হঠাৎ ঝড়ে এলোমেলো জীবন (চতুর্থ পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক


দারোগার সাথে কথাবার্তা শেষ করে সুরুজ সরাসরি হাসপাতালে চলে আসে। হাসপাতালে এসে সুরুজ তার স্ত্রীকে মেয়ের অবস্থা কি সেটা জিজ্ঞেস করে। সুরুজের স্ত্রী জানায় মেয়ের অবস্থা বেশি ভালো না। ডাক্তার বলেছে এখনো তারা নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না। ৪৮ ঘন্টা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা কিছুই বলতে পারবে না। সুরুজ তার স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করে বলে এখন ধৈর্য ধরো আর আল্লাহকে ডাকো। তাছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই। তাদের আত্মীয়-স্বজন যারা হাসপাতালে এসেছিল তারা একে একে সবাই বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছে।

Polish_20230509_232220104.jpg

এর ভেতরে সুরুজের মনে পড়ল তার আর তার স্ত্রীর সারাদিন কিছুই খাওয়া হয়নি। সুরুজ তখন তার স্ত্রীকে বলল তুমি একটু বসো। আমি তোমার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসি। সুরুজের স্ত্রী তাকে বলল আমার একেবারে খিদে নেই। তুমি খেয়ে নাও। এই কথা বলে সুরুজের স্ত্রী আবার কান্না শুরু করে। সুরুজ তখন তার স্ত্রীকে বলে এভাবে সব সময় কান্নাকাটি করলে তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর তাছাড়া সারাদিন কিছু খাও নাই। এখন তোমার কিছু খাওয়া দরকার। এই কথা বলে সুরুজ হাসপাতালের পাশের একটি হোটেল থেকে কিছু খাবার কিনে আনে। তারপর দুজনে মিলে কোনরকম একটু খেয়ে নেয়। কিন্তু খাবার কারো গলা দিয়ে নামতে চায় না। তাদের আদরের একমাত্র মেয়ে আজ বাঁচা মারার লড়াই করছে। এই অবস্থায় কোন বাবা মায়েরই গলা দিয়ে খাবার নামার কথা নয়। তাদের অবস্থাও সেরকমই।

খাওয়া-দাওয়া শেষে সুরুজ আইসিইউতে যায় তার মেয়েকে দেখতে। সেখানে গিয়ে সুরজের দু চোখ বেয়ে আবার অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে। তার আদরের ছোট্ট মেয়েটির নিস্তেজ হয়ে পড়ে রয়েছে আইসিইউতে। মেয়েকে নিয়ে তার কত স্মৃতি সব একে একে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সারাদিন দোকান করে যখন সুরুজ বাড়িতে ফিরতো তখন দরজা খোলার সাথেই দেখতো মেয়ে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সুরুজের ঘরে ঢুকে প্রথম কাজ ছিল মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করা। যদি কোনদিন তার এ কাজে ভুল হতো তাহলে মেয়ের মন খারাপ হয়ে যেতো।

মেয়েকে না দেখে এক বেলা থাকাও তার জন্য কষ্টকর ছিলো। মেয়েকে দেখা শেষ হলে সুরুজের আবার তার স্ত্রীর কাছে ফিরে আসে। ফিরে আসার সাথেই তার স্ত্রী জিজ্ঞেস করে এখন কি অবস্থা? সুরুজ তার স্ত্রীকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বলে এখন আগের থেকে ভালো আছে। শুনে তার স্ত্রী অনেক খুশি হয়। এভাবেই হাসপাতালে তাদের কয়েকদিন কেটে যায়। সুরুজ প্রতিদিন ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞেস করতে থাকে তার মেয়ের কোন উন্নতি হয়েছে কিনা। ডাক্তার তাকে জানায় তার মেয়ে এখনো সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এভাবে কয়েকদিন পার হওয়ার পরে একদিন দুপুরে সুরুজ আই সি ইউ ইউনিটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। হঠাৎ করে ভেতর থেকে একজন নার্স এসে সুরুজকে ডেকে নিয়ে যায়। সুরুজ ভিতরে গিয়ে দেখে তার মেয়ের বেডের চারপাশে বেশ কয়েকজন ডাক্তার নার্স ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। সুরুজ বুঝতে পারেনা হঠাৎ করে কি হলো। সুরুজ কাছে যাওয়ার সাথে সাথে একজন ডাক্তার তাকে জানায় কিছুক্ষণ আগে তার মেয়ে মারা গিয়েছে।

