জীবনে প্রথম ক্যাম্পিং করার অভিজ্ঞতা (তৃতীয় পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ7 months ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক

দূরে দেখা সেই লাইটটি যখন একেবারে কাছে চলে এলো তখন দেখতে পেলাম আসলে সেটি মোটরসাইকেল নয়। সেটি ছিল একটি ভ্যান। ভ্যানে কয়েকজন লোককে দেখতে পেলাম অস্পষ্টভাবে। তাদেরকে দেখে আমাদের চিন্তা আরো কিছুটা বেড়ে গেলো। যে এত রাতে আমরা দুই বন্ধু নদীর পাড়ে রয়েছি। সেখানে একটি ভ্যানে করে কয়েকজন লোক আমাদের দিকে আসছে বিষয়টা কি হতে পারে তাই চিন্তা করছিলাম। পরবর্তীতে যখন ভ্যান আমাদেরকে অতিক্রম করে আরও কিছুটা সামনে চলে গেলো তখন মোটামুটি নিশ্চিন্ত হলাম যে এরা আমাদের উদ্দেশ্যে আসেনি। ভ্যানটি আমাদের অতিক্রম করে কিছুদূর গিয়ে হঠাৎ করে থেমে গেলো। সেখান থেকে একজন আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো ভাই নাকি? রাতের অন্ধকারে আমরা কেউ কারো মুখ দেখতে পারিনি। সে কারণে আগে থেকে চিনতেও পারিনি।

IMG_20231215_184227.jpg

লোকগুলো ছিল রাফসানেরই এলাকার কয়েকজন ছোট ভাই। তারা আমাদের খোঁজখবর নিতে এসেছিলো। আর যেই ছেলেটি আমাদের উদ্দেশ্য করে বলল ভাই নাকি সে আমাদের খুবই পরিচিত একটি ছেলে। ছেলেটির নাম কলি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাফসানদের এলাকায় আড্ডা দেয়ার কারণে ছেলেটির সাথে আমাদের বেশ সখ্যতা হয়ে গিয়েছিলো। সেও আমাদের সাথে বন্ধুর মতোই মেলামেশা করতো। কলির গলা শুনে বেশ স্বস্তি পেলাম। আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম তোমরা হঠাৎ করে এত রাতে এখানে? তখন ও বললো আপনাদের খোঁজ খবর নিতে আসলাম। তারপর ওরা এসে আমাদের তাবু দেখতে লাগলো। কথায় কথায় একপর্যায়ে আমি কলিকে জিজ্ঞেস করলাম এখানে কোন সমস্যা আছে নাকি? কলি বলল এমনিতে কোন সমস্যা নাই। কারণ কেউ এসে আপনাদের সমস্যা করলে তাকে রাফসানের নাম বললেই হবে।


IMG_20231210_053309.jpg

তবে আপনারা যে জায়গাতে তাবু পেতেছেন সেই জায়গাটা ভালো না। এখানে এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনা থাকে। যার ফলে মাঝে মাঝে ডিবি পুলিশ এদিকে এসে রেড দেয়। এই কথা শুনে আমরা কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলাম। কারণ নির্বাচনের আগে এখন যদি পুলিশ এরেস্ট করে তাহলে আমাদের নামে অনেকগুলো মিথ্যা মামলা দিয়ে দিতে পারে। আর মামলা থেকে বাঁচতে চাইলে আমাদেরকে হয়তো মোটা অংকের টাকা দিতে হবে। এসব চিন্তা-ভাবনা করছিলাম। এর ভেতরে কলি বলল আপনারা সবকিছু গোছগাছ করে নেন। আজকে আফসান ভাইয়ের বাড়ির আশেপাশে ক্যাম্পিং করেন। ওই জায়গাটা পুরোপুরি নিরাপদ। সেখানে আপনাদের কেউ ডিস্টার্ব করবে না। কলির পরামর্শ আমার বেশ পছন্দ হলো। কারণ এমনিতেই আমরা মাত্র তিনজন ছিলাম সেখানে ক্যাম্পিং করার জন্য। যার ফলে এমনিতেও খুব একটা ভালো লাগছিলো না।


