স্মার্ট কৃষক | তারিক রিফাত
হে যুবসমাজ তোমরা যদি মস্তিষ্কের পুষ্টির স্বল্পতায় ভুগে থাকো কিংবা গতানুগতিক সমাজব্যবস্থার ব্যাধি যদি তোমাদের মস্তিষ্ককে জরাজীর্ণ করে ফেলে, তাহলে বলবো এখনই সময় তোমাদের মস্তিষ্কের কারফিউ ভাঙার। আমার এই লেখা শুধু মাত্র পরিবর্তনশীল যুব সমাজের জন্য, যারা নিজের অবস্থাকে ভবিষ্যতে আরো শক্ত করতে চায়, তাদের সামনে হয়তো ছোট্ট একটা উদাহরণ আজ তুলে ধরব।
কর্মই যেখানে মুখ্য বিষয়, সেখানে আসলে কারো ব্যক্তি জীবন নিয়ে খুব একটা আমি টানাহেঁচড়া করতে পছন্দ করি না। কর্ম নিয়ে যুক্তিযুক্ত মতামত ও সমালোচনা কে সাধুবাদ জানাই । আশা রাখছি পাঠক কর্ম নিয়েই মতামত-সমালোচনা করবে, কারো ব্যক্তি জীবন নিয়ে নয়।
১৯৮৮ সাল সবেমাত্র মফস্বলের ডিগ্রি কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বেশ ভালো ফলাফলের মাধ্যমেই উত্তীর্ণ হয়েছে রিফাত তারিক। বিয়েটাও করেছিল ছাত্র জীবনেই। তারপরে একপ্রকার পরিবারের কর্তার সঙ্গে শলাপরামর্শ করেছিল সে। এক্ষেত্রে অবশ্য তার পিতা, আবু তাহের বিএসসি তৎকালীন চেয়ারম্যান রাজাহার ইউনিয়ন, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা বেশ ভালোই দিকনির্দেশনা দিয়েছিল তাকে। বলেছিল তারিক, তোমার যদি সম্ভব হয় তুমি যুব উন্নয়নের উপর প্রশিক্ষণ নিতে পারো।
পিতার এমন পরামর্শ বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছিল ভদ্রলোক। অতঃপর ছুটে যাওয়া সেই রংপুর শহরে মূলত যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য। যেহেতু মেধাবী তরুণ, তাছাড়া বেশ আগ্রহ ছিল কৃষির দিকে, তাই প্রশিক্ষণ পর্বটা বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন করেছিল সে। একসময় তো প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে, সেখানকার কর্মকর্তারা তাকে ব্যবহারিক শিক্ষা আরো ভালোভাবে রপ্ত করার জন্য উৎসাহিত করেছিল। সে ক্ষেত্রেও ভদ্রলোক বেশ ভালই সুনাম কুড়িয়ে ছিল।
প্রথম ধাক্কাতেই ব্র্যাকে চাকরি হয়ে গিয়েছিল। কর্তৃপক্ষ সুযোগ-সুবিধাও দিয়েছিল বেশ, তবে তার চাকরির প্রতি ভীষণ অনীহা কাজ করতো। কোনরকম এক মাস চাকরি করে, সে যখন ভেবেছে এই একই কাজ যদি সে তার নিজের এলাকায় বা জমিতে করতে পারে, তাহলে হয়তো আরো বেশি ফলাফল পাওয়াটা তার পক্ষে সম্ভব হবে।
অবশেষে ব্র্যাকের চাকরি সেখানেই ইতি, ছুটে আসে নিজের এলাকায়। যদিও পরবর্তীতে কর্মস্থল থেকে বহুবার চিঠি দিয়েছিল, তবে ভদ্রলোক সেদিকে আর কর্ণপাত করেনি। গ্রামে এসে রীতিমতো সে নিজেদের চাষাবাদের জমিতে নিজের থেকেই বেশ ভালোভাবে ঝুঁকে পড়ে। মৎস্য প্রশিক্ষণটা যেহেতু তার বেশ ভালোভাবে আয়ত্তে ছিল, তাই পিতার কাছ থেকে নামে মাত্র কিছু পয়সা নিয়ে নিজেদের পুকুরেই শুরু করে দিয়েছিল মৎস্য চাষ।
২২ হাজার টাকার পুঁজিতে প্রথমবারেই দেখা মিলে বিরাট সাফল্য। নব্বই দশকের পরবর্তী সময়ে, সেই সময় ৮৮ হাজার টাকা হঠাৎই দেখে চোখ মুখ গুলো যেন বেশ ছানাবড়া হয়ে গিয়েছিল এলাকার সকলের। গ্রামের যে লোকগুলো প্রতিনিয়তই সমালোচনায় ব্যস্ত ছিল, তাদের চেহারায় হঠাৎই বিষাদের ছাপ। ছেলেটাকে যে শুরুতেই নিরুৎসাহিত করা তাদের ঠিক হয়নি, তারা যেন তা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছিলো।
