রিভিউ: ১৯৬২ ( দ্যা ওয়ার ইন দ্যা হিলস )
হ্যালো বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি। |
---|
আজকে আপনাদের সাথে একটি রিভিউ পোস্ট শেয়ার করে নেবো। এটি যদিও একটি সিরিজ রিভিউ। এই সিরিজটির নাম হলো "১৯৬২: দ্যা ওয়ার ইন দ্যা হিলস"। এটি একটি হিস্টোরিক্যাল সিরিজ, তাহলে কাহিনীটা দেখা যাক কিভাবে কি হয়।
✠কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:✠
কাহিনীটা সাধারণত শুরু হয় পাহাড়ি যুদ্ধের মাধ্যমে। সাধরণত লাদাখ এর গালওয়ান উপত্যকা আর চিনার রেজাঙ লা এর ওখানে। এখানে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিষান, করণ, গোপাল সহ আরো অনেকে এই যুদ্ধের জন্য তৈরি হয় এবং তাদের এই যুদ্ধে মোতায়েন করা হয়। তবে এর আগে চীনা সেনাবাহিনীরা বিভিন্ন কৌশলে ভারতীয় সেনাদের ক্যাম্প বা লাদাখের বিভিন্ন জায়গা দখল করার প্রচেষ্টা করে আর তাতে বেশ কিছুতে সফলতাও পায়। চায়না এর মেজর লিন ঠান্ডা মাথার হলেও তার টিমের একজন সেনাবাহিনী কোনো অর্ডার ছাড়াই যাকে তাকে গুলি করে দিতো, আর এটা তাকে অনেকবার মানাও করে। তবে তাকে যেখানে দখল করার জন্য পাঠিয়েছিল সেই জায়গায় তাকে আত্মসমর্পণ করতে বললেও সেটা করে না। কারণ শত্রুর হাতে আত্মসমর্পণ করার চেয়ে লড়াই করে মৃত্যু বরণ করা অনেক সম্মানের বিষয়। যে সৈনিক ছিল তাকে সে মেরেও দেয় আর সেই জায়গাটাও দখল করে নেয়। এইভাবে বছরের পর বছর বিভিন্ন ভাবে দখল করতে থাকে। যাইহোক এরপর ছুটিতে অনেক সেনাবাহিনী অর্থাৎ কিষান, করণ সহ অনেকে রেওয়ারি গ্রামে আসে।
কারণ তাদের প্রত্যেকের বাড়ি একই গ্রামে আর তাদের পরিবার সহ প্রায় সবাই সৈনিক আর এই মিশনের অংশীদার। গ্রামে আসার পরে এখানে সবাই অনেকদিন ছুটি কাটায় এবং এরই মধ্যে গ্রামেরই একটি মেয়ে রাধার সাথে কিষানের ভালোবাসা হয়ে যায়। তবে এখানে আরেকজন করণও রাধাকে ভালোবাসতো, কিন্তু রাধা কিষানকেই তার জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় আর এতেই কিষান আর করণের বন্ধুত্বের মধ্যে একটু ফাটল ধরে, তবে ধীরে ধীরে আবার এটি ঠিক হয়ে যায়। এখন এর মধ্যে চায়না যুদ্ধ জারি করে দেয় আর লাদাখ দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতে গোপাল নামের এক সৈনিকের বিয়েও ঠিক হয় আর তাদের মেজর নিজে থেকে তাদের বিয়ে দেয় আর ওই মুহূর্তেই তাদের ডাক পড়ে যে যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে হবে এবং আজই রওনা দিতে হবে। গোপালকে মানা করলেও সে দেশের জন্য যুদ্ধ করতে যেতে চায়, ফলে আর মানা করেনি আর তার দাদাও তার সাথে যাচ্ছে, ফলে সেই সাহসটা সেই জুগিয়েছে। যাইহোক, এরপর তারা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেয় এবং সেখানে সবাই পৌঁছিয়েও যায়।
তারা মেজরের নির্দেশে যে স্থানটি চীনা সৈনিকরা দখল করেছিল, তারা সেইটা পুনরায় ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য প্ল্যান তৈরি করে রাতের বেলা। আর তাদের প্ল্যান মাফিক সেখানে মোতায়েন চীন সৈনিকদের সবাইকে মেরে ফেলে আর পুনরায় দখল করে নেয়, তবে পতাকা আর নামায়নি, কারণ জেনে যাবে না হলে। আসলে তারা গোপন রেখে সবগুলো দখল করার চিন্তা করেছিল, কিন্তু একটা চীন সৈনিক ওখানে ভুল বসত জীবিত ছিল আর সেই আবার ফোন করে