প্রয়াত মৌমিতা দিদিকে উৎসর্গ করে |স্বরচিত কবিতা |দগ্ধ অশ্রু 😭
স্বরচিত কবিতা
সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন এটাই প্রত্যাশা করি।
বন্ধুরা আজ আবারো নিজের লেখা আর একটি প্রতিবাদী কবিতা নিয়ে হাজির হলাম। আশা করছি এই কবিতা টিও আপনাদের ভালো লাগবে। আর
"দগ্ধ অশ্রু" কবিতাটি নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতা এবং নারীর মধ্যকার নির্দয়তার এক মর্মস্পর্শী চিত্র তুলে ধরেছে। কবিতাটি এক নারীর যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু এবং তার ওপর সংঘটিত নৃশংস অত্যাচারের কাহিনি বর্ণনা করে, যা মানবতার প্রতি এক কঠিন প্রশ্ন তোলে। কবিতার মূল চরিত্র মৌমিতা, যিনি শিকার হয়েছেন ভয়ানক নির্যাতনের এবং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তিনি অভিজ্ঞতা করেছেন নারীত্বের নিষ্ঠুর চেহারা।
এই কবিতায় ফুটে উঠেছে মানবতা এবং নারীত্বের মাঝে এক গভীর সংকট। মৌমিতার শরীর এবং আত্মা উভয়ই যে আঘাতের শিকার হয়েছে, তা একদিকে যেমন নৃশংসতার প্রতিচ্ছবি, অন্যদিকে তা দেখায় নারীর প্রতি নারীর অবহেলা ও নিষ্ঠুরতার এক নির্মম বাস্তবতা। মৌমিতা তার নারী সহকর্মীর মধ্যে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা খুঁজে পেতে চেয়েছিল, কিন্তু তার পরিবর্তে তিনি পান এক শীতল অমানবিক প্রতিক্রিয়া।
এতে বুঝা যায় যে, শুধু পুরুষের সহিংসতা নয়, নারীর নিষ্ঠুরতা এবং অবহেলাও এক নারীর জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। কবিতার মাধ্যমে সমাজে নারীর প্রতি অবিচার এবং মানবতার বিপর্যয় নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
মোটকথা, "দগ্ধ অশ্রু" কবিতার মূলভাব হচ্ছে নারীর প্রতি নারীর নিষ্ঠুরতা, যা মৌমিতার রক্তাক্ত অশ্রুর মাধ্যমে মানবতার এক করুণ পরিণতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। এটি মানবতার প্রশ্নে চিরস্থায়ী এক আঘাত হিসেবে রয়ে যাবে, যা নারীর বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতা এবং মানবতার বিরুদ্ধে চরম অপরাধের উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।
"দগ্ধ অশ্রু"
উৎসর্গ -( প্রয়াত মৌমিতা দিদিকে)
একটা শরীর।
শত কামড়ের দাগে ভরা,
যেন প্রতিটি দাগ একেকটি ক্ষত,
যা মৌমিতার প্রাণ চুরি করেছে।
১৮/২০ জন পুরুষ—একে একে
ঝাঁপিয়ে পড়ছে তার উপর,
শিকারীর মতন।
মৌমিতার গলায় চেপে বসেছে
লোহার কঠিন মুঠো যা এতটাই শক্ত
যে তার চোখের মনি দিয়ে রক্তের ফোঁটা ঝরছে।
একটি সুস্থ, প্রাণোচ্ছল মেয়েকে ঠিক
কতক্ষণ গলা চেপে ধরলে এমন হয়,
তা কেউ কি জানে?
তার চোখের ভাষা—ভয়, যন্ত্রণা,
এবং বাঁচার তীব্র আকুতি।
মৌমিতা তখন তাকিয়ে থাকে তার এক
নারী সহকর্মীর দিকে, যে কিনা একই লিঙ্গের,
একই বেদনাবোধের অংশীদার।
তবে কি সেই মেয়ে বুঝতে পারছে না?
মৌমিতার চোখের মনি দিয়ে যখন
রক্তের অশ্রু ঝরছিল, তখন তার
নারী সহকর্মী ছিল স্থির, কঠিন,
এক অচেনা পাষাণ।
সে কি বোঝেনি, তারও শরীরে একই
নারীত্বের অস্তিত্ব আছে?
