মুভি রিভিউ: কুহেলি

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago (edited)
হ্যালো বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।

আজকে আপনাদের সাথে একটা মুভি রিভিউ শেয়ার করবো। এই মুভিটির নাম হলো "কুহেলি"। এই মুভিটি অনেক পুরোনো একটি মুভি,১৯৭১ সালের সাদা-কালো পর্দায় রচিত এই মুভিটি। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক ঘটনাগুলো।


স্ক্রিনশর্ট: ইউটিউব


✠কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:✠

মুভির নাম
কুহেলি
প্লাটফর্ম
hoichoi
পরিচালকের নাম
তরুণ মজুমদার
লেখক
বীরেন দাস
অভিনয়
সন্ধ্যা রায়, বিশ্বজিৎ, সুমিতা সান্যাল,ছায়া দেবী, দেবশ্রী রায়, ছায়া দেবী,সত্য বন্দোপাধ্যায় ইত্যাদি
মুক্তির তারিখ
১৯৭১ সালে
সময়
২ ঘন্টা ৯ মিনিট
মূল ভাষা
বাংলা
কান্ট্রি অফ অরিজিন
ভারত


❂মূল কাহিনী:❂


স্ক্রিনশর্ট: hoichoi

কাহিনীটা সাধারণত শুরু হয় মধ্য রাতে একটি স্টেশন থেকে। সেখানে সেবা নামের একটি মেয়ে কলকাতা থেকে একজন গভর্নর হয়ে আসে রায়কুঠি নামক স্থানে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে ওই রাতে সেখানে বাইরে কোনো ট্যাক্সি বা কোনো গাড়ি তেমন একটা দেখতে পায় না, আর তাকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্যও আসার কথা ছিল, কিন্তু আসেনি। আর কলকাতার থেকে এই ট্রেনটা ওইদিন আসার কোনো সম্ভাবনাও ছিল না যেটা স্টেশন মাস্টারের কাছ থেকে জানতে পারে। যাইহোক, এরপর স্টেশন মাস্টারও রাতের দিকে বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হয়, কিন্তু মেয়েটা সাহায্য চাইলে লোকটা তার বাড়িতে রাতটুকু থাকতে বলে। মেয়েটা তাকে বিশ্বাস করতে পারেনি, তাই সে একা সারা রাত স্টেশন এর বেঞ্চে বসে কাটিয়ে দেওয়ার চিন্তা করে। এর মধ্যে রায়কুঠি থেকে যে রতন নামে ড্রাইভারের আসার কথা ছিল, সে চলে আসে আর তারপর রায়কুঠির সেই স্থানে চলে যায় যেখানে তার থাকার ব্যবস্থা করা ছিল। মূলত শংকর নামের একজনের বাড়িতে পরিবারের সাথেই সে ছিল। তবে ওইদিন সবাই আবার বাড়িতে ছিল না, সে একা একা যাওয়ার পরে তার সাথে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে, যেমন কোথাও থেকে দৃশ্যহীন গানের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে, কেউ ডাকছে এমন একটা অদ্ভুত বিষয়। এরপর সেখানে শংকর এবং তার ছোট মেয়ে সেখানে চলে আসে, কিন্তু তার আগেই সেবা নামের মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।