এই কথা শুনে সুরুজ চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করে। এর ভেতরে সুরুজের স্ত্রী ও আইসিইউ এর ভেতরে ঢুকে পড়েছে। ঢুকে সুরুজকে কান্না করতে দেখে সেও বুঝে যায় কি হয়েছে। সেও সুরুজের মতো কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। এর ভেতরে সূর্যের বাড়ি থেকে তার বাবা-মা এসেছিল সুরুজের মেয়েকে দেখতে। তারা এসে দেখে তাদের নাতনি আর নেই। তারা দুজন পরে সুরুজ আর সুরুজের স্ত্রীকে আইসিইউ থেকে বের করে বাইরে নিয়ে আসে। এরপর আস্তে আস্তে করে সুরুজের আর সাবিহার আত্মীয়-স্বজন হাসপাতালে এসে ভিড় করে। খবর পেয়ে থানার থেকে সেই দারোগাও এসে উপস্থিত হয়েছে। এরপরে যা হবার তাই হোলো। সুরুজের মেয়ের লাশ নিয়ে তারা সবাই সুরুজদের গ্রামের বাড়িতে চলে গেলো। সেখানে সুরুজের পারিবারিক কবরস্থানে তার মেয়েকে দাফন করা হলো।

মেয়ে মারা যাওয়ার পর থেকে সুরুজ কথাবার্তা বলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। কারো সাথেই তেমন কথাবার্তা বলে না। নাওয়া খাওয়ারও ঠিক নেই তার। এর ভেতরে সুরুজ একদিন থানায় গিয়ে সে দারোগার সাথে দেখা করে। তাকে জিজ্ঞেস করে এখন পর্যন্ত কোন আসামি গ্রেফতার হয়েছে কিনা। সেই দারোগা জানায় আসামীরা সবাই পলাতক। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। সুরুজ বুঝতে পারে আসলে আসামিদের গ্রেফতার করার ইচ্ছা পুলিশের নেই। এর ভেতরে একদিন রাতে সুরুজের কাছে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। ফোন করে তারা সুরুজকে হুমকি দিতে থাকে। তারা বলে মামলা তুলে না নিলে তারা সুরুজ কেও প্রাণে মেরে ফেলবে। (চলবে)

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

ভাইয়া আপনার গল্পের চতুর্থ পর্বটি পড়ে সত্যি আমার মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। আসলে বর্তমান সময়ে সমাজের বিভিন্ন রাজনৈতিক গুন্ডা-পান্ডাদের কারণে সুরুজের মেয়ের মতো অনেক মেয়ে অকালে ঝরে যাচ্ছে। যেটা সুরুজের মতো কোন অভিভাবকের পক্ষেই এরকম ঘটনা মেনে নেওয়াটা সম্ভব না। যাহোক ভাইয়া, আপনার গল্পের পরবর্তী পর্বটি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

 last year 

বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপট নিয়ে বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে গল্পের চতুর্থ পর্ব আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আসলে বর্তমানের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পালিত গুন্ডা পান্ডাদের জন্য শুধু সুরুজ এর মেয়ে কেন অনেক না জানা মেয়েরা ঝরে যাচেছ অকালে। আর এগুলো দেখার যেন কেউ নেই।

 last year 

আগের পর্ব গুলো পড়েছিলাম ভাইয়া। আমি ভেবেছিলাম সুরুজের মেয়ে সুস্থ হয়ে যাবে। তবে এই পর্বে জানতে পারলাম সুরুজের মেয়ে মারা গিয়েছে। এটা জেনে খুব খারাপ লাগলো। আসামীরা পলাতক রয়েছে পুলিশ বললো। তবে সুষ্ঠ বিচার হবে বলে মনে হচ্ছে না। দেখা যাক সুরুজ কি শাস্তি দেয় তাদেরকে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি শেয়ার করবেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 62260.20
ETH 2431.98
USDT 1.00
SBD 2.64