দুর্ভোগে দেশের জনগণ। নেপথ্যে কালোবাজারি ব্যবসায়ীরা।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


দুদিন আগে আমার স্ত্রী বলল ফ্রিজে ডিম নেই কালকে কিছু ডিম নিয়ে এসো। আমি বললাম ঠিক আছে সকালে একবার মনে করিয়ে দিও। পরদিন আমি দোকানে গেলাম ডিম কিনতে। আমি সাধারণত একসাথে ৩০ টা করে ডিম কিনি। কারণ ডিম গুলো যে ট্রেতে করে বিক্রি হয় সেই এক ট্রেতে ৩০ টা ডিম থাকে। তাছাড়া একসাথে বেশি ডিম কিনলে দামেও কিছুটা ছাড় পাওয়া যায়। আমি আমার বেশিরভাগ কেনাকাটা এলাকার একটা বড় মুদি দোকান থেকেই করি। সেই দোকানদার ছেলেটা খুবই বিশ্বস্ত। যার ফলে আমি বেশিরভাগ সময়ই জিনিসপত্র কিনে দাম জিজ্ঞেস করি না। তবে সেদিন ডিম কেনার পরে দাম জিজ্ঞেস করলে জানালো ভাই ডিমের দাম বেশ কিছুটা বেড়েছে। ৩০ টা ডিমের দাম পরল প্রায় ৩৬০ টাকা। অবশ্য এ ধরনের পরিস্থিতি নতুন নয়। কারণ আমরা একাধিকবার ডিমের দাম এরকম বাড়তে দেখেছি।

IMG_20230816_003529.jpg

কিন্তু সেদিন রাতে খবর দেখতে গিয়ে দেখলাম বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ষাট টাকা হালি পর্যন্ত ডিম বিক্রি হচ্ছে। মানে এক একটা ডিমের দাম পড়ছে ১৫ টাকা। সেই হিসাবে এখন ৩০ টা ডিম কিনতে গেলে দাম পড়বে প্রায় সাড়ে চারশ টাকা। হিসাব করে দেখলাম এরপরে ডিম কিনতে গেলে আমাকে বাড়তি আরো অনেকগুলো টাকা খরচ করতে হবে। খবরে শুধু যে ডিমের দাম বেড়েছে সেটা দেখায়নি বরং ডিমের দাম কেন বেড়েছে সেটাও তারা বিশ্লেষণ করছিলো। সেই সাথে দেখাচ্ছিলো ভোক্তা অধিকার টিমের বাজারে অভিযান। সেই অভিযানের একপর্যায়ে তারা একজন আড়তদারকে জরিমানা করলো। পুরো খবরটা দেখার পর জানতে পারলাম যে দেশের বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যারা ডিম উৎপাদনের সাথে জড়িত তারা মূলত এই কারসাজির মাস্টারমাইন্ড। তারা প্রতিদিন মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ডিম বিক্রি করার সময় ক্রেতাকে যে চালান দেয়ার কথা সেটাও তারা দেয় না বা দিলেও সেখানে ডিমের দাম উল্লেখ থাকে না।

IMG_20230806_092142.jpg

খবরটা দেখার পরে আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। কারণ আমি বুঝতে পারছিলাম শুধু ছোটখাটো আড়তদারকে জরিমানা করে এই সমস্যা কিছুতেই সমাধান হবে না। এই কারসাজির মূল হোতা বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। যদি ভোক্তা অধিকার তাদেরকে জরিমানা করতে পারতো বা শাস্তির আওতায় আনতে পারতো। তাহলে হয়তো পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সুযোগ থাকতো। কিন্তু এই লোক দেখানো ভোক্তা অধিকারের অভিযান থেকে কিছু মানুষের কাছ থেকে শুধু বাহবা পাওয়া ছাড়া জনগণের কোন লাভ হবে না। এটা যে শুধু ডিমের খেত্রে হচ্ছে তা নয়। বাজারে প্রত্যেকটা জিনিসের ক্ষেত্রেই ধাপে ধাপে এইরকম কারসাজি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আর এই কারসাজির মূল্য পরিশোধ করছে সাধারণ জনগণ। আর এই জনগণকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যই ভোক্তা অধিকারের এই নাটকগুলো রচনা করা হচ্ছে। এগুলো আই ওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়। কারণ এই সমস্যাগুলো সমাধানে সরকার যদি আন্তরিক হোতো তাহলে ব্যবসায়ী নামের কসাই গুলো এই কাজগুলো করার কখনোই সাহস পেতো না।

