকের পোস্ট পড়ে আমিতো একেবারে ছোটবেলায় ফিরে গেলাম। ছোটবেলায় আমি নিজেও এই লাটিম খেলাটা অনেক বেশি খেলতাম। আসলে এই খেলাটার কথা এখন একদম মনেও পড়ে না। সময়ের সাথে সাথে সবকিছু যেন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আজকে আপনার পোস্ট করে ওই সব স্মৃতি গুলো যেন মনে পড়ে যাচ্ছে। তবে আপনি তো দেখছি লাটিম খেলাতে একদম পটু। সত্যি এই খেলা গুলো এখন গ্রাম অঞ্চল থেকে হারিয়ে গিয়েছে। আমাদের এদিকে এখন আর এই খেলাটা দেখা যায় না। বর্তমানের ছেলেমেয়েরা তো শুধু মোবাইল, ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত। তবে আপনার কাছ থেকে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি মনে করে ভীষণ ভালো লাগলো।
আমাদের শৈশব যেমন হারিয়ে গেছে তেমনি শৈশবের সেই পুরনো দিনগুলো শুধু স্মৃতি হয়ে আছে।।দাদা আপনার লেখা গুলো পড়ে আজকে পুরনো দিনের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল। হয়তো অনেক খেলার সাথে আমরা পরিচিত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই খেলা গুলো আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে সময়ের সাথে সাথে খেলার ধরন বদলে গেছে। এখনকার বাচ্চারা তো লাটিম খেলা কি সেটাই ভালোভাবে বোঝো না। সময়ের সাথে সাথে সবকিছুর উন্নয়ন হয়েছে। তাই তো পুরনো ঐতিহ্য এবং ঐতিহ্যবাহী খেলা গুলো হারিয়ে গেছে। তবে দাদা আমি কিন্তু জীবনে কোনোদিন লাটিম ঘুরাতে পারিনি। আজকে আপনার কাছে অনেক পদ্ধতি শিখলাম। আগে যদি পদ্ধতি গুলো জানতাম তাহলে আমিও একটু খেলতে পারতাম। তবে চেষ্টা কিন্তু অনেক করেছিলাম দাদা। শেষ পর্যন্ত একদম হেরে গেছি দাদা। আপনার লেখাগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো। সেই সাথে পুরনো স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যাচ্ছিল। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য। আর নিজের শৈশবের স্মৃতিগুলো তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি দাদা।