বন্ধুর সাথে হঠাৎ করে ঘুরতে যাওয়া (তৃতীয় পর্ব)

in আমার বাংলা ব্লগlast year

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক


গরম এতটাই বেশি ছিল যে আমাদের সেখান থেকে উঠে অন্য কোথাও যেতে ইচ্ছা করছিল না। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে বসে গল্প করার পর পানির চেষ্টা পেলো। তখন আমি উঠে গিয়ে পিছনের দোকান থেকে ড্রিঙ্কস আর চিপস কিনে আনলাম। তারপর আমরা তিনজনে বসে সেগুলো খেতে লাগলাম আর নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম। তবে খেয়াল করে দেখলাম এই প্রচন্ড গরমের ভেতরেও কয়েকজন মানুষ একটু দূরে রোদের ভেতরে বিভিন্ন রকম স্টাইলে ছবি তুলছে। মানুষের ছবি তোলার আগ্রহে আমি খুবই অবাক হলাম। এই রোদের ভেতর কিভাবে মানুষ এতটা কষ্ট করতে পারে শুধু ছবি তোলার জন্য?

IMG_20230724_121127.jpg

আমরা সেখানে বসে গল্প করতে করতে এক পর্যায়ে পরিকল্পনা করলাম এর পরের বার আমরা কুষ্টিয়াতে যাবো। কারণ রাজবাড়ীতে আসলে দেখার মত তেমন কিছু নেই। তবে কুষ্টিয়াতে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি এবং লালনের মাজার রয়েছে। এই দুটো স্থান ঘুরতে খারাপ লাগবে না। তবে আমি ঠিক করে রেখেছি কুষ্টিয়ার এই ভ্রমণটা আমরা শীতের সময় করবো। কারণ এই গরমের ভিতরে কোথাও ঘুরতে গিয়ে ভালো লাগবে না। আরো বেশ কিছুটা সময় সেখানে বসে থাকার পর আমরা পরিকল্পনা করলাম এখন আমরা রাজবাড়ী শহরের দিকে যাবো। সেখানে গিয়ে প্রথমে রেলস্টেশন থেকে ট্রেনের খবর নেবো। তারপর আশেপাশে কোন একটা জায়গা থেকে খাওয়া দাওয়া করে আমরা ফরিদপুরে ফিরে যাবো।

IMG_20230724_120930.jpg

এই চিন্তা-ভাবনা করতে করতেই আমরা সেখান থেকে রাজবাড়ী শহরের দিকে রওনা দিলাম। তবে ফেরার সময় অটোরিকশাতে ভাড়া জানতে চাইলে অটো রিক্সার ড্রাইভার জানালো মাথাপিছু ২০ টাকা করে ভাড়া লাগবে রেল স্টেশন পর্যন্ত যেতে। অথচ আমরা আসার সময় অটো রিক্সার ড্রাইভার আমাদের কাছ থেকে মাথাপিছু ৪০ টাকা করে ভাড়া নিয়েছিলো। অবশ্য এটা বাংলাদেশের নতুন কিছু না। অপরিচিত মানুষ দেখতে পেলে এই সমস্ত লোকজন এই ধরনের কাজই করে। আমরা আসার সময় যেই রাস্তা দিয়ে এসেছিলাম ফেরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম।

IMG_20230724_121026.jpg

বাইরে প্রচন্ড গরম থাকলেও সেই রাস্তাতে আমাদের এতটুকুও গরম লাগছিল না। কারণ রাস্তার দুপাশ দিয়ে অনেক গাছপালা ছিল। এই ধরনের রাস্তায় চলাফেরা করতে আমার সব সময় ভালো লাগে। অটো রিক্সায় করে ধীরে সুস্থে আমরা বেলা বারোটার দিকে রেল স্টেশনে পৌঁছালাম। সেখানে গিয়ে আমরা জানতে চাইলাম ফরিদপুরে যাওয়ার ট্রেন আর কয়টায় আছে? কাউন্টার থেকে জানালো আর কিছুক্ষণ পরেই একটা আন্তঃনগর ট্রেন যেটা রাজশাহী থেকে ছেড়ে এসেছে সেটা ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে যাবে। খবরটা শুনে আমরা খুবই খুশি হলাম।

IMG_20230724_112453.jpg

কারণ আমরা প্রথমে পরিকল্পনা করেছিলাম যে ফেরার সময় বাসে করে ফিরবো। কারণ আমরা জানতাম দুপুরে রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুর ফেরার কোন ট্রেন নেই। কিন্তু হঠাৎ করে এইভাবে একটি আন্তঃনগর ট্রেন পেয়ে যাওয়াতে আমরা বেশ খুশি হলাম। আবার এদিকে আমাদের পরিকল্পনা কিছুটা পরিবর্তন হয়ে গেলো। আমরা আরো পরে রওনা দিতে চেয়েছিলাম। তবে যেহেতু ট্রেন কিছুক্ষণের ভিতরে চলে আসবে তাই সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসলাম। আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টার থেকে তিনজনের জন্য তিনটি টিকিট নিয়ে প্লাটফর্মে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমরা যখন প্লাটফর্মে আমাদের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তখন প্লাটফর্মে একটি ট্রেন দাঁড়ানো ছিলো। হঠাৎ করে সেই ট্রেনটি চলতে শুরু করলো। আমি দেখতে পেলাম সেই ট্রেনের পিছু পিছু একটি ছোট্ট ছেলে দৌড়ে আসছে। দৌড়াতে দৌড়াতে সেই ছেলেটা এসে একটি লোহার পিলারে ধাক্কা খেলো। ভাগ্যিস ট্রেনটা ততক্ষণে সেখান থেকে চলে গিয়েছিলো। না হলে হয়তো ছেলেটা ট্রেনে কাটা পড়তো।

