বন্ধুর সাথে হঠাৎ করে ঘুরতে যাওয়া (দ্বিতীয় পর্ব)।
ট্রেনে ওঠার আগে থেকেই জানতাম এই লোকাল ট্রেন গুলো বেশ আস্তে চলে। তবে ট্রেনটি আমাদের শহর পার হওয়ার পর থেকে দেখলাম বেশ জোরেই চলছে। এই বিষয়টা আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো। তখন মনে করেছিলাম হয়তো এক ঘন্টার আগেই আমরা রাজবাড়ী পৌঁছে যাব। কিন্তু অল্প কিছুদূর আগানোর পরে আমার ভুল ভাঙলো। কারণ তারপর থেকে কিছুদূর পরপর একটা স্টেশনে ট্রেন থামতে লাগলো। কিছুদূর পরপর স্টেশন থাকার কারণে ট্রেন আর কখনোই জোরে চললো না। ট্রেনে যেহেতু আমরা সবাই আলাদা বসে ছিলাম। তাই কেউ কারো সাথে কথা বলতে পারছিলাম না।
আমি চেষ্টা করছিলাম আশেপাশের যাত্রীদের দিকে দেখতে। যেহেতু জানালার পাশে বসতে পারিনি তাই বাইরের প্রকৃতিও খুব একটা ভালো দেখা যাচ্ছিল না। আমার ঠিক সামনের সিটে বসেছিল একটি পরিবার। তাদের তিনটি সন্তানও ছিলো সাথে। তাদের ছোট সন্তানটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলো। ট্রেনের এই গরমের ভিতরে বাচ্চাটা কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। তার বাবা চেষ্টা করছিল তার কান্না থামাতে। যদিও তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছিল না। এইভাবে আশেপাশের যাত্রীদের কে পর্যবেক্ষণ করতে করতে একসময় রাজবাড়ীর কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম।
তারপর আমার পাশের সিটে বসা এক যাত্রীর কাছে জিজ্ঞেস করলাম আমি আমরা কি রাজবাড়ী পৌঁছে গিয়েছি কিনা? তখন তিনি আমাকে বললেন রাজবাড়ি এখান থেকে খুবই কাছে। কিন্তু এখন ট্রেন চলবে একেবারে ধীরগতিতে। যদি ট্রেন একটু জোরে চলতো তাহলে মাত্র ৫ মিনিটে আমরা রাজবাড়ী পৌঁছে যেতাম। তার এই কথাটি শুনে আমি কিছুটা অবাক হলাম। পরে খেয়াল করে দেখলাম ছেলেটি সঠিক কথাই বলেছে। পাচুড়িয়া স্টেশনের পর থেকে ট্রেন একেবারে ধীরগতিতে চলতে লাগলো। এই ব্যাপারটি আমার কাছে খুবই খারাপ লাগলো। যাইহোক খারাপ লাগলেও তখন আর কিছু করার ছিল না। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ ধীর গতিতে ট্রেন চলার পর আমরা একসময় রাজবাড়ী স্টেশনে পৌঁছে গেলাম।
সেখানে ট্রেন থেকে নেমে দেখি ঠিক এক ঘন্টায় আমরা রাজবাড়ী পৌঁছেছি। তখন বুঝতে পারলাম ট্রেনটি তার শিডিউল মেইন্টেইন করার জন্য হয়তো এইভাবে আস্তে আস্তে করে চলেছে। যাই হোক ট্রেন থেকে নেমেই আমরা প্রথমে চলে গেলাম স্টেশনের বাইরে একটি হোটেলে। সেখানে বন্ধু রাফসান বলল চল আগে আমরা সবাই নাস্তা সেরে নেই। তারপর ঘুরতে যাবো। তখন আমি তাকে বললাম আমি বাসা থেকে নাস্তা করে এসেছি। তোরা দুজন নাস্তা করে নে। তবে আমরা হোটেলে প্রবেশ করার পরে রাফসানের সেই ছোট ভাই জানালো তার বাথরুম পেয়েছে। হোটেলের কর্মচারীদের কাছে শুনে জানতে পারলাম সেই হোটেলে কোন বাথরুম নেই। তারা পরামর্শ দিল পাশেই একটি মসজিদ রয়েছে। সেখানে গিয়ে বাথরুম ব্যবহার করতে পারবেন।
তারপর আমাদের সেই ছোট ভাই সেখানে গিয়ে তার প্রাকৃতিক কর্ম সেরে এলো। তারপর তাদের নাস্তা করা শেষ হলে আমরা উলুকান্দা নামক জায়গার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য অটো ঠিক করতে লাগলাম। বাংলাদেশের রিকশাওয়ালারা বা অটোরিকশাওয়ালারা খুবই ধূর্ত হয়। যদি তারা বুঝতে পারে আপনারা স্থানীয় নয় বা যেখানে যাবেন সে জায়গা সম্বন্ধে খুব একটা ভালো ধারণা নেই তাহলে আপনার কাছ থেকে ভাড়া অনেক বেশি রাখবে। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হোলো। আমরা স্টেশন থেকে উলুকান্দা নামক জায়গার জন্য অটো ঠিক করলাম। আমাদের তিনজনের কাছ থেকে সে ভাড়া নিল ১২০ টাকা। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে যখন সেখান থেকে আমরা ফিরে আবার স্টেশনে এসেছিলাম তখন জনপ্রতি ভাড়া লেগেছিল মাত্র ২০ টাকা।
