হঠাৎ জীবনের ছন্দপতন (শেষ পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক


নিজের জ্বর সেরে যাওয়ার ফলে মনে হচ্ছিলো যে দুর্বলতাটা অনুভব করছি সেটা দু'একদিনেই ঠিক হয়ে যাবে। শুধু দুটো দিন রেস্ট নিলে আশা করি আর কোন সমস্যা থাকবে না। তবে সামান্য একদিনের জ্বরে এতটা দুর্বল হয়ে যাওয়ার ফলে কিছুটা টেনশনও হচ্ছিল। কারণ এর আগে কখনো আমার একদিনের জ্বরে এতটা দুর্বল লাগেনি। মাঝে মাঝে মনে হয়েছিল ডেঙ্গু টেস্টটা করিয়ে আসি। পরে চিন্তা করলাম দু একদিন যাক। যদি এমন সমস্যা থাকে তাহলে টেস্ট করিয়ে আসবো। যাইহোক এভাবেই দিনটি মোটামুটি পার হয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু বিকালের দিকে হঠাৎ করে আমার মেয়ে স্কুল থেকে আসার পথে একবার বমি করলো। যদিও সে সেদিন ইস্কুলে যেতে খুব একটা রাজি ছিল না। যাওয়ার আগে বলছিল শরীরটা খুব একটা ভালো লাগছে না। আমি আর আমার স্ত্রী মনে করেছিলাম হয়তো স্কুলে না যাওয়ার জন্য এই ধরনের কথা বলছে। কিন্তু তার বমি করা দেখে মনে হোলো তাকে আজ স্কুলে না পাঠালেই হোতো।

Polish_20230804_215111748.jpg

স্কুল থেকে মেয়ে বাসায় এসে রেস্ট নিচ্ছিলো। এর ভিতরে সন্ধ্যার পরে মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে দেখি মাথা কিছুটা গরম। পরে থার্মোমিটারে মেপে দেখি একশোর কাছাকাছি টেম্পারেচার উঠে গিয়েছে। বাচ্চা মানুষ ঘরে থাকায় সবসময় দু চারটে ওষুধ এমার্জেন্সি ঘরে রাখি। জ্বর ১০০ ওঠার সাথে সাথে তাকে জ্বরের ওষুধ খাওয়ালাম। এদিকে থেকে বিকাল থেকে তাকে কাশির ওষুধও খাওয়ানো হচ্ছিলো। কারণ দুদিন থেকেই দেখা যাচ্ছিল সে হালকা কাশি দিচ্ছে। এদিকে জ্বরের ওষুধ খাওয়ানোর পরেও খেয়াল করে দেখলাম তার জ্বর কমছে না। মাঝে মাঝেই তার জ্বর মাপতে লাগলাম। জ্বর মাপছিলাম আর খেয়াল করে দেখছিলাম একটু পরপরই তার জ্বর বেড়ে যাচ্ছে। একপর্যায়ে তার জ্বর উঠে গেল ১০৩ এ। হঠাৎ এতটা জ্বর দেখে আমি বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। কোন রকমে আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম আর পরিকল্পনা করলাম পরদিন সকালে উঠেই মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

পরদিন সকালে উঠে আমরা তরিঘড়ি করে তৈরি হয়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম। যাওয়ার আগে বাসায় কিছু কাপড়চোপড় গুছিয়ে রেখেছিলাম। কারণ এর আগের আগেও অনেকবার এমন হয়েছে। আমরা মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গিয়েছি। ডাক্তার দ্রুত তাকে হসপিটালে ভর্তি করতে বলেছে। যার ফলে এবার ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগেই হসপিটালে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি অনেকটা সম্পন্ন করে রেখেছিলাম। হাসপাতালে যাওয়ার পরে ডাক্তার ভর্তি করতে বললে তখনই বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে বাচ্চা আর তার মাকে ক্যাবিনে রেখে আসবো। যেহেতু সেই হাসপাতালটি আমাদের বাসা থেকে খুবই কাছে। তাই চিন্তা করেছি তাদেরকে কেবিন ঠিক করে সেখানে রেখে তারপর আমি বাসায় এসে প্রয়োজনীয় কাপড় চোপড় আর জিনিসপত্র নিয়ে যাবো। যাইহোক বাচ্চা ডাক্তারের কাছে দেখানোর পর ডাক্তার ভর্তি দিলোনা। ডাক্তার কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে বলল এগুলো খাওয়ান আশা করি ঠিক হয়ে যাবে। আর ডেঙ্গু টেস্ট করতে দিলো। বলল কাছেই একটা ক্লিনিক আছে ওখানে গিয়ে ডেংগু টেস্ট করান। ১ ঘন্টার ভেতর তারা রেজাল্ট দিয়ে দেবে।

