হঠাৎ জীবনের ছন্দপতন (প্রথম পর্ব)।
আমাদের এই জীবনে মাঝে মাঝে ছন্দপতন ঘটে। স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে করতে আমরা ভুলে যাই যে আমাদের জীবনটা হঠাৎ করে অন্যরকম হতে পারে। আমরা সবাই নিজেদের জীবনকে ঘিরে পরিকল্পনা সাজাই এবং সেই পরিকল্পনা মোতাবেক জীবনকে পরিচালনা করতে চাই। কিন্তু সেটা কি সব সময় হয়ে ওঠে? মূল পরিকল্পনাকারী যিনি তিনি অনুমোদন না দিলে সেটা কিছুতেই হয় না। এইতো যেমন আমার কথায় ধরুন না। মাত্র ৩-৪ দিন আগেও নতুন এ মাস ঘিরে নিজের পরিকল্পনা সাজিয়েছিলাম। হঠাৎ করেই ছোট্ট দুটো ঘটনার কারণে পুরো মাসের পরিকল্পনা মনে হচ্ছে পরিবর্তন হয়ে যাবে। গত কয়েক মাস ধরে শরীরটা মোটামুটি সুস্থই ছিলো। আর এই সুস্থতার কারণেই হয়তো ভুলে গিয়েছিলাম যে অসুস্থতা নামক একটি জিনিসও আমাদের জীবনের সাথে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত। এই ভুলে যাওয়ার কারণেই হয়তো সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে আমাকে মনে করিয়ে দেয়া হলো।
মাত্র কয়েকদিন আগের কথা। বন্ধু ফেরদৌস সকালে ফোন দিয়ে বলল পদ্মা নদীতে গোসল করতে যাবা নাকি? এমনিতেই বাইরে প্রচন্ড গরম পড়েছে। বাসায় থাকলে সারাদিন এসি রুমেই বসে থাকি। তাই ফেরদৌস এর প্রস্তাবে আর না করিনি সাথে সাথে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। এমনিতেই আমরা দুই বন্ধু পদ্মা নদীতে গোসল করতে অনেক পছন্দ করি। অনেক দিন পর পদ্মা নদীতে গোসল করা হবে শুনে আর কোন কিছু চিন্তা না করেই ফেরদৌসের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। যথারীতি সকালবেলায় বাসা থেকে বের হই ফেরদৌসের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে। উদ্দেশ্য ছিল আগের মতই দুজন এক জায়গায় মিলিত হব। তারপর সেখান থেকে যাব বন্ধু রাফসানের শোরুমে। তারপর ওকে সাথে নিয়ে যাব গোসল করতে।
তবে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় খেয়াল করে দেখলাম গলাটা কেমন যেন হালকা ব্যথা করছে। তবে সামান্য এই ঘটনা পাত্তা না দিয়ে আমি ফেরদৌসের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রওনা দিয়ে আমি পৌঁছলাম আমাদের সবার আড্ডার স্থল ইউসুফ ভাইয়ের চায়ের দোকানে। সেখানে পৌঁছে দেখি ফেরদৌস তখনও আসেনি। এর ভেতরে খেয়াল করে দেখলাম গলার ব্যাথাটা হালকা কিছুটা বেড়েছে। আমি সাধারণত বাইরে গেলে চা খুবই কম খায়। তবে গলায় ব্যথা হওয়ার জন্য ইউসুফ ভাইকে বললাম এক কাপ আদা চা দিতে। ইউসুফ ভাইয়ের হাতের আদা চায়ের বেশ সুনাম। তার দেয়া চায়ের কাপে চুমুক দেয়ার পর কিছুটা ভালো লাগলো। তখন মনে করলাম দু একবার গরম পানি খেলেই সমস্যাটা ঠিক হয়ে যাবে। এর কিছুক্ষণ পর ফেরদৌসের সেখানে উপস্থিত হলো। তারপর দুই বন্ধু মিলে রাফসানের শোরুমের দিকে যেতে লাগলাম। যাওয়ার সময় দুজন গল্প গুজব করতে করতে যাচ্ছিলাম। তবে আমি গলার অস্বস্তিটা টের পাচ্ছিলাম।
যাইহোক রাফসানের শো রুমে পৌঁছে আমরা কথাবার্তা বলতে লাগলাম। তখন খেয়াল করে দেখলাম গলার ব্যাথাটা আবার কিছুটা বেড়েছে। এর ভেতরে রাফসান আমাদেরকে বলল হাতের কাজটা শেষ করে তারপর ও বের হবে। তখন ফেরদৌস বলল চলো দুজন গিয়ে চা খেয়ে আসি। যদিও দুপুরের এই সময়টাতে আমি কখনোই বাইরে চা খাই না। তাও গলার সমস্যার জন্য ফেরদৌসের সাথে গেলাম চা খেতে। বন্ধু রাফসানের এলাকার ডাবল হিটের চা আমাদের সবারই বেশ প্রিয়। সেখানে গিয়ে চা খেয়ে একটু ভালো লাগতে লাগলো। তার কিছুক্ষণ পরে রাফসানের কাজ শেষ হলে আমরা তিন বন্ধু রওনা দিলাম পদ্মা নদীর উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছে দেখি নদীর পানি অনেক ঘোলা। পানির এ অবস্থা দেখে আমার পানিতে নামার আগ্রহ কিছুটা কমে গিয়েছিলো। তবে যেহেতু এতদূর এসেছি তাই চিন্তা করলাম কিছুক্ষণ গোসল করে দেয়া যায়। এই চিন্তা ভাবনা করে আমি আর ফেরদৌস নদীতে নামলাম। নদীতে নেমে এই গরমের ভেতরে নদীর ঠান্ডা পানি বেশ ভালোই লাগছিল। তবে একটু পরপরই নানারকম নোংরা ভেসে আসছিলো। বিশেষ করে একের পর এক কচুরিপানা ভেসে আসছিল আমাদের দিকে। এ ব্যাপারটা আমাদের গোসল করার মজার অনেকটাই নষ্ট করে দিয়েছিলো।
