মধ্যরাতের আকুতি
তখন রাত্রি সম্ভবত আড়াইটা থেকে তিনটার মত বাজে, মুহূর্তেই মেসেঞ্জার একটা খুদেবার্তা আসলো, তাতে স্পষ্ট করে লেখা বন্ধু আমি বড্ড বিপদে পড়েছি, তোমার যদি সম্ভব হয় আমার নাম্বারে নগদে তিনশো টাকা পাঠিয়ে দাও, আমি বড্ড কৃতজ্ঞ থাকবো।
যদিও এমন আকুতি কখনোই আমার কাছে তেমন একটা আসে না, কেননা আমি বন্ধু-বান্ধব থেকে কিছুটা দূরে থাকি। তারপরেও যখন হুটহাট এরকম পরিস্থিতির শিকার হতে হয়, তখন আর কি একটু হলেও বিচলিত হয়ে পড়ি।
সমসাময়িক সময়ে কিছু বিষয় নিয়ে বাল্যবন্ধুদের সঙ্গে আমার মতের মিল খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না, বলতে গেলে এখনো সেই বিষয়গুলো আগের মতই আছে। তবে কেউ যখন বিপদে পড়েই যায়, তখন মানবিক দিকটা একটু গভীরভাবে পর্যালোচনা করার চেষ্টা করি।
রাত তিনটার দিকে তো আর এমনিতেই বার্তা পাঠায়নি হয়তো নিশ্চয়ই সে বিপদে পড়েছিল বিধায় বাধ্য হয়ে এমনটা করেছে। ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহণ করার চেষ্টা করলাম। যদিও আমি মোবাইল ব্যাংক গুলো তো খুব একটা তেমন টাকা পয়সা রাখি না বললেই চলে, তারপরেও দিনশেষে কিছু টাকা-পয়সা থেকেই যায় তা হয়তো নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটানোর জন্য।
যেহেতু সামান্য টাকা চেয়েছিল, তাই দেখলাম সেটা আমি সহজেই দিতে পারব। তারপরেও একটু ভাবার সময় নিচ্ছিলাম, আসলে তার টাকাটা কেন দরকার। অতঃপর তাকে ফিরতি বার্তা পাঠালাম, কেন তোমার এই টাকাটা প্রয়োজন। সে এবার সাবলীল ভাবে বলেই ফেলল, মূলত সে তার শালীর বিয়ে খেতে গিয়েছিল, ফিরতি পথে তার মানিব্যাগ হারিয়ে যায়।
তাছাড়াও এত রাত্রে কাউকেই সে মুঠো ফোনে পাচ্ছিল না, তাই আমাকে ফেসবুকে লাইনে দেখে সে নিরুপায় হয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। বিষয়টা সত্য কিনা মিথ্যা তা আর যাচাই-বাছাই করার চেষ্টা করলাম না।
অবশেষে তার নাম্বারে পাঠিয়ে দিলাম টাকাটা, মজার ব্যাপার হচ্ছে টাকা পাওয়া মাত্রই, সে যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, সেটাতে কিছুটা কমতি ছিল। মানে তার অনুরোধটা যত দৃঢ়ভাবে ছিল, সেই তুলনায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ছিল বড্ড হালকা।
যদিও আমাকে বলেছিল আগামীকাল টাকাটা পাঠিয়ে দেবে, তবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাবভঙ্গি দেখে, যা বোঝার আমি বুঝে নিয়েছিলাম। তাকে আমিও স্পষ্ট করে লিখে দিলাম, দেখো তোমার টাকাটা প্রয়োজন ছিল বিধায় আমি তোমাকে দিয়েছি, বলতে পারো তুমি যেহেতু তোমার শালীর বিয়েতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলে, তাই ভেবে নাও এটা আমার পক্ষ থেকে তোমার শালীর বিয়ের জন্য ছোট্ট উপহার। টাকাটা ফেরত দিতে হবে না , ভালো থেকো তুমি।
একটা কথা বলি, আমরা যখন বিপদগ্রস্ত হয়ে যাই তখন যেভাবে মানুষের কাছে আকুতি-মিনতি জানাই, তবে বিপদ উদ্ধার হলেই, আমাদের কিছু স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য ভিতরে লুকায়িত থাকে, যেটা প্রকাশ করতে আমরা বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করি না।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনি বড় মন-মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা সকলেই জানি। আপনি অনেক সুন্দর মন মানসিকতার একজন মানুষ। বন্ধু-বান্ধব থেকে দূরে থাকেন এজন্যই কারণ আপনি মুখের উপর কথা বলতে ভালোবাসেন। বন্ধুবান্ধব আপনাকে এক সময় অনেক ছোট করে কথা বলেছে ও আপনাকে নিয়ে সমালোচনা করেছে। আজকে সৃষ্টিকর্তা আপনাকে বেশ ভালো একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আসলে আমরা নেয়ার সময় কিন্তু অনেক আকুতি মিনত করে নিয়ে ফেলি কিন্তু নেয়ার পর যে কৃতজ্ঞতা এটা আমরা আদায় করতে পারি না, এটাই খারাপ লাগে দিনশেষে।