তারপরে রীতিমতো ভদ্রলোক কে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, ক্রমাগত তার সফলতার জয়গান চতুর্দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছিল। ২০০০ সালের পরে তো সে, জেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে প্রথমবার মনোনীত হয়েছিল। একদিকে যেমন মৎস্য চাষে সে বিরাট সফলতা পেয়েছিল, তেমনটা নিজেদের ফসলের জমিতেও ক্রমাগত ধান ও আলুর চাষ করে যাচ্ছিল। সেদিক থেকেও ফলাফল পাচ্ছিল বেশ ভালই।
যদিও যত সহজে কথাগুলো লিখে ফেললাম, ততোটা সহজ ছিল না তার চলার পথ, কেননা পারিপার্শ্বিক জটিলতা-সামাজিক প্রতিকূলতা তো তার নিত্য সঙ্গী ছিলই। যে মানুষগুলো তাকে নিয়ে ক্রমাগত তিক্ত সমালোচনায় মেতে থাকতো, হঠাৎই তারা তার পরামর্শের শরণার্থী হয়ে গিয়েছিল। যদিও সেই যাত্রায়, কাউকেই সে নিরাশ করেনি বরং যুব সমাজকে প্রতিনিয়ত কৃষির দিকে ধাবিত করতে তার প্রচেষ্টা ছিল চলমান।
যার কারণেই হয়তো, ক্রমাগত বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রাপ্ত সম্মানী স্মারক গুলো তার কাছে অনেকটাই দুধ ভাতের মত হয়ে গিয়েছিল।
ভদ্রলোক কে দীর্ঘ চার মাস ধরে আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখে আসছিলাম, তার কৃষি কাজের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং ক্রমাগত তা সকলের সামনে উপস্থাপন করার ব্যাপারটা, আমাকে বেশ ছুঁয়ে গিয়েছিল। তাই আজ এই পড়ন্ত বেলায়, নিজের গিন্নিকে নিয়ে ছুটে গিয়েছিলাম তার এলাকায় । স্বচক্ষে দেখে আসলাম তার কার্যক্রম। বলা যায়, আমি অনেকটাই কৃতজ্ঞ ভদ্রলোকের কাছে। তার আতিথেয়তায় আমি মুগ্ধ।
এখন আর সেই আগের মত টগবগে তরুণ সে নেই, তারপরেও সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এলাকার যুব সমাজকে নিয়ে, সামাজিক কার্যক্রম ক্রমাগত চালিয়ে যাওয়ার জন্য। নিজের এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে, বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই সে গ্রহণ করেছে। আশা করছি, তার সেই সকল পদক্ষেপ খুবই ফলপ্রসূ হবে।
ভালো থাকুন, তারিক রিফাত। আপনি যে বর্তমান সময়ের স্মার্ট কৃষক, তার প্রমাণ আপনি নিজেই। চোখের মণি হয়ে থাকুন যুব সমাজের। এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
শুভেচ্ছা রইল
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
পোস্টটি আমি সম্ভবত ফেসবুকে দেখেছিলাম। কিছুটা ধারণা পেয়েছিলাম। আমি দেখামাত্রই পোস্টটি পড়তে চলে আসলাম ভাইয়া। আপনি যুবসমাজকে নিয়ে অনেক সুন্দর কিছু কথা আমাদের সামনে এর আগেও তুলে ধরেছেন। বাস্তবমুখী কথা। আপনার কথাগুলি আমি মন দিয়ে পড়ি। আমার ভীষণ ভালো লাগে।ঠিক কথা বলেছেন ভাইয়া পাঠক কর্ম নিয়ে মতামত সমালোচনা করবে। কারো ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নয়। দারুন লাগলো কথাটা শুনে । দ্বিতীয় পিকচারটি কি চমৎকার ছিল। যাইহোক পিতার সুন্দর পরামর্শ সে ভদ্রলোক গ্রহন করেছে এটা খুব ভালো একটি দিক।