যখনই আমাদের দেশে কোন পণ্যের দাম বাড়ে বিশেষ করে ডেইরি পোল্ট্রি সেক্টরের। তখনই খামারিরা সরকারের উপর দোষ চাপায়। খামারিয়া সব সময় শুধু নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে। নিজেদের নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে বাইরে থেকে পণ্য আমদানি করতে বাধা দান করে। অথচ তাদের কারণে যে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে দুর্বিসহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে সেটা তারা কখনোই আমলে নেয় না। আর প্রতিটা দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীর কাছেই নানারকম অজুহাত রয়েছে। ধরুন ইলিশ মাছের কথাই বলি। বাজারে এক কেজি সাইজের একটা ইলিশ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ ছয়জনের পরিবারের একটা ইলিশ কিনলে এক বেলাতেই শেষ হয়ে যাবে। এখন একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের পক্ষে কি সম্ভব এক বেলায় শুধু মাছের পেছনে দেড় হাজার টাকা খরচ করা? অথচ এই ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। কিন্তু সেই জাতীয় মাছ আজ বাঙালির খাদ্য তালিকা থেকে প্রায় বাদ হয়ে গিয়েছে।

এমন যে আরো কত জিনিস খাদ্য তালিকা থেকে ধীরে ধীরে বাদ পড়ে যাচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আর কালোবাজারি ব্যবসায়ীদের কারণে। কিন্তু সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা পারতো বাজারের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। তাতে দেশের জনগণের জীবনযাত্রা কিছুটা সহজ হতো। কিন্তু জনগণের কথা চিন্তা করার মত লোক সরকারে খুব কমই আছে দেখা যাচ্ছে। তবে জনগণের অবস্থা যত খারাপই হোক তাদের ভেতরে খুব একটা প্রতিবাদ দেখতে পাচ্ছি না। সবাই ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে শান্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটা সময় অবশ্যই এমন আসবে যখন মানুষ প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামবে। তবে ততদিন পর্যন্ত হয়তো সমস্যাগুলো রয়েই যাবে। আপাতদৃষ্টিতে এই সমস্যাগুলোর কোন সমাধান দেখতে পাচ্ছি না যতক্ষণ না মানুষ রাস্তায় আন্দোলনে নামবে। এখন শুধু সেই সময়ের প্রতীক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 last year 

দ্রব্যমূলের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে করে সাধারণ মানুষ অনেক বেশি ভোগান্তির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। আসলে যে দ্রব্যগুলোর দাম একবার বেড়ে যায় সেগুলো খুব সহজে আর কমতে চায় না। এভাবেই হয়তো সবাইকে বাঁচতে হবে। তবে মাঝে মাঝে ভীষণ মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু কি আর করার কষ্ট করে হয়তো আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো কিনতে হবে। আমরা সাধারণ মানুষরা পড়েছি সবচেয়ে বেশি বিপদের মধ্যে।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

সত্যি ই ভাইয়া একদম ঠিক বলেছেন। আমরা সাধারন মানুষ জিম্মি হয়ে আছি তাদের কাছে।কারন জীবন ধারনের জন্য আমাদের তো খেতে হবেই।আর জিনিসপত্র কেনা ছাড়া উপায় ও নেই।সবকিছুর দাম হু হু করে বেড়েই চলেছে।আর এজন্য সাধারন ব্যবসায়ীরা দায়ী নয়।এর জন্য বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোই দায়ী।এর থেকে মুক্তির উপায় কি হবে আমার জানা নেই।একমাত্র উপায় হতো যদি আমরা জনগন সব কিছু খাওয়া বন্ধ করে দিতাম।কিন্তু না খেয়ে বাঁচবো কিভাবে??

 last year (edited)

