ঈদের পরদিন নানুবাড়িতে বেড়াতে যাওয়া (প্রথম পর্ব)।
একটা সময় ছিল যখন ঈদের পরদিন আমরা খালাতো ভাই বোনেরা মিলে নানি বাড়ি যেতাম। এটা মোটামুটি একটি অলিখিত নিয়ম ছিল। কারণ আমাদের অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি থেকে নানি বাড়ি ছিল বেশ কাছে। আমাদের নানিবাড়ির অবস্থান শহর থেকে মাত্র আট দশ কিলোমিটার দূরে। ঈদের পরে অন্য কোন জায়গায় যাওয়ার থেকে নানি বাড়িতেই যাওয়া পড়তো বেশি। অনেকে মিলে একসাথে যেতাম এই জন্য আনন্দটা হতো অনেক বেশি। কিন্তু বেশ অনেক বছর হল এখন আর আগের মত তেমন যাওয়া হয় না। সাধারণত কোন কাজ ছাড়া আর এখন আমার নানি বাড়ি যাওয়া হয় না।
তো এবার আমার নানি আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছিল ঈদের পরদিন বাড়িতে যাওয়ার জন্য। তিনি বয়স্ক মানুষ কখন কি হয়ে যায় ?এই চিন্তা করে আমরা অনেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নানিবাড়ি যাওয়ার। তাই অনেকদিন পর বেশ কিছু আত্মীয়-স্বজন একসাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হলো। যার ফলে ভালই লাগছিল। গ্রামীণ পরিবেশ আমার এমনিতেই ভালো লাগে। তাছাড়া আমার নানি বাড়ির এলাকাটা আমার কাছে বেশ পছন্দের। কারণ অন্যান্য গ্রামের মতো এই গ্রামটা এখনো পরিবর্তিত হয়ে যায়নি।
নানি বাড়ির এই গ্রামটা এখনো সেই আগেকার গ্রামের মতোই রয়েছে। যদিও সেখানে পাকা রাস্তা বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ গ্রামে যেখানে গাছপালার সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে আগের থেকে। সেখানে আমার নানি বাড়ির এলাকায় গাছের পরিমাণ বলতে গেলে আরো বেড়েছে। যার পরে পুরো এলাকাটা অনেকটা সবুজে ঘেরা থাকে। এই ব্যাপারটা আমার কাছে সবচাইতে বেশি ভালো লাগে। যাইহোক আজকে বেলা বারোটার দিকে আমরা রওনা দিয়েছিলাম। পথের মধ্যে টুকিটাকি কেনাকাটা করতে করে গিয়ে নানি বাড়ি পৌঁছতে প্রায় বেলা একটা বেজে গিয়েছিল।
সেখানে পৌঁছে প্রথমে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলাম। তারপর হালকা কিছু নাস্তা করলাম। আমি অবশ্য তেমন কিছু খাইনি শুধু শরবত ছাড়া। কারণ গত দুদিন ধরে বেশ ভারী খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে। তাই শরীরের ভিতর কিছুটা অস্বস্তি টের পাচ্ছিলাম। সেজন্যই অন্য কোন কিছু খাইনি শরবত ছাড়া। নাস্তা করার পর আমরা ঘুরে ফিরে বাড়ির আশেপাশে দেখতে লাগলাম। খেয়াল করে দেখলাম নানি বাড়ির ঠিক পাশেই ছোট্ট একটি ফলের বাগান করা হয়েছে। এমনিতেই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই নানারকম ফলের গাছ থাকে। এসব ফল বেশিরভাগই হয় স্থানীয় প্রজাতির।
কিন্তু এবার যে বাগানটি দেখতে পেলাম সেখানে খেয়াল করে দেখলাম বিভিন্ন প্রজাতির আমের গাছ লাগানো হয়েছে। এবং ছোট ছোট সেই গাছগুলিতে বেশ ভালো পরিমান আম ধরেছে। কয়েকটি লিচু গাছও দেখতে পেলাম। একটি ছোট্ট লিচু গাছে খেয়াল করে দেখলাম বেশ ভালো লিচু হয়েছে। লিচু গাছের একটু দূরেই দেখতে পেলাম একটি জামরুল গাছ। তবে এই জামরুলটি সবুজ রঙের। এই ধরনের জামরুল আমি এর আগে খাইনি। মামাদের কাছ থেকে শুনতে পেলাম এই জামরুল গুলো নাকি খেতে বেশ মিষ্টি হয়।