স্ক্রিনশর্ট: hoichoi

এরপর এই ড্রাইভার রতন এর কথা বলতেই শঙ্করের গলা শুকিয়ে যায়, কারণ অনেক বছর আগে একটা ঘটনা ঘটেছিলো, যেখানে রতনকে গুলি করে মেরে দিয়েছিলো। ফলে এইটা শোনার পরে একটু অবাক হওয়ারই কথা, কারণ মরে গেছে যে সে কিভাবে তাকে গাড়িতে করে নিয়ে আসলো। এরপর ছোট মেয়েটির সাথে সেবার প্রথম থেকে ভাব না থাকলেও একটা ভালো ভাব তৈরি হয়ে যায় এবং তাকে মাসি বলে ডাকতে থাকে। মাঝে মাঝে মেয়েটি মাঝ রাতের দিকে একটা মহিলার গান শুনতে পেয়ে জঙ্গলের ভিতরে দেখা করতে যেত, আর এইটা সে খেয়াল করে কিছুদিন, কিন্তু কার সাথে দেখা করতে যেত সেটা সে জানতো না। সবাই বলাবলি করতো যে জঙ্গলের ওই সাইটটাতে ভূত আছে বা এই মেয়েটির মা মারা যাওয়ার পরে তার আত্মা সেখান-এ ঘোরাঘুরি করে থাকে। এইসব বিস্তারিত অনেক ঘটনা সে বাড়ির কাজের লোকদের কাছ থেকে জেনে নেয়। তবে মেয়েটির মায়ের মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল সেইটা জানার চেষ্টা করতে থাকে, কারণ অনেকে বলাবলি করে যে তার মায়ের মৃত্যু তার বাবার হাতেই হয়েছে। শংকর একদিন এই বিষয়টা সেবা নামের মেয়েটিকে খুলে বলে। আসলে এটা তার বিয়ের সময়ের থেকে সমস্যাটা তৈরি হয় আর তারই জ্যাঠাতো ভাই এই অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। যার সাথে শঙ্করের বিয়ে হয়েছিল, সে আসলে অনাথ ছিল, আর ছোট থেকে একজন ডক্টরের কাছে বড়ো হয় আর তাকেই বাবা বলে জানতো।


স্ক্রিনশর্ট: hoichoi

সে থেকেই তার সাথে বিয়ে দেয়। এখন বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই তার জ্যাঠাতো ভাই এসে বলে এই মেয়ে বাইরে নাচ গান করে বেড়াতো আর তাকেই নিয়ে এসেছে, এই নিয়ে শঙ্করের মাথা খারাপ হয়ে যায়। পরে বিস্তারিত কলকাতায় গিয়ে যখন যাচাই করে তখন সতীভূষণ নামের সেই লোকটি তেমন কিছু প্রমান করতে পারেনি, ফলে শঙ্কর সব বুঝতে পেরে বাড়ি চলে আসে। এরপর মন্দিরে তার সাথে যখন দেখা করতে যায়, তখন পিছন থেকে গুলি করে দেয় আর সাথে বাড়ির ড্রাইভারকেও গুলি করে দেয়। এরপর কোটে এইসব নিয়ে ঝামেলা হয়, কিন্তু খুনটা আসলে কে করেছে কিভাবে হয়েছে তার কোনো প্রমান দুই পক্ষের উকিল ম্যানেজ করতে পারেনি, ফলে তাদের উভয়কেই জামিন দিয়ে দেয়। এরপর সতীভূষণ যে শঙ্করের অনেক বড়ো কিছু ক্ষতি করতে চলেছে সেটা আন্দাজ করতে পারে, আর তার জন্যই সে অনেক চালাকির সাথে তাদের হাতেনাতে ধরার জন্য প্ল্যান কষতে থাকে। সে ছোট মেয়েটির পিছে পিছে একদিন জঙ্গলের দিকে যায় আর তার মায়ের মতো দেখতে একজনের দেখতে পায়।


স্ক্রিনশর্ট: hoichoi

এরপর তার সাথে কথা বলে আর কিছু বিষয় জেনে নেয় আসলে এসবের পিছনে কে কি করছে। সেবা নামক মেয়েটির দাদা আবার কলকাতার পুলিশ অফিসার। তাকে সেখানে পরবর্তীতে নিতে আসলে এইসব বিষয়গুলো আলোচনা করে আর একটা ব্যবস্থা করার কথা বলে, কিন্তু সেটা হাতেনাতে। এরপর একদিন সতীভূষণ বাড়িতে রাতের দিকে তার ছোট মেয়েটিকে নিয়ে পালাতে চাইলে বাড়ির কাজের লোকের সাথে ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে নিজের গায়েই গুলি লেগে যায়। আসলে জমির দলিল, সোনা, গহনা এইসব না নিতে পেরে মেয়েকে নিয়ে পালাতে চেয়েছিলো। এরপর সেবা বুদ্ধি করে আসল খুনিকে হাতেনাতে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়।


