হঠাৎ ঝড়ে এলোমেলো জীবন (শেষ পর্ব)।
প্রচন্ড রাগে সুরুজ গর্জে ওঠে। সুরুজ বলে এখন আর আমি আমার জীবন নিয়ে চিন্তা করি না। তোরা তোদের প্রাণ নিয়ে চিন্তা কর। পুলিশ যদি তোদের কিছু না করে তাহলে আমি নিজে তোদেরকে খুন করবো। এভাবে আরো কিছুদিন পার হওয়ার পরে একদিন থানার দারোগা সুরুজ কে ফোন দেয়। ফোন দিয়ে সুরুজ কে দেখা করতে বলে। থানায় গেলে দারোগা সুরুজকে বেশ সমাদর করে। তারপর ইনিয়ে বিনিয়ে সে সুরুজকে আসামিপক্ষের সাথে একটা সমঝোতা করার প্রস্তাব দেয়। এই কথা শুনে সুরুজ তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। সুরুজ দারোগাকে বলে আপনি আসামি গ্রেফতার করার পরিবর্তে তাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন? সে বলতে থাকে আমার থানা পুলিশ কোন কিছুই লাগবেনা। আমার মেয়ে হত্যার প্রতিশোধ আমি নিজেই নেবো।
এই কথা বলে সুরুজ থানা থেকে চলে আসে। থানা থেকে বের হওয়ার পর সুরুজ বুঝতে পারে থানা পুলিশের কাছ থেকে কোন সাহায্য পাওয়া যাবে না। তার মেয়ের বিচার তার নিজেরই করতে হবে। কিন্তু সুরুজ এটাও জানে একবার এই লাইনে অগ্রসর হলে তার আর ফিরে আসার কোন পথ থাকবে না। তার পরেও সে দৃড় প্রতিজ্ঞ সে যেভাবেই হোক তার মেয়ে হত্যার প্রতিশোধ নেবে। কিছুদিন পর সুরুজ আবার তার দোকানে ফিরে আসে। কিন্তু দোকানে ফিরলেও কাজে কর্মে তার একেবারেই মন নেই। সব সময় মন মরা হয়ে বসে থাকে। আর মনে মনে পরিকল্পনা করতে থাকে কিভাবে তার মেয়ের খুনিদের উপর প্রতিশোধ নেয়া যায়।
এর ভিতর সে একদিন তার এক পরিচিত লোকের সাথে কথায় কথায় তার পরিকল্পনার কথা জানায়। সেই লোক সুরুজকে খুবই ভালো জানতো। তিনি সুরুজকে পরামর্শ দেয় এইসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে। এখন তুমি যদি কিছু করতে যাও তাহলে তুমি নিজেও বিপদে পড়বে। কিন্তু সুরুজ নাছোড়বান্দা। সুরুজ তাকে বলে কিভাবে আমার মেয়ে হত্যার প্রতিশোধ নিতে পারি আপনি আমাকে সেই পরামর্শ দেন। তখন সেই লোক সুরুজকে বলে ওরা একজন রাজনৈতিক নেতার আশ্রয় রয়েছে। ওদের বিরুদ্ধে কিছু করতে হলে তোমাকে যথেষ্ট ক্ষমতাবান হতে হবে। সে ক্ষেত্রে তুমি অন্য কোন নেতার কাছে আশ্রয় গ্রহণ করো।
তারপর তার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা কর। তারপর সময় সুযোগ বুঝে তোমার মেয়ে হত্যার সাথে যারা জড়িত। তাদের উপর প্রতিশোধ নিতে পারবে। পরামর্শটা সূরুজের খুব পছন্দ হয়। তারপর একদিন সুরুজ স্থানীয় আরেক প্রভাবশালী নেতার কাছে যাতায়াত শুরু করে। অল্প কিছুদিনেই সুরুজ তার আস্থা ভাজন হয়ে ওঠে। সুরুজ সেই নেতার সাথে কাছে যাওয়ার পর থেকে তার সাথে বেশ কিছু ছেলে পেলে জুটে গিয়েছে। সেই ছেলেগুলো সুরুজকে খুব মান্য করে। এর ভেতরে সুরুজ টাকা-পয়সা খরচ করে কিছু অস্ত্রও কিনেছে। আবার নেতার কাছ থেকেও বেশ কিছু অস্ত্র পেয়েছে। আস্তে আস্তে সুরুজ সেই নেতার ক্যাডারে পরিণত হয়।
এদিকে সুরুজের এই পরিবর্তন দেখে সুরুজের মেয়ের খুনিরা বেশ আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তারা বুঝতে পারে সুরুজ তাদের উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই এসব কিছু করছে। আর এদিকে সুরুজ মনে মনে পরিকল্পনা করতে থাকে কিভাবে তার মেয়ের হত্যার প্রতিশোধ সে নেবে। সুরুজ তার কিছু লোক সেই ছেলেগুলোর পিছনে লাগিয়ে রেখেছে। তারা কখন কোথায় যায় সেই খবর বের করার জন্য। কিছুদিন পরে সুরুজ জানতে পারে তার মেয়েকে যে ছেলেটা গুলি করেছে। সে প্রতিদিন রাত্রে একটা বাড়িতে যায়। সেই বাড়ির একটা মেয়ের সাথে ছেলেটার সম্পর্ক রয়েছে। সুরুজ পরিকল্পনা করে সেই বাড়ির কাছ থেকেই তাকে ধরতে হবে।