মৌমিতার চোখের গভীরতায়
বারবার অনুরোধ, "আমাকে বাঁচাও,
তুমি তো আমারই মতন একজন মেয়ে।"
কিন্তু সেই অনুরোধ শুনতে পায়নি,
অনুভব করেনি, সেই ফিমেল কলিগ।
তার নিষ্ঠুরতা মৌমিতার বুকের ভেতর
দগ্ধ করে দেয়, যেন আকাশ ছুঁয়ে ওঠা দহন।
আহারে, সেই চোখের অশ্রু, যা
রক্তে রূপান্তরিত হয়েছে।
আহারে, সেই নারী কলিগ, যে নারী হয়েও
নারীর প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারল।
আহারে, মৌমিতা, যার শরীর বেয়ে ঝরে পড়েছে মানবতার রক্তাক্ত বেদনা।
শুধু চোখ নয়, মৌমিতার হৃদয়ও তখন রক্তাক্ত,
যা তার শেষ নিঃশ্বাসে রূপান্তরিত হয়েছে।
জীবনের শেষ মুহূর্তে মৌমিতা জানতে পারল—
নারীর ওপর নারীর নিষ্ঠুরতারও সীমা নেই,
তবে মানবতার মৃত্যু হয়,
যখন নারীত্বের পরিচয়ে মানবিকতার
স্থলাভিষিক্ত হয় নির্লজ্জ পাশবিকতা।
মৃত্যুর আগে মৌমিতা দেখেছিল
রক্তাক্ত পৃথিবীর সেই নিষ্ঠুর সত্য,
যেখানে নারীত্বের পরিচয় শুধু বাহ্যিক
আচ্ছাদনে থাকে, আর ভিতরে লুকানো
থাকে পাশবিকতার অমানবিক চিত্র।
আর সেই চিত্র মৌমিতার মৃত্যুতে
জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
আহারে, মৌমিতার সেই রক্তাক্ত অশ্রু,
যা কালের পর কাল ধরে মানবতার
প্রশ্নে উত্তোলিত হয়ে থাকবে।
মৌমিতার চোখের সেই রক্তের দাগ
কখনো মুছে যাবে না,
তা হয়ে থাকবে ইতিহাসের এক করুণ,
হৃদয়বিদারক অধ্যায়, যা চিরকাল ধরে বলবে—
নারীর বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতা ও
মানবতার বিরুদ্ধে এক চরম অপরাধ।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
১৬ আগস্ট ২০২৪
সময় বিকেল ৫:২০
কবিতা কুটির-নীলফামারী।
বন্ধুরা আমার আজকের কবিতটি, নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা ও পরম পাওয়া। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আবারো সুন্দর সুন্দর কবিতা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব, আমি সেলিনা সাথী...
আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।
বিষয়: ক্রিয়েটিভ রাইটিং
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলে ঐদিন যখন প্রত্রিকায় প্রয়াত মৌমিতা দিদির খবরটা পড়লাম। আমি জাষ্ট অবাক হয়ে গেলাম। মানুষ একজন মানুষের উপর কিভাবে এত নির্দয় হতে পারে সেটা আমার জানা ছিল না। এখানে তো ১৮ থেকে ২০ জনের কথা বলা হয়েছে। আমি শুনেছি পঁচিশ জনের মত হবে। যায়হোক তার কলিগও তার সাথে কিভাবে বেইমানি করলো। আসলে এই অপরাধের সঠিক বিচার হওয়া খুবই জরুরী। ধন্যবাদ।
আস্তে আস্তে পৃথিবী থেকে বিশ্বাস জিনিসটা উঠে যাচ্ছে। এখন নারীরাও নারীদের অনেক ভয়ের কারণ। মৌমিতা দিদির ঘটনর নিষ্ঠুরতা এবং নির্মমতা বড় বেশি আহত করেছে আমাকে। তবে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি আকুল আবেদন, তিনি যেন এর চেয়েও কঠিনতম শাস্তি অপরাধীদেরকে দেন।
মৌমিতার খবরটি দেখার পর থেকেই খুবই খারাপ লাগছে আপু। আসলে মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে এটা ভেবে অবাক হয়ে যাই। একটি মেয়ের উপর এরকম অমানবিক নির্যাতন করা তাদের মোটেও উচিত হয়নি। খুবই কষ্ট লেগেছে আপু।
এই ঘটনায় কষ্ট লাগাটা খুব বেশি স্বাভাবিক।
এই ঘটনার পর আরও বেশি আশ্চর্য এবং অবাক হয়ে গেছি পৃথিবীতে কত জঘন্যতম নিষ্ঠুর মানুষের বসবাস। তারা আমাদেরই চারপাশ ঘুরপাক করে অথচ আমরা তাকে চিনতেই পারি না।
মৌমিতা দিদির খবরটি যখন দেখলাম তখন এতটা কষ্ট লাগছিল মানুষ কিভাবে এত নিষ্ঠুর ও নির্দয় হতে পারে। একটি নারীর উপর এমন নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। তার কলিগরা যে এতটা নিষ্ঠুর হবে সেটাও ভেবে অবাক হচ্ছি।সৃষ্টিকর্তা যেন অপরাধীদের এর থেকেও কঠিন শাস্তি দেন।
আমিও মনে প্রাণে এটাই চাই আপু অপরাধীদের যেন কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। 😭😭
যারা মৌমিতার উপর এতো নির্যাতন চালিয়েছে, এরা আসলে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। এদের মধ্যে বিন্দুমাত্র মনুষ্যত্ববোধ নেই। এদেরকে ধরে একেবারে ক্রসফায়ার করা উচিত। যাতে করে পরবর্তীতে কেউ এমনটা করতে আর সাহস না পায়। যাইহোক কবিতার লাইনগুলো দারুণ হয়েছে। বেশ ভালো লাগলো কবিতাটি পড়ে। এতো সুন্দর একটি কবিতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
এই জঘন্যতম কর্মকাণ্ডের সুবিচার হোক এটাই প্রার্থনা করি। মনুষ্যত্ববোধ এবং মূল্যবোধের ফুল ফুটুক প্রত্যেকের হৃদয়ে।