❂ব্যক্তিগত মতামত:❂

আসলে এই ঘটনাগুলো কিছুটা হরর টাইপের আছে। এখানে সেবা নামক মেয়েটি আসলে যে বাড়িতে এসেছিলো, এটা রায়কুঠির একটা পাহাড়ি জঙ্গলের মতো জায়গা। আর সে আসলে অরিজিনাল গভর্নর ছিল না, যাকে মেরেছিলো সে তার বন্ধু ছিল। তাই এই খুনের রহস্য বের করার জন্য কলকাতা থেকে গভর্নর হয়ে রায়কুঠিতে আসে। এরপর সে একের পর এক সমস্ত বিষয়ের উপর নজর রাখতে থাকে আর বিষয়গুলো স্ট্যাডি করতে থাকে। কারণ দুটো খুনের রহস্য এখানে লুকিয়ে আছে অনেকদিন ধরে, যেটা কারোরই ধারণা নেই যে খুনটা আসলে কে করেছিল। আর জঙ্গলের ভিতরে ওই ছোট মেয়েটির মায়ের মতো দেখতে যার সাথে দেখা করেছিল সে আসলে তার অরিজিনাল মা না, তার মায়ের যমজ বোন ছিল। আর তাকে এইসমস্ত অভিনয় করতে বলা হয়েছিল টাকার বিনিময়ে। আর এইসব সেবার সামনে বলে দেয় আর কে করেছিল সেটাও জেনে ফেলে। এটা ছিল সাধারণত ওই মেয়ের বাবাই যে তাকে কুড়িয়ে পেয়েছিলো, আর তাকে দিয়ে অনেক সম্পত্তির মালিক হতে চেয়েছিলো। আর এইজন্যই শঙ্করের মতো একজন পয়সাওয়ালা ব্যক্তির সাথে তার বিয়ে দেয়। আর বিয়ের পরের দিন থেকে শঙ্করকে মারার জন্য চাপ দিতে থাকে, কারণ তাকে মারলে তার অবর্তমানে সমস্ত সম্পত্তি সে পাবে আর তার থেকে তার বাবা নিয়ে নেবে। এখন এই সমস্ত বিষয়গুলো আসলে যখন সে শঙ্করকে বলে দিতে চাইছিলো তখন কোনো পথ না দেখে তাকে চিরতরে গুলি করে সরিয়ে দেয়। এইটাই ছিল আসলে কাহিনী।


❂ব্যক্তিগত রেটিং:❂
৯.৭/১০


❂মুভির লিঙ্ক:❂



শুভেচ্ছান্তে, @winkles


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 11 months ago 

দাদা আপনি আজকে অনেক সুন্দর একটা মুভির রিভিউ পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছেন আমাদের সবার মাঝে, যা দেখে আমার তো অনেক বেশি ভালো লেগেছে। আসলে রিভিউ পড়তে আমি অনেক বেশি পছন্দ করি। বিশেষ করে আপনার পোষ্টের মাধ্যমে মুভি অথবা ওয়েব সিরিজের রিভিউ দেখতে আমার অনেক ভালো লাগে। কুহেলি মুভিটার সম্পূর্ণটা পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। এই মুভিটা তো দেখছি অনেক পুরনো একটা মুভি। আর এই মুভিটার কাহিনী একেবারে ভিন্ন রকমের। এখানে তো দেখছি তার মায়ের জমজ বোন ছিল ওই মহিলাটি। ঘটনাগুলো হরর টাইপের হওয়ার কারণে আমার কাছে একটু বেশি ভালো লেগেছে। বিষয়গুলো সম্পর্কে বলে দিতে চেয়েছিল তার জন্যই তো গুলি করে তাকে সরিয়ে দিয়েছে। এই মুভিটার কাহিনী এত সুন্দর করে রিভিউর মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই দাদা। আপনার পরবর্তী মুভির রিভিউ দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

 11 months ago 

বাহ আপনি তো দেখছি খুব সুন্দর একটি মুভি রিভিউ করেছেন। মুভিটি আমি কখনো দেখিনি তবে আপনার রিভিউ পড়ে বুঝতে পারলাম মুভিটি খুব সুন্দর। আর আপনিও খুব সুন্দর ভাবে মুভিটি আমাদের মাঝে রিভিউ করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে

