ধ্বংসাবশেষ
জন্মটাই হয়েছিল এ শহরে, ৩২ বছরের জীবনে বেশ ভালই সখ্যতা তৈরি হয়েছে এ শহরের ইট-পাথরের সঙ্গে। শহরের অলি-গলির পুরো প্রতিচ্ছবি যেন প্রতিনিয়তই চোখের সামনে ভাসমান। মাঝে মাঝে মনে হয়, বাসা থেকে চোখ বন্ধ করে বের হলেও এদিক সেদিক অনায়াসেই ঘোরাঘুরি করতে পারবো।
ছোট্ট এই শহরটার কত পরিবর্তন নিজ চোখে দেখেছি, তা বলে শেষ করতে পারবো না । তবে এবার যে পরিবর্তন হচ্ছে, তা যেন আমাকে অনেকটাই আবেগপ্রবণ করেছে। এ মাটির গন্ধ শুঁকে বড় হয়েছি, কত যে স্মৃতি জমিয়ে আছে শহরটা জুড়ে, তা বলে শেষ করতে পারবো না।
সেই নব্বই থেকে শুরু করে আজ অবধি চারিপাশের পরিবর্তন দেখে দেখে এত বড় হয়েছি, এই প্রাণের শহরটা মুহূর্তেই যেন ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। স্মৃতিগুলোকে ভেঙে চুরমার করা হয়েছে। বিগত সময়ের পরিবর্তন দেখে মনে হয়েছিল, ধীরে ধীরে শহরের মানুষজনের চিন্তাধারা পরিবর্তন হচ্ছিল এবং সবাই এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছিল।
তবে এবারের পরিবর্তন অনেকটাই আকস্মিক, বলতে গেলে রাতারাতি। যদিওবা প্রচুর পরিমাণে সবাইকে অর্থ সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে,তবে অর্থ দিয়ে আর যাইহোক স্মৃতি বিজড়িত আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করাতো একটু কষ্টসাধ্য।
খুবই সাম্প্রতিক সময়ে বড় রাস্তার উন্নয়নের জন্য, রাস্তার দুপাশের সমগ্র স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে শহরের চেহারা পুরোটাই যেন পাল্টে গিয়েছে, এমন পরিবর্তনকে বৃহৎ উন্নয়নের স্বার্থে অবশ্যই সাধুবাদ জানানো যায়। তবে ঐ যে বললাম আবেগের ব্যাপারটা তাও থেকেই যায়, হয়তো যখন পুরোপুরি রাস্তার কাজগুলো সম্পন্ন হয়ে যাবে, ফ্লাইওভার কিংবা রাস্তা প্রশস্ত হবে,তখন শহরটা নতুন আঙ্গিকে গড়ে উঠবে, হয়তো সেসময় আবেগের ব্যাপারটা আর কাজ করবে না।
সত্যিই মানুষ পরিবর্তন চায় কিংবা পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে মুখিয়ে থাকে, তবে এমন পরিবর্তনের প্রভাব যে ভবিষ্যতে কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা কিন্তু আপাতত বলা যাচ্ছে না। রাস্তার দুপাশের সমস্ত স্থাপনা এবং গাছপালা কেটে শেষ, আপাত সময়ে সবকিছুই যেন নিষ্প্রাণ হয়ে গিয়েছে, হুট করেই এখন যদি কেউ এ শহরে ঢুকে পড়ে, তাহলে সে হয়তো ভাববে কোন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় চলে এসেছে, আমি নিজেই এমনটা ভেবে বসে ছিলাম, সেদিন পড়ন্ত বেলায় ।
চতুর্দিকে ধ্বংসাবশেষ দেখে অনেকটা যেন হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম, এই যান্ত্রিক নগরী আরো যান্ত্রিক হওয়ার জন্য বড্ড তৎপর হয়ে গিয়েছে । নতুন পরিকল্পনায় আবারো সব নতুন স্থাপনা তৈরি হবে, তবে এত কিছুর মাঝেও কেউ কেউ হয়তো পুরনো শহরটাকেই মনে মনে খুঁজে ফিরবে, আর হয়তো নিজের সঙ্গে নিজেই ফিসফিস করে বলবে, এমন পরিবর্তন না হলেও চলতো !
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এমব পরিস্থিতি আমাদের বাড়িএ পাশে হয়েছে টাকা দিয়ে হয়তো কিছুটা ক্ষতির সাধন করা যায় কিন্তু পুরোটা হয়না।মানুষের পরিকল্পনার সাথে ভবিষ্যতে কোনোভাবে বোঝা যাচ্ছে না।তারা যে কি করে নিজেরাই বোঝে না।যদি চিন্তা ভাবনা পরিকল্পনা করে কিছু করতো তাহলে কি আজ এসব ধংস দেখা লাগতো।
এত কিছুর মাঝেও মানিয়ে নিতে হবে, তাছাড়া তো আর উপায় নেই ভাই।
মাঝে মাঝে রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা বসতি কিংবা স্থাপনা দেখে সবাই হয়তো সেগুলোকে উচ্ছেদ করতে চায়। কিন্তু যখন সেই স্থাপনা গুলো ধ্বংস করা হয় তখন কোথাও গিয়ে যেন একটা আবেগ কাজ করে। আর কিছুটা খারাপ লাগে। কি আর করার ভাইয়া এভাবেই হয়তো সবকিছুই চলবে। ভাঙ্গা গড়ার খেলার মাঝেই হয়তো আবারও তারা নতুন স্বপ্নে এগিয়ে যাবে। কেউ আবেগ প্রবণ হবে কেউবা নিজের তিল তিল করে গড়া স্থাপনা হারিয়ে ফেলবে।
এটাই তো জগতের নিয়ম একদিকে ভাঙছে অন্যদিকে নতুন কিছু গড়ে উঠছে।
আসলে কিছু কিছু পরিবর্তন মেনে নিতে খুবই কষ্ট হয়। সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বাড়িঘর ভেঙ্গে এবং গাছপালা কেটে রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন করা হচ্ছে। যদিও পরবর্তীতে আমরা সেটার সুফল ভোগ করতে পারবো,তবে দিনশেষে মনের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট থেকেই যায়। কারণ কিছু কিছু স্মৃতি আমরা আসলেই ভুলতে পারি না। যাইহোক এগুলো মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
একদম যথার্থ বলেছেন ভাই, দিনশেষে আসলে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোন কিছুই করার নেই।
এটা ঠিক বলেছেন ভাইয়া সবাই পরিবর্তন চায়। আর পরিবর্তন চাইতে গিয়ে আমাদের চিরচেনা শহর বদলে যায়। চিরচেনা সেই রাস্তাঘাট বদলে যায়। আর রাস্তার পাশে ধ্বংসাবশেষ দেখে তখন বেশ খারাপ লাগে। আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া। দারুন লিখেছেন আপনি।