ঈদের পরদিন নানু বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া (শেষ পর্ব)।
বেশ কিছুক্ষণ এভাবে তার সাথে গল্প করার পর আমরা দুজন সাথে আমাদের বাচ্চাদেরকে নিয়ে হাঁটতে বের হলাম। বের হয়ে চলে গেলাম নানি বাড়ির পেছনে অবস্থিত যে নদীটা আছে তার পাড়ে। নদীর পাড় ধরে আমরা হাঁটছিলাম আর গল্প করছিলাম। কিছুদূর হাঁটার পর সামনে পড়লো নির্মানাধীন একটি ব্রিজ। আমাকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন ব্রিজটি তৈরি করা হচ্ছে কেন? আমি তখন তাকে বললাম এই অঞ্চলের সাথে যেন শহরের দূরত্ব আরো কমে আসে তাই এই ব্রিজটি তৈরি করা হচ্ছে। এই ব্রিজ তৈরি করা হয়ে গেলে আমাদের নানি বাড়ি থেকে শহরে পৌঁছাতে মাত্র ১০ মিনিট সময় লাগবে কারণ। এই ব্রিজ দিয়ে গেলে মাত্র দুই কিলোমিটার পরে শহরে পৌঁছানো যাবে। যদিও ব্রিজের কাজ আগাচ্ছে খুব ধীরগতিতে।
কারণ আমি এর আগের বার যখন এসেছিলাম তখনও যে পর্যন্ত কাজ দেখেছিলাম। এবারও দেখলাম কাজ প্রায় তার কাছাকাছি হয়েছে। বেশি একটা আগায়নি। যাই হোক সেখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে আমরা আবার সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম। যে রাস্তাটা দিয়ে হাঁটছিলাম সেই রাস্তাটার দুধারে প্রচুর গাছপালা ছিলো। সেখানে রোদের লেশ মাত্র ছিল না। এই ধরনের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে সকলেরই অনেক ভালো লাগে। আমাদেরও বেশ ভালো লাগছিল। আমার সঙ্গে যিনি ছিলেন তিনি বলতে লাগলেন এই গ্রামটি দেখে আমার একেবারে সেই ছোটবেলার গ্রামের স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। এখন এই ধরনের গ্রাম খুব একটা দেখা যায় না। আমি তার সাথে সহমত পোষণ করলাম।
বিদ্যুৎ আর পাকা রাস্তা পৌঁছানোর পর গ্রামগুলো সাধারণত তাদের চরিত্র হারিয়ে ফেলে। তবে এই গ্রামটি তার ব্যতিক্রম। এই গ্রামে অন্যান্য গ্রামের মতো একটু পর পর দোকানপাট বা হাট বাজার নেই। আমরা সেই রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটার পর পৌঁছে গেলাম গ্রামের একমাত্র প্রাইমারি স্কুলের সামনে। সেই প্রাইমারি স্কুলের সামনেই রয়েছে বিশাল আকারের একটি মাঠ। মাঠের শেষ প্রান্তে রয়েছে একটি মসজিদ। যে মসজিদের দোতালায় একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা রয়েছে। উনি এত সুন্দর সাজানো গোছানো সবকিছু দেখে বেশ অবাক হয়েছিলেন। গ্রামে সাধারণত সবকিছু এত সাজানো গোছানো থাকে না। আমরা ঘোরাফেরা করতে করতে এর ভেতর মামা ফোন দিয়ে আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরতে বলল। বলল টেবিলে খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।
যাই হোক তখন আমি আমার সেই খালাতো বোনের হাজবেন্ডকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরে এলাম। বাড়িতে ফিরে দেখি পিঠা, মাংস, পোলাও, রোস্ট, মাছ আরও বিভিন্ন রকমের আয়োজন রয়েছে। তবে আগেরদিন থেকেই আমরা মোটামুটি খাওয়ার ভিতরেই ছিলাম। যার ফলে কেউই খুব একটা বেশি খেতে পারিনি। তারপরেও যতটুকু খেয়েছি বেশ তৃপ্তি করে খাওয়া দাওয়া করেছি। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমরা বসে রেস্ট নিচ্ছিলাম। এর ভেতরে আমার এক মামাতো বোন এসে বলব নদীর ওপারে খুব সুন্দর একটি জায়গা আছে। সেখানে আমরা যাব কিনা সেটা সে জিজ্ঞেস করছিলো।
মেয়েরা সবাই তো একলাফে রাজি হয়ে গেল সেখানে যাওয়ার জন্য। তবে আমি খুব একটা রাজি ছিলাম না। তারপরেও যেহেতু সবাই যাচ্ছে তাই তাদের সাথে আমিও এগোতে লাগলাম। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর দেখতে পেলাম সেই নির্মানাধীন ব্রিজের পাশ দিয়ে যে সরু রাস্তাটা নেমে গিয়েছে। সেখান দিয়ে সবাইকে ওপারে যেতে হবে। তবে জায়গাটির অবস্থা এতটাই খারাপ দেখে মনে হচ্ছিল এই সরু রাস্তা দিয়ে ওপারে যেতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যাই হোক তারপরেও মেয়েদের অতি আগ্রহের কাছে কোন বাধাই টিকলো না। তবে আমরা কয়েকজন এপারেই রয়ে গিয়েছিলাম। এপারে বসে আমি আমার মামাতো ভাই আর খালাতো ভাইয়ের সাথে বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করছিলাম।
এভাবে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার পর আমাদের সাথে যারা এসেছিল তারা নদীর ওপার থেকে এপারে চলে এলো। তারপর আমরা নানি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। তারপর সবাই আরও কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে চা নাস্তা খেলাম। এরপর যখন আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেব তখন একটি ছোট্ট সমস্যা সম্মুখীন হলাম। ঈদের তৃতীয় দিন হয় আজ অটো রিক্সা পাওয়া যাচ্ছিল না শহরে ফেরার জন্য। এ কারণে আমাদের বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে করতে একসময় অটোরিকশা পাওয়া গেলো। তারপর আমরা সকলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.