যাইহোক অটো রিক্সা ঠিক করা হলে আমরা আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রাজবাড়ি শহরটি খুবই ছোট। আর শহর থেকে বাইরে যাওয়ার সাথেই আপনার মনে হবে আপনি একটা গ্রামীণ পরিবেশে চলে এসেছেন। যার ফলে আমরা অটো রিক্সা ভ্রমণটা বেশ উপভোগ করছিলাম। অটো রিক্সাওয়ালা ধীরেসুস্থে আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। এভাবে যেতে যেতে এক সময় আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছালাম। মূলত আমরা পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত একটি রিসোর্ট দেখতে এসেছিলাম। শুনেছি সেখানে নাকি নদীর পাড়ে সুন্দর বসার ব্যবস্থা হয়েছে। যেটা দেখতে অনেকটা সি বিচের মত মনে হয়। তবে আমরা যখন সেখানে পৌঁছলাম তখন ভরা দুপুর। রোদের প্রচন্ড তাপে বাইরে দাঁড়ানো যাচ্ছিল না।
আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে তাড়াহুড়ো করে গাছের গিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর সেখান থেকে চেয়ার নিয়ে আমরা সেই গাছের ছায়ায় বসে সময় কাটাতে লাগলাম। একদম পদ্মা নদীর পাড়ের জায়গাটি আসলেই দেখতে চমৎকার ছিলো। নদী ভাঙ্গন রোধ করার জন্য সেখানে বোল্ডার দিয়ে পাড় বাঁধাই করা হয়েছিলো। আর এদিকে বর্ষায় পদ্মা নদী পানিতে প্রায় হয়েছিল যার ফলে পুরো বিষয়টা দেখতে বেশ ভালো লাগছিল আমরা গাছের ছায়ায় চেয়ারে বসে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে আড্ডা দিতে লাগলাস। তবে একটা বিষয় আমরা বুঝতে পেরেছিলাম সেটা হচ্ছে গরমের এই সময়টা ঘোরাফেরা করার জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়। এই ধরনের ঘোরাফেরা করার জন্য শীতকাল হচ্ছে সবচাইতে ভালো সময়। (চলবে)
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | রাজবাড়ি |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
লোকাল ট্রেনের এই অবস্থার কথা শুনে সত্যিই খারাপ লাগলো। যেহেতু কিছুক্ষণ পরপর স্টেশন তাই তো খুব ধীরগতিতে ট্রেন এগোচ্ছিল। আমার কাছে মনে হয় কোথাও ঘুরতে গেলে যদি বিকেল বেলায় যাওয়া হয় তাহলে সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটানো যায়। আশা করছি শীতকালে আবারো সেখানে ঘুরতে যাবেন। আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া।
ভাইয়া তো দেখছি বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেশি পছন্দ করেন। বন্ধুর সাথে এবার তো বেশ মজা করে ট্রেন জার্নি করলেন। আমার বেশ ভালো লাগে ট্রেন জার্নি। এখন আসলে অনেক রোদ্র পড়ে। আর এমন সুন্দর জায়গায় শীতের দিনে হয়তো বেশ ভালই লাগবে। আমার কিন্তু বেশ ইচ্ছা আছে রাজবাড়ীতে একবার ঘুরতে যাওয়ার। আমি বেশ শুনেছি এই জায়গাটির কথা। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ব্যস্ততার কারনে প্রথম পর্ব কাল পড়তে পারিনি।দ্বিতীয় পর্ব পড়ে বুঝলাম বন্ধুরা মিলে রাজবাড়ী শহর ট্রেনে করে গিয়েছিলেন।সেখানে উলুকান্দা জায়গায় গিয়ে পদ্মা নদীর পাড়ে সি বিচের মতো জায়গাটি দেখতে গেলেন।খুব সুন্দর জায়গা কিন্তু আপনারা যখন সেখানে পৌঁছালেন তখন রোদের তাপে দাঁড়াতে পারেননি।তখন বুঝতে পারলেন শীতের সময় ঘুরতে যাওয়া খুব ভালো। আসলে এরপর কি হয়েছিল তা আশাকরি পরের পর্বে জানবো।অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.