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে চলে গেলাম সেই ক্লিনিকে ডেঙ্গুর টেস্ট করানোর জন্য। টেস্টের জন্য মেয়ের স্যাম্পল দেয়া হলে আমি মেয়ে আর মেয়ের মাকে নিয়ে বাসায় গেলাম। চিন্তা করলাম কিছুক্ষণ রেস্ট নেই। কারণ আমাকে আবার এক ঘন্টা পরে টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে দেখাতে হবে। এমনিতেই আমার নিজের শরীর ছিল অনেক দুর্বল। সেই সাথে পরদিন সকালে এমন দৌড়াদৌড়ি ফলে শরীরটা প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছিল। যাইহোক ঘন্টাখানেক রেস্ট নিয়ে আমি টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার টেস্টের রিপোর্ট দেখে বলল ডেঙ্গুর নেগেটিভ এসেছে। যেহেতু ডেঙ্গু হয়নি তাহলে ধরে নেয়া যায় এটা সাধারণ ভাইরাল ফিভার। সময়মতো ওষুধগুলি খাওয়ান তাড়াতাড়ি বাচ্চা সুস্থ হয়ে যাবে। ডাক্তারের কাছ থেকে এই আশ্বাস পেয়ে বেশ ভালো লাগলো।

তারপর আমি বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসে মেয়েকে ওষুধ খাওয়ালাম। কিন্তু ওষুধ খাওয়ানোর পরও অনেক সময় চলে যায় কিন্তু তার জ্বর আর কমে না। যতবারই জ্বর মাপি ততবারই দেখি জ্বর ১০৩ ডিগ্রীর উপরে। এভাবে দেখতে দেখতে সকাল থেকে রাত হয়ে গেলো কিন্তু জ্বর কমার কোন লক্ষণ দেখছি না। এই অবস্থা দেখে আমার খুব টেনশন হতে লাগলো। এদিকে আমার এক কাজিন আছে ডাক্তার। তার কাছে ফোন করে কিছু পরামর্শ নিলাম। সে পরামর্শ দিলো ওষুধে যদি জ্বর না কমে তাহলে বারবার গা মুছে দিতে। কিন্তু সেটাও করতে আমি সাহস পাচ্ছিলাম না। কারণ আমার মেয়ের সর্দি-কাশির ও সমস্যা রয়েছে। বারবার পানি দিয়ে গা মুছলে যদি সর্দি কাশি বেড়ে যায় তাহলে হিতে বিপরীত হবে। তখন সে আমাকে পরামর্শ দিল হালকা কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে সেটা দিয়ে গা মুছতে। তাহলে খুব একটা সমস্যা হবে না।

এই পদ্ধতি এপ্লাই করার পরে দেখলাম তার জ্বর ১০৩ ডিগ্রি থেকে কিছুটা কমে এলো। তখন বুঝতে পারলাম এই পদ্ধতিটা আরো আগে এপ্লাই করা দরকার ছিলো। তারপর রাতে আরো কয়েকবার এভাবে তার গা মুছে দেয়া হলো। সেদিন সারারাত বলতে গেলে আমরা স্বামী স্ত্রী দুজনের কেউই ঘুমাতে পারিনি। এমনিতে জ্বরের কারণে আমার শরীর প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছিল। তারপর সারা রাতের এই ধকলের কারণে সকালে শরীরটা ভয়াবহ ক্লান্ত লাগতে লাগলো। তবে ক্লান্ত লাগলেও আমার স্ত্রী সকালে একটা সুখবর দিলো। বলল জ্বর এখন ১০০ ডিগ্রীর নিচে চলে এসেছে। তার কাছ থেকে খবরটা শুনে আমার যে কতটা ভালো লেগেছিল সেটা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। আসলে সন্তানের বিপদে বাবা-মা কখনো স্থির থাকতে পারে না। মেয়েটার প্রচন্ড জ্বর দেখে মনটা খুবই খারাপ ছিলো। কিন্তু সকালে উঠেই এই ভালো সংবাদ শোনার পরে মনটা এমনিতেই ভালো হয়ে গেলো।

