হঠাৎ ঝড়ে এলোমেলো জীবন (তৃতীয় পর্ব)।
প্রথম কয়েকদিন সুরুজের বেচাকেনা খুব একটা ভালো হয় না। সুরুজ মনে মনে প্রমাদ গোনে। সে চিন্তা করতে থাকে যদি দোকান না চলে তাহলে সে কি করবে? কিন্তু কয়েকদিন যাওয়ার পরই সুরুজের দোকানে কাস্টমারের ভিড় বাড়তে থাকে। তখন সুরুজের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সুরুজ রাত দিন পরিশ্রম করে দোকানটা একাই চালাতে থাকে। কিছুদিন এভাবে দোকান চালানোর পর যখন সুরুজ আর একা কুলিয়ে উঠতে পারে না তখন সে ছোট্ট একটি ছেলেকে রাখে তার দোকানে তাকে কাজে সাহায্য করার জন্য। সেই ছোট্ট ছেলেটিকে সাথে নিয়ে দোকানটা বেশ ভালোই চালাচ্ছিল সে।
দোকান শুরু করার পরেই সুরুজের দিন বদলাতে শুরু করে। সে আগের বাসা ছেড়ে দুই রুমের একটি বাসা ভাড়া নেয়। এখন তাদের দিন বেশ স্বচ্ছল ভাবেই চলে। সেই সাথে প্রতি মাসে কিছু টাকাও জমে। তাদের এভাবে বেশ কিছুদিন দোকান চালানোর পর সুরুজ তার চায়ের দোকানের পাশেই একটি মুদি দোকান দেয়। আর চায়ের দোকানটা চালানোর জন্য সে একজন কর্মচারী রেখে নেয়। আস্তে আস্তে সুরুজের মুদি দোকানের ব্যবসাও ভালো চলতে থাকে। সুরুজের সহজ সরল ব্যবহার এবং হাসিমুখের জন্য সবাই তাকে পছন্দ করে। এই কারণে অল্প দিনেই তার কাস্টমারের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।
বেচাকেনা বাড়ার সাথে সাথে সুরুজ তার দোকানের আকারও বড় করে। এভাবে দেখতে দেখতে কয়েকটি বছর কেটে যায়। এর ভেতরে তাদের সংসারে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সুরুজ তার স্ত্রীর সেই কানের দুলের পরিবর্তে তাকে স্বর্ণের পুরো এক সেট গহনা বানিয়ে দেয়। এভাবে তারা সুখ-শান্তিতেই চলছিল। এর ভেতরে তাদের দুই পক্ষের পরিবার থেকে তাদের মেনেও নিয়ে নিয়েছে। এখন তারা মাঝে মাঝে নিজেদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সবকিছু মিলিয়ে সুরুজের নিজেকে একজন সফল মানুষ মনে হচ্ছিল। এর ভিতরে হঠাৎ করে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
সুরুজ বারান্দায় দাঁড়িয়ে এই সমস্ত কথা চিন্তা করতে করতে হঠাৎ করে এসে তাকিয়ে দেখে থানা থেকে পুলিশ এসেছে। পরে সে পুলিশের কাছে সবকিছু খুলে বলে। পুলিশ অফিসার সুরুজকে বলে আপনি একটু সময় করে থানায় আসেন। থানায় একটা লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে হবে। তখন সুরুজ বলে স্যার আমি বিকালের দিকে থানায় আসছি। এই কথা বলার পর সুরুজ হঠাৎ খেয়াল করে দেখে ডাক্তার দ্রুত গতিতে তার দিকে হেঁটে আসছে। সুরুজের তখন ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে ডাক্তার সাহেব কি হয়েছে আমার মেয়ে ভালো আছে তো? তখন ডাক্তার সাহেব সুরুজ কে বলে আপনার মেয়ের অবস্থা বেশি ভালো না। তাকে আইসিইউ তে শিফট করতে হবে। সুরুজ তখন ডাক্তার কে বলে আপনার যা করা দরকার আপনি করুন। আমার মেয়েকে যেভাবে হোক বাঁচান। ডাক্তার তখন সুরুজ কে বলে বাঁচামারা আল্লাহর হাতে। আপনারা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবো।
এর ভেতরে সুরুজের এবং সাবিহার বাড়ি থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজন অনেকেই হাসপাতালে এসেছে। সুরুজ আর সাবিহা তাদের সাথে কথা বলছিল। এদিকে বেলা গড়িয়ে প্রায় বিকাল হয়ে গিয়েছে। সুরুজ তার স্ত্রীকে বলে তুমি একটু এখানে থাকো। আমি থানা থেকে ঘুরে আসছি। সুরুজ হাসপাতাল থেকে সরাসরি থানায় গিয়ে দারোগার সাথে দেখা করে। তারপর দারোগা তাকে বলে আপনি যা যা দেখেছেন সমস্ত কিছু লিখিতভাবে দিন। সুরুজ স্থানীয় ছেলেদের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। তখন দারোগা বলতে থাকে এদের নামে মামলা করবেন আপনার কিন্তু সমস্যা হতে পারে। এরা খুবই খারাপ ধরনের মানুষ। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে এদের খুব ভালো সম্পর্ক। যা করবেন ভাবনা চিন্তা করে করবেন।
সুরুজ তখন দৃঢ় কন্ঠে দাররগাকে বলে আপনি অভিযোগ গ্রহণ করুন যা হবে দেখা যাবে। এই কথা বলে সুরুজ থানা থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু আসার আগে সে দারোগাকে একটা কথা বলেছে। তার কথা শুনে দারোগা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। সুরুজ দারোগাকে বলে এসেছে আপনারা আপনাদের মত চেষ্টা করেন অপরাধীদের শাস্তি দিতে। যদি আইন আদালতের মাধ্যমে তাদের শাস্তি না হয় তাহলে আমি নিজ হাতে তাদের শাস্তি দেব। তাতে যদি প্রয়োজন হয় আইন হাতে তুলে নেবো। থানার দারোগা অবাক হয়ে সুরুজের দিকে তাকিয়ে থাকে। (চলবে)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
সুরুজ ব্যবসায় উন্নতি করার পর তার স্ত্রীর জন্য পুরো গহনা সেট কিনে দিয়েছে এবং তাদের সংসার বেশ ভালো ভাবেই চলছিলো। তবে হঠাৎ করে এই দুর্ঘটনা ঘটে এবং তারা বিপদে পড়ে যায়। তবে সুরুজ থানায় গিয়ে বীরপুরুষ এর মতো অভিযোগ দায়ের করে। এতে করে বুঝা যায় সুরুজ বেশ সাহসী। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া। গল্পটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
সুরুজ ধীরে ধীরে ব্যবসায় দারুন উন্নতি করেছে এটা জেনে খুবই ভালো লাগলো আমার। আর থানায় মামলা করার ক্ষেত্রে সুজনের দৃঢ় মানসিকতা নিশ্চয় সকলকে মুগ্ধ করবে। কারণ এরকম স্থানীয় গুন্ডাদের কারণে সমাজে যেকোনো ধরনের অশান্তি নেমে আসে। তবে সুজন একা একা পেরে দেবে কি স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী গুন্ডাদের বিরুদ্ধে। যাহোক, এটাই পড়ার জন্য পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।