IMG_20231209_234323.jpg

পরে আমরা দ্রুত সবকিছু গুছিয়ে নিতে লাগলাম। এদিকে ফেরদৌস কে ফোন দিয়ে আমাদের ক্যাম্পিং স্পটে চলে আসতে বললাম। ফোন দেয়ার কিছুক্ষণের ভেতরেই ফেরদৌস সেখানে হাজির হয়ে গেলো। তারপর আমরা ঠিক করলাম বাকি রাতটা আমরা রাফসানের বাড়ির আশেপাশে কাটাবো। রাফসানদের বাড়িতে ঢোকার আগে ওদের একটা মেহগনি বাগান আছে। আমরা ঠিক করলাম সেখানেই তাবু ফেলবো। তারপর আমরা দ্রুত হাতে সবকিছু গোছগাছ করে নিচ্ছিলাম। কিছুক্ষণের ভেতরে সবকিছু গুছিয়ে আমরা রওনা দিলাম রাফসানের বাড়ির উদ্দেশ্যে। এর ভেতরে ফেরদৌসকে আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমার সাথে থাকা সেই পাগলটা কোথায়? ফেরদৌস আমাকে হেসে জানালো সে এখন বারবিকিউ এর আয়োজন করতে ব্যস্ত। আমি বললাম এত রাতে মসলা পেলো কোথায়? তখন ফেরদৌস জানালো সে রাফসাদের বাড়িতে গিয়ে সমস্ত কিছু ম্যানেজ করেছে। শেষ পর্যন্ত যে রাফসানও সেই পাগলের পাল্লায় পড়েছে শুনে আমার বেশ হাসি পেলো। ফেরদৌস বলতে লাগলো রাফসান ঘুমিয়ে পড়েছিলো। এর ভিতর সেই ছেলেটা রাফসানদের বাড়িতে গিয়ে রাফসানকে ডেকে উঠিয়েছে। তারপর রাফানদের ফ্রিজ থেকে সমস্ত মসলা বের করে মুরগি মেরিনেট করেছে। আমি তখন বললাম যাক একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। রাফসানের শান্তির ঘুমের বারোটা বেজেছে।


আমরা কিছুক্ষণের ভেতরে রাফসানদের বাড়িতে উপস্থিত হলাম। সেখানে গিয়ে দেখি সেই জুবায়ের নামের ছেলেটি মুরগি বারবিকিউ করার কাজে ব্যস্ত। আমরা রাফসানদের সাথে কথা বলে ঠিক করলাম ওদের বাড়ির সামনের মেহগনি বাগানে তাবু সেট করবো। সেখানে আমরা খড়ের পালাও দেখতে পেয়েছি। আমি আর ফেরদৌস মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম প্রথমে মাটিতে খড় বিছিয়ে তার উপরে পলিথিন দিয়ে তার ওপরে তাবু পাতবো। যাতে তাবুর ভেতরে একটু আরাম করে থাকা যায়। আমি আর ফেরদৌস তাবু সেট করতে ব্যস্ত ছিলাম। আর রাসেল জুবায়েরের বারবিকিউ করার প্রচেষ্টা দেখছিলো। কিন্তু তাবু সেট করার পরে ফেরদৌস বললো এর ভেতরে দুজনের বেশি থাকা যাবে না। তখন ফেরদৌস প্ল্যান করল সে সারভাইবাল ক্যাম্পিং এর মত করে নিজের প্রচেষ্টায় এক ধরনের তাবু তৈরি করবে। এই জন্য সে ব্যবহার করবে এক ধরনের মোটা পলিথিন যেটা আমরা তাবুর নিচে দেয়ার জন্য আগেই কিনে রেখেছিলাম। (চলবে)

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 7 months ago 

দারুন সময় পার করছেন ভাইয়া বুঝাই যাচ্ছে। আমার কাছে সমস্ত ঘটনাটি অ্যাডভেঞ্চার মনে হচ্ছে। তবে কলি ভাইয়া কিন্তু বুদ্ধি খারাপ দেয়নি। ঝামেলায় না পড়াই ভালো। মনে হচ্ছে বেশ মজাই হবে রাফসান ভাইদের মেহগনি বাগানের পাশেই ক্যাম্পিং করলে। অপেক্ষায় রইলাম আগামী পর্বে কি কি করলেন জানার জন্য।

 7 months ago 

রাতের আঁধারে ক্যাম্পিং করার মজাটা মনে হয় একটু বেশিই হয়, তাই না ভাইয়া।যদিও আমার এমন কোন অভিজ্ঞতা নেই। তবে আপনি আর বাকি সবাই মিলে তাবু তৈরি থেকে শুরু করে বার্বিকিউ করার আয়োজন করেছেন।মনে হচ্ছে আপনাদের সাথে আমরাও জয়েন করলে আনন্দ বেশি হতো। তবে প্রথমে যে জায়গায় তাবু করে থাকতে চেয়েছেন সেটা পরে ত্যাগ করাটাই ভালো হয়েছে।তা না হলে পুলিশ যেকোনো ভাবে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 7 months ago 

কলি ছেলেটা বেশ ভালো একটা বুদ্ধি দিয়েছে আপনাদেরকে। তবে রাফসান ভাই থাকলে নদীর পাড়ে ও মনে হয় সমস্যা হতো না ক্যাম্পিং করলে। যাইহোক রাফসান ভাইয়ের বাড়ির পাশে ক্যাম্পিং করার আইডিয়াটা খারাপ না। জোবায়ের ছেলেটা তো বেশ কাজের। বারবিকিউ করার সব আয়োজন করে ফেলছে। তবে রাফসান ভাইয়ের ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে একেবারে 😂। এবার আপনাদের ক্যাম্পিং দারুণ হবে। সবমিলিয়ে বেশ উপভোগ করতে পারবেন। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57344.91
ETH 3100.39
USDT 1.00
SBD 2.42