শৈশবের হারিয়ে যাওয়া একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা-কানামাছি

in আমার বাংলা ব্লগlast year
হ্যালো বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।

আজকে আপনাদের সাথে একটা শৈশবের খেলা বিষয়ে পোস্ট শেয়ার করবো। এই খেলাটির নাম হলো 'কানামাছি খেলা'। এই খেলাটা শৈশবের একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা, গ্রামাঞ্চলে ছেলেমেয়েদের এই খেলাগুলো করতে দেখা যায়। এখন বর্তমানে এইগুলো যদিও স্মৃতিমূলক একটি খেলা হিসেবে রয়ে গেছে, কারণ অন্যান্য খেলাগুলোর মতো এই খেলাটাও আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আগের সময়গুলোতে এই খেলাগুলো গ্রামের দিকে খুব চলতো আর আমরা সবাই খেলেছি বলতে গেলে। এই খেলাটা আমিও খুব পছন্দ করতাম, আর বন্ধুদের সাথে এই খেলাটা খেলতে বেশ আনন্দেরও ছিল। কানামাছি বাড়িতেও যেমন খেলা হতো আবার স্কুলেও টিফিনের সময়েও বন্ধুরা মিলে খেলা করা হতো। এই কানামাছি খেলাটা দুটি পদ্ধতিতে খেলা যায়-প্রথম পদ্ধতিতে হলো অল্প কয়েকজন মিলে এই খেলায় একজনের চোখ বেঁধে দিয়ে কয়েক পাক দিয়ে দেয় আর বাকিরা সবাই তার চারিপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে এবং তখন সবাই মিলে একটা শব্দ বলা হতো যে 'কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যারে পাবি তারে ছোঁ'।

এই শব্দটার মানে এটাই বোঝাতো যে চোখ বাঁধা অবস্থায় যারে হাতের নাগালে পাওয়া যাবে তারে ছুঁয়ে দিতে হবে আর পরবর্তীতে তাকেই চোখ বেঁধে দেওয়া হবে। এই খেলাটায় বেশ মজার ব্যাপার আছে। এই চোখ বেঁধে খেলা খেলতে গিয়ে যে কত বিপদ ঘটে গিয়েছে, আমার এখনো মনে আছে, স্কুলে একদিন খেলার সময় আমি চোখ বাঁধা অবস্থায় গাছের গায়ে গিয়ে খেয়েছিলাম ধাক্কা হা হা। চোখ বেঁধে খেলাটা যেমন মজার আছে আবার একটা বিপদের সম্মুখীনও থাকে অনেক সময়ে। এইজন্য এই খেলাটা সবসময় একদম ফাঁকা জায়গায় খেলা ভালো। এই কানামাছির আরেকটা খেলা আছে, সেটা হলো এতে যত জন খুশি খেলতে পারবে। দূরে কোথাও উল্টো দিকে তাকিয়ে কিংবা চোখ বন্ধ করে ১-১০ পর্যন্ত গুনতে হবে আর তার মধ্যে বাকি যতজন থাকবে তারা লুকিয়ে পড়বে। আর এইটা ছিল বেশ কঠিন একটা খেলা, কারণ লুকানোর কোনো নির্দিষ্ট সীমা ছিল না, যে যেখানে খুশি লুকালেই হলো।

কিন্তু তাকেই সবাইকে খুঁজে বের করতে হবে। এই খেলায় কেউ কেউ বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে পড়তো, কেউ গাছে উঠে যেত। আবার কারো বাড়ির আনাচে কানাচে লুকোচুরি চলতো, এ ছিল এক দারুন মজার খেলা। এইসব খেলার প্রতি একটা আলাদা ঝোঁক বা নেশা ছিল, ফলে যখনই বন্ধুরা ডাক দিতো চলে যেতাম। তবে লুকিয়ে লুকিয়ে, কারণ বাড়ির দিক থেকে একটু কড়াকড়ি ছিল, বেশি বেরোতেই দিতো না, এর জন্য অনেক বকাঝকাও খেয়েছি সেই সময়ে । তবে সারাদিন এইসব খেলা খেলেও তখন একটা মনের মধ্যে প্রশান্তি আসতো। তখন একপ্রকার বলা যায় সারাদিন খেলাধুলার উপরে থাকতাম সে বাড়িতে হোক আর মাঠে হোক। যাইহোক, এই ছিল শৈশবের একটা হারিয়ে যাওয়া খেলা সম্পর্কে কিছু কথা।


শুভেচ্ছান্তে, @winkles


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 last year 

কানা মাছি ভোঁ ভোঁ, যাবে পাবি তারে ছোঁ-- এই খেলা কেউ খেলেনি কখনো এটা বলতে পারবে না।আপনার লেখাগুলো পড়ে অতীতে চলে গিয়েছিলাম দাদা।🙏এটা ঠিক বলেছেন, এই খেলা খোলা জায়গায় খেলা ভালো।নয়তো ব্যথা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।আমি ই তো ব্যথা পেয়েছিলাম।😂এসব খেলা আজ অনেক নতুন খেলার মাঝে অতীত হয়ে যাচ্ছে।আপনার লেখাগুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ দাদা পুরনো একটি খেলা নিয়ে কিছু স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 last year 

কানামাছি খেলাটা খুবই দারুণ দাদা। ছোটবেলায় অনেক খেলেছি এই কানামাছি খেলা। আসলে বর্তমান সময়ে এই ধরনের খেলা শহরে কিংবা গ্রামে একদম নেই বললে চলে। দিন দিন খেলাধুলা হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ থেকে। আপনি শৈশবের হারিয়ে যাওয়া খুব সুন্দর একটি খেলার কথা শেয়ার করলেন আমাদের সাথে। অনেক ভালো লেগেছে আপনার বিস্তারিত লেখা গুলো পড়ে।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