প্রতিটা মানুষ নিজ নিজ স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। নিজের স্বার্থ হাসিল হয়ে গেলে তারপর আর কিছুই দেখে না।ভালো থাকুক সবাই। আপনি যেন সবসময় এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। বন্ধুর উচিত ছিল আরো সহানুভূতিশীলতার দেখানো কারণ বিপদের সময় কেউ পাশে ছিল না। বিপদের সময় ৩০০ টাকায় প্রায় তিন হাজার টাকার মত। যাইহোক শুভেচ্ছা রইল ভাইয়া আপনার জন্য।
আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল ভাই, ধন্যবাদ আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
হা হা আপনার লেখার শেষে ম্যাসেজ টা দারুণ ছিল ভাই। আমরা যতই বিপদে পড়ে অন্যের কাছে সাহায্য চাই না কেন। বিপদ কেটে গেলে আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সাথেই আমাদের সহজাত প্রবৃওি আমাদের মানসিকতা টা প্রকাশ পেয়ে যায়। দারুণ ছিল ম্যাসেজ টা ভাই।
যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন অভিজ্ঞতার পাল্লা ভারী হয়ে যাচ্ছে ভাই।
একদম বাস্তব সত্য ভাইয়া এই কথাটা। মানুষ বিপদে পরলে যতটা বিনয়ী হয় বিপদ থেকে উদ্ধার হলে সেই বিনয়ীভাব কোথায় হারিয়ে যায় বোঝা যায় না। এটাই হয়তো প্রতিটি মানুষেরই স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। এত রাতে যেহেতু টাকা চেয়েছেন তাও আবার অল্প পরিমাণে নিশ্চয়ই প্রয়োজনেই চেয়েছিল। কিন্তু সামান্য ধন্যবাদ তো দিতেই পারতো।
ব্যতিক্রম আছে সেটা আমিও মানি, তবে সেটা সংখ্যায় খুব নগণ্য।
আসলে বন্ধুদের বিপদে এগিয়ে আসতে না পারলেও ভালো লাগে না। অনেকেই আছে আবার বিপদে পরলে কাউকে সাহায্য করতে চাই না। যেহেতু রাত তিনটের দিকে মেসেজ দিয়েছিল নিশ্চয় বিপদে পরেছিল আপনার বন্ধু। তবে উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করাটাই আসল কথা।
প্রত্যাশা কমিয়ে দিয়েছি, যা পাচ্ছি সেটাই তো অনেক বোনাস।
প্রত্যাশা যত কম ঝামেলাও তত কম। কারো সাথে মন খারাপ ও হয় না তেমন।
অনেক সময় প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুলে যায়। আসলে আজকাল মানুষ যে কেমন হয়ে যাচ্ছে সেটা বোঝা মুশকিল। যাইহোক ভাইয়া আপনি আপনার জায়গা থেকে উনাকে সাহায্য করেছেন এটাই অনেক। হয়তো উনার উচিত ছিল আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর বা কিছুটা কৃতজ্ঞতা জানানোর।
প্রয়োজন ফুরালেই মানুষের গুরুত্ব ফুরিয়ে যায়, এটাই তো বাস্তবতা।
মানুষের মন-মানসিকতা আসলেই কেমন যেনো হয়ে গিয়েছে। বিপদে পরলে পায়ে ধরতেও সময় লাগে না,আবার বিপদ কেটে গেলে খবরও থাকে না। মূলত এসব কারণেই এখন বেশিরভাগ মানুষ কারো সাথে লেনদেন করে না। টাকা নেওয়ার সময় একরকম কথা,আর ফেরত দেওয়ার সময় অন্য রকম কথা। এমন অসংখ্য মানুষ চারপাশে দেখা যায়, পাওনা টাকা ফেরত চাইলে ঝগড়াঝাটি পর্যন্ত করে। যেহেতু আপনার ব্যাপারটা মাত্র ৩০০ টাকার, তো এটা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু বড় এমাউন্ট হলে ব্যাপারটা কি হতো তাহলে। আমার এক ফ্রেন্ডকে আমি এক লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলাম তার বিয়ের সময়। ৮০,০০০ টাকা দুই মাস পর ফেরত দিলেও, বাকি ২০ হাজার টাকা ৫ বছর পর নিতে হয়েছিল চেয়ে চেয়ে। অথচ সে কিন্তু একেবারে স্বচ্ছল। ১০/১৫ হাজার টাকা করে এখনো ২/৩ জনের কাছে পাওনা রয়েছি, কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে তারা টাকা শুধু দিয়েই যাচ্ছে, কিন্তু হাতে আর পেলাম না। যাইহোক সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক সেই কামনা করছি।
আপনার ব্যাপারটা জেনে বেশ ব্যথিত হলাম ভাই।