জামরুল গাছের একটু পাশেই মামা বলল একটি ব্যানানা ম্যাংগো গাছ লাগানো আছে। সেই গাছের এক একটি আমের ওজন নাকি হয় এক থেকে দেড় কেজি। কথাটি শুনে আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম। কারণ এতোটুকু একটা গাছে এত বড় সাইজের আম ধরলে কেমন দেখাবে আমি সেটাই চিন্তা করছিলাম। তার পাশে দেখতে পেলাম ছোট্ট একটি কদবেল গাছ। তাছাড়া একটি কাঁঠাল গাছও ছিল সেই বাগানে। আমরা সব দেখে মামাকে বললাম একটি দেশি বড়ই গাছ লাগানোর প্রয়োজন ছিল। কথা শুনে মামা বলল একটা বড়ই গাছ ছিল কিন্তু সেটা কেটে ফেলা হয়েছে। কথাটি শুনে আমি বললাম বড়ই গাছটি কাটা উচিত হয়নি। কারণ এখন আমাদের দেশে দেশিও বড়ইয়ের ক্রাইসিস চলছে। বাজারে গেলেই বিভিন্ন রকমের হাইব্রিড প্রজাতির বড়ই দেখা যায়। কিন্তু সেই হাইব্রিড বড়ইয়ের ভিড়ে দেশি বড়ই এর পরিমাণ থাকে খুবই কম। তাছাড়া সেই ফল বাগানে কোন জাম গাছ দেখতে না পেয়ে আমরা বললাম জাম গাছও লাগানো উচিত ছিল।
এভাবে বেশ কিছুক্ষণ সেই ফলের বাগানে সময় কাটিয়ে আমরা আবার বাড়ির ভেতরে ফিরে এলাম। বাড়ির ভেতরে ফিরে আমরা সবাই মিলে নানা বিষয় নিয়ে গল্প করতে লাগলাম। আমাদের সাথে ছিল আমাদের এক খালাতো বোনের হাসবেন্ড। তিনি এবারই প্রথম আমাদের নানি বাড়িতে এসেছেন। তাই তাকে নানি বাড়ির বিভিন্ন রকম গল্প আমরা বলছিলাম। তিনিও বেশ আগ্রহ নিয়ে সেই গল্পগুলি শুনছিলেন। (চলবে)
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার মত আমার নানাবাড়ি ও বাড়ির পাশেই। আর আপনার নানা বাড়িতে ভরপুর আম লিচু সহ জামরুল রয়েছে। কিছুদিন পরে যেতে হবে তাহলে আম লিচু আর জামরুল ভরপুর খাওয়া যাবে হা হা হা। তবে নানা বাড়িতে গেলে কিন্তু অনেক মজা হয় আপনারা যেমন সবাই মিলে একসাথে গল্প করে আড্ডা দিয়েছেন আমরাও কিন্তু ঈদের দিন রাতের বেলায় নানা বাড়িতে লুডু খেলার একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছিলাম যেটা খুব শীঘ্রই শেয়ার করবো ইনশাল্লাহ।
আসলে আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে কোথাও গেলে এমনিতেই অনেক মজা হয়। যদিও দিন দিন আমাদের দেশের লোকদের মাঝে আত্মীয়তার বন্ধন গুলো ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এই ধরনের ফ্যামিলি গ্যাদারিংস এখন আর খুব একটা দেখা যায় না।
হ্যাঁ ভাই ঈদ মানেই তো নানুর বাড়ি এটা আবার বলার দরকার নেই ৷ আসলে নানুর বাড়ির আনন্দ টা সত্যি মনোমুগ্ধকর ৷ ভালো লাগলো ঈদের পরেরদিন সবাই মিলে নানির বাড়িতে বেড়াতে ৷ সেই সাথে দেখি নানির বাড়িতে আম বেশ ভালো ফলন ধরেছে ৷ ভালো লাগলো ইনজ করুন ভাই ৷
আমি অনেক বছর পর ঈদের পর নানু বাড়িতে গেলাম। গিয়ে সময়টা বেশ ভালোই কাটিয়েছি।
বাহ্ ভাইয়া আপনার নানী বাড়ীর এত সুন্দর সুন্দর জামরুল আর আম দেখে তো নিজেকে ধরে রাখাটাই যেন মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। বেশ সুন্দর সময় কাটিয়েছেন সবাই মিলে নানু বাড়িতে। আসলে এরকম অনুষ্ঠানেই পরিবারের সবাই একত্রে হওয়া যায়। আর এত করে ফ্যামিলি বন্ডিং অনেকগুন বেড়ে যায়।
ঠিকই বলেছেন পরিবারের সকলে একসাথে সময় কাটালে আসলেই ফ্যামিলি বন্ডিংটা অনেক বাড়ে।