ঝিঙে, আলু এবং বেগুন দিয়ে পাতি কাঁকড়ার মজাদার রেসিপি

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
হ্যালো বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।

আজকে আপনাদের সাথে একটা রেসিপি শেয়ার করে নেবো। আজকে আমি ছোট কাঁকড়ার রেসিপি তৈরি করেছি। ছোট কাঁকড়ার অনেকদিন তরকারি করা হয় না, এমনিতে এই কাঁকড়াগুলো আমাদের কেনা হয় মাঝে মাঝে তবে বেশ কিছুদিন ধরে তরকারি বাদ দিয়ে ভেজে গুলে খাওয়া হচ্ছে। কাঁকড়া ভাজা দেখলে আসলে সামলানো মুশকিল হয়ে যায় আমার কাছে, ১-২ টো করে খেতে খেতে খানিকটা খাওয়া হয়ে যায় হা হা। তবে সরিষার তেল আর পোড়া লঙ্কা দিয়ে গুলে বা ভর্তা করে খেতে যা টেস্ট লাগে সেটা যারা খেয়েছে তারাই অনুভব করতে পারবে। আমি তরকারির থেকে আগে ভর্তা করে খাওয়ার দিকে বেশি ঝোঁক দেই। কাঁকড়া ছোট বা বড়ো যাই বলুন না কেন খেতে আমার কাছে অনেক ভালো লাগে, একপ্রকার বলতে পারেন যে কাঁকড়া আমার প্রিয়। তবে এখন যে কাঁকড়া ওঠে তাতে কেন জানি আগের মতো তেমন ঘি, শাঁস খুঁজে পাওয়া যায় না। কিনলে বেশিরভাগ জল বের হয়, আর এইগুলো বড়ো কাঁকড়ার মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় বেশি। এইজন্য আমি বড়ো কাঁকড়ার থেকে ছোট কাঁকড়া বেশি খাই, ছোট কাঁকড়াগুলো তাও খাওয়ার জাতে থাকে। যাইহোক এই ছোট কাঁকড়ার রেসিপিটা আমি ঝিঙে, আলু আর বেগুন দিয়ে তৈরি করেছিলাম। তিন রকম সবজি দিয়ে খেতে অনেক ভালো লেগেছিলো তরকারিটা। যাইহোক এখন আমি এই রেসিপিটার মূল পর্বের দিকে চলে যাবো।


❂প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ:❂

❣উপকরণ
পরিমাণ❣
পাতি কাঁকড়া
১০০ গ্রাম
ঝিঙে
৩ টি
গোল আলু
৩ টি
বেগুন
২ টি
পেঁয়াজ
১ টি
রসুন
১ টি
কাঁচা লঙ্কা
১০ টি
গোটা জিরা
পরিমাণমতো
সরিষার তেল
পরিমাণমতো
লবন
৪.৫ চামচ
হলুদ
৩ চামচ
জিরা গুঁড়ো
২ চামচ


ঝিঙে, গোল আলু, বেগুন, পেঁয়াজ, রসুন


কাঁচা লঙ্কা, সরিষার তেল, লবন, হলুদ, জিরা গুঁড়ো


✦এখন রেসিপিটা যেভাবে তৈরি করলাম---


✠প্রস্তুত প্রণালী:✠


➤ছোট কাঁকড়ার পাগুলো প্রথমে কেটে ফেলে দিয়েছিলাম। এরপর ঝিঙে তিনটির খোসা ছালিয়ে নেওয়ার পরে কেটে পিচ পিচ করে নিয়েছিলাম এবং পরে জল দিয়ে ধুয়ে নিয়েছিলাম।

➤বেগুনগুলো কেটে ছোট ছোট পিচ করে নিয়েছিলাম এবং পরে জল দিয়ে ধুয়ে নিয়েছিলাম । এরপর আলুগুলোর খোসা ভালোভাবে ছালিয়ে নিয়ে কেটে পিচ তৈরি করে নিয়েছিলাম এবং ধুয়ে নিয়েছিলাম।