তার আগে সে তার দলের লোকজনকে আরো ভালোভাবে সেই ছেলেটার উপর নজর রাখতে বলে। কারণ সুরুজ চিন্তা করে দেখেছে প্রথম সুযোগেই যদি সেই শয়তানটাকে মারতে না পারে। তাহলে সে পালিয়ে যাবে। তাই আক্রমণ করার আগে দরকার একটা পারফেক্ট প্ল্যান। পরিকল্পনা মোতাবেক সুরুজ তার দলের লোকজন নিয়ে আগে থেকেই সেই বাড়ির আশেপাশে অন্ধকারে ওৎ পেতে থাকে। রাত তখন দশটা বাজে। যার গুলিতে সুরুজের মেয়ে মারা গিয়েছে সেই ছেলেটা সাথে আর একজনকে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে করে সেই বাড়ির সামনে উপস্থিত হয়। তারা সেই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করে অপেক্ষা করতে থাকে দরজা খোলার জন্য। এর ভেতরে সুরুজের লোকজন এসে তাদেরকে ঘিরে ফেলে। তারপর সুরুজ নিজ হাতে ঠান্ডা মাথায় তাদের দুজনকে গুলি করে হত্যা করে। এভাবেই সুরুজ তার নিষ্পাপ মেয়ে হত্যার প্রতিশোধ নেয়। (শেষ)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
ভাইয়া আপনার লেখা গল্পের শেষ পর্বটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। আসলে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়াটা এক ধরনের অপরাধ। কিন্তু বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের কিছুই করার নেই।এখনকার আইনের লোকজন হয়ে গেছে ক্ষমতাধারী মানুষের হোম গার্ড। যাহোক, শেষ পর্যন্ত সুরুজ খুবই সুন্দর সাজানো গোছানো পরিকল্পনা করে তার মেয়ে হত্যার খুনিকে নিজ হাতে শাস্তি দিতে পেরেছে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এলোমেলো জীবনের গল্প ভালো লিখেছেন, এজন্য ধন্যবাদ। একজন পিতা নিজের নিস্পাপ মেয়ের খুনের বদলা নিজ হাতে নিয়েছেন। প্রতিশোধ নিয়েছেন। কিন্তু আইনের চোখে পিতাও অপরাধী হয়ে গেলেন। আইন নিজ হাতে তুলে নিয়ে।আশাকরি আমরা কেউ আইন নিজ হাতে তুলে নেবনা। শুভ কামনা আপনার জন্য।
একজন অসহায় বাবা যখন নিজের মেয়ের হত্যার বিচার না পায় তখন সে হিংস্র হয়ে ওঠে। আসলে সহজ সরল মানুষগুলো বদলে যায়। হয়তো মনের মাঝে জ্বলে ওঠা আগুন নেভানোর জন্যই সে ধীরে ধীরে ক্যাডার হয়ে ওঠে। সুরুজ অবশেষে অনেক পরিকল্পনা করে তার মেয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে পেরেছে। যে তার মেয়েকে গুলি করে মেরেছিল তাকে হত্যা করতে পেরেছে। ভালো লাগলো ভাইয়া শেষ পর্ব পড়ে।
ভাই আপনার আজকের শেষ পর্বটি পড়ে গল্পটির পুরো কাহিনী বুঝতে পারলাম। আসলে সমাজের ভালো মানুষগুলো সঠিক বিচার না পেয়ে সুরুজদের মতো করে আইন হাতে তুলে নেয়। যেখানে আইনের লোকই ভক্ষক সেখানে সুরুজের আর কি করার ছিল? মেয়ের হত্যাকান্ডের বিচার করার জন্য সুরুজকে অবশেষে আইন হাতে তুলে নিতে হলো।
আমাদের দেশের পুলিশরা আসামীদের শাস্তি না দিয়ে, টাকা খেয়ে তাদের পক্ষে চলে যায়। আর সেজন্যই তারা প্রশ্রয় পাচ্ছে এবং দিন দিন অপরাধ আরো বেশি করছে। যাইহোক সুরুজ শেষ পর্যন্ত নিজের হাতে প্রতিশোধ নিয়েছে এটা জেনে খুব ভালো লাগলো। পাঁচ পর্বের এই গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। আশা করি সামনে আরো অনেক গল্প আমাদেরকে উপহার দিবেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
ভাই আপনার, "হঠাৎ ঝড়ে এলোমেলো জীবন "গল্পটির আগের পর্বগুলো আমার পড়া হয়নি ।তবে এই পর্বটি পড়ে আমি বুঝতে পারলাম ,একটি ছোট্ট নিষ্পাপ মেয়েকে কিছু গুন্ডারা মিলে গুলি করে মেরে ফেলেছিল ।আর তার বাবা সুরুজ সেই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে গেলেও কিছু নেতার কর্মী হিসেবে ওই গুন্ডাগুলো নিযুক্ত থাকায় সুবিচার পেল না। পরবর্তীতে সুরুজ তার মেয়ের প্রতিশোধের জন্য বুদ্ধি করে নিজেই অন্য এক বলশালী নেতার কর্মী হিসেবে যুক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত তার মেয়ের খুনির কে হত্যা করে প্রতিশোধ নিতে পারল, দেখে ভালো লাগলো।