Posted using SteemPro Mobile

 11 months ago 

দাদা মুভির রিভিউ পোস্ট সুন্দর হয়েছে অনেক বেশি আগে এরকম মুভি গুলো দেখা হতো মাঝেমধ্যে। তবে এখন এই ধরনের মুভি গুলো দেখা হয় না একেবারে। কুহেলি মুভিটার কাহিনী দেখছি ভিন্ন রকমের ছিল। ভিন্ন রকমের কাহিনী হলে রিভিউ গুলো পড়তে অনেক বেশি ভালো লাগে আমার কাছে। আসলে হরর টাইপের যেকোনো কিছু আমার খুবই কম দেখা হয় কারণ আমার অনেক বেশি ভয় লাগে। কিন্তু আবার কাহিনী গুলো ভালো ও লাগে মাঝে মাঝে। এখানে তো দেখছি কিছুটা হওয়ার টাইপের এই মুভিটা। মেয়েটা খুনের রহস্য বের করার জন্য অন্য একটা রূপ নিয়েছিল। আর একে একে স্ট্যাডি করতে থেকেছিল। আর ওই মহিলাটি দেখছি মেয়েটির মা ছিল না, তার মায়ের জমজ বোন ছিল। শঙ্করকে যদিও বলে দিতে চেয়েছিল কিন্তু তাকেই মেরে ফেলেছিল। দারুন লেগেছে দাদা আমার কাছে পুরো মুভিটার রিভিউ। আশা করছি আপনি আপনার পরবর্তী মুভিটার রিভিউ আমাদের মাঝে খুব তাড়াতাড়ি শেয়ার করবেন। সেই পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকলাম তাহলে।

 11 months ago (edited)

দাদা প্রথমেই আপনার ধৈর্যের প্রশংসা করছি এইজন্য, যে মুভি ১৯৭১ সালে মুক্তি পেয়েছে,আজকে সেই মুভির রিভিউ শেয়ার করলেন। আবার সেটা হলো সাদাকালো। তখন অবশ্য রঙিন মুভি তেমন ছিলো না। আর আগের দিনের মুভি গুলো এমনই ছিলো যে সম্পত্তির লোভে ছোট কম বয়সের মেয়েদের ধনী বৃদ্ধ লোকের সাথে বিয়ে দেওয়া হতো। বিয়ের আগেই চক্রান্ত করতো তাকে মেরে তার সব সম্পতি তার বাবা মালিক হয়ে যেত। অনেক সময় দেখা গেছে কিছু লোভী স্বামীও এমন ভূমিকা পালন করতো। আজকের মুভির কাহিনীটাও ঠিক তেমনই। আবার অন্য দিক দিয়ে বিচার করলে মুভিটা কিছুটা ভুতের মুভির মত লাগে। ধন্যবাদ দাদা।

 11 months ago 

দাদা আপনি দারুন একটি মুভি রিভিউ শেয়ার করেছেন। সাদা কালো মুভি গুলো ছোটবেলায় অনেক দেখেছি। আর আজকে যখন এই মুভি রিভিউ পড়ছিলাম তখন ছোটবেলার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছিল। "কুহেলি" মুভিটি যদিও দেখা হয়নি। তবে আজকের রিভিউ পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। এই মুভিটি অনেকটা হরর টাইপের ছিল। আর খুনের রহস্য উদঘাটন করার জন্যই সেবা গভর্নর হয়ে রায়কুঠিতে আসে। আসলে সে মূলত গভর্নর ছিল না। সে সবকিছুর রহস্য সামনে আনতে চেয়েছিল। খুনের রহস্য যখন প্রায় ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল তখন সেবা রহস্য উন্মোচনের সেই দায়িত্ব নিয়েছিল। অন্যদিকে শঙ্করের সম্পত্তি আদায়ের জন্য শঙ্করের সাথে সেই মেয়েটির বিয়ে দেয়া হয়েছিল। এরপর মেরে ফেলা হয়। আসলে সম্পত্তির লোভে মানুষ যে এতটা খারাপ হতে পারে সেটা ভাবতেই অবাক লাগছে। দাদা আপনি অনেক পুরাতন একটি মুভি রিভিউ আমাদের সবার মাঝে তুলে ধরেছেন এবং আমাদেরকে এই মুভি সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিয়েছেন এজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59493.68
ETH 2649.33
USDT 1.00
SBD 2.45