প্রতিটা সন্তানের উচিত বাবা-মার কথাগুলোকে মর্যাদা দেওয়া। চাকরি ভাইয়া অন্যের অধীনে কাজ করতে হয়। অনেক কথা শুনতে হয় কিন্তু আমরা যদি নিজের ছোট্ট একটা কিছু প্রতিষ্ঠান খুলতে পারি তাহলে কিন্তু সেটা নিজ স্বাধীন।নিজের মতো করে সবকিছু করা যায়।ভদ্রলোক খুব সুন্দর একটা উদ্বেগ নিয়েছেন।।দেখে ভীষণ ভালো লাগলো। সেই সময়ের ২২ হাজার টাকায় পুঁজিতে ৮৮ হাজার টাকা।সত্যি আসলে এটা অবাক করার মত।তিনি কারো কথা না শুনে নিজের ইচ্ছামত নিজের উদ্যোগ নিয়ে তিনি সামনে এগোতে চলেছেন তাই আর তিনি পিছন ফিরে তাকানো লাগেনি। আমরা উপর থেকে যতটা মনে করছি সফলতা কিন্তু এর পিছনে অনেক কষ্ট পরিশ্রম রয়েছে খুব ভালো লাগছে যে আপনি দীর্ঘ চার মাস সোশ্যাল মিডিয়াতে তার কাজ গুলি দেখছিলেন। দোয়া করি সে যেন নিজের এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থান পরিবর্তনের লক্ষ্যে ভালো ভালো কাজ করেন। সেজন্য যুব সমাজকে পাল্টে দিতে পারে এই কামনাই করি । অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া পোস্টটি পড়ে।
জনসচেতনতামূলক পোস্ট আমি কমবেশি ফেসবুকেও এখান থেকে শেয়ার করে থাকি, ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য।
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1727553485984698530?t=3tqGSoObXYvf9VPYokUacg&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আমাদের দেশের প্রতিটি কৃষক যদি এরকম স্মার্ট হতো তাহলে তো বেশ হতো ভাই। আমিও মাঝে মাঝে এরকম চিন্তা করি বিশেষ করে বিদেশি কৃষকরা স্মার্ট কতো সুন্দর করে চাষাবাদ করে দেখলেই বেশ ভালো লাগে। তবে আমাদের দেশেও আস্তে আস্তে এরকম স্মার্ট কৃষকের দ্বারা কৃষি কাজ শুরু হয়ে যাবে। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই বেশ সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
এমন স্মার্ট কৃষক প্রতিনিয়তই দরকার, আমাদের দেশের প্রতিটা ক্ষেত্রে।
হুম ভাই।❤️❤️❤️
এমন সাহসী উদ্যোগ গুলো নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। একজন থেকে তিনি সাবলম্বী করেছেন অনেককেই। তার পুকুরও তো বিশাল! সেই পুকুরের মাছেদের খাবার দেয়ার জন্য যে ভাসমান নৌকার ব্যবস্থা করেছেন, ছবি দেখে সেটিও ইউনিক লাগলো আমার কাছে। উনি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক এখনকার যুব সমাজের কাছে।
একদম ঠিক বলেছেন আপু, এমন সাহসী উদ্যোগ সর্বক্ষেত্রে সর্ব জায়গায় নেওয়া খুবই জরুরী।
আসলে কেউ যখন ভালো কোনো কাজ করা শুরু করে, তখন নিরুৎসাহিত করার মানুষের অভাব হয় না। আবার সফল হলে সেই সকল মানুষেরা উপকার পাওয়ার আশায়, সবার আগে সফল ব্যক্তির দ্বারস্থ হয়। যাইহোক উনার মতো সাহসী উদ্যোক্তা খুবই প্রয়োজন সব জায়গায়। যে শুধু নিজে লাভবান হয়নি, বরং এলাকার প্রায় সবাইকে পরামর্শ এবং সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। দোয়া করি উনি দীর্ঘজীবী হোক। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
সত্যিই আপনার কথার যুক্তি আছে, ওনার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আমিও কামনা করছি।