আসলেই দাদা কানামাছি শৈশবের হারিয়ে যাওয়া একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা।এই কানামাছি ছোটবেলায় কাজিনদের সাথে অনেক খেলেছি। কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েদের এই খেলা খেলতেই দেখা যায় না। এসব ছোটবেলার কাহিনী পড়লে আবার নিজের ছোটবেলায় ফিরে যেতে মন চায়। আপনার পোষ্টের মাধ্যমে ছোটবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ দাদা আপনাকে ।

 last year 

হি হি হি , দাদা আমরা বলতাম কানামাছি ভু ভু, যাকে পাবি তাকে ছো। কত যে মজার খেলা। আমরা তো যার চোখ বাধা হত তাকে শুধু ঢাকাতেই থাকতাম। মাঝে মাঝে ওকে নিয়ে যেয়ে পিপড়ের মধ্যে দাড়ঁ করিয়ে দিতাম। ও আর আপনি যে দ্বিতীয় পদ্ধতির কানামাছির কথা বলেছেন সেটা কে আমরা টিলেছ পেরেছ বলতাম। চলে গিয়েছিলাম সেই ছেলেবেলার সময়ে কিছুক্ষনের জন্য।

 last year 

গ্রামাঞ্চলের ছেলেমেয়েদের জন্য এই কানামাছি খেলা আমার মনে হয় জাতীয় খেলায় পরিণত হয়ে গেছে। এখনো গ্রাম অঞ্চলে গিয়ে দেখা যায় ছোট ছোট পোলাপান এ কানামাছি খেলা খেলছে। তখন তাদের খেলা দেখে আমার শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়।কারণ আমি শৈশবে কানামাছি খেলতে খুবই পছন্দ করতাম এবং আমরা অনেক পোলাপান মিলে কানামাছি খেলতাম।আমার গ্রামের বাড়ি উঠুন অনেক বড় ছিল, সেই উঠুনের মধ্যে আমরা ২০ থেকে ৩০ জন এই কানামাছি খেলতাম। দিনগুলো অনেক মজার ছিল।আজকে আপনার পোষ্টের মাধ্যমে কানামাছি শালা নিয়ে এত সুন্দর সুন্দর কথা জানতে পেরে খুবই ভালো লাগলো। আপনার মত আমিও কানামাছি খেলতে অনেকবার অনেক কিছু সাথে ধাক্কা খেয়েছি এবং খুব ব্যথাও পেয়েছি।

 last year 

'কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যারে পাবি তারে ছোঁ' এই কথাটা শুনে নিজের অতীত জীবনে হারিয়ে গিয়েছিলাম দাদা। সত্যি দাদা শৈশবের দিনগুলো অনেক ভালো ছিল। শৈশবের সেই সোনালী মুহূর্তগুলো হয়তো কখনো ফিরে আসবে না। তবে সেই স্মৃতিগুলো এখনো মনের মাঝে আলাদা রকমের অনুভূতি তৈরি করে। আসলে আমাদের প্রত্যেকের শৈশবের খেলাগুলো হয়তো একই রকমের ছিল। তাই তো সবসময় মিলে যায়। কানামাছি খেলতে আমার ভীষণ ভালো লাগতো। আমাদের বাসার পাশে একটি বড় স্কুল মাঠ ছিল সেখানে কানামাছি খেলতে বেশি ভালো লাগতো। বিশেষ করে স্কুলের টিফিনের সময় কিংবা ছুটির পরে কানামাছি খেলতাম। আর চোখ বেঁধে যখন একজনকে ছেড়ে দেওয়া হতো তখন সত্যি অনেক মজা লাগতো। যদিও নিজের চোখ কখনো বাঁধা হয়নি। তবে কেন জানি চোখ বাঁধতে আমার ভয় লাগে। দাদা আপনার পোস্ট পড়ে শৈশবের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল এবং অনেক ভালো লাগলো।

 last year 

দিলেন তো ভাই একদম আবেগপ্রবণ করে, লেখাগুলো পড়ছিলাম আর শৈশব স্মৃতি যেন হাতড়ে বেড়াচ্ছিলাম। আহারে জীবন, আহারে শৈশব। কোথায় যেন সব হারিয়ে গেল।

 last year 

কানামাছি ছোটবেলায় আমার খুবই পছন্দের একটি খেলা ছিল। আমরা ছোটবেলায় ভাই বোনেরা মিলে বাড়ির উঠোনে অনেক কানামাছি খেলেছি। আর কানামাছি খেলতে গিয়ে আমি অনেকবার গাছের সাথে ধাক্কা লেগে আনেক আঘাত ও পেয়েছি। তবে সেই সময় গুলোই ছিল জীবনের সোনালী সময়। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য এবং পুরনো দিনের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 last year 

দাদা ঠিক বলেছেন কানামাছি খেলা আজ গ্রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এই খেলাটা বিশেষ করে মাঠের খালি জায়গায় খেলা হতো। যেন কোন দূর্ঘটনা না ঘটে। প্রতিদিন বিকাল বেলা এই খেলার আসর জমতো। বর্তমানে মোবাইলম,টিভি,ইন্টারনেট এসব খেলাকে খেয়ে ফেলেছে। আর দ্বিতীয় খেলাটা বাসা বাড়িতেই বেশি খেলা হতো। কারন বাসা বাড়ি ছাড়া মাঠের মধ্যে লুকানোর জায়গা নাই। সেই দিন গুলো এখন সোনালী অতীত হয়ে গেছে। বর্তমানের ছেলে পেলে এসব খেলার নামই জানে না। ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 58551.09
ETH 2617.32
USDT 1.00
SBD 2.44