IMG_20230724_112502.jpg

তবে ট্রেনে কাটা না পড়লেও ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে বেশ ভালো ক্ষত তৈরি হয়েছে এবং প্রচুর পরিমাণে রক্ত বের হচ্ছে। ছেলেটা অবশ্য তখনও নিজের অবস্থা বুঝতে পারছিল না। প্ল্যাটফর্ম থেকে রেললাইন বেশ কিছুটা নিচেতে। ছেলেটা যখন রেল লাইন পার হয়ে প্ল্যাটফর্মের কাছে আসলো। তখন কয়েকজন মানুষ তাকে টেনে প্ল্যাটফর্মের উপরে তুললো। এদিকে রক্তে ছেলেটার মুখ ভেসে যাচ্ছিলো। তারপরে কয়েকজন মানুষ ছেলেটাকে ট্রিটমেন্টের জন্য নিয়ে গেলো। তারপরে শুনতে পেলাম ছেলেটা যে ট্রেনটা চলে গিয়েছে সেটার দরজায় দাঁড়িয়েছিলো। হঠাৎ করে ছেলেটার স্যান্ডেল খুলে নিচে পড়ে গিয়েছিলো। সেই স্যান্ডেল উঠানোর জন্য ছেলেটা যখন নিচে নেমেছে তখনই ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। এজন্য ছেলেটা ট্রেনের পিছে দৌড়াচ্ছিলো। তখনই এই দুর্ঘটনা ঘটে।

IMG_20230724_132427.jpg

যাইহোক আর কিছুক্ষণ পর আমাদের ট্রেন চলে এলো। ট্রেন আসতেই আমরা ট্রেনে উঠে বসলাম। তবে আসার সময় আমরা এসেছিলাম লোকাল ট্রেনে। কিন্তু ফেরার সময় আমরা যে ট্রেনে যাচ্ছিলাম সেটা একটা আন্তঃনগর ট্রেন। আসার সময় আমাদের কোন সিট নাম্বার ছিল না। যার ফলে আমরা মনে করেছিলাম এবারও মনে হয় আমরা যে কোন জায়গায় বসতে পারবো। যদিও আমার কিছুটা সন্দেহ ছিলো। কারণ আমার হাতে যে টিকেট ছিল সেখানে বগির নাম্বার দেয়া ছিল আর অস্পষ্টভাবে সিট নাম্বারও দেয়া ছিলো। তবে সেটা খুব একটা বোঝা যাচ্ছিল না। আমাদের সাথে যে ছোট ভাই ছিল সে একটি সিটে বসতে গেলে সেখানকার লোক জানালো এই সিট তার। সে তার টিকিটের সিট নাম্বারটা দেখালো। তখন আমরা বুঝতে পারলাম যার যার টিকিট অনুযায় বসতে হবে। তখন আমরা নিজেদের সিট খুঁজে সেখানে বসে পড়লাম। তারপর আমাদের ট্রেন ছেড়ে দিলো ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে। আন্তঃনগর ট্রেন হলেও এই ট্রেনটি ফরিদপুর পৌঁছাতে সেই লোকাল ট্রেনের মতোই সময় লাগালো। যে বিষয়টা ছিল বেশ বিরক্তিকর। সাড়ে বারোটায় রওনা দিয়ে আমরা দেড়টার সময় ফরিদপুর পৌছালাম। এভাবেই আমাদের এবারের ট্যুর শেষ হলো।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানরাজবাড়ী

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

ছোট সেই ছেলেটার জন্য সত্যি অনেক খারাপ লাগছে। আসলে অনেক সময় বাচ্চারা অসচেতনভাবে এতটা দৌড়াদৌড়ি করে যে বড় ধরনের বিপদ হয়ে যায়। এরকম পরিস্থিতিতে সত্যি অনেক খারাপ লাগে। যাইহোক ভাইয়া এবারের পর্বটি পড়ে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। গরমের সময় কোথাও ঘুরতে গেলে শান্তিতে ঘুরাঘুরি করাও যায় না।

 last year 

ভাইয়া তাহলে ফেরার পথে তো দেখছি টিকেট কেটে আত্ন নগরে চড়ে আসলেন। মনে হয় একটু সস্থিও পেয়েছিলেন। আসলে আপনার পোস্ট পড়তে পড়তে ভাবছিলাম যে সেই ছোট ছেলেটির কতটা খারাপ লেগেছিল। আবার এও ভাবছিলাম তাহলে তার বাবা মা কোথায় ছিল এমন একটি বাচ্চা ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই সময় কটিয়েছেন।

 last year 

আপনারা সেখানে বসে পরিকল্পনা করলেন আপনারা কুষ্টিয়া যাবেন। আর এটা ঠিক শীতের সময় ঘুরতে গেলে আরাম পাওয়া যায়। তবে বাচ্চা ছেলেটার কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো।ছেলেটার সাথে কেউ ছিল না? এভাবেই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে।আপনাদের জার্নিটা খুব বেশী সুখকর ছিল না এই গরমে বেশ বুঝতে পারছি।অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56688.84
ETH 2388.88
USDT 1.00
SBD 2.28