ভাই আমরা এমন একটি দেশে বসবাস করছি যে দেশে কোন কিছুর দাম বাড়লে সেটা আর কোনদিনও কমে না। এইতো আজ বিকেলের দিকে একটি প্রতিবেদন দেখছিলাম। ডিমের দাম কমানোর জন্য নাকি সরকার নতুন করে পদক্ষেপ নিচ্ছে কিন্তু কই, কোন পদক্ষেপেই বাজারে কার্যকর হচ্ছে না, কি আর করব ভাই বলুন। আমাদের এখানে ৪ টি ডিমের দাম ৫৫ টাকা করে।

 last year 

ভাই প্রথমে একটা কথা বলতে চাই আমরা কোন দেশে বাস করি, আমি যখন কলেজে পড়তাম তখন আমাদের এক ম্যাডাম বলছিল, যে দেশে এক মুঠো মাটির উপরে একটা বীজ ফেলে দিবে সেখান থেকে চারা গাছ তৈরি হয়ে যাবে। ওই গাছ তোমাকে একদিন ছায়া ফল দিবে। আমাদের গ্রামাঞ্চলে এক হালি ডিমের দাম ৫৬ টাকা। আর ইলিশ মাছের কথা তো বলবই না আমার মনে হয়না গ্রাম অঞ্চলের মানুষ ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খাই, তাও আবার বছরে একবার। আরেকটি বিষয়ে আপনার সাথে একমত ছোটখাটো যারা বাজারে ব্যবসা করে এদেরকে জরিমানা করে কোন লাভ হবে না। জরিমানা যদি করতেই হয় তাহলে সেইসব কালোবাজারিদের জরিমানা করতে হবে। যারা সিন্ডিকেট করছে এবং ব্যবসার নামে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বড় বড় রাঘব বোয়ালদের জরিমানা করতে হবে এবং তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে তাহলে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

ভাইয়া আমার তো মনে হয় সামনে আরও কঠিন সময় আসছে। যে হারে জিনিস পত্রের দাম বাড়ছে তাতে করে তো না খেয়ে থাকতে হবে। আর আমরা তো প্রতিবাদ করতে ভুলেই গেছি, তো দাম দিয়েই খেতে পারলে খাবো নয়তো না খেয়ে থাকবো। সময় ‍উপযোগী একটি পোস্ট করেছেন ভাইয়া। ধন্যবাদ।

 last year 

বাজারের খুব বাজে অবস্থা ভাইয়া। মনে হয় যেনো বাজারে না যাই। তবে না গিয়েও তো উপায় নেই। সব কিছুর দাম যে ভাবে বারতেছে আমাদের খুব খারাপ অবস্থা। আমিও সেদিন ডিম কিনতে গিয়ে অবাক অনেক দাম বেড়েছে। আপনার লেখা গুলো পড়ে ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।

 last year (edited)

ভাইয়া বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারন হলো সরকারি লোক। তারা বাজার নিয়ন্ত্রন করার পরিবর্তে নেতাদের চামচামি করে বেড়ায়। কোন পন্যটার কথা বলবো যেটা নিয়ে সিন্ডিকেট হয় না। অথচা এদিকে কারো কোন খেয়াল নেই। কোন জাগায় জঙ্গি আছে,বিরোধী দল কখন সমাবেশ ডাকলো, কে রাজাকার, এসব নিয়ে পড়ে আছে। দেশের জনগনের চিন্তা করার সময় কারো নেই। আজ ডিম,কাল কাঁচা মরিচ, পরশু পেঁয়াজ,রসুন একটার পর একটার দাম বাড়তেই আছে। ধন্যবাদ ভাইয়া

 last year 

আমিও আপনার মতো ৩০ টা ডিম একসাথে ক্রয় করি। ১০/১৫ দিন আগে ৩০ টা ডিম কিনলাম ৩৫০ টাকা দিয়ে। ২/৩ দিন আগে শুনলাম ডিমের দাম অনেক বেড়েছে। শুধু ডিমের দাম নয়, ইলিশ মাছের দাম তো একেবারে আকাশচুম্বী। কালোবাজারি ব্যবসায়ীরা দিনশেষে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে, আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সামনে যে আরো কি কি হবে সেটাই ভাবছি। যাইহোক সময়োপযোগী একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 58729.26
ETH 2640.67
USDT 1.00
SBD 2.47