➤পেঁয়াজ এর খোসা ছালিয়ে নেওয়ার পরে কুচি করে নিয়েছিলাম এবং একই সাথে রসুনের কোয়াগুলো আলাদা করে নেওয়ার পরে খোসা ছালিয়ে নিয়েছিলাম। এরপর কাঁচা লঙ্কাগুলো কেটে নিয়েছিলাম এবং ধুয়ে নিয়েছিলাম।

➤সব কাটার পর্ব শেষ হয়ে গেলে ছোট কাঁকড়াগুলোর খোলক আস্তে আস্তে তুলে নিয়েছিলাম। এরপর তাতে ১ চামচ করে লবন আর হলুদ গুঁড়ো দিয়ে দিয়েছিলাম।

➤কড়াইতে সরিষার তেল দেওয়ার পরে তাতে একটু জল ঢেলে দিয়েছিলাম। এরপর কাঁকড়াগুলো তাতে আস্তে আস্তে দিয়ে দিয়েছিলাম।

➤জল শুকিয়ে কাঁকড়াগুলো ভালোভাবে ভাজা হয়ে গেলে আমি তুলে নিয়েছিলাম।

➤অন্য আরেকটি প্যানে হালকা তেল দিয়ে আলুর ছোট ছোট পিচগুলো সব দিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর লাল মতো করে ভেজে নিয়েছিলাম।

➤আলু ভাজা হয়ে গেলে কড়াইতে পুনরায় সরিষার তেল দিয়ে দিয়েছিলাম। তেলটা গরম হলে তাতে গোটা জিরা দিয়ে দিয়েছিলাম।

➤জিরা দেওয়ার পর তাতে পেঁয়াজ-রসুন ধুয়ে নিয়ে দিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর ভালোভাবে সব ভেজে নিয়েছিলাম।

➤পেঁয়াজ-রসুন ভাজা হয়ে গেলে তাতে কেটে রাখা বেগুনের পিচগুলো দিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর ভাজা পেঁয়াজ-রসুনের সাথে একটু উল্টেপাল্টে নিয়েছিলাম।

➤বেগুনের পরে তাতে লাল করে ভেজে রাখা আলুর পিচগুলো দিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর তাতে কেটে রাখা ঝিঙে এর পিচগুলো দিয়ে দিয়েছিলাম।

➤ঝিঙে দেওয়ার পরে তাতে কাঁচা লঙ্কাগুলো দিয়ে দিয়েছিলাম এবং সাথে ভেজে রাখা কাঁকড়াগুলো সব দিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর তাতে স্বাদ মতো ৩.৫ চামচ লবন আর ২ চামচ হলুদ গুঁড়ো দিয়ে দিয়েছিলাম।

➤সমস্ত উপাদান মশলার সাথে ভালোভাবে মিক্স করে নিয়েছিলাম এবং পরে তাতে পরিমাণমতো জল ঢেলে দিয়েছিলাম।

➤জল দেওয়ার পরে কড়াই কিছুক্ষন ঢেকে দিয়ে রেখেছিলাম সিদ্ধ হয়ে আসার জন্য। সবজি ভালোভাবে সিদ্ধ হয়ে আসলে ঢাকনাটা তুলে নিয়েছিলাম।

➤তরকারিটা আরো ভালোভাবে হয়ে আসার জন্য দেরি করেছিলাম এবং সেই সাথে তাতে একটু ফুটন্ত অবস্থায় জিরা গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়েছিলাম।

➤মোটামুটি খানিক্ষন দেরি করার পরে ঝোল একটু কমে গেলে আমি জ্বাল নিভিয়ে দিয়েছিলাম এবং কিছুক্ষন বাদে তাতে আরো কিছুটা জিরা গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। এরপর তরকারিটা পরিবেশনের জন্য একটি প্লেটে তুলে নিয়েছিলাম।

