জীবনে প্রথম ক্যাম্পিং করার অভিজ্ঞতা (চতুর্থ পর্ব)।
আর এদিকে সেই জোবায়ের বিপুল উদ্যমে বারবিকিউ করার চেষ্টা করছিলো। চিকেন মেরিনেট করা হয়ে গেলে তখন জোবায়ের রাফসানের কাছে জিজ্ঞেস করতে লাগলো কোথায় বারবিকিউ এর জন্য আগুন জ্বালাবো? রাফসান একটি জায়গা দেখিয়ে দিলে জোবায়ের আস্তে আস্তে সব কিছু সেখানে নিয়ে এলো। যখন প্রথম কাঠে আগুন ধরানো হলো। আমরা সবাই গোল হয়ে সেই আগুনের চারপাশ থেকে আগুনের উত্তাপটা নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। শীতের রাতে এইভাবে আগুনের পাশে থাকতে বেশ ভালো লাগে। আমরা সবাই মিলে বিভিন্ন রকম গল্প গুজব করছিলাম। সময়টা বেশ ভালই কাটছিলো।
যদিও যখন নদীর পাড়ে গিয়েছিলাম তখন মনে করেছিলাম রাতটা হয়তো খুব খারাপ যাবে। তবে রাফসানদের বাড়িতে এসে মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিলো। যাইহোক আমরা সেই পাগলার বারবিকিউ করা দেখতে লাগলাম। আর সবাই তার সাথে মজা করছিলাম। এর ভেতরে সে রাফসানকে জিজ্ঞেস করল ভাই মুরগি পোড়ানোর জন্য কোন শিক আছে নাকি? তখন রাফসান জানালো হ্যাঁ আছে। তারপর রাফসান ভিতর থেকে তাকে একটি চিকন রড এনে দিলো যেটার দুই মাথায় ধরার আলাদা ব্যবস্থা ছিলো। তখন জুবায়ের পুরো মুরগিটা সেই রডে গেথে আরেকজনের সহায়তায় আগুনের উপর ধরে পোড়াতে লাগলো।
তবে তার মুরগি পোড়ানো দেখে বুঝতে পারলাম এ বিষয়ে তার কোন অভিজ্ঞতা নেই। আমাদের সবারই পেট ভরা থাকার কারণে বারবিকিউ এর প্রতি কারো আগ্রহ ছিলো না। যে কারণে আমরা কেউই জুবায়েরকে কিছু না বলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখছিলাম। গনগনে আগুন এর উপর মুরগি ধরার কারণে অল্পক্ষনের ভেতরেই মুরগির উপরের পার্টটা পুড়ে গেলো। তখন আমরা যোবায়েরকে পরামর্শ দিলাম এত বেশি আগুনে মুরগি পোড়ালে উপরটা পুড়ে যাবে কিন্তু ভেতরের অংশটা কাঁচা রয়ে যাবে। তাছাড়া জোবায়ের আরো একটা ভুল করেছিলো। সেটা হচ্ছে তার উচিত ছিল মুরগিটাকে অন্তত চার ভাগ করে তারপর পোড়ানো। তাতে করে মুরগির মাংসের ভিতরে ম্যারিনেশনের মসলাটা ভালোভাবে ঢুকতে পারতো। সেই সাথে ছোট ছোট করে কাটার কারণে মুরগিটা ভালোভাবে বারবিকিউ হোতো।
যাই হোক আমরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে জোবায়েরের আনাড়ি হাতে বারবিকিউ করা দেখছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ পোড়ানোর পরে একসময় জোবায়ের ঘোষণা করলো বারবিকিউ হয়ে গিয়েছে। তারপর সে আমাদের সবাইকে খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলো। কিন্তু আমাদের সকলেরই ছিলো পেট ভরা। যার ফলে আমি, রাসেল, ফেরদৌস আমরা কেউই জোবায়েরের বারবিকিউ খাইনি। সত্যি কথা বলতে ভালোভাবে পোড়ানো হলে হয়তো কিছুটা টেস্ট করতাম। কিন্তু জোবায়ের যেভাবে মুরগিটা বারবিকিউ করেছে তাতে করে সেটা খাওয়ার উপযুক্ত হয়নি দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো। অবশ্য আমাদের বন্ধু রাফসান আর ছোট ভাই কলি দুজনে সেই বারবিকিউ থেকে অল্প কিছুটা খেয়েছিলো। কিন্তু দুজনের কারোর মুখ দেখে বোঝার উপায় ছিল না খেতে কেমন লেগেছে। যদিও মুখে বলছিল খুব ভালো হয়েছে। আর ওরা দুজন খেয়েছিলো ও একেবারে সামান্য। যার ফলে মুরগির বেশিরভাগ অংশই রয়ে গিয়েছিলো।
জোবায়ের কিছুক্ষণ খাওয়ার পরে খেয়াল করে দেখলো আর কেউ খাচ্ছে না। তখন জোবায়ের বলল ভাই মুরগিটা কি করবো। আমরা জোবায়েরকে পরামর্শ দিলাম তুমি একটি পলিথিনে করে মুরগিটা বাড়ি নিয়ে যাও। তারপর আরাম করে খেও। আমাদের পরামর্শটা জোবায়েরের খুব পছন্দ হলো। ততক্ষণে রাতও হয়ে গিয়েছে অনেক। এখন আমরা জিজ্ঞেস করলাম জোবায়ের তুমি বাড়ি যাবে কিভাবে? সে তখন বলল ফেরদৌস ভাই আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে। এই কথাটা শুনে আমরা একটু অস্বস্তিতে পড়লাম। তারপর চিন্তা করলাম যেহেতু রাত অনেক হয়ে গিয়েছে তাই ছেলেটাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ায় ভালো হবে। আবার এতো রাতে ফেরদৌস একা ওকে দিয়ে ফিরতে গেলে কোন সমস্যা হয় কিনা সেই জন্য সাথে রাসেল কেও পাঠালাম।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | ফরিদপুর |
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
শীতের দিন সবাই গোল করে বসে আগুনের উত্তাপ নিতে ভীষণ ভালো লাগে। ছোটবেলা এমনটা প্রায়ই করতাম আমরা। ভাই পাগলা জোবায়ের তো বারবিকিউ করতে গিয়ে মুরগিটা একেবারে পুড়ে ফেলেছে দেখছি 😂। তবে মুরগি না খেতে পারলেও, আপনারা কিন্তু দারুণ বিনোদন পেয়েছেন জোবায়ের থাকাতে। তবে সে পারুক আর না পারুক, যথেষ্ট চেষ্টা করেছে, এটা অনেক বড় একটি ব্যাপার। বেশ ভালোই উপভোগ করেছেন সময়টা। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাই।
একদম ঠিক বলেছেন। মুরগিটা পুড়ে গেলেও জোবায়েরের কারণে আমরা বেশ মজা করে সময়টা কাটাতে পেরেছিলাম। আসলে এই ধরনের প্রোগ্রাম এ এরকম দু-একজন ক্যারেক্টার থাকলে মন্দ হয় না।