এলোমেলো মনে অব্যক্ত চিন্তা ভাবনা।
কয়েকদিন আগে তিন বন্ধু মিলে পদ্মা নদীতে গিয়েছিলাম গোসল করতে। সেই গোসল করতে যাওয়ার পথে বন্ধু রাফসানের বাড়ির সামনে বেশ কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম। মূলত আমরা রাফসানের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তবে সেখানে যেতেই আমার আর ফেরদৌসের পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেলো। একটা সময় ছিল যখন আমরা প্রায় প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার রাফসানদের বাড়িতে চলে আসতাম। বৃহস্পতিবার আসার মূল কারণ হচ্ছে তখন আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। সপ্তাহে একটি দিন মাত্র ছুটি পেতাম তখন। সে কারণেই বন্ধু-বান্ধব মিলে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পরিকল্পনা শুরু করতাম।
আসলে আমার বন্ধুবান্ধবের ভেতর প্রায় সবাই গ্রামীণ পরিবেশ খুব পছন্দ করে। কিন্তু বন্ধু-বান্ধবদের ভিতরে রাফসান বাদে আর কেউই গ্রামে থাকতো না। সেই কারণেই আমরা প্রায় প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার রাতে রাফসানের বাড়িতে চলে আসতাম। এখানে সারারাত ধরে চলত আমাদের আড্ডাবাজি। সকালে বেশ দেরি করে আমরা ঘুম থেকে উঠতাম। তারপর নাস্তা করে রাফসানদের গ্রামে ঘুরতে বের হয়ে যেতাম। তারপর দুপুর বেলায় চলতো নদীতে গোসল করা। দীর্ঘক্ষন নদীতে গোসল করে তারপর আমরা রাফসানদের বাড়িতে ফিরতাম। সেখান থেকে খাওয়া দাওয়া করে বিকালে রাফসানদের এলাকার ছেলেদের সাথে বিভিন্ন রকম খেলায় মেতে উঠতাম। তারপর সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে ফিরতাম।
এভাবেই চলেছে দীর্ঘদিন। কিন্তু আস্তে আস্তে বন্ধু-বান্ধবদের ভেতর এক এক করে সবাই কর্মজীবনে প্রবেশ করলো। তখন থেকে আমাদের এই বৃহস্পতিবারের আড্ডাটা কমতে শুরু করলো। আর রাফসান বিয়ে করার পর আমাদের এই আড্ডাটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলো। আমি ফরিদপুরে থাকার কারণে অনেকটা একা হয়ে গেলাম। কারণ বন্ধুবান্ধব সবাই চাকরি-সুত্রে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো। বেশ কিছুদিন আমার এভাবেই কেটেছে। অবশ্য তখন চাকরির সূত্রে ব্যস্ততা থাকার কারণে খুব একটা সমস্যা হয়নি। সমস্যা শুরু হলো যখন আমি চাকরি ছেড়ে দিলাম। চাকরি ছাড়ার পরে আমি স্টিমেটে জয়েন করেছিলাম। কিন্তু কয়েক মাস কাজ করার পর বিভিন্ন সমস্যার কারণে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তখন আমি সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়লাম।
কোন কাজকর্ম নেই আবার এদিকে এলাকায় বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যাও হাতেগোনা দু একজন। আর এলাকার বাইরে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বেশি সময় কাটানোর কারণে আমার বাড়ির পাশের বন্ধুবান্ধবদের সাথে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে গিয়েছিলো। যার ফলে সেই সময়টা আমার বেশ খারাপ কেটেছে। এভাবে বেশ কিছুদিন কাটানোর পর একটা সময় ফেরদৌস এলাকায় ফিরে এলো। সাথে আরো দুই একজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে আমরা মাঝে মাঝে সময় কাটাতে লাগলাম। জীবনে আগে কখনো চিন্তা করিনি যে এমন একটা সময় আসবে যখন সময় কাটানোর মতো কাউকে পাওয়া যাবে না। জীবনে প্রথম আমি বন্ধু-বান্ধবের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারলাম। এমন না যে আমি বন্ধু-বান্ধবের সাথে খুব একটা চলাফেরা করিনি। বরং বলতে গেলে আমি একটু বড় হওয়ার পর থেকেই বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গ বেশি উপভোগ করতাম।