রেসিপি বাই, @winkles

শুভেচ্ছান্তে, @winkles


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 2 years ago 

আমি চট্টগ্রামে থাকাকালীন কাঁকড়া ভাজা খেয়েছিলাম।তারপর থেকে তেমন কোথাও খাওয়া হয় নি।কিন্তু এইতো কিছুদিন আগেই পটলের কন্টেস্টে আমি কাঁকড়া পটলের চপ বানিয়েছিলাম,আপনার মনে আছে কিনা জানিনা।বিশ্বাস করেন দাদা,যারা কাঁকড়া কখনো খায় নি তারা খেলেও এটি বারবার খেতে চাইবে।বিশেষ করে চপটা ভরা পেটে খাওয়ার পরও ইচ্ছে করছিল আরও কয়েকটা খেয়ে নিতে।এত এত মজা লেগেছে যা বলার বাইরে।সেই থেকে কাঁকড়ার স্বাদ আমার মুখে লেগে আছে।আর আপনার অনেক রেসিপিতে আমি কাঁকড়া দেখেছি।কখনো তরকারী রান্না করে খাই নি কিন্তু খেতে মজা হবে নিশ্চিত। আজকের রান্নাটাও দারুণ দেখতে হয়েছে।

 2 years ago 

ঝিঙে, আলু এবং বেগুন দিয়ে পাতি কাঁকড়ার মজাদার রেসিপি দেখে অনেক সুস্বাদু মনে হচ্ছে। আসলে দাদা আপনি খুবই লোভনীয় রেসিপি তৈরি করেন। এর আগেও আপনি অনেক বাব কাঁকড়া রেসিপি তৈরি করেছেন। আর কাঁকড়ার রেসিপি আপনার খুবই প্রিয়। সত্যিই আমি কাঁকড়া রেসিপি এভাবে কখনো তৈরি করিনি। তবে আমি যখন কক্সবাজার গিয়েছিলাম তখন কাঁকড়া ফ্রাই রেসিপি খেয়েছি। খেতে খুবই মজাদার লেগেছিল। আর এভাবে কখনো তৈরি করা হয়নি। আপনার কাঁকড়া রেসিপি উপস্থাপন আমার অনেক বেশি ভালো লেগেছে এবং আমাদের সাথে ধাপে ধাপে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।

 2 years ago 

কাঁকড়ার রেসিপি দেখে দেখে আমিও কাঁকড়ার প্রেমে পড়ে গেছি দাদা। কিন্তু এখনো কোনদিন কাঁকড়া খাওয়ার সুযোগ হয়নি। আমাদের এদিকে বাজারে কাঁকড়া পাওয়া যায় না। যদি কখনো পাওয়া যায় তখন একবার খেয়ে দেখব। আপনার মুখে কাঁকড়ার প্রশংসা শুনতে শুনতে কাঁকড়া খাওয়ার জন্য মনের মাঝে সুপ্ত বাসনা তৈরি হয়েছে দাদা। আশা করছি একদিন অবশ্যই রান্না করে খাব। আর ভর্তাটাও করে খেয়ে দেখব। ঝিঙে আর বেগুন একসাথে কখনো খাইনি। ঝিঙে ও আলু একসাথে খেয়েছি অনেক। ঝিঙে, বেগুন ও আলুর সমন্বয়ে কাঁকড়ার এই রেসিপি সত্যিই দারুণ হয়েছে। আর শীতকালে সবজি খেতে ভালই লাগে। মজার একটি রেসিপি শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি দাদা। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

আমার কখনোই কাঁকড়া খাওয়া হয়নি।দাদা আপনার কাছ থেকে বেশ কিছু কাঁকড়রা রেসিপি দেখে নিয়েছি।কাঁকড়া দেখলেই আমার ভয় লাগে,দাদা কাকড়া কাটার সময় চিপ দেয় না?কাঁকড়া ভাজা মনে হয় চিংড়ি মাথা ভাজার মত লাগে তাইনা? ঝিঙে,গোল আলু,বেগুন দিয়ে কাঁকড়ার রেসিপি দারুণ হয়েছে মনে হচ্ছে। দাদা কাঁকড়া ভাজা করলে আমাদেরকে কিছু পাঠিয়েন তো😉।প্রতিটি ধাপ আপনি খুব সুন্দর করে দেখিয়েছেন। ধন্যবাদ