লিন্কে জানিয়ে দেয় আর এই নিয়ে আবার গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। আর এখানে চীন সৈনিক অনেক, ফলে তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলে, মেজর বুদ্ধি করে আত্মসমর্পণ করে ঠিকই, কিন্তু রাম নামের এক সৈনিক যায় ক্ষেপে আর গুলি করতে চলে যায়, আর তারই এই রাগের কারণে গোপালকে মরতে হয় ওখানে, কারণ গোপাল তাকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিটা নিজের বুকে পেতে নেয়। সদ্য বিয়ে করে এসে তার আর বাড়ি ফেরা হলো না। আর এতে মেজরকেও গুলি মারে পায়ে, ফলে দীর্ঘদিন ইনজুরিতে থাকে।
তবে লিন তাদের গ্রেফতার না করে সবাইকে ছেড়ে দেয়। যাইহোক, এরপর তারা গোপালের মৃত দেহটা নিয়ে গ্রামে ফিরে আসে আর তার এই শহীদের জন্য যথার্থ সম্মান দেওয়া হয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে। এরপর অনেকদিন পরে চিনার সাথে শেষ যুদ্ধের জন্য সবাই তৈরি হয় অর্থাৎ তাদের একটাই দাবি ছিল যে, হয় এইবার মরবে নাহয় তাদের মারবে, একটা ভীষণ প্রতিজ্ঞা নেয় সবাই। মেজর দেরিতে যায়, কারণ সে ফিটনেস পরীক্ষায় পাস্ করতে পারেনি, কিন্তু অন্তিম পর্যায়ে সে দেখলো তাদের লিড ঠিকমতো না করতে পারলে হবে না, তাই সে নিজে আবার আবেদন করে তার ফিটনেস টেস্ট নেওয়ার জন্য। ফিটনেস টেস্ট পাস্ করে গেলে সে আবার চলে যায় তাদের লিডার হিসেবে। আর এখানেই সব থেকে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয় সবাইকে, কারণ এক তো ২ দিনের মধ্যে তাদের হেঁটে জায়গায় পৌঁছাতে হবে এবং আবার যুদ্ধের জন্য সবকিছু রেডিও করতে হবে।
যাইহোক, এরপর তাদের মেজরও তাদের কাছে পৌঁছিয়ে যায় সময়মতো। এরপর সেখানে যুদ্ধের জন্য মাটি কেটে পজিশন তৈরি করে। কিন্তু তাদের এই গোপন বিষয়গুলো একজন গোয়েন্দা হিসেবে চীনকে জানিয়ে দেয় আর তারা ওই রাতেই জল পথে চলে আসে আক্রমণ করার জন্য। তবে ভারতীয় সেনারাও তৈরি ছিল,কিন্তু তাদের এতো দ্রুত আসার কথা ছিল না। যাইহোক, মেজরের লিড হিসেবে তারা সেই ভাবে যুদ্ধ করে আর সবাইকেই মেরে ফেলতে সক্ষম হয়। আর এর পরেই শুরু হয় সব থেকে বড়ো যুদ্ধ। চীনের ৩০০০ জনের বিশাল সেনার সামনে ভারতীয় মাত্র ১২৫ জন সেনা। তবে তারা পিছুপা হয়নি, বরং এই ৩০০০ জনের সাথে জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত যুদ্ধ করে। তবে তারা ভীষণ যুদ্ধ করে গলা বারুদ, রাইফেল দিয়ে। তবে তাদের কাছেও অনেক কম ছিল এইসব অস্ত্র, বারুদ। ভয়ঙ্কর যুদ্ধে সবাই মারা যায় যদিও, তবে তারা একজন মরলেও সাথে অনেকজনকে নিয়েই মরেছে। শেষ পর্যন্ত মেজর, কিষান, করণ, রাম বেঁচে যায়, কিন্তু তারা মেজরকে মেরে ফেলে পরে গুলি করে। আর ওদের তিনজকে চায়না ক্যাম্পে গ্রেফতার করে রাখে।
এই সিরিজটা পুরোটাই একটা ইতিহাস ভিত্তিক এবং যুদ্ধের সমন্বয়ে প্রকাশিত করা। তবে এটি বাস্তব কাহিনীর উপর ভিত্তি করেই কিন্তু তৈরি করেছে। আসলে ১৯৬২ সালে ভারত আর চায়নার মধ্যে যে যুদ্ধটা হয়েছিল লাদাখে সেটা নিয়েই এই কাহিনীটা তুলে ধরেছে। তারা আসলে কিভাবে ১২৫ জন সেনা নিয়ে ৩০০০ জন চীন সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছিল রক্ষা করার দাবিতে। তবে যেমন পাকিস্তান কাশ্মীর নেওয়ার জন্য একভাবে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে, এখনো