ছোটবেলায় আমার খুব বেশি বন্ধুবান্ধব ছিলো না। কারণ ছোটবেলায় মানুষের বন্ধু-বান্ধব তৈরি হয় মূলত তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু আমি কিছুদিন পর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার কারণে আমার কারো সাথে তেমন একটা সখ্যতা গড়ে ওঠেনি। ক্লাস থ্রি পাস করার পর আমাকে বাড়ি থেকে খুলনায় ফুফুর বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয় পড়ালেখার জন্য। আমাদের এলাকার পরিবেশ তখন বেশ খারাপ ছিলো। শহরের সব কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের বাসস্থান ছিল আমাদের এলাকায়। যার ফলে এলাকার বেশিরভাগ ছেলেপেলে কোন না কোন ভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়তো। এই কারণে আমাকে বাড়ি থেকে দূরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে এত ছোট বয়সে বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে আমি প্রচন্ড নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলাম। হয়তো সেই কারণেই আমি পরবর্তীতে যখনই কোন বন্ধু-বান্ধব পেয়েছি তাদেরকে রীতিমতো আকড়ে ধরেছি। সব সময় চেষ্টা করেছি বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মিলেমিশে থাকতে। ছোটবেলার সেই নিঃসঙ্গতা বোধ মনে হয় এখনো আমার ভেতরে কাজ করে। কারণ এখনো আমি বন্ধু-বান্ধব ছাড়া নিজের জীবন কল্পনা করতে পারি না। এই কারণেই বন্ধু-বান্ধব থেকে কিছুদিন দূরে থাকলেই আমি হাফিয়ে উঠি। আবার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গ পেলেই মানসিকভাবে অনেক চাঙ্গা হয়ে উঠি। তবে জানি জীবনের একটা পর্যায়ে হয়তো এই বন্ধু-বান্ধবদের আর কাউকেই পাবো না। বা হয়তো সেই সময় আমি নিজেই থাকব না। তবে যতদিন বেঁচে আছি ততদিন বন্ধু-বান্ধবদের মাঝেই বেঁচে থাকতে চাই। তাদের সহচর্যে জীবনটা উপভোগ করতে চাই।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আজকের পোস্ট পড়ে আপনার ছেলেবেলার বেশ কিছু জানতে পারলাম।খুব খারাপ লাগলো ভাইয়া।এলাকার কারনে সেই ছোট সময় আপনি আপনার পরিবার ছেড়ে ফুপুর বাসায় ছিলেন।এটা সত্যি ই খুব কষ্টের।এতো বড় হয়ে, নিজে মা হয়েও এখন ও ভাবতে পারিনা আমার পাশে আমার মা নেই।এটা ভাবনা এলেই চোখ আমার ছলছল হয়ে যায়। আর আপনি ক্লাস থ্রী পাশ করার পর আপনাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল।খুব কষ্টকর।আর তাইতো আপনি বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে এতো পছন্দ করেন।আপনার বন্ধু রাফসান ভাইয়ার গ্রামের বাড়িতে আগে খুব সুন্দর সময় কাটাতেন।সময়ের সাথে সাথে ব্যস্ততা আসলে সবকিছু ই চেঞ্জ করে দিয়েছে।তারপরেও চাই সবাইকে নিয়ে আপনি হাসি-আনন্দে মেতে থাকুন।সেই নিঃসঙ্গ ছেলেবেলার স্মৃতি ভুলে যান এই কামনাই করি।ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য।
অনেক সময় দূরের বন্ধু বান্ধবদের সাথে মিশে, এলাকার বন্ধু বান্ধবদের সাথে দুরত্ব তৈরি হয়ে যায়। এমন ঘটনা আমার সাথেও একসময় ঘটেছিল। পরবর্তীতে বুঝলাম এলাকার বন্ধু বান্ধবদের সাথে বেশি সময় কাটানো উচিত। কারণ ওদেরকে যখন তখন পাওয়া যায়। ওদের সাথে সময় কাটানো যায়। কারণ বন্ধু বান্ধব ছাড়া জীবনটা একেবারে বোরিং হয়ে যায়। ভাই আমার মনে হয় এলাকার বন্ধু বান্ধবদের সাথে বেশি মিশলে আপনার ভালো লাগবে। যাইহোক আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
তাহলে তো ভাইয়া আপনি ছোট বেলায় বেশ নিসঙ্গ জীবন যাপন করেছেন। মা বাবা ছেড়ে ফুফুর বাসায়। তাই তো ভাবী যে ভাইয়া এত বন্ধু পাগল কেন। সব সময়ই তো দেখি যে বন্ধদের সাথে আড্ডা আর ঘুরাঘুরিই আপনার বেশ ভালো লাগে। ভালো লাগে তাদের সানিধ্যে ঘুরে বেড়াতে। দোয়া করি আপনার এই বন্ধুত্ব অটুট থাকুক চিরটা কাল।
সময় যেমন বদলে যায় তেমনি আগের কাটানো সময় গুলো শুধু স্মৃতি হয়ে পড়ে রয়। আসলে একটা সময় ছিল যখন অনেক বন্ধু বান্ধবী ছিল। তবে এখন তাদের সাথে বছরের পর বছর যোগাযোগ নেই। একটা সময় মনে হতো তারা ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। কিন্তু বাস্তবতা জীবনকে অনেক কিছুই শিখিয়ে দেয়। ভাইয়া আজকে আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আর নিজের জীবনের উপলব্ধিগুলো আপনার লেখার মাঝে খুঁজে পেলাম।