 2 years ago 

অনেক মজাদার একটি রেসিপি আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন দাদা। যদিও আমাদের এদিকে কাকড়া তেমন একটা পাওয়া যায় না তবে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়ে কাকড়া ফ্রাই খেয়েছিলাম অনেক মজাদার এবং সুস্বাদু লেগেছিল। আসলে আমরা যে খাবারটা অনেক বেশি পছন্দ করি সেই খাবারটা যদি অল্প খেতে চাই তাহলে অল্প অল্প খেতে খেতে সেটা অনেক বেশি খেয়ে ফেলি আপনার ক্ষেত্রে হয়তো বা সেটাই ঘটে থাকে। খুবই মজাদার এবং ইউনিক একটি রেসিপি আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন বিশেষ করে আপনার উপস্থাপনা আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে।

 2 years ago 

সেই ছোটবেলায় কাকড়া চুলায় পুড়িয়ে খেয়েছিলাম। অনেকদিন হলো খাওয়া হয়না। আপনার কাকড়ার রেসিপি দেখে মনে পড়ে গেল দাদা। যেভাবে রান্না করেছেন, খেতেও নিশ্চয় অনেক মজা হয়েছে।

 2 years ago 

সরিষার তেল আর পোড়া লঙ্কা দিয়ে গুলে বা ভর্তা করে খেতে যা টেস্ট লাগে সেটা যারা খেয়েছে তারাই অনুভব করতে পারবে।

ঠিক বলেছেন দাদা, যারা শুধুমাত্র কাঁকড়া রেসিপি খেয়েছে তারাই শুধু এর স্বাদ পেয়েছে। আর কাকরার এই অতুলনীয় স্বাদের কথা শুনে আমারও ভীষণ খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে। তবে আমাদের এদিকে কাকড়া কিনতে পাওয়া যায় না। আর তাই কখনো খাওয়া হয়নি। তবে চিন্তা ভাবনা করেছি চট্টগ্রামে বেড়াতে গেলে, সেখানে গিয়ে কাকড়ার স্বাদ গ্রহণ করে আসবো। দাদা, বরাবরই আপনার রন্ধন প্রণালী অসাধারণ, আর তাইতো রেসিপিগুলো খেতে ভীষণ রকম সুস্বাদু হয়। আপনার পোষ্টের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের নিত্যনতুন রেসিপি দেখতে পেয়ে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগে। ঝিঙে আলু এবং বেগুন দিয়ে পাতি কাঁকরার মজার ও সুস্বাদু রেসিপি শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!

 2 years ago 

আপনার পোস্টগুলোতে যতই কাঁকড়া দেখছি ততই এর প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে চলেছে। আমি আমার জীবনে মাত্র দুবার খেয়েছি কাঁকড়া তাও আবার আগুনে পুড়িয়ে। সত্যিই মুখে লেগে থাকার মতো স্বাদ।

আমাদের এদিকে তেমন একটা কাঁকড়া পাওয়া যায় না। আপনার তিন রকমের সবজি দিয়ে রেসিপি কিন্তু ভীষণ লোভনীয় দেখাচ্ছে।
কাঁকড়া সংগ্রহ করতে হবে দেখছি।

দোয়া রইল পুরো পরিবারের জন্য 🥀

 2 years ago 

ঝিঙ্গে আলু এবং বেগুন দিয়ে কাকড়া রেসিপি শেয়ার করেছেন আপনি। যদিও কাঁকড়া কোনদিন খাওয়া হয়নি। এবং এই কাকড়া খেতে কেমন তা আমার জানা নেই। তবে আপনার রেসিপি দেখে ই খুবই লোভনীয় লাগছে। খেতেও নিশ্চয়ই সুস্বাদু হয়েছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে দাদা এত সুন্দর ও সুস্বাদু একটি রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 64103.87
ETH 2762.96
USDT 1.00
SBD 2.65