কিন্তু সেইরকমই এই চায়না লাদাখ দখল করার জন্য নানারকম কৌশল অবলম্বন করেই যাচ্ছে। কোথায় আছে, সোনার চিড়িয়া যতই দখল করতে চাক না কেনো, কোনোদিনই তা পারবে না। যাইহোক, এখানে যে তিনজন অবশেষে বেঁচে ছিল সেটা কেউ জানতো না দেশের। সবাই জানতো তারাও মারা গিয়েছে, কিন্তু সবার বডি পাওয়া গেলেও তাদের পাওয়া যায়নি। গ্রামেও তাদের মৃত বলে ধরে নেয় সবাই। তবে রিম্পা নামের এক পাহাড়ি মেয়ের সহযোগিতায় তারা তিনজন সেখান থেকে পালানোর প্ল্যান করে। সেনাগুলোকে মেরে যাওয়ার চিন্তা করলেও পরে টের পেয়ে যায় আর গোলাগুলিতে কিষানের বন্ধু মারা যায়। আর তারা দুইজনেই মাত্র গ্রামে ফিরতে পারে।
✠ব্যক্তিগত রেটিং:✠
৯/১০
✠ট্রেইলার লিংক:✠
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এই ধরনের যুদ্ধের মুভি বা সিরিজ দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। দেখার সময় মনের মধ্যে আলাদা এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করে। তাছাড়া হিস্টোরিক্যাল সিরিজ দেখলে ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা যায়। যাইহোক জায়গা দখল করা নিয়ে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এই ধরনের যুদ্ধ মনে হয় সবসময়ই ছিলো এবং এখনও আছে। যেমনটা আমরা দেখে থাকি ভারত পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধ করে, দক্ষিণ কোরিয়া এবং উত্তর কোরিয়া বর্ডার এরিয়া দখল করা নিয়ে যুদ্ধ করে থাকে। কিন্তু আমরা যুদ্ধ পছন্দ করি না,বরং সারা বিশ্বে শান্তি বিরাজ করুক সেটাই কামনা করি। যাইহোক চীন যতই চেষ্টা করুক না কেনো, কখনোই লাদাখ দখল করতে পারবে না। কারণ ভারত এটা কখনোই হতে দিবে না। ১২৫ জন ভারতীয় সেনা ৩০০০ জন চীন সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছিল তখন, এটা নিঃসন্দেহে অনেক বড় একটি ব্যাপার।
সেই চীন সেনা যদি জীবিত না থাকতো, তাহলে তো পরবর্তীতে আর গোলাগুলি শুরু হতো না। তবে সদ্য বিয়ে করা গোপালের মৃত্যুর খবরটা জেনে খুব খারাপ লাগলো। যাইহোক এতো চমৎকার একটি সিরিজ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
দাদা আপনি আজ যুদ্ধের সিরিজের রিভিউ শেয়ার করেছেন। এ ধরনের ইতিহাস ভিত্তিক সিরিজ গুলো দেখলে ভীষণ ভালো লাগে। নিজেও যেনো যুদ্ধের মধ্যে আছি এমন ফিল চলে আসে।আপনি চমৎকার ভাবে রিভিউটি করলেন।আপনি রেটিং দিলেন ১০ এর মধ্যে ৯.তবে তো বলতেই হয় সিরিজটি অনেক সুন্দর। সিরিজটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ দাদা।ভালো থাকবেন সব সময়।
যুদ্ধের মুভিগুলো আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে সাহায্য করে এবং বাস্তবের কাহিনী থেকে তুলে ধরা হয়।দাদা,আপনার রিভিউ করা এই মুভিটি দেখা হয় নি তবে সময় পেলে অবশ্যই দেখে নেব।সেনাবাহিনীর জীবন সবসময় ঝুঁকির তার দেশের জন্য কত লড়াই করে থাকেন।আর দেশের মানুষ কত সহজেই তাদের মৃত বলে ধরে নেয়।তবে আমি এটা বুঝতে পারলাম না দাদা---যেহেতু তিনজনকে চায়না ক্যাম্পে গ্রেফতার করে রাখা হয় তাহলে পাহাড়ি মেয়েটি ওখানে কিভাবে সহযোগিতা করলো?
তবুও শেষমেষ দুজন বেঁচে ফিরেছে এটাই ভালো লাগার বিষয় ছিল, দারুণ রিভিউ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দাদা।