যাই হোক বেশ কিছুক্ষণ আমরা দুই বন্ধু গোসল করার পরেও দেখি রাফসান নদীতে নামছে না। শেষ পর্যন্ত আমাদের পীড়াপীড়িতে সেও নামলো। তারপর তিন বন্ধু মিলে কিছুক্ষণ গোসল করে উঠে গেলাম। তারপর সেখান থেকে সোজা বাড়িতে চলে এলাম। আসার আগে আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম পরদিন আমরা শহরের একটি রেস্টুরেন্টে বুফে খেতে যাবো। কিন্তু তখনও আমি জানিনা পরবর্তী দিনের পরিকল্পনা সৃষ্টিকর্তা ইতিমধ্যে আমার জন্য করে রেখেছেন। বাসায় পৌঁছে আমি খাওয়া দাওয়া করে নামাজ পড়ে একটু রেস্ট নিচ্ছিলাম। সন্ধ্যার পরে খেয়াল করে দেখি শরীরে কিছুটা জ্বর মনে হচ্ছে। হঠাৎ করে জ্বর হওয়াতে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। কারণ আমাদের এলাকাতে ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরপরে দেখি জ্বর আস্তে আস্তে করে বাড়তে লাগলো।
প্রথমে যখন জ্বর ১০০ ডিগ্রীর আশেপাশে ছিল তখন খুব একটা ভয় পাইনি। কিন্তু জ্বর যখন ১০২° ছাড়িয়ে গেলো তখন আমি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে হয়তো আমার ডেঙ্গু হয়েছে। ডেঙ্গু জ্বর এমনই মারাত্মক একটি অসুখ যেটি যার হয়নি সে কখনো বুঝতে পারবে না। ভুক্তভোগী মাত্রই এটার ভয়াবহতা জানে। যাই হোক সিদ্ধান্ত নিলাম একদিন পরে ডেঙ্গু টেস্ট করাব। এর ভেতরে আমার এক কাজিন আছে ডাক্তার। তার সাথে পরামর্শ করলে সে বলল দুদিন পরে টেস্ট করাতে। তাহলে নাকি প্রোপার রেজাল্টটা আসবে। যাইহোক আমিও চিন্তা করলাম তাহলে দুটো দিন দেখি। তবে সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় ২৪ ঘন্টার ভেতরে আমার জ্বর চলে গেলো। জ্বর চলে গেলে তখন আমার মনে হলো সম্ভবত ডেঙ্গু হয়নি। শরীর দুর্বল লাগলেও মনটা বেশ ভালো হয়ে গেলো। চিন্তা করছিলাম যাক এ যাত্রায় অল্পের উপর বেঁচে গেলাম। কিন্তু তখনও আমি জানতাম না সামনে আরো দুটো দিন আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে (চলবে)
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
এই সময় জ্বর হলেই মনের মাঝে অজানা ভয় এসে ভিড় করে। ডেঙ্গুর প্রকোপ এতটাই বেড়ে গেছে যে জ্বর হলেই ভয় লাগে। তবে এরপর কি হলো এটা জানতে খুব ইচ্ছে করছে ভাইয়া। আপনার লেখাগুলো পড়েই তো ভীষণ ভয় ভয় লাগছে। আল্লাহ আপনাকে সুস্থ রাখুক এবং আপনার পরিবারকে সুস্থ রাখুক এই দোয়া করি সবসময়।🤲🤲
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দেখে জ্বর হলেই সবাই ভয় পেয়ে যায় আজকাল।যাই হোক তবুও সর্তক থাকা ভালো।আপনার টনসিল থেকে হয়তো জ্বর হয়েছে।লবন, গরম পানি দিয়ে গার্গল করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। আর আদা,গরম মসলা চা পান করতে পারেন। গলা ব্যথা শুরু হওয়ার পর নদীতে নেমে গোসল করা উচিত হয়নি আসলে।যাক আল্লাহ ভরসা জ্বর নেই শুনে ভালো লাগলো। তবে শরীর দুর্বল থাকে এই জ্বরে।চিকেন স্যুপ বাড়িতে করে খেলে ভীষণ উপকৃত হবেন আশাকরি। দোয়া করি আল্লাহ সুস্থতা দান করুন, আমিন।
আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা করি ঠিকই, কিন্তু এরমধ্যে যে আমরা অসুস্থ হয়ে যেতে পারি সেটা ভাবি না। আমারও জ্বর হওয়ার আগে গলা ব্যাথা শুরু হয়। তখনই ভাবি যে জ্বর আসবে। তখন চা এবং গরম পানি বেশি বেশি পান করি। এগুলো পান করার ফলে অনেক সময় জ্বর আসেও না। তবে ডেঙ্গু জ্বর খুবই মারাত্মক। আমাদের এখানে বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। একটি ১১ বছর বয়সী মেয়ে ইতিমধ্যে মারা গিয়েছে। তাই সবার উচিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আপনার জ্বর আসার পর আবার এতো তাড়াতাড়ি চলেও গেল। পরবর্তীতে কি হলো সেটা জানার অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।