আমি পাশের রুমে শুয়েছিলাম। এই খবরটা শোনার সাথে সাথে আমি উঠে মেয়ের কাছে চলে গেলাম। তারপর বেলা বাড়ার সাথে সাথে দেখলাম মেয়ের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। আগের রাতে আমি আর আমার স্ত্রী দুজনেই সমানে সৃষ্টিকর্তাকে ডেকেছি। সকালে তার অবস্থার উন্নতি দেখে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানালাম। তারপর আস্তে আস্তে আমার মেয়ের অবস্থার অনেকটা উন্নতি হলো। এভাবেই আমার ভয়াবহ তিনটে দিনের সমাপ্তি হোলো। যদিও এখনো কিছুটা ভয়ে রয়েছি। কারন আমার মেয়ে এবং আমার দুজনের কারো শরীরই পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। যে কোন সময় আবার হয়তো খারাপ দিক যেতে পারে। এই টেনশন টা মাথায় সব সময় কাজ করছে। যাইহোক শেষ পর্যন্ত যে আমরা আবার সুস্থতা ফিরে পেয়েছি তাতেই সৃষ্টিকর্তার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করছি। আর এই বিপদে একজন মানুষের কথা না বললেই নয়। তিনি হচ্ছেন আমাদের সকলের প্রাণপ্রিয় @rme দাদা। তিনি দুটো দিন যেভাবে আমাকে মানসিক সাহস যুগিয়েছেন, সমর্থন দিয়েছেন সেটা এক কথায় অবিশ্বাস্য। তার কাছ থেকে নানা রকম দিক নির্দেশনা পেয়েছি, পরামর্শ পেয়েছি আর পেয়েছি অফুরন্ত সাহস। দাদাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করছি।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

আপনারা বাবা মেয়ে দুজনই জ্বরে পরেছেন আর দুর্বল সেটা জেনে সত্যি ই খুব খারাপ লেগেছে।আসলে ভাইরাস জ্বর হলে ঘরে সবার মাঝেই ছড়ায়।এখন কিছুটা সুস্থ আছেন জেনে ভালো লাগলো।দুজনেই মাল্টা খাবেন।আর লিকুইড খাবার বেশী বেশী খাবেন।আশাকরি দুর্বলতা কেটে যাবে।কিছুদিন আগে দাদা ও এমন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল। তাই দাদা ঠিক পরামর্শটাই দিতে পারবে।দাদা আমাদের জন্য যা করেন তা বলে আর শেষ করা যাবেনা।দাদার প্রতি রইলো কৃতজ্ঞতাবোধ।আর আপবার আর আপনার মেয়ের জন্য রইলো অনেক দোয়া। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন ইনশা আল্লাহ। ধন্যবাদ ভাইয়া অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য।

 last year 

সন্তান অসুস্থ হলে বাবা মায়ের দুশ্চিন্তার কোনো শেষ নেই। আপনারা সারারাত না ঘুমিয়ে সন্তানের পাশে থেকেছেন। আসলে মা বাবারা এমনই হয়। যাইহোক শেষ পর্যন্ত আপনারা দুইজন সুস্থ হয়েছেন,এটা জেনে খুব ভালো লাগলো। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবেন। আশা করি খুব শীঘ্রই দুর্বলতা কেটে যাবে। আপনাদের জন্য শুভকামনা রইল।

 last year 

জি ভাইয়া শুনেছিলাম বাবুর জ্বরের কথা। কিন্তু ভালো লাগলো এটা যেনে যে বাবুর ডেঙ্গু টেস্ট নেভেটিভ এসেছে। এখন যে হারে চারদিকে ডেঙ্গু বেড়েই চলেছে। অনেক ক্লান্ত আর টেনশনের কয়েকটি দিন কাটালেন। আসলে বাচ্চারা অসুস্থ্য হলে বাবা মায়ের সব থেকে চিন্তায় দিন কাটে। আশা করি সব সমস্যা সমাধান করে আবার নতুন উদ্যামে কাজ করতে পারবেন।

 last year 

পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে সেটা দিয়ে গা মুছলে খুব দ্রুতই ফল পাওয়া যায়। জ্বর কমার ক্ষেত্রে ওষুধের চেয়ে এই পদ্ধতিটা বেশি কাজে লাগে। কয়েকদিন আগে আমারও এমন জ্বর হয়েছিল। এভাবেই জ্বর কমেছে। যাইহোক যেহেতু ডেঙ্গু হয়নি তাই চিন্তার খুব একটা কারণ নেই। এরকম পরিস্থিতিতে নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখা সত্যিই অনেক মুশকিল। আপনি এবং আপনার পরিবারের সবাই অনেক খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে ছিলেন বুঝতেই পারছি ভাইয়া। আর দাদা আপনাকে সাপোর্ট দিয়েছেন জেনে সত্যিই ভালো লাগলো। দাদা সত্যি একজন মহান মানুষ। তিনি সবার বিপদে পাশে থাকেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 58603.60
ETH 2628.30
USDT 1.00
SBD 2.45